সেও আমার একমাত্র বোন ছিলো

সেও আমার একমাত্র বোন ছিলো

থানা থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে থাকা টঙ দোকানের দিকে যাচ্ছে নবীন মেহরাব। গতকাল দুপুরে তার বোনের লাশ পাওয়া গিয়েছে কাশেম মির্জার বাড়ির পাশে। মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায়, নওরীনকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।  কাশেম মির্জার একটা ছেলে আছে। নাম সুমন। সে তার একজন ভালো বন্ধু। সে এই কাজ করতে পারে না। পুলিশকে বললে তারা বলেন, তদন্ত চলছে।  কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মাঠে নেমে তারা কোনো তদন্তই করছেন না। কেননা তারা জানেন, কাজটা কে করেছে!

– কিরে নবীন? হঠাৎ থানাতে? বোনের খুনিকে ধরতে এসেছিলি বুঝি?

নবীন কোনো কথা বলে না। সুমন আবারও বলে, “ভাই শোন, তোর বোন মানে আমারও বোন। আমি বলি কী, এসব পুলিশ টুলিশ দিয়ে কাজ হবে না। তার চেয়ে বরং আমরা নিজেরাই এর তদন্ত করি।” নবীন কপালের ঘামটা মুছে মৃদুস্বরে বলে, “দোস্ত নওরীন আমার একমাত্র বোন ছিলো। তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো আমার। তাকে বড় একজন ডাক্তার বানাবো। যে দেশের মানুষের সেবা করবে।”

– দেখ ভাই, যা হয়েছে তো হয়েছেই। এখন নিজেকে শক্ত কর। আর আমি বলছি, এই সুমন তোকে সাহায্য করবে। তোর বোনের খুনিকে উচিত শিক্ষা দেবে।

সুমন টঙ দোকান থেকে চলে যায় পশ্চিম দিকে। নবীন বসেই থাকে। একটার পর একটা সিগারেট শেষ করে সে। নওরীন প্রতিদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় তাকে বলে যেতো, ভাইয়া বল তোর জন্য আজ কি আনবো?
সে হেসে বলতো, আমার পিচ্চি বোনটনটা যেন সিজিপিএতে ফাস্টক্লাস নিয়ে আসে। পরদিন বিকেলে সুমন তাকে ফোন করে বলে, দোস্ত তোর বোনের খুনিকে সনাক্ত করতে পেরেছি। তুই দ্রুত আমাদের বাড়ির পাশে চলে আয়। নবীন গেঞ্জিটা গায়ে দিয়ে দ্রুত সেখানে চলে যায়। গিয়ে দেখে সুমন সহ আরও বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। সে যেতেই সুমন বলে, আমাদের ঐ ঘরের মধ্যে তোর বোনের খুনিকে বেঁধে রেখেছি। ইচ্ছামতো প্রতিশোধ নে গিয়ে। নবীনের হাতে একটা ছুড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলে, যা এবার।

নবীন ক্রুদ্ধ হয়ে দ্রুত ছুটে যায় ঘরটির দিকে। গিয়ে দেখে চেয়ারে কোনো একজন ব্যক্তিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘরটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। সে কোনো দিকে লক্ষ্য না করে ছুড়িটা দিয়ে ব্যক্তির বুক বরবার আঘাত করে। ঠিক তখনই কারো হাতের তালির শব্দ শোনা যায়। সাথে সাথেই ঘরটি আলোকিত হয়ে ওঠে। নবীন পেছনে ফিরে দেখে সুমন অট্টহাসি হেসে তালি বাজাচ্ছে।

– নবীন, পেছনে ঘুরে দেখ। কাকে মারলি তুই।

সে পেছনে ঘুরতেই দেখে চেয়ারে বেঁধে রাখা ব্যক্তিটি কোনো ব্যক্তি নয়। বরং সেটা একটা ম্যানিকুইন। মুহূর্তেই ঘরের আলো নিভে যায়। আর নবীন বুঝতে পারে, কয়েকজন ব্যক্তি মিলে তার হাত পা বেঁধে ফেলছে। কিছুক্ষণ পর আবারও আলো জ্বলে ওঠে। আলো জ্বলতেই নবীন নিজেকে ম্যানিকুইনের চেয়ারটাতে আবিস্কার করে। সুমন হো হো করে হেসে বলে, কেমন দিলাম বন্ধু?

– সুমন এসব কী হচ্ছে? ফাইজলামি করছিস?
– হ্যাঁ ফাইজলামি করছি। এখন তোর সাথে আমি দারুণ একটা ফাইজলামি করবো। যা তুই জীবনে কখনও কল্পনাও করিসনি। তোর মনে পড়ে বছর খানেক আগের কথা?

নবীন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সুমনের দিকে তাকায়। সুমন বলে, “সান্তা নামের কোনো মেয়ের কথা মনে পড়ে তোর? মেয়েটিকে তুই ভালোবাসতে জোর করেছিলি। কিন্তু মেয়েটি তোকে পছন্দ করতো না। কেননা তুই ‘তাকে’ ভালোবাসতে নয়। বরং তার শরীরকে ভালোবাসতে চেয়েছিলি। মেয়েটি তোর প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তুই জোর করে তার সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছিলি। প্রমাণ ঢাকতে মেয়েটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলি।
মনে পড়ে তোর?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে আবারও বলে, “মেয়েটি আমার বোন ছিলো। তোর বোনের মতো সেও আমার একমাত্র বোন ছিলো। তাকে নিয়ে আমারও আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন ছিলো। সে একদিন বড় হবে, অনেক বড় হবে। কিন্তু তোর মতো জানোয়ারের জন্য আমার বোনটাকে অকালে প্রাণ হারাতে হলো। বোন হারানোর কষ্টটা কেমন, সেটা তো বুঝে গিয়েছিস। এখন তোকে বোঝাবো, নৃশংসভাবে কাউকে মারার কষ্ট।

“রাসেল ছুড়িটা দে তো।”  রাসেল ছুড়ি এগিয়ে দেয়। সুমন প্রথমে খুব যতন করে নবীনের পুরুষাঙ্গটা কেটে ফেলে। আর বলে, দারুণ মজা। তাইনা? তারপর এক এক করে হাতের আঙ্গুল, হাত, পা, নাক, কান। অবশেষে তার শিরচ্ছেদ করে সে নিজের আশ মেটায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত