আম্মুর সাথে গরুর হাটে

আম্মুর সাথে গরুর হাটে

আম্মুকে কোনোভাবেই আটকানো গেলো না, আমাদের সাথে গরুর হাটে যাবেনই। তিনি পছন্দ করে গরু কিনবেন।তারমতে আমরা প্রতিবারই গরু কিনে ঠকে আসি।কি আর করা বিপদের প্রমাদ গুনে আম্মুকে নিয়েই রওনা হলাম।

যেতে যেতে আমাকে আর আব্বুকে শিখিয়ে দিলেন যাতে হাটে গিয়ে আমরা কোনো কথা না বলি।দামাদামি থেকে শুরু করে সব কিছুই তিনিই করবেন।আমি আর আব্বু গৃহপালিত প্রাণীর মত সব কিছু মেনে নিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাকালাম। হাটে ঢুকে একের পর এক গরু দেখছি কিন্তু আম্মুর একটাও পছন্দ হচ্ছে না।আমরা গরু চেনার জন্য গরুর পশ্চাদদেশে ঠাস করে থাপ্পড় মারতাম আর আম্মু দেখি গরুর পেটে পিঠে আঙ্গুল দিয়ে গুতা দিচ্ছে।গরু বেচারা কাতুকুতু পেয়ে এদিক সেদিক নড়াচড়া করছে।জিজ্ঞাসা করলাম এমন করো কেনো আম্মু?

আম্মু বল্লো “তোরা কি গরু কিনিস রান্না করতে গেলে মাংস সিদ্ধ হয় না তাই গরুর মাংস শক্ত না নরম সেটা দেখছি” আম্মুর কথা শুনে “সহমত আম্মু” ভঙ্গিতে একটা তৃপ্তির হাসি দেয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু হাসি আসলো না।আব্বুরও একই অবস্থা, “সহমত নাঈমের মা” ভঙ্গিতে একটা হাসি দেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু তার হাসিও আসলো না। অন্য একটা গরু দেখতে গেলাম।এটার সব কিছু ঠিক আছে। কিন্তু আম্মু কি যেনো ভাবতেছে। হঠাৎ বেপারীকে জিজ্ঞাসা করে বসলো ভাই আপনার কাছে ছোটোখাটো একটা বাঁশ আছে? বেপারী এনে দিলো।আম্মু সেটা নিয়ে গরুর পায়ে ঠুক ঠুক করে লাঠি মারছে। জিজ্ঞাসা করলাম আবার কি হলো পায়ে লাঠি মারতেছো কেনো? আম্মু বল্লো দেখতেছি পায়ের হাড় শক্ত না নরম

-পায়ের হাড় শক্ত না নরম সেটা দিয়ে কি করবা?
-ওগুলা তোরা কি বুঝবি, রান্না তো করি আমি আমারই এইসব বুঝা লাগে। নিহারী যে খাস জম্মের খাওয়া, গরুর হাড় শক্ত থাকলে রান্না করতে খুব অসুবিধা হয়।পাতিলের মধ্যে গডর গডর শব্দ তো হয়ই রান্না করতেও খুব দেরী লাগে।প্রচুর গ্যাস অপচয় ও হয়। আরেকটা গরু দেখতে গেলাম।গরুটা বেশ পছন্দ হয়েছে আমাদের। কালো কালার, নাদুসনুদুস।

কিন্তু আম্মু এটা কিনবে না।সে তার মত ফর্সা গরু কিনবে।আব্বু প্রতিবাদ করলে আম্মু বলে উঠলো “তুমি তো এইটাই কিনতে চাইবা,দুইজনের কালার তো সেম, এক কালো পছন্দ করে আমার জীবনটা মাটি আরেক কালো নিয়ে আমি আমার কুরবানী মাটি করতে পারবো না”। আব্বু লজ্জায় কুকড়ে উঠলো।এমন করে করে আম্মুর পুরো হাটের গরু দেখা শেষ।কিন্তু গরু পছন্দ হয় না। সৃষ্টিকর্তা অবশেষে আমার আর আমার বেচারা আব্বুর দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকালো।একটা গরু পছন্দ হয়েছে। এর কালার,মাংসের ধরণ,পায়ের হাড় সহ যাবতীয় বিষয় আম্মুর পছন্দ হয়েছে।আমার মনে হলো আম্মুর সবচে বেশি পছন্দ হয়েছে বেপারীর কথা।

বেপারী আম্মুকে নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ীর স্টাইলে বলতেছে “আপা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না গরুটা কত ভালো, এত শান্ত গরু আপনি আর পাবেন না,বাইরের জিনিস এইটা একদম ইন্ডিয়া থেকে এই গরু গত রাতেই আনা হইছে, কত মানুষ যে কিনতে চাইছিলো আমি দেই নাই শুধু আপনার মত একজন লক্ষী কাস্টমারের অপেক্ষায় ছিলাম, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অনেক গুণবতী আপনার রান্নার হাত অনেক ভালো আপনি যদি এই গরুটা নেন আর ঈদের দিন এর মাংস রান্না করেন তাহলে আপনার হাতের জাদুতে যা ফাটাফাটি একটা মাংস ভুনা হবে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না,আত্মীয়স্বজনর া আপনার হাতে এই গরুর মাংস খেয়ে এর তৃপ্তি সারা জীবনেও ভুলতে পারবে না” তার এই ডায়লগে আম্মু খুব খুশি হয়ে গেলো।

চোখে আনন্দাশ্রু নিয়ে আম্মু বেপারী কে দাম জিজ্ঞাসা করলো। বেপারী ৯৫ হাজার টাকা একদাম বলে দিলো।আমি আর আব্বু ভাবছি দামটা খুব ভালো অনেকে এই গরু এক লাখ বিশ দিয়েও কিনেছে।আম্মু বেপারীর দিকে তাকিয়ে বল্লো ১৩ হাজার টাকা দিবো একদাম।আমাদের মতই বেপারীও চমকে গিয়ে থমকে গেলো।তার বাক শক্তি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তার থমকে যাওয়া দেখে আম্মু বলে উঠলো ঠিকাছে আর ৫০০ দিবো অতঃপর আমি, আব্বু আর বেপারী তিনজনেই বেহুশ….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত