ব্যাচেলরেরা মেঝেতে ঘুমায়। আমি বিবাহিত হয়েও মেঝেতে ঘুমাচ্ছি! অপরাধ তাঁর জন্য কালকে সামান্য একটা চিপসের প্যাকেট আনতে ভুলে গিয়েছি! জীবনে আর যাই করেন, কোনোদিন বেস্ট ফ্রেন্ড বা সবচেয়ে কাছের বন্ধুটাকে বিয়ে করবেন না! তাহলে জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে। সহপাঠীর সাথে প্রেম করে বিয়ে করেছি, এখন আমার এই অবস্থা! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তাড়াতাড়ি উঠে বাতি জ্বালিয়ে বললাম, “ কীরে কান্না করছিস কেনো? কী হলো আবার? ”
সে কপালে হাত দিয়ে বললো, “ এই ছিলো বুঝি আমার কপালে না? বিয়ে করার জন্য তো পাগল হয়ে গিয়েছিলি! এখন কেনো এতো অবহেলা? ” আমি আসমান থেকে পড়লাম! সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখি। আদর যত্নের কথা আর কী বলা লাগে? “ অবহেলা? কী বলিস এগুলো? আমি তোকে কখন অবহেলা করলাম? ” সে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে বললো, “ ও এখন এটাও বুঝতে পারছিস না যে কখন অবহেলা করছিস না? জানতাম তো। আম্মা বলছিলো, কম বয়সী ছেলেরা স্বামী হিসেবে একদম বাজে হয়। বৌকে শুধু কষ্ট দেয়। তখন যদি আম্মার কথা শুনতাম। তাহলে আজকে জীবনে এই দিনটা আসতো না! ” আমি যে কী করবো বুঝতে পারছি না! “ বল না কী হয়েছে? না বললে কীভাবে বুঝবো কী করেছি? তাড়াহুড়োর মাঝে চিপস আনতে ভুল হয়ে গিয়েছে! বাকি সব চকলেট, আলাইনা মালাইনা কী যেন এগুলো তো এনেছিই না? ”
কে শুনে কার কথা। সে কেঁদেই চলেছে। আমি তো ভয় পাচ্ছি পাশের রুমে আম্মা না শুনে ফেলে! তাহলে বলবে, এতো শখের বৌকে এখন কাঁদানো হচ্ছে কেনো? “ ওহ তোকে এখন সব বলে বুঝাতে হবে? বিয়ের আগে তো খুব চোখ দেখেই মন বুঝে ফেলতি! বিয়ের পর খেলনা হয়ে গেয়েছি না? তোরই বা দোষ কী? কোনো ছেলেই পুরনো হয়ে গেলে বৌকে ভালো লাগে না! ” কান্নার আওয়াজ বেড়েই যাচ্ছে! মুখটাও চেপে ধরতে পারছি না। পায়েও ধরতে পারছি না! আজকের রাতের জন্য শাস্তি হয়েছে আমার। তাঁর শরীরে স্পর্শ করা যাবে না। খাটে ঘুমানো যাবে না! কী যে করি! “ আল্লাহ, মৌরি তোর পায়ে পড়ি! মাঝরাতে আম্মাকে জাগিয়ে দিস না। রাতের ঘুমটা হারাম করিস না। আমার অপরাধটা কী তা না বললে তো আবারও সেই ভুল করে ফেলতে পারি নাকি? দয়া করে বল? ”
তাঁর কান্নার সাথে এবার রাগ মিশ্রণ হয়েছে!
“ কী বললি? আমি তোর ঘুম হারাম করছি? এই কথা তুই বলতে পারলি আমাকে? কদিন আগেও আমাকে ছাড়া তোর ঘুম আসতো না। এখন আমিই ঘুম হারামের কারণ? আল্লাহ, তুলে নাও আমাকে! ” নিজের মাথা নিজেই ফাটিয়ে দিতে মন চাচ্ছে! “ আচ্ছা আচ্ছা শোন, কান্না থামা। ঠান্ডা মাথায় বল আমাকে এখন কী করতে হবে। তোর পায়ে পড়ি তবুও বল। ” মৌরির নাকের নাকফুলটা খুলে আমার গায়ে ছুঁড়ে দিয়ে বললো, “ নে, এটা স্বর্ণের। বিক্রি করলে অনেক টাকা পাবি। আমি তো তোকে ফকির বানিয়ে দিয়েছি না? ” কাহিনী অন্য জায়গায় মনে হচ্ছে! নাকফুলটা তুলে বললাম, “ আমি কখন এই কথা বললাম? তুই আমাকে ফকির বানাবি কীভাবে? আমি তো আগাগোড়া এমনিই ফকির! ”
সে ঝারি দিয়ে বললো, “ কথা ঘুরাবি না। ঘুমা যা। আম্মা বলেছিলো, এই ছেলে তোকে বুঝবে না। আমি শুনিনি আম্মার কথা। ও আম্মাগো। ” মনটা চাচ্ছে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে মরে গিয়ে বাঁচি! কিন্তু মেয়েটার চোখের পানি সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই! “ অপমান করছিস মৌরি? করবিই তো। আমার আর সে সাধ্য কী আছে? সপ্তাহে চারদিন তোকে নিয়ে কেনাকাটায় যাবো। রোজ শুক্রবারে ঘুরতে নিয়ে যাবো! টিনের ছাউনির নিচে তোকে রাখতে আমারও ভালো লাগে না। কিন্তু চাকরিটা তো হচ্ছে না! খুঁজতেই তো আছি! ” মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই নাকফুলটা মৌরির মা দিয়েছে সেদিন। একমাত্র এটাই ওর নিজের বাড়ি থেকে আনা! আর সেটা আজকে আমার মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো!
মৌরি এবার কান্না থামিয়ে বললো, “ কী হলো? মুখটা অমন করলি কেনো? আমি তোকে কোনদিনও কী বলেছি যে আমাকে সপ্তাহে চারদিন কেনাকাটায় নিয়ে যা? রোজ শুক্রবারে ঘুরতে নিয়ে যা? ” আমি মৌরির দিকে তাকিয়ে বললাম, “ আমার দোষটা কী ইচ্ছে হলে বলিস। চেষ্টা কবো আর যেন ওরকম না হয়। ” শীতশীত লাগছে। কাঁথা দিয়ে পুরো শরীরটা ঢেকে শুয়ে পড়লাম মেঝেতে। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম উপর থেকে কাঁথাটা সরে যাচ্ছে! জড়িয়ে ধরে বুকের উপর মাথা রেখে মৌরি বললো, “ ঐ পাগল। তুই আমাকে কোনোদিনও বুঝবি না? ” আমি না শোনার মতো করে শুয়ে থাকলাম। “ শাফাত্তা, আমি ভালো করেই জানি তুই ঘুমাসনি। কথা বল। ” কে শুনে কার কথা? এখন আবার কথা বলে কথা বাড়াই!
“ তুই আসলেই কোনোদিনও আমাকে বুঝবি না। তুই সত্যিই একটা ছোটলোক। তোর মনের চেয়ে মুরগীর ডিম বড়। আজকে যে আমাদের বিবাহবার্ষিকী তোর মনে আছে? কী এমন চেয়েছিলাম? চকলেট আর গোলাপই তো? তাও আনতে পারলি না! উল্টো মুখটা ব্যাঙের মতো করে শুয়ে আছিস। কই আমার নাকফুল দে। আমি নিজেই গোলাপ কিনতে পারি। তুই ঘুমা। কোথায় আজকে তুই আমার অভিমান ভাঙ্গাবি না! না নিজেই অভিমান করে বসে আছিস! বাবারে বাবাহ কী ভাব! নিচে শুয়ে থেকে মহাপুরুষত্বের পরিচয় দিবে এহ। আমিও নিচে ঘুমাতে পারি! ” কানের কাছে ঝড় বয়ে হয়ে যাচ্ছে! এখন কথা না বললে বন্যাও হয়ে যেতে পারে।
“ চুপ কর! কানের পর্দা ফাটিয়ে দিবি নাকি? ”
“ চুপ করবো? চুপ করবো মানে কী? তুই আমার অভিমান না ভাঙ্গিয়ে শুয়ে পড়লি কেনো নিচে? ”
“ তুই তো বলছিলিই না কী ভুল করেছি আমি! ”
“ আমি বলবো কেনো? গোলাপ আনতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম? আমি কেনো মনে করিয়ে দিবো?
তার উপর নাকফুলটা ছুঁড়ে মারলাম কই তুই নিজের হাতে পড়িয়ে দিবি। কিন্তু কী বুঝলি তুই? ” আমি ওর হাত মুখ চেপে ধরে বললাম, “ আল্লাহ, হয়েছে তো না? মাফ চাই, আরেকটা সুযোগ দে। আর এমন হবে না!”
সে এখন কথা বলবেই। খ্যান্ত দিবে না! “ আরেকটা সুযোগ দিবো মানে? সুযোগ দিতে দিতে আমার বাচ্চার বাপ হয়ে যাচ্ছিস। তাও আমাকে বুঝছিস না! ” মৌরির হাতদুটো ধরে বললাম, “ বাচ্চা বাপ হওয়ার আগেই বুঝে যাবো তোকে দেখিস। ” সে একটু শান্ত হয়ে, “ তখনও না বুঝলে? ” “ তখন না বুঝার কিছু নেই। এখন ঘুমা। ” মৌরি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলো! তারপর আবার বললো, “ না না শোন, তুই আমাকে বুঝিস না কোনোদিন হুঁ? ” আমি অবাক হয়ে বললাম, “ আবার না কেনো? ” মৌরি দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে জবাব দিলো, “ তখন তো তোকে এভাবে বকতে পারবো না। তোকে বকতে আমার ভালো লাগে অনেক। তুই কতো শান্ত হয়ে শুনিস!