আমাকে দেখতে আসা পাত্রকে আর আমাকে বাড়ির বড়রা সোজা পাঠিয়ে দিল বারান্দায়। পাক্কা ২০ মিনিট যাবত দাঁড়িয়ে আছি। বারান্দায় ঝুলানো বেবি টিয়ার্স গাছের সবগুলো পাতা গোনা শেষ হয়ে গেছে অথচ ছেলেটার মুখে একটা শব্দ নেই। এ কেমন ছেলেরে বাবা! বোবা টোবা নয়তো? শেষমেশ কি বোবা ছেলে বিয়ে করব নাকি? ধুর! এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ অস্বস্তি লাগছে।
— আচ্ছা! আপনি সিগারেট খান?
— স্যরি, কি বললেন? যাক! বোবা নয়, কিন্তু কানে কম শোনে নাকি?
— না,মানে আপনার সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস আছে?
— নাহ! আমি এসব ভুলেও ছুঁই না।
— ওহ আচ্ছা। অনেক রাত করে বাসায় ফেরেন?
— নাহ! এই অভ্যেস একদম নেই। অফিস শেষ করে সোজা বাড়ি৷
— ভালো। উম টম এন্ড জেরি, মটু-পাতলু, বেন টেন, মিনা কার্টুন এসব দেখেন?
— এসব দেখব কেনো? আমি কি বাচ্চা?
— তাও ঠিক। “আপনি তো বলদা” এই কথাটা জোরে বলতে ইচ্ছে করলো কিন্তু এই যাত্রায় নিজের জিহ্বাকে সংবরণ করলাম৷
— খেলা তো নিশ্চয়ই দেখেন৷
— হুম তা দেখি, ছেলে মানুষ খেলা না দেখলে হয়?
— কেনো মেয়েরা বুঝি খেলা দেখেনা?
— মেয়েরা খেলার কিছু বোঝে নাকি? সারাদিন সিরিয়াল দেখে।
— তাই বুঝি? কিন্তু এক্ষেত্রে আপনি সমগ্র সিরিয়াল পাগল মেয়েকে কিছু খেলা পাগল মেয়েদের সাথে গুলিয়ে ফেলছেন।
— হা হা..
— আপনার কিছু জিজ্ঞাসা করার নেই? শুধু আমিই বলে যাচ্ছি।
— জিজ্ঞাসা না, বলার আছে।
— বলুন।
— আপনার চোখ গুলো অনেক সুন্দর।
— জানি, ছোট বেলা থেকে সবাই বলে। নতুন কিছু বলুন।
— আপনার দাঁত গুলোও সুন্দর।
— ভুল বললে আমার রাগ হয় খুব৷
— কি ভুল বললাম?
— আমার দাঁত মোটেও সুন্দর নয়, দুই পাশের দুটো দাঁত কুকুরের চোখা দুইটা দাঁতের মতো। কামড়ে দিলে বুঝতেন আপনি যে ভুল বলেছেন। আমি কি পরীক্ষামূলক একটা কামড় দিতে পারি?
— এ মা! না, না, কি বলছেন? নাহ! আর কখনো বলব না আপনার দাঁত সুন্দর।
— হুম! তারপর?
— তারপর আর কিছুনা৷
….কোনটা বললে আবার কি ভুল হয়ে যায়।
— বিড়বিড় করে কথা বললে যদি পাশের মানুষ শুনতেই পায় তবে কেন বলেন? যাকগে, প্রেম করেছেন কয়টা?
— একটাও না।
— আচ্ছা, মন দিয়ে শুনুন আপনাকে কিছু কথা বলি
— হ্যাঁ বলুন।
— প্রথমত, আপনি সিগারেট খান না, কিন্তু আমার সিগারেটের ধোঁয়ার ঘ্রাণ খুব পছন্দ৷
মাঝে মাঝে পাশের পাড়ায় গিয়ে সিগারেট টানি। দ্বিতীয়ত, আপনি কার্টুন দেখেন না, কিন্তু আমি প্রচুর দেখি। তৃতীয়ত, আপনি একটাও প্রেম করেননি সুতরাং আপনি প্রচন্ড আনরোমান্টিক। আর আমি অনেকগুলো প্রেম করেছি৷ আপনি চাইলে আপনার জন্য রোমান্টিকতা শিক্ষা দেওয়ার একটি কোচিং সেন্টার খুলতে পারি৷ সপ্তাহে দু দিন না হয় ক্লাস করবেন। আর ক্লাস নিব আমি প্রেম বিষয়ে বিশেষ পি এইচ ডি প্রাপ্ত। আপনার সাথে আমার কিচ্ছু মিলেনা শুধু খেলা দেখার বিষয় ছাড়া। আর এই মিলটা যেকোন ছেলের সাথেই হবে৷ সারাজীবন আপনার সাথে থাকলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাব। আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি। আপনি বরং রুমে গিয়ে সবাইকে বলে দিন আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি। আমি বললে, মা বকবে।
— আমি সিগারেটও খাই, বলতে গেলে চেইন স্মোকার। আর প্রেম জীবনে দুটো করেছিলাম কিন্তু দুজনই ছেড়ে চলে গেছে।
— আপনি প্রথমে উত্তর গুলো মিথ্যে দিয়েছেন।
মনে আছে তো? ফ্রুটিকা জুসের বিজ্ঞাপনের কথা? “ফ্রুটিকা! একটু বেশিই পিওর।” কিন্তু আপনাকে ফ্রুটিকা জুস খাওয়ানো হয়নি যে, তা খেয়ে এখন সত্য উগরে দিলেন। তবে থলের বিড়াল বের হওয়ার নিঞ্জা ট্যাকনিক এপ্লাই করা হয়েছে। এবারতো আপনাকে বিয়ে করা একেবারেই অসম্ভব।
— আচ্ছা! আপনার তো সিগারেটের ধোঁয়া অনেক ভালো লাগে,পাশের পাড়ায় গিয়ে আর কষ্ট করে সিগারেট টানতে হবেনা। আমাদের বেড রুমেই না হয় আমরা একসাথে ধোঁয়া উড়াবো। আর আপনি চাইলে অর্ডার দিয়ে আপনার জন্য সিগারেট ফ্লেভার বডি স্প্রে,এয়ার ফ্রেশনার বানিয়ে আনবো। গাঁজা টাজা খেতে চাইলে তাও ম্যানেজ করে দিব। রোমান্টিকতা নিয়েও আর ঝামেলা রইল না। আর কার্টুন সে না হয় আমি দেখার অভ্যেস করে নিব।
আর আপনিও তো প্রশ্ন গুলো করেছিলেন মিথ্যে উত্তরের আশায়,নিজের ব্যাপারেও বললেন এক গাঁদা মিথ্যে৷ তাই আপনাকে কথা বলার শুরুতেই নিরাশ অথবা হেরে যেতে দিতে চাইনি। আমি ছেলেটা খুব একটা খারাপ নই, এবার আপনার পাশের বালিশটার অধিকারটা কি দেয়া যায়? আমি খানিক অবাক গলায় বললাম, এ.. মা! এ তো দেখি চোরের উপর বাটপারি৷ নাহ! দেশটা দূর্নীতিবাজে ভরে গেছে। কি আর করা দূর্নীতিবাজের দেশে থাকতে গেলে তো, দূর্নীতিবাজের পাশের বালিশটায়ও থাকতে হয়৷ তিনি একটা রাজ্য জয়ের হাসি দিলো। আমার মনের ভিতর লাড্ডু নয়, বড় সাইজের বোমা ফুটলো, আল্লাহ! বাটপারটা এত কিউট কেনো?
সমাপ্ত