মানুষরূপী জানোয়ার

মানুষরূপী জানোয়ার

“রাফসান তোমার কয়েকটা ‘নুড’ পিক দেও।” মাহি’র এমন মেসেজ দেখে চমকে যাই আমি। মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন জাগে মাহি হঠাৎ নুড চাইবে কেন.? এতদিন তো আমিই চেয়ে আসছি ওর কাছে। বস্ত্রহীন দেহ দেখে মজা লুটতাম, বন্ধুদের দেখাতাম আর বলতাম “দেখ দোস্ত আমার টা সেই সেক্সি না.?” আমার সাথে বন্ধুরাও মজা নিত। কারো কারো মুখে পানি চলে আসত। কিন্তু আজ মাহি আমার নুড ছবি চাইল কেন বুঝতে পারলাম না। পাল্টা প্রশ্ন করব তার সুযোগ নেই। তবুও প্রশ্ন করি.

: কি ব্যাপার আজ হঠাৎ নুড ছবি চাইছ.?
: কেনো দিতে কি কোনো প্রবলেম আছে.?
: না নেই তবে।
: তবে কি.? ভাবছ আমার বান্ধুবিদের দেখিয়ে বেড়াব তোমার নগ্ন ছবি।
: না তা নয়।
: তাহলে এত দ্বিধা কেন দিতে.?
: আচ্ছা বাবা ওয়েট করো দিচ্ছি।

মাহি’র সাথে কথায় পাড়বো না। ও মেয়ে হয়ে ভালোবাসার খাতিরে আমার মন রাখতে নগ্ন ছবি দিতে পারে, তাহলে ছেলে হয়ে আমি পারব না কেনো.? অবশ্য আমার প্রেম হচ্ছে শারীরিক চাহিদা। মিটে গেলেই প্রেম শেষ। মাহি’র কথা অনুযায়ী বাতরুমে গিয়ে নিজের কয়েকটা নগ্ন ছবি তুলে নিলাম। মেয়েটাকে আজ পর্যন্ত বিছানায় নিতে পারিনি নয়তো ওর এমন বাজে চাওয়া মেনে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।

বাতরুম থেকে বেড়িয়ে এসে মাহিকে কয়টা ছবি সেন্ট করে ডাটা অফ করে রাখি। মাহি ও আর মেসেজ দেয়নি। আমি ভাবছিলাম কি করবে মাহি আমার নুড দিয়ে.? আমি যেমন বন্ধুদের দেখাতাম ও কি ওর বান্ধুবিদের দেখাবে.? তাহলে তো আমার মানসম্মান একটুও থাকবেনা ওদের কাছে। কিছু মুহূর্তেই মনে পরে আমিও তো ওর ছবি বন্ধুদের দেখিয়ে মজা নিতাম। মাথায় কাজ করছেনা, এলাকার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে হিসাবে আমাকেই চিনে সবাই। আমার ভদ্র চেহারা দেখেই প্রেমে পড়ে কয়েকটা মেয়ে। যাদের সাথে বিছানায় কাটিয়েছি ভিডিও করে তাদের মুখ ও বন্ধ করে রেখেছি। কখনো যদি আমার মুখোশ সামনে আসে ভিডিও হবে ফাঁশ, সেই ভয়েও কেউ আমার মুখোশ ফাঁশ করতে পারেনি। আজ মাহির কাছে নিজেকে আটকে দিয়েছি মনে হচ্ছে। ভয় হচ্ছে নিজের মানসম্মান নিয়ে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, সাথে সাথে মাহিকে ফোন দেই।

: হ্যালো জান কি করো.?
: এইত বসে আছি তুমি.?
: কিছুনা, ভাবছি।
: কি ভাবছ.?
: তুমি আমার নুড নিয়া কি করেছ.?
: ভাইরাল করেছি, হা হা হা
ফাজলামোর হাসি। আমি বুঝতে পেরেছি ও ফাজলামো করতেছে, তারপরও কেমন যেন লাগছে।
: মাহি.
: হু
: তোমার দেখা শেষ হলে ছবি গুলো ডিলেট দিও। আর শুনো এত দেখার ইচ্ছা থাকলে চলনা ডেটে যাই।
: জ্বি না জনাব, ডেটে যাওয়ার ইচ্ছা নাই, কিছু জিনিস ছবি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকা দরকার।
: বুঝেছি।
: কি
: তুমি আমাকে ভালোবাসনা.!

: কে বললো বাসিনা.?
: বাসলে রাজি হয়ে যেতে।
: আমি রাজি না হলেই কি ভালোবাসি না.?
: বাসই না তো। বললাম চলো ডেটে যাই এ টুকুই পারবে না।
: আমার সতীত্বনাশ করে তোমার সাথে ডেটে যাওয়াটাই কি তোমার কাছে ভালোবাসা.?
: না.! তা হবে কেনো.? আমি তো তোমায় বিয়ে করব।
: তাহলে বিয়ের পরে যা ইচ্ছে করো।
: হু।
: হু কি.?
: ওইযে বিয়ের পরে সব করব।
: এইত লক্ষি ছেলে।
: হু, বাই পরে কথা বলবো।
: হু বাই।

বলেই আমি ফোনটা কেটে দেই। ভালোলাগছে একটু। ওর সাথে কথা বললে মনের ভিতরে আলাদা একটা শান্তি অনুভব হয়। কেমন যেন নিজেকে অন্যরকম মনে হয়। মাহির কথা ভাবতে ভাবতে মনে হয় ও একটা পেনড্রাইভ দিয়েছিল, বলেছিল ওটার ভিতরে তার ছবি আছে, যেগুলো আমার পছন্দের। অন্ধ মস্তিষ্ক বলছে ওকে নগ্ন দেখতে। তাই তাড়াতাড়ি করে পেনড্রাইভ টা ওপেন করতে ল্যাপটপে কানেক্ট করি। ব্যস কাজ হয়েছে।

আমার ল্যাপটপ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, কতগুলো কোড সম্পূর্ণ ল্যাপটপে দৃশ্যমান দেখাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে পেনড্রাইভটা বের করেছি তাতেও কাজ হয়নি, ভাইরাসের মত কিছু একটা আমার সম্পূর্ণ ল্যাপটপের ডাটাবেজ ধংশ করে দিয়েছে, শেষে ওভারলোড হয়ে ব্লাস্ট। নিজের চোখের সামনে সবকিছু শেষ হতে দেখছি। বুঝতে পারিনি আমার ল্যাপটপ এ কি এমন হয়েছে যাতে ওটা এমন হয়েছে। পরে ভাবি মাহি’র দেওয়া পেনড্রাইভে কিছু ছিল নাকি.? সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত হয় যখন আব্বুর ল্যাপটপে পেনড্রাইভ কানেক্ট করতেই একি রকম হয়। সাথে সাথে মাহিকে ফোন দেই। চরম পর্যায়ে আমার রাগ উঠেছে, চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে ওকে খুন করে ফেলি। কারন যাদের ব্লাক-মেইল করতাম যেসব ভিডিও ছবি সবকিছু শুধু ওই ল্যাপটপেই রাখা, ওটা ধংশ মানে সবকিছু মাটিতে মিশে যাওয়া। দু’বার রিং হওয়ার পরে মাহি ফোনটা রিসিভ করেই বলে

: হ্যালো..
: তোর হ্যালোর পিণ্ডি তুই এমনটা কেনো করলি.?
: কেনো আমি আবার কি করলাম.? আর ভাষা নিয়ন্ত্রণ করো।
: পেনড্রাইভে কি ছিল.? কেনো এমন করলি.?
: হা হা হা তাহলে এতদিনে পেনড্রাইভ ইউজ করলি. ভাবছিলাম তোর মত এমন একজন আরও আগেই এটা ইউজ করবে। যাইহোক “বেস্ট অফ লাক”

বলেই পৈশাচিক হাসি হাসছে ও। হেসেই ফোনটা কেটে দেয়। আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে, মাহি’র কথা কিছুই ঢুকছেনা আমার মাথায়। কিছুই ভাবতে পারছিনা আমি। ফোন রেখে বিছানার উপর শুয়ে বালিশ দিয়ে নিজের মাথা চেপে রাখি। নয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করার মত কিছুই থাকবে না। এর মাঝে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি বুঝতে পারিনি।
ঘুম ভাঙে এক বন্ধুর ফোনে। ফোনটা রিসিভ করতেই ও বললো “দোস্ত তোর ভিডিও তো ভাইরাল হয়েছে” “কিহ!”  বন্ধুর কথায় আমার চোখের ঘুম হারাম হয়েছে। তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসি,

“দোস্ত কি হইছে একটু খুলে বলতো”
“আরে দোস্ত তোর তো ভিডিও ভাইরাল হইছে, পুরা এইসডি কোয়ালিটি মামা, তোকে হেব্বি জোস লাগছে”
“মানে কি দোস্ত আমার ভিডিও আবার ভাইরাল করবে কে.?”
“আমি কি জানি.? তুই নিজেই দেখ। তোকে লিংক দিচ্ছি”

ওর ফোন কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি নেট অন করে ফেসবুকে লগইন করি। একশো প্লাস মেসেজ এর মধ্যে আমার ইনবক্সে জমা হয়েছে, চোখ আসমানে উঠেছে আমার। নিজের হাতে নিজে চিমটি কেটেও পরীক্ষা করে নিলাম এটা কোনো স্বপ্ন কি না.? না এটা বাস্তব। দোস্ত লিংক দিয়েছে। লিংকে ক্লিক করেই দেখলাম মাহি’র আইডি থেকে ভিডিওটা ফাঁশ করা হয়েছে দুই ঘণ্টা আগে, কিছুক্ষণ আগে নেওয়া নুডস আর একটা ভিডিও। তেইশ হাজার শেয়ার দেখে আরও অবাক। মানুষ কিছু একটা ভাইরাল করায় এতটা চালু কীভাবে হয়.? আমিও অবাক হচ্ছি মাহি এগুলো কেনো করছে.? ওকে মেসেজ দেই তার আগে ভিডিওটা ওপেন করি, চোখ বড়বড় করে দেখি, শুধু আমার চেহারাই দেখা যাচ্ছে মেয়েটার ছবি ব্লুয়ার করে দেওয়া। তাতে কি.? কাজটা আমি করেছি আমার তো মনে আছে, দেড় বছর আগে নিশাতের ভিডিও এটা। মাহি পেলো কোথায়.? তারমানে নিশাত আর মাহির মধ্যে কিছু আছে কি.? কিন্তু নিশাত তো সুইসাইড করেছে দুমাস পরেই, তাহলে কে এই মাহি.? আমিতো ওর সাথে প্রেম করেছি শুধু ওর খোঁজ নেওয়াটা অতটা জরুরি মনে হয়নি। এখন দেখছি এটাই সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভিডিওটা দেখা শেষ হওয়ার আগেই আব্বু ফোন দেয়। ছুটিতে গ্রামে গেছে আব্বু আম্মু। তারমানে আব্বুও দেখে ফেলছে ভিডিওটা। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশথেকে আব্বুর গালি শুনতে হয়েছে, নিজের মানসম্মানের সাথে সাথে তাদের মানসম্মান ও মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছি। আমিই তো পাপি ভুল করেছি তার আবার ভিডিও ও বানিয়েছি, বরবাদির চাবি নিজেই তৈরি করে রেখেছি। রুমের এক কোণে এসে নিজের মাথা গুজে বসে আছি, চারপাশে শুধু শুনছি “রাফসান ছিঃ তুই এ কাজ করতে পারলি.? কত ভালো জানতাম তোকে”  মাথা ফেটে যাচ্ছে এসব চিন্তায়। তখনি মাহির ফোন আসে, রিসিভ করি তবে চুপ করে থাকি.

: হ্যালো জানু..
: …… (নিশ্চুপ)
: কি হলো.? কথা বলছো না যে.?
: আমাকে বরবাদ করে কি মিললো তোমার.? আর এমন কেনোই করলে.?
: উমম চলো মিট করি.?
: মিট করে কি হবে.?
: তোমাকে তোমার ভ্রান্তি দূর করাব।
: কোথায় মিট করতে হবে.? তবে সন্ধ্যার পরে,
: ওহ্ ভুলে গেছিলাম তুমিতো বাহিরে মুখ দেখানোর পর্যায়ে নাই। তারচেয়ে বরং তোমার বাসায় এসে মিট করি.? কেমন হয় তাহলে.?
: হুম তা ভালো, আম্মু আব্বুও বাসায় নেই।
: জানি বলছিলে।
: ওহ্।
: বাই। বাসায় এসেই কথা হবে।
: বাই।

বলেই ফোন রেখে দেয় মাহি, রাফসানের ইগো চূর্ণ হয়েছে। ও কি মাহিকে এমনি এমনি যেতে দিবে.? কখনোই না। এর বদলা রাফসান নিবে।  বসা থেকে উঠে দাড়ায়। নিজের ক্যামেরা হাতে নিয়ে টেবিলের উপড়ে ভিডিও অন করে রাখে। মাহি আসবে আর রাফসানের শিকার হবে। এটাই ভাবছে ও।

সময় যেন দ্রুত অতিক্রম করছে, কলিং বেল বাজছে, গোঙড়া মুখী থেকে পৈশাচিক হাসি হাসছে রাফসান। দরজা খুলে দেখে মাহি, “এসে গেছো মৃত্যুর দুয়ারে”  বলেই রাফসান মাহির চুলগুলো ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে আসে।  “শুধু তুই ই কি ভিডিও ভাইরাল করতে পারিস.? আমিও পারি। কাল ভাইরাল হবে তোর ভিডিও”  বলেই ঝাপিয়ে পড়ে মাহির উপর, কিন্তু রাফসান ক্রোধের বসে ভুলে গেছে মাহি আত্মরক্ষার কলাকৌশল সবকিছুতেই পারদর্শী। রাফসানের অণ্ডকোষে এক কিক। যতটা জোস ছিল সব বেরিয়ে গেছে ওর। বিছানায় পড়ে আছে রাফসান, মাহি নিজেকে ঠিক করে, রাফসানের হাত’পা. বেঁধে ফেলে।

রাফসানের দিকে তাকিয়ে মাহি’র চোখে জ্বল জমা হচ্ছে, গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদছে ও. চিৎকার দিয়ে বলছে মাহি.
“তুইতো এক ক্ষুধার্থ শেয়াল, যার নজরে যাকে ভালোলাগে তাকেই নিজের ভোগ করার ইচ্ছে জাগে। বলছিলি না আমি কে.? কেনোই বা তোর এমন ক্ষতি করলাম.? শুনবিনা.? শোন তাহলে. নিশাত আমার জমজ বোন। এক মুহূর্তের জন্য রাফসান থমকে যায়, কীভাবে.? ভিডিওটা হয়তো ওর কাছ থেকেই পেয়েছে মাহি। নিস্তব্ধতা শেষ হয় মাহির কথায়। নিশাতকে মনে আছে.? প্রেমের পরীক্ষা দিতে গিয়ে তোর শারীরিক চাহিদার শিকার হতে হয়েছে। সুইসাইড করে মুক্ত হয়েছিল ও। আসলে সেদিন ও সুইসাইড করেনি, খুন করা হয়েছিল ওকে। আর সেটা তুই করেছিস। সবাই ভাবছে ওটা সুইসাইড ছিল কিন্তু আমি জানি ওটা খুন ছিল তুই করেছিস।
আজ তোর খুন হবে সবাই ভাববে সুইসাইড।

বলেই মাহি টেবিলের উপর রাখা ছুড়িটা দিয়ে ওর হাতের রক কেটে দেয়, রক্তগঙ্গা বইছে ওর রুমে, মাহি হাসছে ওর কষ্ট দেখে। রাফসান দেখছে ওর মৃত্যু, নিজের চোখের সামনে ভাসছে তার করা অপরাধগুলো। ছটফট করছে ও, নিজের মৃত্যু নিজেই কামনা করছে, যত তাড়াতাড়ি মৃত্যু হবে ততোটাই কম যন্ত্রণা পাবে সেই আশায়। কিন্তু এত সহজে ওর মৃত্যু হবে তা মাহি হতে দিতে পারেনা। নীল হয়ে আসছে রাফসানের শরীর, মাহি ফ্যানের সাথে একটা রশি বেঁদে ঝুলিয়ে দেয় ওকে। মৃত্যু রাফসানের দরজায় দাড়িয়ে। মাহি যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে হাতে ক্যামেরাটা, আর বুক ফুলিয়ে ভাবছে,  “আজ এই দুনিয়া থেকে একটা ভালো মানুষরূপী জানোয়ারের মৃত্যু নিজ হাতে করতে পেরেছি”

সমাপ্তি

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত