গতকাল এক ফ্রেন্ডের সহায়তায় একটা টিউশনি পেয়েছি। টিউশনি করানোর কোন ইচ্ছেই আমার ছিলনা। কিন্তু যখন জানতে পারলাম ছাত্রের একটা বড় বোন আছে আবার নাম নুসরাত ঠিক তখন-ই চোখ বন্ধ করে টিউশনি করাতে রাজি হয়ে গেলাম। ছোট বেলা থেকেই নুসরাত নামের প্রতি আমি গভীরভাবে দূর্বল। নুসরাত নামের মেয়েগুলোকে আমি অনেক পছন্দ করি। বলতে গেলে আমার বেঁচে থাকার জন্য অনলি নুসরাত ইজ রিয়েল।
আজকে টিউশনির প্রথম দিন। তাই একটু সেজেগুজে গেলাম। সেজেগুজে যাওয়ার মুল কারণ হলো নুসরাত। যখন তুহিনদের (ছাত্র) বাসায় গেলাম দেখলাম আমার জন্য টেবিলে সবকিছু রেডি করে রেখেছে। আহা প্রথমদিনেই জামাই আদর। আন্টিকে দেখতে ছোট খাটো হাতির বাচ্চার মতন লাগে। একটু মোটা আরকি। তুহিনকে দেখে আমি পুরাই ভরকে গেলাম। ভাবছিলাম একটু মোটাসোটা হবে কিন্তু এ দেখি এক্কেবারে পাতলু। হাউ! ওজন ৭/৮ কেজি হবে মনে হয়। তুহিনের অবস্থা এমন যে ওকে ভাজ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা যাবে। যাইহোক আমিতো আর স্বাস্থ্য বিষয়ক ডঃ না যে স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করব। তুহিন আমাকে দেখেই সালাম দিলো….
–আততালা মোলাইকম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
–স্যার চিপ দেন আমারে।
-মানে? আমি তোমাকে চিপ দিব কেন?
–চিপ আমার ভালো লাগে।
জীবনে বহুত কিছু শুনেছি কিন্তু এই প্রথম শুনলাম কারো চিপ ভালো লাগে। কিন্তু তুহিনকে চিপ দিলেতো পুরো চ্যাপটা হয়ে যাবে। আমি বললাম….
–তোমাকে চিপ দিলেতো তুমি চ্যাপ্টা হয়ে যাবে।
আমার কথা শুনে আন্টি হাসতে হাসতে বলল….
–ও চিপ দেওয়ার কথা বলেনি, বলেছে চিপস্ দেওয়ার কথা।
-ও আচ্ছা।
–আসলে ওর আগের একটা স্যার ছিলোতো ওকে রোজ চিপস এনে দিত। তাই এমনটা বলেছে তুমি কিছু মনে করোনা।
-আচ্ছা।
তারপর তুহিনকে পড়াতে গেলাম। তুহিনকে পড়াতে গিয়ে মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আমি পড়াই আর তুহিন শিস বাঁজায়। এইটুক একটা ছেলে এভাবে শিস বাঁজায়? ভাবা যায়? কিন্তু আমার অবচেতন মন শুধু নুসরাতকে খুঁজছে। এখনো দেখা পেলামনা। মনটা ছটফট করছে। তুহিনকে বললাম….
–তোমার বড় আপু কোথায় গেছে?
-ক্যান আপনি বড় আপুরে কি চিপ দিবেন?
–আরেনা, এমনি বললাম।
-না না আপনি আপুরে চিপ দিবেন।
–ধুরর, চিপস তো তোমাকে দিব। তুমি পড়োতো এখন।
তারপর তুহিনকে পড়ালাম। কিন্তু সময় যাচ্ছে নুসরাতের দেখা পাচ্ছি না। আমার টেনশন হচ্ছে, ফ্রেন্ড আমায় মিথ্যে নুসরাতের আশ্বাস দিলোনাতো? নাহহ, এটা হতে পারেনা। তুহিনকে প্রথমদিন কোনরকম পড়ালাম। ওদের বাসা থেকে বের হবো ঠিক তখন-ই একটা গুট্টু টাইপ মেয়ে ঢুকলো। দেখতে মাশাল্লা। আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা, এটাই নুসরাত। মনের মধ্যে পাহার সমান অনুভূতি নিয়ে তুহিনদের বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলাম।
এভাবে প্রত্যেকদিন তুহিনকে পড়াচ্ছি। কিন্তু কোনদিন নিয়মিত ভাবে নুসরাতের দেখা পাচ্ছি না। শুধু বাসায় যাওয়ার সময় দেখা হয়। এখন আমার আর নুসরাতে মাঝে চোখাচোখি হয়। মাঝেমাঝে মনে হয় নুসরাত হাসছে। একটা বুদ্ধি খাটিয়ে তুহিনের টিউশনি এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিলাম। যাতে রোজ নুসরাতের সাথে দেখা হয়। আর মনটাকে হালকা করতে পারি। কিন্তু আফসোস একটাই, দিন যাচ্ছে তুহিনের দুষ্টুমি বাড়ছে। ভাবছিলাম এই ছেলে খুব ভালো হবে কিন্তু না। পুরাই শয়তানে খালু একটা।
সেদিন পড়াতে গেলাম তুহিনকে। গিয়ে দেখি তুহিন রুমে ফুটবল খেলছে। তাও আবার বিছানার উপর উঠে। আমি বললাম….
–আরে তুহিন তুমি ওখানে কেন?
-ফুটবল খেলছি।
–নিচে নেমে খেলো, পরে গেলে ব্যথা পাবেতো।
-না উপরে খেলব।
–আচ্ছা খেলো, এখন পড়তে বসো তুমি।
-দাঁড়ান একটা ছট (কিক) মারি।
এই কথা বলেই তুহিন খাটের উপর থেকে ফুটবলে কিক করলো। আমি তুহিনের পড়ার চেয়ারের বিপরীত চেয়ারে বসা ছিলাম। এমন কিক মারছে, ফুটবল এসে সরাসরি আমার কানে লাগলো। চেয়ার থেকে ডান সাইটে কাইত হয়ে পরে গেলাম। কানের ভিতর চি..চি..শব্দ হচ্ছে। মাগো বলে চিৎকার দিতেই পাশের রুম থেকে আন্টি আর নুসরাত চলে আসলো। আন্টি বলল….
–কি হয়েছে।
নুসরাতের মুখের দিকে ডাকিয়ে আন্টিকে বললাম….
-তেমন কিছুনা আন্টি। এমনি…..
–আচ্ছা বাবা সমস্যা হলে বলো।
-অবশ্যই।
সেদিনের কানের ব্যথা আজও জেগে ওঠে। মাঝেমাঝে রাত্রি বেলা আচমকা চিচি শব্দ করে। একদিন তুহিনকে রচনা লিখতে দিলাম “আমার প্রিয় শিক্ষক।” তুহিন রচনা লিখলোই ঠিক, কিন্তু আমার ইজ্জতের পুরাই ফালুদা করে দিলো। রচনা অনেকটা এমন….
“আমার স্যারের নাম রুবেল। নাকটা একটু বোচা। কপাল বড়, আপু বলেছে স্যার অল্প দিনেই চান্দি ছোলা (টাকলু) হবে। সেদিন আমি ফুটবলে কিক মেরে স্যারকে ফেলে দিয়েছিলাম তবুও স্যার কিছু বলেনি। স্যার খুব ভালো। আরেকদিক স্যার আমাদের বাসায় যখন পড়াচ্ছিলো আমি খেয়াল করলাম স্যারের প্যান্টের চেন খোলা। আমি স্যারকে বলিনি কারণ উনি লজ্জা পাবে। তবে আপুকে এই কাহিনী বলেছি। আম্মুকেও বলেছি। আম্মু আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো। স্যার পচা, আপু বলেছে স্যার নাকি লুচু। আমি লুচু কি জানিনা। স্যার আমাকে প্রতিদিন চিপ দেয়। চিপ খেতে আমার খুব ভালো লাগে।”
সেদিন তুহিনের রচনা পড়ার পর নিজেকে এলিয়েন মনে হয়েছিলো। না পারছিলাম কিছু বলতে না পারছিলাম সহ্যকরণ করতে।
তুহিনকে পড়াচ্ছি হঠাৎ তুহিন বলল….
-স্যার চলুন ক্যাচ ক্যাচ খেলব।
–কোন খেলা চলবেনা, আগে পড়ো।
-না আজকে পড়বনা খেলব।
–উহু তুমি পড়ো, আগামিকাল খেলবো।
একটু পর রুমে নুসরাত আসলো। বলল….
-এত করে যখন বলছে একটু খেলেননা।
–তুমিও চলো খেলি একটু।
-মানে? (ভ্রু-কুঁচকে)
–ক্যাচ ক্যাচ আরকি।
-আচ্ছা চলুন।
–আমি কিন্তু আস্তে আস্তে দিব। তুমিও পরে আস্তে দিবা।
-কি?
–ঢিল।
-আচ্ছা আস্তেই দিব।
নুসরাত মুচকি হেসে চলে গেলো। আমি বুঝলাম না এখানে হাসার কি আছে। অদ্ভুদতো! তিনজন, আমি তুহিন, নুসরাত ত্রিভুজ আকৃতিতে তিন কোনে দাঁড়িয়ে আছি। তুহিন আমাকে ঢিল দেয় আমি নুসরাতকে। নুসরাত বল ধরেই আউউউউ করে শব্দ করে। আমার প্রচুর ভাল্লাগেনা ব্যাপারটা। কি কিউট করে হাসে, আবারর কিউট করে শব্দ করে। আমি নুসরাতের দিকে বেশি খেয়াল করে আছি। তুহিন যে আস্তে আস্তে ঢিলের গতির পরিমান বাড়াচ্ছে আমার সে খেয়াল নেইই। আমার খেয়ালে নুসরাত। এক পর্যায়ে তুহিন এমন জোরে ঢিল দিলো ঢিল লাগলে আমার নিচে। আইয়াম্মা বলে চিৎকার দিয়ে ঘুরান্টি দৌড় দিলাম। কিছুক্ষণ দৌঁড়ানোর পর মনে হলো ব্যথা কিছুটা কমে গেছে। আমি কনফিউজড, বাবা হতে কি পারব? সেদিন কোনরকম তুহিনকে পড়িয়ে সরাসরি হাসপাতালে যাই চেকআপ করানোর জন্য। পরীক্ষা করে ডঃ বলল….’ঢিলটা আরেকটু জোরে লাগলে আমি বাবা হওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলতাম।”
দীর্ঘশ্বাস ছেরে সেদিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসলাম। মনে মনে বললাম… আল্লাহ বাঁচাইছে। নইলে সারাজীবন একাই কুমার হয়ে থাকা লাগতো।
আজকে শুক্রবার। তাই বাসায় আমার সমস্ত কাপড় চোপড় ধুয়ে দিছি। কিন্তু বিকেল বেলা আন্টি ফোন দিয়ে বলল….
–রুবেল আমাদের বাসায় আজ একটু আসবে?
-কেন আন্টি?
–আসলে আজকে তুহিনের জন্মদিন। ও বলল তোমাকে আসতে।
-আসলে আন্টি….
–দেখো বাবা নুসরাতও অনেক করে বলল যাতে তুমি আসো। প্লিজ বাবা না করোনা।
নুসরাতে কথা শুনে আর কিচ্ছু মনে নাই। আব্বার রুমে দৌড়ে গিয়ে আব্বার আমানতশাহ্ নতুন লুঙ্গী পড়লাম। সাথে ম্যাচিং করে আব্বারই সাদা পাঞ্জাবী পরলাম। বাজার থেকে ছোট একটা গিফট কিনে তুহিনদের বাসায় যাচ্ছি। মনে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। অবশেষে তুহিনদের বাসায় আসলাম। আমাকে দেখে তুহিন খুব খুশি। নুসরাত মুচকি মুচকি হাসছে। আমিও হাসলাম। কিন্তু সমস্যা হলো একটাই তুহিন আমার লুঙ্গী নিবে। আমার লুঙ্গী নাকি ওর পছন্দ হয়েছে। আমি বললাম….
–তুমি মার্কেট থেকে নতুন একটা লুঙ্গী কিনে নিও।
-নাআআআ…আমি এটাই নিব।
–আরে এটাতো আমি পরে আছি।
-আমার এটাই লাগবে।
–তুহিন ফাজলামো করোনা। (আন্টি)
-তুহিন তোকে পরে কিনে দিবনি। (নুসরাত)
–না আমার এটা লাগবে।
-আচ্ছা তোর বাবার লুঙ্গী আনছি ওয়েট।
এই বলে আন্টি পাশের রুমে চলে গেলো। তুহিনের এক কথা আমার লুঙ্গী নিবে। এটা নাকি ওর পছন্দ হয়েছে। ওর বাবারটাও পরবেনা। কিএক্টা মুসিবত।
তুহিন আচমকা দৌড়ে আমার লুঙ্গী দিলো টান। আমি লুঙ্গী ধরলাম টেনে। নুসরাত তুহিনের আচরণে হতভম্ব হয়ে গেলো। দৌড়ে তুহিনকে টেনে ধরলো। নিজের ইজ্জত বাঁচাতে লুঙ্গী শক্ত করে ধরলাম। কিন্তু তুহিন সমানে লুঙ্গী টেনেই চলছে। আর বলছে….
“আমার লুঙ্গী চাই চাই….স্যার লুঙ্গী দেও।”
নুসরাত তুহিনকে ছাড়ানোর জন্য দিলো হেচকা টান। এক টানে তুহিনের সাথে পুরো লুঙ্গী ফারফার করে ছিরে গেলো। নিজের হাত থেকে লুঙ্গীটাও খসে পরলো। আন্টি এসেই চিৎকার দিলো। আমি চট করে কোনরকম ভাবে নিজের ইজ্জত বাঁচাতে লুঙ্গীটা হালকা পাতলা পরে নিলাম। ভাগ্যিস পাঞ্জাবী পরা ছিলো। নইলে নাজেহাল অবস্থা। ভাবতেই নুডলস খেয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আর এক মুহূর্তও তুহিনদের বাসায় দেরি করলাম না….এক দৌঁড়ে চলে আসলাম।
বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে রইলাম। ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে দেখি টাইমলাইনে নুসরাতের একটা পোস্ট….
“স্যার আপনার সাইজটা সেই ছিলো।”
আমি মুচকি হেসে বললাম…”আমানত শাহ্ লুঙ্গী, লুঙ্গীর সাইজতো ভালো হবেইই।”