অল হাজবেন্ড’স ড্রিম

অল হাজবেন্ড’স ড্রিম

বাজার থেকে তিন কেজি গুরা মাছ কিনে আনলাম।সস্তা পেয়ে একে বারে তিন কেজি কিনে ফেললাম।বাড়ি ফেরার পথে মনে পরলো অরিন তো গুরা মাছ একদম পছন্দ করে না।এটা আগে একদমই মনে ছিলো না। আসলে রোজ বাজার করে আনার পর অরিনের এক অভিযোগ…

-তুমি বাজার করতে পার না।এই পুঁইশাকের কি এতো দাম..??আর যে দামে আলু কিনেছ ওই দামে আমার একটা নাক ফুল হয়ে যাবে।

এভাবে বাজার করলে কয়েক দিনের মধ্যেই রাস্তার থালা নিয়ে বসে ভিক্ষা করতে হবে:-কয়ডা টেকা মা একটু সংসার চালাই।তুমি এক কাজ কর আমার আব্বুর থেকে বাজার করার কোর্স কর। তাই আজ কম দামে মাছ পেয়ে ভাবলাম অরিন কে দেখিয়ে দেব আমিও অল্প দামে বাজার করতে পারি।এসব চিন্তা করতে করতে অরিনের অপছন্দের বিষয়টা একে বারেই ভুলে গেছিলাম। বাসার দরজায় নক করার আগে একবার আয়তুলকুরসি পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে নিলাম।আর ভাবছিলাম যদি বেশি রেগে যায় তাহলে বলব তুমি যাও সিরিয়াল দেখ আমি মাছ কুটে ফ্রিজে রেখে দিচ্ছি। চিন্তা ভাবনা শেষে দরজার টোকা দিলাম।দরজা খুলে আমার হাতে গুরা মাছ দেখে হাসি মুখে বললো…

-কয়েক দিন ধরেই ভাবছিলাম তোমাকে গুরা মাছ আনতে বলব কিন্তু মনেই থাকে না।এনেছো ভালোই করেছো।দেও আমি তাড়া তাড়ি কুটে ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দেই।

বলেই আমার হাত থেকে মাছের ব্যাগটা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।অরিনের এমন উদারতা দেখে মুগ্ধ হয়ে ভাবলাম আজ অরিনকে নিয়ে শপিং এ যাব। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে মাছ গুলো সিস্টেম করলো।তার কাজের গতি দেখে আমি তো অবাক।একি আমার বৌ অরিন নাকি অরিনের রুপ ধরে কোনো শাঁকচুন্নি।তার ব্যবহারে ছোট বেলায় দেখা ঠাকুমার ঝুঁলির কথা মনে পরে গেলো। কাজ শেষে অরিন কে বললাম রেডি হও বের হব।অরিন চোখ বাঁকা করে জিজ্ঞাসা করলো….

-কোথায় যাবা..??
-তোমাকে নিয়ে নিয়ে একটু শপিং এ যাব।তাড়া তাড়ি রেডি হও।
-কোথাও যেতে হবে না চুপ চাপ বাসায় বসে খেলা দেখো।(একটু ধমকের সুরে বললো)

তার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ।যে মেয়ে কে মাসে তিনবার শপিং করে দেওয়ার পরও নাকে কান্না করে, তুমি আমাকে কিছু কিনে দেও না। আমার কপালটাই খারাপ যে আব্বু তোমার মতো একটা ছোট লোকের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে। আর সেই অরিন আজ কোথাও না যাওয়ার জন্য রাগ করছে।তার এমন ব্যবহারে দ্বিতীয় বারের মতো সন্দেহ হলো একি আসলেই অরিন নাকি অন্য কেউ?? অরিনের অনেক মানা করা সত্বেও তাকে জোর করে শপিংএ নিয়ে গেলাম।কিতাব আলি প্লাজার যে দোকান থেকে সব সময় কেনা কাটা করি সেখানে গিয়ে অরিনের জন্য একটা শাড়ি পছন্দ করলাম। দাম জিজ্ঞাসা করলাম বললো মাত্র ৩৫০০ টাকা।দাম শুনেই অরিন বললো…

– এই শাড়ির দাম এতো??এর দাম খুব বেশি হলে ১২০০-১৩০০ টাকা হবে আপনি এতো চাচ্ছেন কেন..??

-কি বলছেন ম্যাডাম আপনারা আমাদের রেগুলার কাস্টমার আপনাদের থেকে বেশি নেব কেন…??এটা নতুন আসছে তাই দামটা একটু বেশি।

-একটু না অনেকটাই বেশি এই শাড়ির দাম এতো না।

বলেই দামা দামি শুরু করে দিলো।এক পর্যায়ে তা ঝগড়ায় পরিনত হলো।এবার আমি কনফার্ম এ অরিন হতেই পারে না।কারণ অরিন নিজে তো জীবনে দামা দামি করে না আর আমাকেও করতে দেয় না।কারণ একটু দাম কমালে পাশের বাসার ভাবির সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। অরিন আর দোকানদারের ঝগড়া ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।এখন অরিনকে না থামালে মারা মারিও লেগে যেতে পারে তাই অরিনকে বললাম…

-শোন ৩৫০০ টাকা দিয়েই নেই চলো। বলতেই রাগি লুকে আমাকে এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায়।বিছানায় উঠে বসতেই অরিন একটা ব্যাগ এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো…..

-যাও বাজার করে নিয়ে এসো।ভুল করেও গুরা মাছ কিনবা না।যদি আনো তবে কিন্তু সেগুলো দিয়ে জুস বানিয়ে তোমাকে খাওয়াব।শোন বাজার থেকে একটু দ্রুত এসো আজ একটু শপিং এ যাব। আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো শপিং এ গিয়ে দামা দামি শুরু করে দিবা না।শুনলাম পাশের বাসার ভাবি ৩২০০ টাকা দিয়ে একটা শাড়ি কিনেছে।

বলে এক প্রকার ঠেলে বাজারে পাঠিয়ে দিলো।রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি আহারে স্বপ্নের মতো যদি আমার বৌটা হতো তাহলে জীবনটা কত সুন্দর হতো…..!??

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত