ওপার থেকে ফোন রিসিভ করতেই রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলাম’- সব কথায় কি বান্ধবীদের বলে বেড়াতে হবে? নাকি লজ্জা স্বরমের মাথা খেয়ে বসে আছো? একটা মাত্র চুমু দিয়েছি আজ’ তা গল্প করার এমন কি আছে? বাসর রাতে কি করবো না করবো তাও কি গল্প করে বেড়াবে সবার কাছে??
কথাটা শেষ হতেই ওপাশ থেকে ভারি গম্ভীর একটা কন্ঠ ভেসে এলো’- আরিফা গোসলে গিয়েছে, আমি আরিফার আম্মু বলছি!’ কি বলবো বা করবো বুঝে উঠতে না পেরে দ্রুত কলটা কেটে দিলাম। কল্লা কাটা গরুর মতো ধড়ফড়ানি শুরু হয়ে গেলো বুকের মধ্যে। আজ নিশ্চিত খবর আছে ওর!!
আরিফাকে প্রথম দেখি ছোট মামার বিয়েতে। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় তাকে। তারপর পুরো অনুষ্ঠান তার পিছুপিছু ঘুরেও ফোন নাম্বারটা ম্যানেজ করতে পারিনা কিছুতেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেজো খালার বান্ধবীর মেয়ে সে। তাই তার নাম্বার না পেলেও তার আম্মুর নাম্বারটা পেতে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি আমাকে।
বেশ কিছুদিন প্রস্তুতি নেওয়ার পর সাহস সঞ্চয় করে একদিন বিকেলে কল দিয়ে বসলাম সেই নাম্বারে। আরিফার আম্মু রিসিভ করতেই’ পরিচয় গোপন রেখে সরাসরিই দিয়ে বসলাম প্রেম প্রস্তাব। না’ তাকে নয়, তার মেয়ের জন্য। ভেবেছিলাম প্রচন্ড রাগান্বিত হবেন তিনি!’ কিন্তু না, তেমন কিছুই হলোনা। একদম স্বাভাবিক ভাবেই তিনি কথা বললেন আমার সাথে, যেনো বহু দিনের পরিচিত আমরা।
পরে বুঝতে পারলাম মেজো খালার কাছ থেকে তিনি সবই শুনেছেন এবং এক প্রকার রাজিও হয়েছেন। তাই তিনি ধরেই নিয়েছিলেন আমি যোগাযোগ করবো তার সাথে। সেজন্যই কল দেওয়া মাত্র তিনি চিনে ফেলেছেন আমাকে।
মাঝে মাঝে কথা হতে থাকলো হবু শাশুড়ি আম্মার সাথে। মেয়েকে চাইতে সাহস পেতাম না তাই তার সাথেই দুই এক মিনিট কথা বলে রেখে দিতাম। একদিন তিনিই মেয়ের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিলেন। তারপর থেকে শুরু হলো আমাদের প্রেম কাহিনি।
সরাসরি হবু শাশুড়ি আম্মার কাছে তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেওয়ায়, সাহস আছে দেখে তিনি যে এতোটা পছন্দ করবেন আমাকে তা কল্পনা করেছিলামনা। তবে স্রোত সোজা দিকে বইতে দেখে মনটা তখন নেচে উঠেছিলো আনন্দে। হয়তো মেজো খালার কাছে আমার কথা শুনে এবং আমাকে দেখে পছন্দ হয়েছিলো তার!’ তখনই হয়তো মনে মনে মত দিয়ে দিয়েছিলেন!!”
বিষয়টা আমার বাড়ির লোকদের কানে পৌঁছাতেউ বেশি সময় লাগলোনা। তারপর দুই পরিবারের মাঝে এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো কথা না হলেও তারা যে আমাদের সম্পর্কটা মন থেকে এক প্রকার মেনেই নিয়েছেন, তা তাদের কথা বার্তা দেখেই অনূভব করা যায়। কিন্তু শাশুড়ি আম্মা আমাকে সরাসরিই বলে দিয়েছেন’- তোমাদের সম্পর্কে আমি দ্বীমত পোষণ করবোনা, তবে এখন কোনো প্রকার মেলামেশা বা কথাবার্তা বলা যাবেনা!’ দু’জন ভালোভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাও, মাস্টার্স শেষ করে ভালো একটা চাকরি করো, ততোদিনে আরিফাও অনার্সে উঠে যাবে তখন তোমাদের বিয়েটা ধুমধাম করেই দিয়ে দিবো আমরা। প্রেম যা করার তখনই কইরো।
শাশুড়ির মুখে এমন কথা শোনার পর আর কিছু বলার থাকেনা। কিন্তু মেলামেশা শুরু হবার আগেই বন্ধ করে দিবো, তাতো আর হতে পারেনা!’ তাই গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করলাম আমরা।
সারাদিন অপেক্ষায় থাকতাম একটা মাত্র মিস কলের। যখন ওর আম্মু কোনো কাজে ব্যাস্ত থাকতো তখনই ও তার আম্মুর ফোনটা চুরি করে টুক করে মিসকল দিতো একটা। কথা হতো খুবই সামান্য। তবুও কি যে ভালোলাগা তা বলে বোঝাতে পারবোনা!’ মাঝে মাঝে আমরা দেখাও করতাম গোপনে। কখনো কখনো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে চলে যেতাম দুরে কোথাও।
আরিফা যতো সহজে আমার প্রস্তাব গ্রহন করেছিলো ততোটা হয়তো আশা করেছিলামনা। তবে বেশ সুখেই কাটছিলো আমাদের দিনগুলি। কিন্তু বিপত্তি বাধলো হঠাৎ ওর আম্মুর কাছে ধরা পড়ে গিয়ে!!”
আমার মাস্টার্স শেষ। আরিফাও ভালো রেজাল্ট নিয়ে অনার্সে ভর্তির প্রিপারেশন নিচ্ছে। খুশি হয়ে ওকে ফোন কিনে দিয়েছেন আমার শুশুর আব্বা। তারপর থেকে আমাদের মাঝে যোগাযোগের গোপনীয়তাও কমে গিয়েছে অনেকটাই। এখন আমরা প্রায় প্রতিদিনই রাত জেগে চ্যাট করি অথবা কথা বলি ফেসবুক ম্যাসেনজার বা ইমোতে। দিনে কথাবার্তা খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা হয়না। কিন্তু দীর্ঘ এক বছর রিলেশনের পর আজ প্রথম তাকে একটা চুমু দিয়েছি!’ এটা কি বন্ধু বান্ধবীদের কাছে বলে বেড়ানোর মতো কিছু??’ আরিফা খুশিতে ঠ্যালায় তাই করেছে!’ তাই তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে এমন একটা নোংরা ইঙ্গিত পেয়ে রাগ আর কন্ট্রোল করতে পারিনি আমি। ভর দুপুরেই কল দিয়ে বসেছি তাকে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস- ফোনটাও সে রিসিভ না করে করলো তার আম্মু!’ আমিও কিছু না শুনে, না বুঝে গরম মাথায় হড়হড় করে উগলে দিলাম সমস্ত রাগ!!”
বর্তমানে আধুনিক যুগে এসে সন্তানদের প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারটা হয়তো আমাদের দেশের প্রায় সব পরিবারই মেনে নেয় এখন। কিন্তু প্রেম ভালোবাসার নামে অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা, চুমাচুমি এসব মানতে তারা নারাজ। তাই এক বছরের রিলেশনে মাত্র একটা চুমুই কাল হয়ে দাঁড়ালো আমাদের জন্য। যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলো সম্পূর্ণরুপে। অস্থির হয়ে উঠলাম আমি। প্রথম অনূভব করতে পারলাম কতোটা ভালোবাসি আমি আরিফাকে!’ কতোটা প্রয়োজন তাকে আমার জীবনে!!”
আমার কথা শুনে হয়তো প্রচন্ড রাগান্বিত হয়েছিলেন আরিফার আম্মু। হওয়াটাও নিশ্চয় স্বাভাবিক!’ কিন্তু তাই বলে যে এতো দ্রুত অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে ফেলবেন মেয়ের, তা কখনো কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি আমি!’
কোনো কূল কিনারা না পেয়ে ছুটে গেলাম মেজো খালার কাছে। অনুরোধ করলাম তাকে তার বান্ধবী ও আমার আব্বু আম্মুকে বিষয়টা বোঝাতে। আশ্বস্থ্য করলাম- যদিও আমি বেকার, তবুও পড়াশোনা যেহেতু শেষ করেছি একটা না একটা ব্যাবস্থা ঠিক করে নিতে পারবো। কিন্তু কোনো লাভই হলোনা। একমাত্র ভরসার মানুষটার কাছ থেকেও ফিরে আসতে হলো আমাকে খালি হাতে।
খালাতো বোনের কাছ থেকে জানতে পারলাম’- মেজো খালার সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আরিফার আম্মুর প্রচন্ড বাকবিতণ্ড হয়েছে। এমনকি কয়েক মাস ধরে তাদের মধ্যে কথা চলাচলি পর্যন্ত বন্ধ। তাই আমার জন্য কোনো অনুরোধ তিনি তার কাছে করতে পারবেননা। তখন আমার আর বুঝতে বাঁকি রইলনা যে, শুধু চুমাচুমিতেই এতো ঘটনা নয়!’ এটা ছিলো শুধু একটা ইস্যু মাত্র!!”..
শুধুমাত্র পারিবারিক কলহের জেরে আমাদের এতো দিনের সম্পর্ক, এতো গভীর ভালোবাসা হারাতে হবে তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা। আরিফা কি পারবে মানতে?’ সে কি পারবে অন্যের ঘরে বউ হয়ে যেতে?’ অন্য পুরুষকে স্বামী হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে?’ নিশ্চয় পারবেনা!!”
গভীর রাত!’ পুরো বাড়িতে এখনো লেগে আছে বিয়ের আমেজ!’ সকাল হলেই শুরু হবে ধুমধাম আয়োজন!’ আমি দাঁড়িয়ে আছি আরিফার ঘরের জানালা ঘেঁষে!’ আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি তাকে। ঘন্টা দুয়েক আগে অবশ্য একটা চিরকুট পাঠিয়েছি ওর এক বান্ধবীর হাত দিয়ে। তাতে লেখা আছে-
তোমার বাড়ির পাশের তেঁতুল তলায় আমি অপেক্ষা করবো শুধু তোমার জন্য!’ আমার বিশ্বাস তুমি আসবে!’ যদি ভালোবেসে তোমার ওই হাত দু’টি বাড়িয়ে দাও, তবে ডানা মেলবো আমরা দুর আকাশে!’ ভেসে যাবো কোনো এক অজানাই!’ জানিনা চিরকুটটা পৌঁছেছে কিনা আরিফার হাতে!’ জানিনা সে আসবে কিনা!’ জানিনা আসতে চাইলেও সে সুযোগ সে পাবে কিনা!’ তবুও গভীর বিশ্বাস নিয়ে অপেক্ষারত আমি মাঝেমাঝে ঘুরে যাচ্ছি ওর জানালা পাশে!’ সে কি আসবে??”