ইভটিজিং ও আমার বোন

ইভটিজিং ও আমার বোন

রাস্তার পাশের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। আমরা দুই বন্ধু। হটাৎ করে দেখি, একটা মেয়েকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু লোক।মেয়ে’টা একটা ত্রিশ পয়ত্রিশ বছরের লোকের দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে, আর বার বার বলছে এই লোকটা আমাকে নোংরা কথা বলেছে।লোকটা তার মুখে একটা নোংরা হাসি ধরে রেখে বলছে, আমি এই সব মাইয়ারে কিছু বলি না।মেয়েটা অপমানে কাঁপছে আর বলছে এই সব মেয়ে মানে? আপনি কি বলতে চান? আমি কলেজে পড়ি।আর আপনার এত বড় সাহস আমাকে নোংরা কথা বলেন।মেয়েটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলো খুবই মজা পাচ্ছে। কেউ মেয়েটার পক্ষে কিছু বলছে না।

আমি উঠে গেলাম চা রেখে। আমার বন্ধু রুমেন বলল কৈ যাস চা শেষ কর।আমি বললাম দেখিতো মেয়েটার সাথে কি হয়েছে।ও বলল আরে বস ঝামেলায় যেয়ে কি লাভ।আমি বললাম তুই আসবি? না আমি একাই যাবো? রুমেন বলল,তুই যা, আমি মামারে চায়ের টাকা দিয়ে আসতেছি।আমি মেয়েটার কাছে যেয়ে শুনি। অসভ্য লোকটা মেয়েটার দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলছে।আমি কি অসভ্য কথা বলছি? বলেন সবাই কে। আর তা না হলে আমার কাছে মাফ চেয়ে যেতে হবে।মেয়েটার চোখে পানি চলে এসেছে লজ্জায়। মেয়েটা বলতেছে আপনি আমাকে আমার শরীর নিয়ে নোংরা কথা বলেছেন। আবার বলছেন আমাকে সেই নোংরা কথা বলতে হবে?

একজন এর মধ্যে নিজের ভালো মানসিকতা দেখাতে যেয়ে, মেয়েটাকে বলছে বাদ দেন আপনি চলে যান।অন্য’ রা মজা নিচ্ছে।মেয়েটা অসহায়ের মতো বলছে, আপনাদের বাসায় আপনাদের মেয়ে বা বোনকে কেউ, নোংরা কথা বললে আপনারা কিছু বলতেন না। এই লোকটা আমার কানের কাছে এসে এত বাজে কথা বলেছে। আবার বলছে সেই কথা আমাকে বলতে? অসভ্য ইতর এই লোক এই টুকু বলতেই, লোকটা মেয়েটার দিকে তেড়েফুঁড়ে যাচ্ছে, আর বলতেছে তোরে আমি কি বলছি? সাহস থাকলে বল মা..।আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। গায়ের জোরে দিলাম এক ঘুষি কুত্তার বাচ্চার মুখে।আমি বললাম শুয়োরের বাচ্চা তুই কারে কি বলিস। এইটা আমার বোন।তুই খারাপ কথা বলবি আবার রং নিবি?আমি কথা বলছিলাম আর হাত চালাচ্ছিলাম। এবার লোকজন এসেছে আমাকে ছাড়াতে। তারা বলছে ভাই বাদ দেন এইসব কথা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে, নিজেদের সন্মানই নষ্ট হয়।

আমি এবার চিৎকার দিয়ে উপস্থিত সবাই কে বললাম। আপনাদের মতো মানুষের জন্য। এই কুত্তা গুলা রাস্তায় মেয়েদের ইভটিজিং করতে সাহস পায়।আপনারা এতক্ষন ধরে মেয়েটার কথায় কান না দিয়ে। এই কুত্তার কথায় মজা নিতেছিলেন তাই না।এই রুমেন থানায় মোবাইল কর। সব কয়টারে এই বার চৌদ্দ শিকের ভাত খায়াবো।মজা লস।এর মধ্যে মেয়েটা কে বললাম তুমি বাসায় যাও। এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? এর শাস্তির ব্যবস্থা আমি করতেছি।এর মধ্যে রুমেল কে বললাম এই শালার ছবি দিয়া ফেসবুকে পোস্ট দে। আর লেখ ইভটিজিং করার সময় ধরা পড়েছে। কেউ চিনলে এর পরিবাররে খবর দেন।আমরা এরে থানায় নিয়ে যাচ্ছি।

এই কথা শুনে, শয়তানটা আমার পা ধরে মাফ চাইতেছে, আর বলতেছে ভাই আমারে মাফ করে দেন এই জীবনে এমন কাজ আর করবো না।আমারে থানায় দিলে আমার পরিবারের সন্মান থাকবে না। তারা আর কাউরে মুখ দেখাতে পারবে না।রুমেল থানায় মোবাইল করেছে। কারণ তার এক খালাতো ভাই, আমাদের এলাকার থানায় আছে।আমি বললাম তুই শুধু মেয়েটাকে খারাপ কথা বলিস নাই। আবার মেয়েটা প্রতিবাদ করায় তাকে নিয়ে তামাশা করছিলি? এই বার পুলিশের সাথে তামাশা করিস।

শয়তান টাকে পুলিশের হাতে দিয়ে। অভিযোগ লিখে বাসায় আসার সময় দেখি। মেয়েটা হাবিব মামার চায়ের দোকানে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।আমি বললাম তুমি বাসায় যাও নাই।এবার দেখি মেয়েটার পাশে দাড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোক, আমার হাত জড়িয়ে ধরে বলছে বাবা তুমি আমার মেয়ের পাশে এসে দাড়িয়েছিলে, তা না হলে যে কি হতো। আমি ভাবতেই পারছি না। তন্নী আমার একমাত্র মেয়ে। ওর ফোন পেয়েই আমি অফিস থেকে চলে এসেছি। আর আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এবার তাকিয়ে দেখি। তন্নী নামের মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদছে, আর আমাকে বলছে, আপনিই আমার ভাইয়া।আপনি আমার আপন ভাই। আপনি আমাদের সাথে আমাদের বাসায় চলেন।আমার আম্মু আপনাকে দেখতে চেয়েছে।তার মানে মেয়েটা তার পরিবারের সবার সাথে এই ঘটনা শেয়ার করেছে।আমার চোখেও পানি চলে আসছে।

আমরা কত অল্পতেই বিশ্ব জয় করতে পারি।মানুষের মন জয় করাতো বিশ্ব জয়ের চাইতে বড়ো। শুধু একটু নিজের বিবেক কে কাজে লাগিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যদি পাতাম। তবে আর নারীদের রাস্তায় চলতে এত অপমানিত হতে হতো না।মেয়েরা তো আমাদের কারো না কারো মা,মেয়ে,বৌ, বোন তাই না।আজ একটা অচেনা পরিবার আমাকে কি গভীর মমতায় তাদের পরিবারের সদস্য করে নিলো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত