কাকভেজা হয়ে বাসায় ফিরতেই মায়ের বকা শুরু।কি কারনে তা বুঝতে পারছি না।জিজ্ঞাস করবো সেই সাহসও পাচ্ছি।কোনো কারন ছাড়া তো এতটা ক্ষেপে যাওয়ারর কথা না।কান বন্ধ করে রুমে ডুকেই দেখি টেবিলে কিছু নোটস রাখা।আমার টেবিলে এসব নোটস কেম্নে কি?নোটসগুলো ইন্টারের কমার্সের।আমার ভাই বোন কেউও কমার্সের না।তাছাড়া আমি ইন্টার সেই কবেই শেষ করেছি।
মা’কে জিজ্ঞাস করলাম নোটস কার আর আমার রুমেই বা কেনো? মা চোখ বড় করে উত্তর দিলেন “ডং করিস আমার সাথে?” আজিব এমন করতে যাবো কেনো? নোটস গুলো তো আমার না আর কমার্সের কেউই তো আমাদের বাসায় নেই। বাসায় না থাকলে কি হবে তোর কি বন্ধু-বান্ধবের অভাব? বুঝলাম কোনো বন্ধু আসছিলো। কে আসছিলো মা? নাটক করিস না তো কিসব মেয়েদের সাথে থাকিস? মা’র কড়া গলায় জবাব। মেয়ে আসলো কোথা থেকে। রাগ কমিয়ে বুঝিয়ে বলো তো কি হইছে আর আমার উপর রাগার কারনই বা কি?
মা বলতে শুরু করলেন- রিসিকা নামে একটা মেয়ে নাকি বাসায় আসছিলো। প্রথমে আমার বান্ধবী পরিচয় দিয়েছিলো।চা নাস্তা শেষ করে বললো কি দরকারী কথা আছে। যাওয়ার আগে বললো তোদের নাকি ২বছরের প্রেমের সম্পর্ক।তাই আগে থেকেই শ্বশুড় বাড়ি দেখতে এসেছে।আর নোটসগুলো রেখে গেছে বললো তুই নাকি পরশু ওর বাসায় দিয়ে আসবি। আমি তো অবাক।মা’র কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো।মা’কে বললাম আমার এরকম কোনো প্রেমের সম্পর্ক কারো সাথে নেই।আর রিসিকা নামক মেয়েকে আমি চিনি না। মা এসব মানতে নারাজ।উনি আমার কথা বিশ্বাসই করতে চান না।আমি কেনো এসব লুকালাম আর মেয়েটাই এমন কেন পছন্দ করলাম ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার কোনো কথাই না শুনেই চলে গেলেন রান্নাঘরে সেখান থেকে একের পর এক বকা দিয়ে যাচ্ছেন।আমি ভাবলাম কে হতে পারে যে বাসায় এসে এমন কথা বলার সাহস রাখে।সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিল। বাসায় সব ফেরার পর মা সবাইকে বলে দিলেন ঘটনাটা। তারপর থেকে তো আমার বাসায় ঠিকাই মুশকিল।সবাই কেমন খুচিয়ে কথা বলে। ফোনে কারো সাথে কথা বললেই সন্দেহ।ফোনে কিছু দেখে হাসলেও সন্দেহ।মানে পুরাই বাজে একটা অবস্থা।নোটসগুলোও খুলে দেখলাম।কোনো হাতের লেখা বা নাম নেই।দেখে মনে হচ্ছে পুরো নতুন। কে এমন ফাজলামি করতে পারে।আর এটা ফাজলামি ছাড়া কিছুই না। যেই করুক সে কি জানে আমার বাসায় আমি এখন একমাত্র সন্দেহভাজন ব্যাক্তি যে কিনা এসবের কিছুই জানি না।
অনেক বন্ধু বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ করলাম কেউ এসব কিছু জানেনা।কদিন পর হঠাৎ বাসা থেকে বের হলেই এলাকার কিছু ছোট ভাই বলে ভাই বিয়ে কবে খাবো? কাহিনী কি তবে পুরা এলাকায় রটে যাচ্ছে।ধমক দিয়ে এড়িয়ে গেলাম। একটা মেয়ে একদিন বাসায় এসে সব কেমন বদলে দিলো। আমি পরিবারের একজন অথচ আমার কথা কেউ বিশ্বাস না করে অজেনা অচেনা একটা মেয়ে যা বললো তাই মাথায় ডুকিয়ে বসে আছেন।
নিজেকে খু্ব অসহায় লাগতেছিলো।যদি মেয়েটারে পাই কসাইয়া দুইটা থাপ্পড় দিতাম।সাপ্তাহখানেক পর ফোনে কল আসলো।রিসিভ করতেই মেয়ের কন্ঠ! আমি রিসিকা তোমার ওয়াটসআপে কিছু স্কিন সট দিয়েছি দেখে জানাও বিয়ে করবে নাকি জোর করে বাসায় উঠবো? আমি বললাম দেখো আমি তোমায় চিনি না আর আমার এমন কোনো রিলেশন নেই।তোমার কোথাও ভূল হচ্ছে।কথা শেষ করার আগেই লাইন কেটে দিলো।
ওয়াটসআপে ডুকেই দেখি আমার নাম্বার থেকে উনার নাম্বারের মেসেজে প্রেম আলাপের স্কিনসট।এটা কি করে সম্ভব।আমার ফোন দিয়ে এটা কেম্নে করা যায়।আমি তো এসব চ্যাট করিনি। রাতে যখন স্কিনসট গুলো আবার দেখতেছিলাম খেয়াল করলাম সবগুলো চ্যাটই বিকেলের দিকে। যখন আমি খেলার মাঠে থাকি।তখন তো সবার ফোন ফিকুর কাছে রাখা হয়।তবে কি ফিকু এসবের সাথে জড়িত?
বিকেলে ফিকুরে এসব জিজ্ঞাস করতেই হেসে উত্তর দেয়, না বন্ধু আমি এসব কেন করবো।আর মেসেজ করলেই কি মেয়ে বাসায় আসার সাহস পায়?কথায় যুক্তি আছে। খুব বেশি ঘনিষ্ঠ না হলে এরকম তো বাসায় আসতে পারতো না।এসে আবার সম্পর্কেরর কথা মাকে বলেও গিয়েছে।রোজ রাতে ওয়াটসআপে রিসিকার একাদিক মেসেজ। আমি উত্তর না দিয়ে অফলাইনে যাই।এখন তো অনলাইন ডুকতেই ভয় পাই।কিনা কি মেসেজ দিবে। এদিকে মা’কে নাকি ফোন দিয়ে বলছে যে আমি ওর মেসেজের রেসপন্স দেই না।বাসায় তুমুল অশান্তি।
মেয়েটা চায় কি?প্রচুর ডিপ্রেশনে ভুগতেছিলাম।রাগে বিকালে কল দিবো আমার ফোনে টাকা শেষ।ফিকুর ফোন দেখলাম পাশেই রাখা। আমার ফোন থেকে নাম্বার তুলে ফিকুর ফোন দিয়ে কল দিবো তখনই দেখি নাম্বারটা শিমু নামে সেইভ করা।শিমু তো ফিকুর জিএফ।মেয়েটা বাড়ি চিটাগাং। আমি একদম সহ্য করতে পারিনা। ওভার স্মার্ট আর অতিরিক্ত কথা বলে।ফিকুরে বললাম এসব কি?ধরা খেয়ে সব স্বীকার করলো।আমি শিমুকে অপছন্দ করি সেটা শিমু জানার পর আমার উপর ক্ষেপে আছে।আমাকে মজা দেখানোর প্লান অনেকদিন ধরেই করতেছিলো।ফিকু বাধ্য বিএফ তো তাই জিএফ এর কথা মতো এসব মেসেজ আদান প্রদান আমার ফোনে দিয়ে করে আমার ফোন থেকে ডিলিট দিয়ে রাখতো।
আমি বললাম তুই জানস কি সমস্যা আছি আমি।পুরো পরিবার এমনকি এলাকার পুলাপান আমায় নিয়া মজা নেয়।আজই তুই বাসায় যাবি আমার সাথে। মা’কে সব খুলে বলবি। কথা মতো ফিকু মা’কে সব বললো। মা কিছু না বলে খেতে দিলেন। আমি ভাবলাম যাক একটু হলেও শান্তি।আর শিমুরে বলে দিস এটাকে মজা বলে না।আমি আমার পরিবারের কাছে কালার হলাম।আর নোটসগুলা নিয়ে যা।
সন্ধ্যায় সবাইকে ঘটনা বলা হলো।সবাই মোটামোটি বুঝলেন।কিন্তু তখনই ভাবী বলে উঠলেন কি জানি ধরা খেয়ে এখন হয়তো সব দোষ ফিকুর ঘাড়ে দিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতেছো।আমি আর কি বলবো ভাবী মজা করে বলেছেন কিন্তু মা আমার খুবই সিরিয়াস।আবার শুরু সেই একই বকাঝকা।সবাই বুঝেও বেশ মজা নিতেছে।আমি গালি শুনি সবাই মুচকি হাসে। মার মন এমনি। অল্পতে যেকোনো কিছু বিশ্বাস করে ফেলেন।এখন আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করিনা।করে কোনো লাভ হয়না তাই।