-কিরে বিয়ে-সাদী করলি কিন্তু ট্রিট তো দূরের কথা একবেলা দাওয়াত করে ভাবীর হাতের রান্নাও খাওয়াইলি না!
-খাওয়ামু বেটা আগে তোর ভাবী রান্নাটা ঠিকমতো শিখে উঠুক তবে।
-কিন্তু তোর হাতে ওগুলো কি?
আরাফ আমার এই প্রশ্নের জবাব না দেওয়ার জন্য চেহারায় অনাগ্রহীতার ছাপ এনে হাতটা পিছন দিকে নিয়ে ওগুলো ওর প্যান্টের পিছনের পকেটে রেখে দিয়ে সংকোচে বলে,
-কই কিছুনা তো!
আমি ওর সাথে স্কুল-কলেজ লাইফে বোডিংয়ে এক রুমে সাত বছর ছিলাম আর ও আমার কাছে লুকাইলো! হালায় আমার বন্ধু নাকি আমার ছোট ভাই যে পাড়ার বড় ভাইকে দেখছে তাই কিছু জিনিস তার চোখের আড়াল করতেই হবে!
-আমি তো দেখলাম কিসের প্যাকেট!
-ও হ্যা এগুলো নুডলসের মশলা! আসলে হাসিব তোর ভাবী দুইটা খাবারই একটু ভালো পারে। প্রথমত ডিম ভাজি আর দ্বিতীয়ত নুডলস!
-আচ্ছা তাই নাকি! ফার্মেসীতেও আজকাল নুডলসের মশলা পাওয়া যায়!
-ক কই ফা ফার্মেসী থেকে!
-আর তোতলাতে হবেনা। যা ভাগ!
তারপর ফার্মেসীতে গেলাম ভাতিজার কাশের জন্য সিরাপ নিতে৷ কম্পাউন্ডারের হাতে ফেমিকনের পাতা দেখে একটু অন্যদিকে ঘুরে তাকালাম যাতে মধ্যবয়সী আংকেল টাইপের ক্রেতাটা সহজেই নিতে পারে। কিন্তু বেডারে সুযোগ দেয়াটাই ভুল হইছে! বেডায় আমারে শুনাইয়া একটু জোরে বলে উঠলো,
-ভিটামিন বি ক্যাপসুলের পাতাটা দেন তো! আমারও উঠে গেলো রাগ বেটারে সুযোগ দিলাম, না দেখার ভান করে, আর বেটা আমারে শুনাইয়া উল্টাপাল্টা কয়! আমিও উনারে শুনাইয়া ওষুধ বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-ভাই আপনার কাছে নতুন কোনো ভিটামিন বি ট্যাবলেট আসছে যেগুলো খেলে মুখের ঘাঁয়ের সাথে ভ্রুণও দূর করা যায়! লোকটা আর কিছু না বলে টাকাটা দিয়ে সোজা বের হয়ে গেলো! তারপর আমিও সেদিনের মতো তুসকা সিরাপ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। তার কয়েকদিন পর আরাফের সাথে আবার দেখা। আমাকে দেখেই উল্টো ঘুরে পালাতে যাচ্ছিলো। পিছন থেকেই ডাক দিলাম, আরাফ!
-কিরে, হাসিব কেমন আছিস?
-তোর চাইতে ভালো না। বিয়ে করে বউকে নিয়ে তো ভালোই সুখে আছিস। আবার মশলার প্যাকেটের পর প্যাকেট নিয়ে নুডলস খাচ্ছিস! তা পালাচ্ছিলি কেনো?
-কই পালাচ্ছি না তো।
-আচ্ছা ঠিকাছে তুই না বলছিলি ভাবীর হাতের রান্না খাওয়াইবি? আজকে যাবোই যাবো।
-আসলে তোর ভাবী বাড়িতে নাই।
-হারামি তোর বানানো মিথ্যে আমি শুনছিনা। তোর বাসায় মেয়ে বলতে কেবল ভাবিই আছে। তো বারান্দায় রোদে দেয়া ব্রেসিয়ার কি তুই পড়িস? থ’ হয়ে গেলো! মুখে আর কিছু বলতেই পারলোনা আরাফ!
-আচ্ছা ঠিকাছে তুইতো বলছিলি নুডলস ভালো রান্না জানে আজ নাহয় নুডলসই খাবো।
– (চুপ)
-এখনও চুপ কেনো? আচ্ছা আজ নাহয় আমিই উল্টো বানিয়ে খাওয়াবো৷ কলেজ লাইফে তো আর তোদের কম খাওয়াই নাই! শুধু দেখবো ভাবীটা দেখতে কেমন। ও কিঞ্চিত হাসি দিয়ে বললো,
-চল।
-তুই হাঁট আমি একমিনিটে আসছি।
-কোথায় যাস?
-মশলা আনতে।
তারপর ফিরে এসে ওর সাথে গেলাম ওর বাসায়। ভাবী দরজা খুলে দিলো! মাশাল্লাহ! সুন্দর আছে চান্দের লাহান!
তারপর বললাম,
-ভাবী আপনাকে আজকে স্পেশাল নুডলস রান্না করে খাওয়াবো।
-তাই?
-হুম জারা, ও আসলেই ভালো নুডলস রান্না জানে৷ হোস্টেলে থাকতে ওই আমাদের মাঝেমধ্যে এটা ওটা রান্না করে খাওয়াতো।
-ভালোই তো।
মনে মনে বললাম, দাঁড়া! ট্রিট তো দিলিই না, উল্টো আমাকে এতোদিন ঘুরানোর শাস্তি আর তোর বউয়ের রান্না আমায় না খাওয়ানোর মজা দেখাচ্ছি।এখানেও আমায় দিয়ে রান্না! আধঘন্টা বাদে আমি রান্না করে আনলাম।
-ভাবী ঢাকনাটা আপনিই খুলুন। ঢাকনা খুলেই চিৎকার দিয়ে হাত থেকে ছেড়ে দিলো সব ফ্লোরে।
-এগুলো কেনো!
-ভাবী বিশ্বাস করেন, আমি আগে জানতাম না নুডলসে এমন মশলা ব্যবহার হয়। আরাফই তো বললো আপনি এই মশলা দিয়ে নুডলস রান্না করেন তাইতো ভাবলাম আপনার হয়তো মশলা এটাই ভালো লাগে। এই জন্যই তো আসার সময় ফার্মেসী থেকে গুনে গুনে পাঁচটা কনডম আনলাম। খুশি হন নি ভাবী?
-তারপর জারা ভাবী আরাফের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই আরাফ মাথা নিচু করে ফেললো!
আমার ভেতর সেকি পৈশাচিক আনন্দ! হারামি আর জীবনে কনডমরে নুডলসের মশলা,স্যালাইনের প্যাকেট বলবি? পিলের প্যাকেটকে আর বলবি ভিটামিন ট্যাবলেট,আয়োডিন ট্যাবলেট,ঘুমের বড়ি! একটা খোক্কস মার্কা হাসি দিয়ে বললাম,
-ভাবী আমি আসি?
-না। কোথায় যাচ্ছেন? আমার বাসায় আসছেন আর খালি মুখেই চলে যাবেন তা হবেনা। আপনি বসেন। ওর সাথে আড্ডা দেন, টিভি দেখেন। আমি ফ্রিজ থেকে মাংস নামিয়ে বিরিয়ানি করে আনছি!
আমিতো শালা অবাক! যে মেয়ে বিরিয়ানিও পারে আর হারামিডা তারে বলছে রান্না জানেনা! ধইরা কিছুক্ষণ রাম কেলানি দিলাম ইচ্ছামতো। যাক কেলানি দিতে হাঁপিয়ে গেছি। বেশি খিদা পাইছে দুই মুঠ বেশি খাওয়া যাইবো।