বিয়ের পর থেকে খেয়াল করছি বাবা মা শ্রাবণীকে(আমার বউ)যতখানি পছন্দ করে আমার দাদা দাদী শ্রাবণীকে ঠিক ততখানি অপছন্দ করে। দাদা দাদী চেয়েছিলো আমি আমার ফুফাতো বোন সুপ্তিকে বিয়ে করি কিন্তু আমি শ্রাবণীকে বিয়ে করে ফেলি। এজন্যই দাদা দাদী শ্রাবণীর চুল থেকে মাথা পর্যন্ত সব কিছুতেই খুঁত খুঁজে পান সেদিন বাবা মার বিবাহ বার্ষিকীতে শ্রাবণী খুব আয়োজন করে পায়েস রান্না করলো সবাইকে খাওয়াবে বলে। কিন্তু আমরা কেউ পায়েস খেতে পারি নি কারণ পায়েস মিষ্টির পরিবর্তে তিতা হয়েগিয়েছিল। দাদী তখন মুখ বাঁকিয়ে আমায় বললো,
~আমার নাতনী সুপ্তি কত সুন্দর পায়েস রান্না করে। তুই ওরে বিয়ে না করে রক্তহীনতাই ভুগছে সাদা বিড়ালকে বিয়ে করলি। চামড়া সাদা হলেই কি মানুষ সুন্দর হয় না কি? ভিতরে তো গুণ থাকা চাই দাদীর কথা শুনে আমি পাশে বসা শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে দেখি ও রাগে লাল হয়ে গেছে। আমি ভয়ে ভয়ে ওর হাতটা ধরে বললাম,
— তুমি হয়তো ভুলে চিনির বদলে লবণ দিয়ে ফেলেছো। আমার কথা শুনে শ্রাবণী রাগে কাচের গ্লাসটা ভেঙে ফেলে। আর চিৎকার করে বলতে থাকে,
– আমি কি মূর্খ, যে কোন পাত্রে চিনি রাখা আর কোন পাত্রে লবণ রাখা বুঝবো না। আমি শিউর এই বুড়ি আমার পায়েসে লবণ মিশিয়েছে। কারণ এই বুড়ি রান্না ঘরে গিয়েছিলো শ্রাবণীর কথা শুনে দাদা দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির হাতা উপরে তুলতে তুলতে বললো,
~পিয়াস, তোর বউ যদি আমার বউকে আরেকটা বাজে কথা বলে তাহলে এইখানে খুনা খুনী হয় যাবে শ্রাবণী তখন হাতে কাটা চামচ নিয়ে বললো,
– দাঁড়া বুড়া আমি তকে আগে খুন করবো বাবা মা এইসব কান্ড দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর আমি কোন রকমে শ্রাবণীকে কোলে করে আমাদের রুমে নিয়ে আসলাম রাতে দাদা দাদী আমি আর শ্রাবণী একসাথে বসে খাবার খাচ্ছি। এমন সময় দাদী শ্রাবণীকে বললো,
— অই ছেমরি, তোর ঠোঁট সব সময় লাল থাকে কে? তুই কি প্রতি রাতে আমার নাতীনের রক্ত খাস। কথাটা শুনে শ্রাবণী দাদীর মাথায় পানি ঢেলে বললো,
– বুড়ি,আমার ঠোঁট কেন লাল থাকে সেটা তোর নাতীকে জিজ্ঞেস কর। আমি তখন কিছু না শুনার অভিনয় করে একমনে খাবার খেতে লাগলাম… অফিসে কাজ করছি তখন শ্রাবণী ফোন দিয়ে হাসতে লাগলো। আমি বললাম,
— হাসছো কেন এত? এরপর শ্রাবণী যা বললো এই কথা শুনে আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। কোন রকম কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলাম। বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই বাবা দরজা খুললো। আমি বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
— বাবা, শুনলাম তুমি না কি বড় ভাই হবে আবার? বাবা আমার কথা শুনে রেগে গিয়ে আমার ডানগালে থাপ্পড় মেরে বললো, গর্দভ কোথাকার এই কথা বলে বাবা চলে গেলো। বউয়ের সামনে বাবার হাতে থাপ্পড় খেয়েছি। বিষয়টা সত্যি লজ্জাজনক কিন্তু আমার লজ্জা লাগছে না। আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রাবণীকে বললাম,
–কিভাবে কি হলো? শ্রাবণী হাসতে হাসতে বললো,
-দাদীর দুপুরে শরীর খারাপ লাগছিলো। তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার দাদীকে দেখে বললো দাদী না কি প্রেগন্যান্ট। দাদাকে দেখি দাদা বেলকনিতে সমানে পায়চারি করছে। আমি দাদার কাছে গিয়ে হাসতে হাসতে বললাম,
— দাদা, এই বয়সে এত দম কিভাবে পাও? দাদা অবাক হয়ে বললো,
~আমিও তো কিছু বুঝতে পারছি না রে। কিভাবে যে কি হয়ে গেলো। তোর দাদী তো সেই কখন থেকে কান্না করছে একটু পর ফুপি বাসায় আসলো। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। ফুপি বাবাকে বললো,
— কতবার বলেছি মা আমার কাছে থাকুক আর বাবা থাকুক তোমার কাছে। তুমি আমার কথা শুনলে না। তোমার বাবা মা দুইজনকেই চাই। এখন বুঝো এর ফল। এই বয়সে তুমি হবে ভাই আর আমি হবো বোন। সমাজের লোকদের কি বলবো? তাছাড়া সম্পত্তি এখন ৩ ভাগ হবে এখন সময় শ্রাবণী বললো,
– ফুপি, ডাক্তার ধারণ করছে যমজ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এই কথা শুনে ফুপি চিৎকার করে কান্না শুরু করলো রাতে বিছানায় শুয়ে আছি। এমন সময় খেয়াল করলাম শ্রাবণী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনী দিয়ে চুল ঠিক করছে। আমি পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— দাদা এই বয়সে বাচ্চার বাবা হয়ে যাচ্ছে। আমি কবে বাবা হবো? শ্রাবণী কুনই দিয়ে আমার বুকে আঘাত করে বললো,
-গাধা, তোমার কি মনে হয় ঘটনা সত্য? আমি অবাক হয়ে বললাম,
— মানে কি? শ্রাবণী হাসতে হাসতে বললো,
– আরে এই বুড়া বুড়িকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই তো আমি এমনটা করেছি। দাদীকে আমার ডাক্তার বান্ধবী অরুর কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর অরুকে আমি আগেই বলে দিয়েছিলাম এইসব বলতে। আমি হাসতে হাসতে শ্রাবণীর হাতটা ধরে বললাম,
— অনেক হয়ছে দুষ্টামী । এখন সবাইকে সত্যিটা বলে দাও। সবাই খুব চিন্তায় আছে…
আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। শ্রাবণী সবাইকে খাওয়াবে বলে নিজ হাতে গরুর গোশত রান্না করেছে। সবাই মিলে একসাথে খেতে বসেছি। দাদী গরুর গোশতের তরকারি মুখে নিয়েই বললো,
~ এই তরকারি কে রান্না করছে? একটুও লবণ দেয় নি শ্রাবণী তখন দাদীর দিকে রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
– দাদী আমি রান্না করেছি। দাদী তখন হাসতে হাসতে বললো,
— নাতি বউ তরকারিটা অনেক মজা হয়ছে। এই তরকারি দিয়ে আমি আরো একপ্লেট ভাত খাবো..