শুকনো পাতা

শুকনো পাতা

সেদিন বিকেল বেলা রান্না ঘরে গিয়ে আম্মাকে ন্যাকামো করে বললাম…”জানো আম্মা নুসরাত নামের মেয়েগুলো অনেক ভালো হয়। ওরা বউ হওয়ার জন্য পারফেক্ট পাত্রী। ওদের কথাবার্তা, চালচলন, আচারব্যবহার খুব ট্যাশ লাগে। ওরা অনেক কিউট করে কথা বলতে জানে। মুই ডুয়িং বিয়া নুসরাত, প্লিজ হয়িং দা রাজি।” জানিনা এ কথা শোনার পর আম্মার কি হলো। গরম খুন্তি হাতে নিয়ে বলল….

–বাবা আমার জানা মতে এই বংশে কোন মাতাল, গাঞ্জাখোর নাই। তয় আপনে এরকম করেন কেন?
-আম্মা ছ্যাঃ, কি সব বলো।
–তাইলে আবল তাবল কি কস?
-বিয়া প্রসুর ট্যাশ লাগে।
–তো আই কিত্তাম?
-আমায় বিয়া দাও, মেয়ের নাম নুসরাত থাকবে। আবার আমাদের যখন মেয়ে হবে তার নাম রাখবো ফুসরাত আর তারপর পরে নাতীন হলে নাম রাখবো কুসরাত।
–দিনে কয় গ্লাস খাস?
-কি?
–মদ।

নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে বুকটা দুমড়েমুচড়ে গেলো। মনে হচ্ছে পদ্মা সেতুতে নিজের কল্লাটা দিয়ে আসি। আবারো বললাম….

–আচ্ছা আমি যে বড় হচ্ছি সেই খেয়াল রাখোনা?
-তোর বাপরে ক।
–বিয়া কি আব্বায় করব?
-হাতে এইটা কি দেখছস? (একটা আলু নিয়ে)
–হ্যাঁ, এটা আলু। আলু বিভিন্ন প্রকারের হয়, গোল হয়, চ্যাঁপটা হয়, বাইট্টা হয়। কাচা আলু খেলে ক্যাচর ক্যাচর লাগে, আবার এই আলু দিয়ে পটেটো বানানো হয়। পটেটো কচকচ করে খেতে খুব ভালো লাগে। তুমি পটেটো খাবা আম্মা?
-উফফফ রুবেল তুই ফাজলামো করবিনা কিন্তু।
–আচ্ছা তাইলে নুসরাতের সাথে বিয়া দেও।

আমার কথা শেষ হতেই আম্মা হাতে থাকা আলু দিয়ে ঢিল মারল। ক্রিকেট খেলায় মোটামুটি ভালো থাকার কারণে আম্মার আলু ঢিল সহজেই হাত দিয়ে খপ করে ধরে ফেললাম। মুচকি হেসে বললাম….

–ওয়াও লাভলি বল, ওয়াইট চেক আম্মা। বলার বলার….চাপাও রূপালি।

এবার আম্মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। ৩ নাম্বার বিপদ সংকেত। তবুও নিজেকে সংযোত করলাম। আম্মা রান্না ঘরে থাকা আলু দিয়ে ঢিল ছোড়া শুরু করল। আমি একএক করে ধরছি, আম্মা ঢিলের পরিমান বাড়িয়ে দিলো। ঢিল ধরতে না পেরে মাথা নিচু করে বসে পরলাম। অমনি পাশের রুম থেকে আব্বা রান্না ঘরে প্রবেশ করলেন। আর যারফলে আলুর ঢিল গিয়ে লাগলো সরাসরি আব্বারর নাকে। অমনি আব্বা মাগো বলে চিৎকার দিলো। আম্মা যেহেতু ঢিল দিচ্ছেন, এবার দিলো টমেটো ঢিল। টমেটো গিয়ে লাগলো আব্বার নাকে। এক্কেবারে নাকের মধ্যে গেথে গেলো টমেটো। আব্বাকে একদম মিঃ বিনের মতন লাগছে। আমি দৌঁড়ে রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলাম। আমার পিছে পিছে আম্মাও দৌঁড় দিলেন। কিন্তু আমার সাথে পেরে উঠলেন না।

বিপদ অনেকটা কেঁটে গেছে। রাত ন’টার দিকে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে আব্বার রুমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি আব্বা বিছানার উপরে বসে আছে। বেচারার নাকের মাথা লাল হয়ে গেছে। নাকটা ভোঁতা হয়ে গেছে। নিজের কাছেই খারাপ লাগলো। আমার রুমে যাব রুম তালা দেওয়া। নিশ্চয় আম্মার কাজ, আম্মার কাছে গেলাম, বললাম…..

–কেমন আছো মম?
-তর পিছে কি শয়তান লাগাতার থাকে সবসময়?
–কিউ? মুই কিচ্চি?
-তাইলে মম কস কারে?
–ক্যান তোমারে, আদর করে মম ডাকি।
-আলগা পিড়িত দেখাইয়া লাভ নাই। আজকে তোর ভাত বন্ধ। রুম তালা দেওয়া।
–সরি আম্মা।
-তোর বাপের নাক দেখছস? লাল হয়ে গেছে।
–আচ্ছা আর হবেনা, এবার চাবি দাও রুমে যাব।
-হবেনা।
–প্লিজ আম্মা…..

অনেক জোরাজুরি করার পর আম্মা চাবি দিলো। চাবি নিয়ে ড্যাংড্যাং করতে করতে রুমে চলে আসলাম। একটু পর দেখলাম আম্মা রোদেলাকে কোলে নিয়ে আমার রুমে আসলো। বলল….

-একটু রোদেলাকে রাখতো।
–তুমি কই যাবা?
.-একটু বাহিরে যাব।
–আচ্ছা।

ছোট বোনকে নিয়ে খেলা করছি। বোনটা হাসে খুব। একটু পর রুমে ছোট ভাই সাইফ প্রবেশ করলো। সাইফের হাতে রোদেলার ফিডার। বললাম….

–কিছু বলবি?
-ফিডার খামু।
–কিইইইইই…?
-হ ফিডার খামু।
–হারামি ফিডারতো বাচ্চাদের, তুই কেন খাবি?
-গতকাল এমনি টেশ করার জন্ম একটু খেয়েছিলাম ভালোই লাগলো।
–তো?
-এহনতো আম্মা নাই, তাই তোমার অনুমিতি নিয়ে পুরো ফিডার খাব।
–পরে আম্মা জানতে পারলে খবর খারাপ আছে।
-তুমি মানিয়ে নিও।
–না থাক, তুই ফিডার রাখ।
-প্লিজ ভাইয়া, একটু খাব।

ছোট ভাই এত করে আব্দার করছে তাই আর না করতে পারলাম। আম্মা কি বলবে সেটা পরে দেখা যাবে। সাইফ বাচ্চাদের মতন চুকচুক করে ফিডার খাচ্ছে। হাইস্যকর ব্যাপার। একটু পর সাইফ বলল….

–ভাইয়া তুমি একটু খাও….
-হারামজাদা আমি কি বাচ্চা?
–একটু খেয়ে দেখো মজা পাবা।
-দরকার নাই।
–আচ্ছা দাঁড়াও আমি আসছি। সাইফ পাশের রুম থেকে রোদেলার জন্য আনা ল্যাকটজেনের প্যাকেট (গুড়া দুধ) নিয়ে আসলো, বললাম….
–এগুলো আনলি কেন?
-খাব, ভালো লাগে।
–হারামি আম্মা মাইরা উল্টা ঝুলাই রাখবো।
-উহু আমার ভালো লাগে।

আমার কথার দাম না দিয়ে সাইফ পুরো ল্যাকটজেনের প্যাকেটের যত দুধ ছিলো সমস্ত দুধ জগের ভিতরে ঢালল। আম্মা যদি দেখে সত্যি সত্যি বাসা থেকে বের করে দিবে। সাইফ পুরো গুড়ো দুধ পানির সাথে মিক্সড করলো। তারপর গ্লাস এনে গ্লাসে ঢেলে খাওয়া শুরু করলো। সাইফের খাওয়া দেখে আমারো খেতে ইচ্ছে করলো। বললাম….

–আমায় একটু দেতো?
-নাও,

আমি যেইনা গ্লাস মুখে দিব অমনি রুমে আম্মা প্রবেশ করলো। গ্লাসে দুধ দেখে অবাক হয়ে গেলো। আম্মা ভ্রু-কুঁচকে বলল….

–কিরে কি করছিস এসব?
-আম্মা আমরা দু’ভাই ফিডার খাচ্ছি। (সাইফ)
–কিইইইই?
-হ আম্মা, ভাইয়া আমারে এই বুদ্ধি দিছে।
–তুই কি মানুষ হবিনা? শেষমেশ রোদেলার জন্য আনা ফিডারো বাকি রাখলি না?
-বিশ্বাস করো আম্মা, আমার কোন দোস নেই। সাইফ মিথ্যে বলছে। (আমি)
–চুপ কর, তুই হলি বড় হারামজাদা তোর দেখাদেখি সাইফও দিনদিন শয়তানের ওস্তাদ হচ্ছে।
-আম্মা সহমত। ভাইয়া আমারে সব শেখায়। (সাইফ)

কথাটা বলেই সাইফ রুম থেকে দৌঁড়ে চলে গেলো। আম্মা রাগে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমি রোদেলাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললাম….

-আচ্ছা আম্মা ছেলেরাতো সবসময় মায়েদের কাছে ছোট মাসুম বাচ্চাদের মতন। আর মাসুম বাচ্চারাতো ফিডার খায় তাইনা?
–ওগো লাঠিটা নিয়ে আসোতো, আজকে তোমার ছেলের ফাজলামি বের করব। মাসুমগিরি ছুটাচ্ছি হারামজাদার। (আব্বাকে ডাক দিয়ে)
-প্লিজ আম্মা, আমি নির্দোষ।
–তুই এক পাও নড়বি না, কি হলো আসো তুমি।

একটু পর আব্বা ঠিকই লাঠি হাতে রুমে প্রবেশ করলো। চোখের সামনে বিপদ দেখে গলা শুকিয়ে গেলো। অবশেষে ছোট ভাই বাঁশ দিয়ে চলে গেলো। আহারে জীবন, জানের আশা বাদ দিয়ে বাসা থেকে ইয়াহুউউউ…বলে এক দৌঁড়। একবারে রাস্তায় চলে আসলাম। আজকে আর বাসায় যাওয়া হবেনা। রাতটা রাস্তায় কাটাতে হবেরে বেয়ান।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত