থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার

থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার

গতকাল সন্ধ্যায় আমার সবচেয়ে কাছের বেস্টফ্রেন্ড তানিশার প্রেমিক ওর সামনেই আমাকে একটা লাল টুকটুকে লিপস্টিক গিফট করেছে। সেইটা ঠোঁটে লাগিয়ে এখন আমি তানিশার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ও আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন চোখ দিয়ে যদি গিলে খাওয়ার কোনো সুযোগ থাকতো,তবে তানিশা আমাকে এখনি নিশ্চিত গিলে খেয়ে ফেলতো।

আমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করে আরেক শেড লিপস্টিক লাগালাম। গতকাল তানিশা আর রাফসানের মধ্যে রাগারাগি চলছিল। ওরা দুজনেই আমার ক্লাসমেট। ওদের ঝগড়া থামাতে আমাকেই প্রতিদিন থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার হয়ে একপাশে পাহারা দেওয়া লাগে। রাফসানকে তানিশা হালকা লাল কালারের লিপস্টিক এনে দিতে বলেছিল। আর রাফসান ভুল করে গাঢ় কালারেরটা এনেছে। সমস্যা এতটুকুই। লেগে গেলো তুমুল ঝগড়া। রাফসান এক পর্যায়ে লিপস্টিক টা আমার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল,

~সুহাসিনী, টাকা দিয়ে কিনে এটা তো নষ্ট করতে পারি না। নে,এইটা তুই রেখে দে।কাল ক্লাসে পরে আসিস।

আমি আমার ক্লাসমেটের অর্ডার মত জাস্ট লিপস্টিক টা লাগিয়ে এসেছি। এতে আমার কি দোষ? একদিন তানিশা ওর প্রেমিকের জন্য নুডুলস রান্না করে নিয়ে গেলো। তানিশা সেটাতে কয়েক টুকরো চিংড়ি মাছ দিয়ে রেখেছে। কিন্তু রাফসান কোনোদিনই চিংড়ি খায় না। তানিশা ওকে খাওয়ানোর জন্য এত কান্নাকাটি করলো,কিন্তু তার মন কিছুতেই গলে না। সেদিন তানিশা বিরক্ত হয়ে নুডুলসের বাটি টা আমার দিকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে বলল, “এত কষ্ট করে রান্না করে এভাবে নষ্ট করবো? সুহাসিনী,দশ মিনিটের ভিতরে খেয়ে নে তো। আমার পরিশ্রমের মুল্য আছে। ”

আমি সেদিন বাটিসহ চামচ দুটো চেটেপুটে খেয়ে নতুন চায়না প্রোডাক্ট বানিয়ে তানিশাকে ফেরত দিয়েছিলাম। হাজার হোক বেস্টফ্রেন্ডের পরিশ্রম তো আমি বিফলে যেতে দিতে পারিনা। ওরা রোজ প্রেম করে আর ঝগড়া করে।ওদের মাঝে থার্ড পার্সন হয়ে দাড় করিয়ে রাখে আমাকে। এভাবেই রোজ ওরা অভিমান করে স্নো,পাউডার,লিপস্টিক, আই শ্যাডো নষ্ট করে। আর সেই অভিমানের ক্ষতিপূরণ করতে আমাকেই সেগুলো ব্যবহার করতে হয়। মাঝে মাঝে সেজে গুঁজে ফেসবুকে ছবি আপ্লোড দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করি, দিচ ড্রেস গিফট ফ্রম তানিশা, দিচ কানের দুল গিফট ফ্রম বেস্টফ্রেন্ডের বয়ফ্রেন্ড। আই লাভ পিংক কালার আই শ্যাডো।সাডেনলি গিফটেড বাই রাফসান। লাভিউ দোস্ত।’ আজ সকালে দেখলাম তানিশা ভীষণ রেগে আছে। রাগ টা আসলে কার উপর কোনোরকমেই আন্দাজ করতে পারছি না। এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,

~রাফসান কি আজ ক্যাম্পাসে শ্যাওলা কালারের সেন্ডু গেঞ্জি পরে এসেছে? তুই তো আবার তোর পছন্দ মত ওকে সব পরতে বাধ্য করিস।এত মন খারাপ করিস না দোস্ত। রাফসানের মন খারাপ হলে নাহয় ও আমার কাছে শোক পালন করতে আসে,তুই তো আর আমাকে কিছুই বলতে পারিস না। তানিশা দাঁতের উপর দাঁত রেখে ভারী গলায় উত্তর দিলো,

~দেখ সুহাসিনী,তুই যদি আর আমাদের সম্পর্কের মাঝে থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার হয়ে ভার্বের সাথে এস বা ই এস এর মতো ঝামেলা ডেকে আনিস,তো আমি আর কোনোদিন তোর মুখ দেখবো না।

সেদিনের পর থেকে তানিশা ঘুরতে গেলে আমাকে আর কোনোদিন সাথে নিয়ে যায় না। এখন আর কেউ আমাকে লিপস্টিক গিফট করে না।আমি আর ঠোঁট লাল করে তিন শেড লিপস্টিক লাগাতে পারিনা। নিজের টাকায় কালো রঙের চুড়ি কিনি,লিপস্টিক কিনি। নিজের টাকায় নুডুলস আর বিরিয়ানি খাই। সাথে বাপ্পারাজের গান গাই। শোকে শোকে একটা কথা ই অনুভব করি, ‘একমাত্র বাপ্পারাজের গানই রিয়েল।বাকি সব ফেইক।’ একদিন সন্ধ্যাবেলা দেখি রাফসান আমার হলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে কল দিয়ে অর্ডার দিচ্ছে,

~সুহাসিনী,এক্ষুণি রেডি হয়ে নিচে নেমে আয়।

~না রে।তোরা ডেটিং কর গিয়ে।তোদের মাঝে আমি আর নেই।

~আরে গাধা, এখানে আমি একাই আছি। আজ আমরা বিয়ে করছি।

~দাওয়াতও দিলি না।আচ্ছা, আমি নিজের টাকা দিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে তোদের নামে দুয়া করে দেবো।

বি হ্যাপি ব্রো,  বি হ্যাপি। আর কোনোদিন আমার মুখ তোরা দেখতে আসিস না। রাফসান আমার হাত ধরে টানতে টানতে কাজী অফিসের দিকে নিয়ে যেতে যেতে যা বলল, তা শুনে আমি প্রায় শকে চলে গেলাম।

তানিশার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করছে। একথা জানার পর রাফসান বিয়ের প্রস্তাব করে বসলো,ওরা আজই বিয়ে করবে।তানিশা প্রচন্ড পরিমাণে রেগে গিয়ে রাফসানকে বলেছে, প্রেম করছি বলে কি মাথা কিনে নিয়েছ? ফ্যামিলির অমতে এখুনি বিয়ে করা লাগবে? এটুকু সমস্যা দুজনে আলোচনা করে সমাধান করা যেত না? নিজেকে কি মনে করো? মেয়েরা তোমার জন্য পাগল? এখন তোমার মত বেকার ছেলে কে কোনো মেয়েই বিয়ে করবে না। তানিশার কথাগুলো নাকি রাফসানের গায়ে ফোস্কা পড়িয়ে দিয়েছে। রাফসানের রাগী স্বর শুনে অনুধাবন করলাম,দু একটা ফোস্কা সম্ভবত ফেটেও গেছে। তাই এত পরিমাণে জ্বলছে। আমিও বন্ধুকে আলগা পিরিত দেখিয়ে বলে ফেলেছি,

~মন খারাপ করিস না দোস্ত।আমি তোর পাশে আছি।

আমার পাশে থাকাটাই নাকি এখন রাফসানের একমাত্র সম্বল। রাফসান আমাকে বিয়ে করে দেখিয়ে দিতে চায়, ওকে বিয়ে করার মত মেয়েও নাকি দুনিয়ায় আছে। চিন্তা করে দেখলাম, বিপদে বন্ধুই তো বন্ধুর পাশে দাঁড়াবে। আমার অত দ্বায়িত্ব নেই। মাত্র তিনবার কবুল বলাই তো। বাকিটা নাকি রাফসান ওর বাবাকে বলে ম্যানেজ করে নিতে পারবে। বলে ম্যানেজ করুক,আর শুনে করুক,তাতে আমার কি! ব্যাপার না। বিয়ে করে দুজনেই কাজী অফিসের গেইটের পাশে এসে দেখি তানিশা চোখ মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখা মাত্রই বলে উঠলো,

~সুহাসিনী তুই আমার ফ্রেন্ড হয়ে এই কাজ টা করতে পারলি? গলার মালাটা ঠিক করতে করতে উত্তর দিলাম,

~দেখ দোস্ত,আমার কোনো দোষ নেই।থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারের বৈশিষ্ট্যই হলো,যেখানে সুযোগ পাবে, সেখানে জমে যাওয়া ভার্বের সাথেও এস বা ই এস জুড়ে দেওয়া।  আমি শুধু বৈশিষ্ট্য টুকু রক্ষা করেছি। আমার কোনো দোষ নেই। শশুর বাড়ি যাচ্ছি, খুশি মুখে দুয়া কর। রাফসানের দিকে তাকিয়ে দেখি ও মলিন মুখে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। উফফ! সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ এস বা ই এস জুড়ে দিতে পারে।ওকে টোকা দিয়ে বললাম,

~ওগো চলো.. আমার শশুর আব্বাকে বলে ম্যানেজ করতে হবে তো…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত