অদ্ভত স্বপ্ন

অদ্ভত স্বপ্ন

ব্রেকফাস্ট করছি এমন সময় মা এসে বলতেছে বাবা এইভাবে আর কতদিন? এবার অন্তত বিয়েটা কর। আমরা বুড়ো মানুষ আর কতদিন বাঁচবো। আর তাছাড়া তোর বাবার খুব শখ তার নাতি -নাত্নির সাথে খেলবে আরও কত মজা করবে। আমারও কি কম শখ নাকি আমারওতো কত শখ বউমার সাথে গল্প করবো। চুল বেধে দিবো। একসাথে রান্না করবো। কিন্তু তুই আমাদের আশাগুলো পূরণ হতে দিচ্ছিস না। বলছিলামকি বাবা এইবার বিয়েটা করে ফেল।

-মা তুমিতো সবই জানো। আর তাছাড়া মাত্র চাকুরিটা পেয়েছি।
-হুম জানি দেখ বাবা যে যাবার সেতো যাবেই তাই না। আর নতুন চাকুরি পেয়েছিসতো কি হয়েছে তাই বলে কি বিয়ে করা যাবে না নাকি । ইদানিং তোর বাবার শরিরটাও বেশি ভালো যাচ্ছে না। কি থেকে কি হয়ে যায় বলা যায় না। তাই বলছি যদি আমাদের কথাটা যদি একটু ভেবে দেখিস (এই বলেই মা হনহন করে চলে গেল। আমি পরলাম মহা চিন্তাই। এইরে এইদিকে অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে। কোনরকম খাওয়াটা শেষ করে অফিসের উদ্দেশে রওনা হলাম। দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্যে। আমার বাসা থেকে অফিসে যেতে প্রাই আধা ঘন্টা সময় লাগে।

-এই মামা যাবেন (রিকশা চালককে ডাক দিলাম)
-হ মামা জামু কই যাবেন (রিকশাচালক)

তারপর রিকশাচালককে জায়গারটার নাম বললাম। ওহ আমার পরিচয়টাইতো দেওয়া হয়নি। আমি আকাশ বাবা-মার একমাত্র সন্তান। লেখা-পড়া শেষ করে একটা বেসরকারি কম্পানিতে চাকুরি করছি। রিকশা চলছে তার আপন গতিতে। ভাবতেছি, ভাবতে ভাবতে আমি অতিতের জগতে হারিয়ে গেলাম।

মেয়েটির নাম ছিল সুধা। মেহেরুন ইসলাম সুধা। আমি তাকে সুধা বলেই ডাকতাম। একদিন কলেজ শেষে তাকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম তারপর অনেক ঘুরাঘুরির পর সুধা আমার প্রেমে রাজি হয়েছিল। আমার ফ্রেন্ড বলতে তেমন কেউ ছিল না। আমার দুটো ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল নাম আবির আর সুজন। ওদের মাধ্যমেই প্রেমটা হয়। চলছিল খুনসুটির প্রেম একসাথে ফুসকা খাওয়া । রিকশাই ঘুড়া। পড়ন্ত বিকেলে নদীর পারে হাত ধরে বসে থাকা। সপ্তাহে একদিন রেস্টুরেন্টে খাওয়া। অবশ্য টাকাটা আমাকেই দিতে হতো তাতে কি জীবনের প্রথম প্রেম বলে কথা। আর সত্যি বলতে কি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু কখনো বুঝতে পারিনি যে ও এইভাবে আমার ভালোবাসাই জল ঢেলে দিবে। একদিন বিকেলে,,,,,

-হ্যালো আকাশ (সুধা)
-হ্যা জান বলো ( আমি)
-কোথায় তুমি
-এইতো বাসায় শুয়ে আছি কেন কোন সমস্যা হয়েছে।
-না তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
– হুম বল কি কথা।
-না ফোনে না কথাগুলো সামনা সামনি বলতে হবে। তুমি তারাতারি নদীর পারে আসো ।

টুট টুট টুট ,,, ফোনটা কেটে দিলো। ভাবলাম কি কথা যা ফোনে বলা যাবে না। তারাতারি ফ্রেশ হয়ে রওনা হলাম। উদ্দেশ্য নদীর পার। আমার বাসা থেকে যেতে বেশি সময় লাগে না মাত্র বিশ মিনিট। একটা রিকশা নিয়ে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি সুধা নদীর পারে বসে আছে আর কি যেন ভাবতেছে। আমি পিছন থেকে ওর চোখ ছেপে ধরলাম

-আকাশ তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল (সুধা)
-কথা পরে হবে আগে আমাকে তোমার কোলে মাথা রাখতে দাও।
-প্লিজ আকাশ কথাটা বলা খুবই দরকার।
– ওহ আচ্ছা বলো কি কথা।
-দেখো আকাশ আমি জানিনা তুমি কথাটা কিভাবে নিবে কিন্তু তবুও বলছি। বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আর আমি বিয়েতে রাজিও হয়েছি। কথাটা শুনে মাথায় যেন বাজ ভেঙে পরল।

-কি বলছ কি এসব তুমি। তুমি ঠিক আছোতো ।
-হ্যা আমি ঠিক আছি আর হ্যা আমি জানি আমার ভুল হয়েছে তোমার সাথে এমনটা করা ঠিক হয়নি।
-ভুল হয়েছে বললেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ দু বছরের রিলেশন কি এইভাবে শেষ হয়ে যাবে।
-দেখো আকাশ আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি । আর তাছাড়া,,
-তাছাড়া কি বলো
-না কিছুনা
-প্লিজ বলো তাছাড়া কি।
-তাছাড়া সে একজন বিসিএস ক্যাডার।

আর আমার সপ্ন আমি একজন বিসিএস ক্যাডারের বউ হবো। আর এখন আমার সেই সপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। সুধার কথা শুনে একদম পাথরের মত হয়ে গেলাম । গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। বুকের বা পাশটা খুব বেথা করতেছে। মনে হচ্ছে যেন কেউ হাতুরি দিয়ে পিটাচ্ছে। সব কিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। বুঝতে পারলাম যে অশ্রু কণা গুলো সব এক হয়েছে। কোনরকম নিজেকে সামলে নিয়ে বললান,,,,

-তো কি এতো দিন আমার সাথে অভিনয় করেছো। আর তোমার বিসিএস ক্যাডারি যখন পছন্দ তখন আমার সাথে সম্পর্ক করলা কেন। আর আমার জীবনটা নিয়েই বা খেলেলে কেন।(কথা গুলো একদমে বললাম) শুধা চুপ করে আছে দেখে আবার বললাম

-কি হলো উত্তর দাও

-আমি জানি তোমার করা প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আর আমিও তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু আমার সপ্নের কাছে আমার ভালোবাসাটা হেরে গিয়েছে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল তাই তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিলাম। পারলে ক্ষমা করে দিও। আর হ্যা দেখো তুমি আমি আমার থেকেও ভালো মেয়ে পাবে কথা গুলো বলেই সুধা চলে গেল। আমি নিথর পাথরের মতো বসে রইলাম। কি হলো এটা অনেক গুলো প্রশ্ন ছিল মনে। কেন সে আমার সাথে এমনটা করল। কি ভুল ছিল আমার। আর তার থেকে ভালো মেয়েতো আমি চাইনা। আমিতো শুধুই তাকে চাই।

-মামা আইসা পরছি (রিকশাওয়ালার ডাকে ভাবনায় ছেদ পরল। রিকশাচালককে টাকা দিয়ে অফিসে চলে আসলাম।
-কি আকাশ সাহেব মন খারাপ নাকি (অফিসের কলিগ করিম ভাই কথাটা বলল)

-না ভাই ঠিক আছি (তারপর নিজের ডেস্কে চলে আসলাম। তারপর আফিস শেষে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। নাহ বাবা-মাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। অনেক দিন যাবত বিয়ের কথা বলতেছে। নাহ আর না আজই বিয়ের কথা বলব। সত্যিতো যে যাবার সেতো যাবেই। একটা শপিংমলে ঢুকলাম তারপর বাবা মার জন্য একটা পাঞ্জাবি আর একটা শাড়ি নিলাম। বাসায় গিয়ে বাবা-মাকে দিবো আর বলবো যে আমি রাজি তোমরা মেয়ে দেখো। বাসায় যেতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। গিয়েয় বাবা-মার রুমে গেলাম দেখি তারা এখনও ঘুমায়নি।

-কিরে বাবা আজ এতো দেরি হলো যে (কথাটা বাবা বলল)
-না মানে একটু শপিং করতে গিয়েছিলাম এউ নাও বাবা এটা তোমার আর মা এটা তোমার
-কি আছে এটাতে (মা)
-আগে দেখই না

-একি এইগুলা এনেছিস কেন (বাবা)
-আমার বাবা-মাকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসি তাই। ওহ হ্যা মা তোমরা মেয়ে দেখো আমি বিয়েতে রাজি।
-সত্যি বলছিস বাবা (মার মুখে সেই শ্রেষ্ঠতম হাসিটা দেখতে পেলাম। মনে মনে বললাম মাগো তোমার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য সব কিছু করতে পারি সব।
-হ্যা মা আমি সত্যি বলছি
-আলহামদুলিল্লাহ তাহলে সামনে সপ্তাহেই মেয়ে দেখতে যাব।
-হুম কিন্তু মা আমি যাবো না।
-কেন যাবি না (বাবা)
– তোমাদের পছন্দয় আমার পছন্দ। আর হ্যা পছন্দ হলে বিয়ে ঠিক করে এসো।
-দেখেছো পাগল ছেলেটার কথা (মা) তারপর মাকে বললাম মা আমি রাতে খাবোনা মা একটু জোর করল কিন্তু কাজ হলোনা।

চলে আসলাম আমার রুমে। মেয়ে না দেখার কোন কারন নেই আমি জানি মা-বাবা আমার জন্য ভালো মেয়েই দেখবে। আর এটা সব বাবা মার ক্ষেত্রেই। দেখতে দেখতে বিয়েটা হয়ে গেলো। আর আমি এখন বাসর ঘরের সামনে আমার বন্ধু আবির আর সুজন বাসর ঘরে যাওয়ার জন্য বলছে। আমি এখনও মেয়ে দেখিনি আর শুনলাম মেয়ে নাকি হুজুরের মেয়ে আর মাদ্রাসায় পড়ত। কথাটা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বললাম। বন্ধুরা আবার বলল যা ভাবি একা বসে আছে। তারপর বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলাম। ঢুকে দরজা বুন্ধ করে দিলাম। নাহ বউটা দেখি লক্ষি আছে আমার পা ধরে সালাম করছে। আমি উঠিয়ে বললাম…

-ঠিক আছে ঠিক আছে আপনি উঠুন বিছানায় বসুন। তারপর বিছানায় গিয়ে বসল। কিন্তু আমি এখনো মুখ দখিনি এদিকে একটু লজ্জাও পাচ্ছি আবার ভয়ও পাচ্ছি অচেনা মেয়ে তারপর আবার বাসর রাত।
-দেখুনতো আমাকে পছন্দ হয়েছে কি না (বউকে দেখেতো আমি মুগ্ধ এক পলকে তাকিয়ে আছি। মনে মনে বাবা-মাকে অনেক ধন্যবাদ দিচ্ছি এমন বউ এনে দেওয়ার জন্য)

-কি পছন্দ হয়নি (বউ এর কথা শুনে ধ্যান ভাঙল) তারপর বললাম,,,,,
-হুম হয়েছে খুবই পছন্দ হয়েছে
-তাহলে জান দু রাকাত নফল নামাজ পরে আসুন (তারপর আর কথা না বারিয়ে নামাজ পরে মুনাজাত করলাম আর আল্লাহর কাছেএ শুক্রিয়া জানালাম আর বাবা-মার জন্য দুআ চাইলাম। নামাজ শেষে,,, বসুন এখানে আমার কিছু চাওয়া আছে (বউ বলল) আমি মনে মনে বললাম হয়তো টাকা চাবে নাহলে ঘুরতে যেতে চাইবে

-আমি সেই ছোট বেলা থেকেই চেয়েছি যে আমার স্বামী হবে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরবে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। মা-বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে এমনকি আমার থেকেও বেশি আর সে আমাকে তুমি করে বলবে আর আমি আপনি করেই বলবো। এক প্রকার বলতে পারেন এটা আমার সপ্ন ( বউ এর এমন কথা শুনে চোখে পানি এসে গেল এটা দুঃখ্যের কান্না নয় এটা সুখের কান্না। ছলনাময়ী তোর কথা আজ সত্যি হয়েছে হ্যা তোর থেকেও অনেক অনেক ভালো মেয়ে পেয়েছি। শুক্রিয়া মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে এমন বউ দেওয়ার জন্য।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত