পিয়াজ আর কাঁচা মরিচ কাটার পর বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম ” আমি আর এসব কাটতে পারবো না। আমার হাত জ্বলছে “। বউ মুখের উপর ধমক দিয়ে বললো ” আদা আর রসুন বাটবে কে? সব করে তারপর উঠবা। আর সকাল বেলা যে এতগুলো কাপড় ভিজিয়ে রাখছ সেসব কাপড় ধুয়ে দিবে কে শুনি”?
পিয়াজ কাটার জন্য এমনিতেই চোখ জ্বলছে তার উপর কাপড় ধুয়ে দেওয়ার কথা শুনে মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। বউকে কিছু বলতে যাবো এর মধ্যেই ও আবার বলে উঠলো ” তাড়াতাড়ি হাত চালাও। কাপড় ধুয়ে দিয়ে রোমান কে রেডি করে দিতে হবে। ওর স্কুল বাস আসার সময় হয়ে যাচ্ছে। সব মনোযোগ দিয়ে করবা। আর আমার আজ ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। তোমার সাথে না গেলেও চলবে। ড্রাইভার সাথে গেলেই হবে”।
বসে বসে রসুনের কোয়া ছিলছি আর ভাবছি কোন ভূতের খপ্পরে পড়ে এই মেয়েকে বিয়ে করেছি। মানুষ বিয়ে করে শান্তিতে থাকে। আমি আছি অশান্তিতে। মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি।হঠাৎ ল্যান্ডলাইনে ফোন এলো হ্যালো স্যার আপনি কি আর অফিস আসবেন না? দেখো ম্যানেজার তোমার ম্যাডাম প্রেগন্যান্ট। ওকে রেখে এই সময় অফিস যাওয়া পসিবল নয়৷ তুমিই আপাতত কিছুদিন অফিস চালিয়ে নেও। যা যা লাগে বাসায় এসে করে নিয়ে যেও। আর বাসায় আসার আগে আমাকে একবার ফোন দিও।( ম্যানেজারের সামনে অফিসের বস পিয়াজ রসুন কাটছে দৃশ্য টা হঠাৎ মনে হতেই ওর আসার আগে ফোনের কথা টা বলে দিলাম)বলেই ফোন রেখে দিলাম।
আচ্ছা ব্যাপার টা খুলেই বলি।আমার আর ওর বিয়ে হওয়ার এক বছরের মাথায় আমাদের প্রথম সন্তান রোমান হয়। রোমান কে কোলে নিয়ে আমার দাদী বলেছিল এবার একটা মেয়ে হলে ষোলকলা পূর্ণ হয়। সেই সময় দাদীর কথা শুনে আমার বউ কানে কানে বলেছিল,”খবরদার আর কোনো বাচ্চার কথা মাথায় নিবা না। এটাই শেষ । আর যদি কখনো কোনো ভুলে আমি কনসিভ করেই ফেলি তাহলে সেই দায় তোমার।এরপর প্রেগন্যান্ট আমি হবো না। তুমি হবে। কথাটা যেন মাথায় থাকে”।
যাইহোক মাস সাতেক আগে বউ এসে বলে সে আবার প্রেগন্যান্ট। আমি তো আকাশ থেকে পরলাম। কারণ অনেক আগেই সে প্রটেকশনের দায়ীত্ব দিয়েছিল আমার উপর। আমি কাচুমাচু করছি এমন সময় বউ বলে উঠেছিল “দোষ করবা তুমি আর ফল ভোগ করবো আমি? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। আজ থেকে তোমার অফিস যাওয়া বন্ধ। বাসায় কোনো কাজের মানুষ থাকবে না। বাসার সব কাজ তুমি করবে। নাহলে খবর করে ছাড়বো। “। হাজার হোক বউ বলে কথা। কথা না শুনে উপায় নেই। তারপর থেকে সংসারের সব কাজ আমি করছি। সে রানীর মতো পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে অর্ডার করছে।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সম্পূর্ণ বাড়ি ঝাড়ু দেই।আর সে রানীর মতো ঘুম থেকে উঠে এসে বলবে” টেবিলের নিচে ঠিকমতো ঝাড়ু দেওয়া হয়নি।আবার ঝাড়ু দেও”। উপায় না পেয়ে আবার ঝাড়ু দেই। তারপর মুছে রান্নাঘরে যাই। সেখানে সব থালাবাসন ধুয়ে রান্না করি। কতদিন যে খোটা দিছে আমার থালাবাসন ধোয়া নাকি পরিস্কার হয় না। পরে শেষমেশ ইউটিউব থেকে থালাবাসন ধোয়ার টিউটোরিয়াল দেখে থালাবাসন ধোয়া শিখেছি। ছেলেটাও ওর মায়ের মতো শয়তান হয়েছে। দুদিন পরপর ওর মায়ের কাছে নালিশ দেয় ওর স্কুল ড্রেস নাকি আমি পরিষ্কার করে ধুতে পারিনা। মনে মনে বলি আমি ” বাবা তুই যদি কাপড় ধুইতি তাহলে বুঝতি মাসের কয়দিন যায়”। আর পোলার আমার বদ অভ্যাস আছে। প্রত্যেকটা দিন স্কুল বাস আসার টাইমে তার বাথরুম পায়। এদিকে স্কুল বাস হর্ন দেয়। আর আমি ওর বাথরুমের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে বলি কিরে বাপ তোর হলো? সে নবাবের ছেলের মতো উত্তর দেয়,” আব্বু স্কুল বাসকে ওয়েট করতে বলো, আমার আরেকটু সময় লাগবে”। সম্পূর্ণ দিন এসব করি আর মনে মনে বলি “বাচ্চা হতে কতো দেড়ি পাঞ্জেরী”?
অবশেষে আবার ছেলের বাবা হয়েছি। দাদীও তার নাতির ছেলেকে আবার দেখতে এসেছে। আবার দাদী সেই একি বাহানা ” এবার একটা মেয়ে হলে ষোলকলা পূর্ণ হতো। দাদীর কথা শুনে বউয়ের মুখের দিকে তাকালাম।
আমি ওর চোখের ভাষা জানি। ও মনে মনে বলছে “নিবি নাকি আরেকটা বাচ্চা? আবারো তোকে দিয়ে মরিচ পিয়াজ কাটাবো”।