মেয়েটি

মেয়েটি

রাত বাড়ছে।মেয়েটা চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।আমি কিভাবে কি শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না।তবে মেয়েটার মনে এখন কি চলছে তা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।তার সব বন্ধুরা এই মুহুর্তে ডিফারেন্সিয়েশন,ইন্টিগ্রেশন এর ম্যাথ করছে আর সে বসে আছে ফুলশয্যার খাটে।বিয়েটা আরেকটা দিন পরে হলে মেয়েটা এইচএসসি পরীক্ষা টা পুরোপুরি শেষ করতে পারতো ।কিন্তু আমার মা যে কি মনে করে আজকেই তারিখ ঠিক করলেন জানিনা।আমি আবার মায়ের বাধ্যগত বড় সন্তান। মা যা বলেন তাই করি।এইযে বয়সে প্রায় দশ বছরের ছোট এই মেয়েটিকে বিয়ে করতে হচ্ছে মায়ের ইচ্ছেতেই।

ছাত্রী হিসেবে মেয়েটি খুব ভালো তা আমি আগেই জেনেছি,ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে তার তাও জানি কিন্তু আমার কিছুই করার নেই।আমার মা চাননি তার পুত্রবধূ আর বেশী পড়ালেখা করুক।বড় বউ হিসেবে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নিবে এটাই মায়ের চাওয়া।তাই যখন বিয়ের আগে একদিন মেয়েটির বান্ধবীরা আমাকে ডেকে নিয়ে বুঝিয়েছিলো ওকে যেন কোনভাবে পড়াশোনার সুযোগ করে দেই সেদিনও আমি অপারাগতা দেখিয়েছিলাম আমার।বলেছিলাম তোমরা ছোট,পরিবারের সব ব্যাপার তোমরা বুঝবেনা।ছোট মেয়েগুলো জবাব দিলো “ছোট একটা মেয়েকে বিয়ে করতে লজ্জা লাগছেনা আপনার?”

আমার হবু বধূ সেদিন কোন কথা বলেনি।আমি খাবারের বিল দিতে চাওয়ায় সে গম্ভীর মুখে জানালো “আমার বান্ধবীদের খাবারের বিল আমি দিবো,আপনি কেন দিবেন?ওরা কি আপনার বান্ধবী?” বলে উঠে চলে আসলো।
বিয়ের আগে দু একদিন আমি তাকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরেছি,সারপ্রাইজ চকলেট হাতে নিয়েই মেয়েটি মুচকি হাসতো কেবল।বাবার হঠাৎ রিটায়ারমেন্টের পর বাবামায়ের আদেশ অনুযায়ী নিজের অনিচ্ছা সত্বেও আমার সাথে বিয়েতে রাজী হয় মেয়েটি।ঘরে যে তার ছোট আরও দুটো বোন আছে। আমি মেয়েটির হাত স্পর্শ করলাম।সে শক্ত হয়ে বসে আছে,হাত ছাড়িয়েও নিচ্ছে না।এর মানে হলো সে আমার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছে কিন্তু আমিতো এভাবে তাকে পেতে চাইনা।আমি মেয়েটির ভালোবাসাও যে পেতে চাই।তার সাথেই যে সারাজীবন থাকতে হবে আমার।মেয়েটিকে ঘুমুতে বলে আমিও শুয়ে পরলাম।সারারাত ঘুমন্ত মেয়েটিকে দেখেই কাটিয়েছি।

পরদিন সকালে মেয়েটিকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।মাকে বলেছি মেয়েটির ফুড পয়জনিং হচ্ছে তাই ডাক্তার দেখাতে নিচ্ছি।মেয়েটি কিছুই বুঝতে পারছিলোনা।পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে বাইকটা দাড় করালাম।মেয়েটি মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে দিবে কারণ এখানেই বাকি পরীক্ষা গুলো দিয়েছিলো সে।অথচ আজ শেষ টা দিতে পারছেনা।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দেখলাম শালিকা রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে আসছে।হাতের ফাইলে বউয়ের এডমিট কার্ড,কলম,ক্যালকুলেটর সহ দরকারী জিনিস।বউকে অবাক হওয়ার সুযোগ না দিয়ে হাতে ফাইলটা ধরিয়ে দিয়ে কিছুটা ঠেলে বললাম “তাড়াতাড়ি যাও,অল দ্যা বেস্ট”। শালিকার সাথে গল্প করতে করতে ভাবছিলাম বউয়ের বান্ধবীরা তাকে দেখে কত অবাকই না হচ্ছে।আচ্ছা!লিখার সময় বউয়ের হাতের চুড়ি কি ঝনঝন করছিলো?শাড়ি পরে নববধূ পরীক্ষা দিতে কেমন লাগছে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো।

দেড় দুই ঘন্টা বাদে হঠাৎ দেখলাম বউ আমার দৌড়ে আসছে আমার দিকে।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই এতোগুলো মানুষের সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে লাগলো।চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো লিখার সময় ও মেয়েটা কাঁদছিলো নিশ্চয়ই।আমি তাকে বললাম “কাঁদছো কেন?পরীক্ষা ভালো হয়নি?ব্যাপার না,ফেইল তো মানুষই করে।ফেইল করেনা সে আবার কেমন স্টুডেন্ট?পরের বার আবার চেষ্টা করো না হয়।” মেয়েটির বান্ধবীরাও এসে পড়েছে ততক্ষণে।মেয়েটি তাদেরকে আজ রাতে রিসিপশনে অবশ্যই আসতে বলেছে অথচ বিয়ের দিন এই বান্ধবী গুলোকে দেখিনি।

মেয়েটি আজ সারাদিন অনেক হাসিখুশি,আমার দিকে আড়চোখে চেয়ে মুচকি হাসছিলো কেবল।মিষ্টি খাওয়ানোর পর্ব শুরু হওয়ার সময় মেয়েটি আমার কানে কানে বললো “আমাকে কিন্তু সাদা মিষ্টি দিবেননা,আমি কালো মিষ্টি খাই “।আমি এতক্ষণে বুঝলাম গতকাল মেয়েটি কেন মিষ্টি মুখে নিতে চায়নি।আমি হেসে বললাম”এগুলোকে কালো জাম বলে”। মেয়েটি রাগী চোখে তাকালো আমার দিকে আর ফটোগ্রাফার ঠিক সেই মুহুর্তটাই ক্যামেরা বন্দী করলেন।ছবিটা আমাদের বেডরুমে টাঙানো আছে।মেয়েটির আজ অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট দিয়েছে।আমি অনেক গুলো কালোমিষ্টি নিয়ে বাসায় ফিরছি।প্রথম প্রথম লুকিয়ে পড়লেও মা কে শেষ পর্যন্ত অনেক বুঝিয়ে মেয়েটির পড়াশোনার জন্য রাজি করিয়েছিলাম।

ভাবছি আজ মেয়েটিকে বলবো “এতো পড়ে লাভ কি?চলো না আমরা এবার দুই থেকে তিন এ যাই।” মেয়েটি রাজী হবে কিনা কে জানে? হয়তো বলবে মাস্টার্স টা শেষ করে নেই। এরপর যদি পিএইচডি করতে দেশের বাইরে চলে যায়? ব্যাপার না।আমি সহ গিয়ে অনেকগুলো বাচ্চা সমেত ফিরে আসবো ইনশাআল্লাহ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত