একজন বাবা আর ছেলের গল্প

একজন বাবা আর ছেলের গল্প

বাবার কথা মত স্টাইলে তৃতীয় বার শ্রাবণীকে প্রপোজ করতে গিয়ে এইবার বামগালে থাপ্পড় খেয়েছি। বাসায় এসে গালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছি। বাবা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,

– কি রে, রেজাল্ট কি? আমি মুখটা গোমড়া করে বললাম,

— ফেল, তোমার কথামত স্টাইলে প্রপোজ করতে গিয়ে এইবার থাপ্পড় খেয়েছি। বাবা আমার হাতটা ধরে বললো,

– যাক, বেচে গেছিস তাহলে বাবার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,

— বাবা, তোমার ছেলে একটা মেয়ের হাতে থাপ্পড় খেয়েছে আর তুমি বলছো বেচে গেছি বাবা তখন হাসি হাসি মুখে বললো,

-তোর মাকে যখন আমি হাটু গেরে বসে প্রপোজ করি তখন তোর মা আমায় লাথি মেরে ছিলো। তুই তো খেয়েছিস সামান্য থাপ্পড় । তারমানে তুই লাথি খাওয়া থেকে বেঁচে গেলি বাবার কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আমি রেগে গিয়ে বললাম,

— আজ থেকে তোমার স্টাইল ফলো করবো না। আমি আমার নিজের মত শ্রাবণীকে প্রপোজ করবো। বাবা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

– আগে বল, আমি দেখতে কেমন?

— তুমি দেখতে কালো নিগ্রোদের মত.

– তোর মা দেখতে কেমন ছিলো?

— মা দেখতে খুব সুন্দর ছিলো

– তোর মার সাথে আমার বিয়ে কিভাবে হয়েছে?

— তোমরা প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছো বাবা এইবার হাসতে হাসতে বললো,

-আমার মত আফ্রিকান নিগ্রোর সাথে পাকিস্তানি হুর পরী তোর মার প্রেম হলো কিভাবে? আমি অবাক হয়ে বললাম,

— কিভাবে? বাবা শার্টের কলারটা উচু করে বললো,

– কারণ আমি লাভার বয়। আমি বুঝি মেয়েদের কিভাবে প্রেমের জালে ফাসাতে হয়। তাই আমার উপর ভরসা রাখ। একটা সময় শ্রাবণী তোর প্রেমে পড়বেই বাবার কথা মত স্টাইলে আবার শ্রাবণীকে প্রপোজ করতে গিয়ে খুব বড় বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম। কোন রকম দৌড়ে বাসায় আসলাম। বাবা আমায় দেখে হাসি হাসি মুখে বললো,

– রেজাল্ট কি? আমি রাগে লাল হয়ে বললাম,

— ফেল,, তোমার কথা মত শ্রাবণীর হাতে চাকু তুলে দিয়ে বললাম। এই হৃদয়ে শুধু তুমি আছো। বিশ্বাস না হলে এই বুক ছিড়ে দেখো এই হৃদয়ে শুধু তোমার নাম লেখা আছে। বাবা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,

– ডায়লগ তো ঠিকিই আছে তাহলে সমস্যা কি হলো?

— সমস্যা হলো মেয়ে সত্যি সত্যি আমার বুক ছিড়ে দেখতে চেয়েছিলো আমার হৃদয়ে তার নাম আছে কি না। ও মেডিকেলে পড়ে এইসব কাটাকাটির অভ্যাস না কি ওর আছে। তাই কোন রকম জান নিয়ে পালিয়ে আসলাম… রাত ১১ টা বাজে। হঠাৎ বাবা রুমে এসে বললো,

– রিয়াদ চল, তোর হৃদয় ভাঙার কষ্টে বাপ ছেলে দুই জনে মিলে বিয়ার খাই.. বাবা আর আমি ব্রিজের উপর বিয়ারের বোতল নিয়ে বসে আছি। হঠাৎ বাবা বললো,

– কি রে, বিয়ার কেমন লাগছে? আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

— বাবা, কেমন যেনো সেভেন আপের মত লাগছে বাবা বললো,

– তোর বোতলের ভিতর আমি সেভন আপেই ভরে দিয়েছি। বাবা ছেলে একসাথে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরলে লোকে খারাপ বলবে বাবার কথা শুনে আমি হাসছি আর নদীর জলের দিকে তাকিয়ে ভাবছি,

আমার বাবা এতটা ভালো কেন? ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় আমার মা মারা যায়। তারপর থেকে আমার বাবাই আমার সব। বাবা আমার সাথে কখনো বাবার মত মিশে নি , মিশেছে একজন ভালো বন্ধু হিসাবে। বাবা আর আমার পছন্দ সম্পূর্ণ আলাদা। আমি আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করি তো বাবা করেন ব্রাজিল। আর এই জন্যই বিশ্বকাপ আসলেই বাবা ছেলের সম্পর্ক হয়ে যায় টম আর জেরির মত। প্রতি সপ্তাহে বাবা ছেলে সিনেমা দেখতে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো আমি পছন্দ করি এক্যাশন ফিল্ম আর বাবা রোমান্টিক। সিনেমা হলের পর্দায় যখন নায়ক নায়িকা লিপকিস করে তখন আমি লজ্জায় মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলে বাবা বলে,

– আরে গাধা চুমু খাওয়াটাও হলো একটা আর্ট। যা সবাই পারে না। এইসব দেখে যদি না শিখিস তাহলে তো বিয়ের পর বউকে চুমু খেতে গেলে দাঁতের সাথে দাঁতের ঘষা খেয়ে ২ জন ২ দিকে পড়ে থাকবি…

অবশেষে শ্রাবণীর সাথে আমার সম্পর্কটা হয়ে গেলো। দুইজন দুইজনকে পাগলের মত ভালোবেসে ফেললাম। আমাদের সম্পর্ক হয়ে যাবার পর বাবার মাঝে এক অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। আজকাল বাবা আমায় দাবা খেলায় ডাকেন না। একা একাই খেলেন। বাবা এখন একা একাই ঘুরতে বের হয়। আমায় ডাকে না। বাবা একা একাই সিনেমাহলে যায় আমাকে নেবার প্রয়োজন মনে করে না। তারমানে কি বাবা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে আজ মাঝ রাতে বাবা একা একা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আমি পিছন থেকে কয়েকবার ডাকলাম কিন্তু বাবা আমার ডাকে সাড়া দিলো না। আয়নাতে নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম বাবার এমন পরিবর্তন হবার কারণ কি…

তখন হঠাৎ মনে পড়লো, বাবা যখন দাবা খেলেন তখন আমায় ডাকবে কিভাবে কারণ আমি তখন শ্রাবণীর সাথে ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত থাকি। বাবা আমাকে নিয়ে কিভাবে ঘুরতে বের হবে, কারণ আমি তো সারাদিন শ্রাবণীকে নিয়ে ঘুরেবেড়াই। বাবা যখন একা একা সিনেমাহলে যান তখন তো আমি শ্রাবণীকে নিয়ে অন্য সিনেমা হলে এক্যাশন ফিল্ম দেখি।

তারমানে বাবা পরিবর্তন হয় নি। পরিবর্তন হয়ে গেছি আমি। আমার অল্প কয়েকদিনের ভালোবাসার জন্য আমার বাবার ২৪ বছরের ভালোবাসাকে আমি অবহেলা করছি। এমন সময় মনে হলো আজতো মাসের ২৪ তারিখ। বাবাকে নিয়ে ক্লিনিকে যাওয়ার কথা ছিলো। ৭ বছর ধরে প্রতি মাসের ২৪ তারিখ আমি বাবাকে নিয়ে ক্লিনিকে যায় চেকাপের জন্য। আর আজ কি না আমি সেই তারিখটা ভুলে গেলাম রাত ১২ঃ ১৫ বাজে আমি আর বাবা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে ব্রিজের উপর বসে আছি। বাবা বিয়ারের বোতলে চুমুক দিয়ে বললো,

– কি রে, বিয়ারটা কেমন জানি সেভেন আপের মত লাগে । আমি তখন মুচকি হেসে বললাম,

— বাবা ছেলে একসাথে মাতাল হয়ে ঘরে ফিরলে লোকে খারাপ বলবে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত