বিয়ে মানে প্যারা

বিয়ে মানে প্যারা

বিয়ের পরপরই সুমনের জীবনটা বেশ সহজ হয়ে গেছে। এটা যতই দিন যাচ্ছে সুমন ততই বুঝতে পারছে। এখন ওর মনে হচ্ছে বিয়ের ব্যাপারে ওর নিজের যে একটা নেগেটিভ ধারনা ছিল সেটা আসলে ঠিক ছিল না। সবার সাথেই যে খারাপ কিছু হবে এমনটা ভাবাও ওর ভুল ছিল । অবশ্য ধারনাটা এমনি এমনি এক দিনে তৈরি হয় নি। চারিপাশে দেখে শুনেই তৈরি হয়েছে। ছাত্র জীবনের অনেকটা সময় সুমন একটা ফ্যামিলির সাথে সাবলেট ছিল। সেই পরিবারটাকে সে কাছ থেকে দেখেছে। সেটার থেকেই ওর ধারনাটা আরও পাকাপোক্ত হয়েছিল। সুমনের মনে হয়েছিল বিয়ে করে মানুষ কেবল প্যারার ভেতরেই থাকে। কিন্তু মিতুকে বিয়ে করার পর ধারনা দিন দিন বদলাতে শুরু করেছে।

অনেক আগে থেকেই সুমনের সকাল বেলা গরম পানি দিয়ে গোসলের অভ্যাস। একা একাই গরম পানি করতো সে। মিতু যেদিন থেকে ওর বাসায় থাকতে এল তার দুদিন পরেই সুমন যখন সকাল বেলা বাথরুমে গেল তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো এক বালতি পানি সেখানে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঠিক তার পাশেই একটা হাড়িতে গরম পানি রাখা। এই হাড়িতেই ও পানি গরম করতো। সুমনের মনটা মুহুর্তের ভেতরেই ভাল হয়ে গেল। সেই দিন থেকেই শুরু। সেদিন থেকেই সুমন লক্ষ্য করা শুরু করলো যে ওকে অনেক কিছুর জন্যই আর চিন্তা করতে হয় না। আগে রান্না বান্না বাজার করা ঘর পরিষ্কার সব কিছুই ওকে নিজে নিজেই করতে হত কিন্তু মিতু আসার পর থেকে সব কিছু মিতু সামলে নিচ্ছে চমৎকার ভাবে। সকাল বেলা সুমনকে অফিসে পাঠিয়ে মিতু আবার ইউনিভার্সিটিতে যায়। মিতুর পড়াশুনা তখনও শেষ হয় নি।

মিতুকেই ও একদমই বিয়ে করতে চায় নি। বলা যায় রীতিমত জোড় জবর্দস্তি করেই ওকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চাকরি শুরু করার পরে একা একাই দিন কাটছিলো ওর। ইচ্ছে করেই একা ছিল ও। সুমনের কাছে কেবলই মনে হত বিয়ে মানেই নতুন ঝামেলা কাধে নেওয়া। এই তো বেশ আছি। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাকে আর একা থাকতে দিল না। মিতুর সাথে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দিয়ে দিল। বাবা মায়ের উপরে তো আর কিছু বলার থাকে না। কিন্তু মিতু আসার পর থেকে জীবন আসলেই অনেকটা সহজ হয়ে গেছে ওর জন্য। তবে কিছু কিছু ঝামেলাও যে আসে নি সেটাও কিন্তু না। আগে ছুটির দিন গুলোতে চরম আলসেমিতে কাটতো। বলতে গেলে সারাটা দিন শুয়ে শুয়ে কাটিয়ে দিত। রাত ভর চলতো মুভি কিংবা কোন টিভি সিরিজ দেখা। কিন্তু এখন আর সেই সব করার উপায় নেই। ছুটির দিন গুলোতে বাধ্যতামূলক ভাবে বের হতে হয়।

সুমন না চাইলেও বের হতে হয় তাকে। মিতুর একটাই কথা যে সারাটা সপ্তাহ সুযোগ পাই না অন্তত একটা দিন তো বের হবে নাকি! আর এই দিনে কেবল বাইরে ঘুরাঘুরি সেটাও না সপ্তাহের দরকারি কেনাকাটা এক সাথে করে নেয়। সুমনকে তখন ব্যাগ হাতে মিতুর পেছন পেছন ঘুরতে হয়। সুমন যে কেবল বিরক্তই হয় সেটা বলা যায় না। খানিকটা উপভোগও যেন করে। এমনই হওয়ার কথা ছিল। সুপারসপের ভেতরে তাকিয়ে দেখে কেবল ওর অবস্থাই এমন না, অন্য সব পুরুষই এমন ভাবে ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘুরছে। এমনই টা স্বাভাবিক।

জীবন চলতে থাকলো আপন গতিতে। কিন্তু এরই মাঝে ঝামেলা বাঁধলো নতুন জায়গাতে। সকালের পরের সময়টা মিতুর ক্যাম্পাসেই কাটে। দুপুরের ভেতরেই প্রায় সব দিনের ক্লাস শেষ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে সুমন অফিস থেকেও ক্যাম্পাসের দিকে যায়। বিশেষ করে যেদিন মিতুর দেরি হবে সেদিন। কিন্তু গতদিন মিতুকে না বলেই গিয়ে হাজির হয়েছিল ক্যাম্পাসে। কোন কারন ছিল না। অফিসের একটা কাজে বাইরে যেতে হয়েছিল। বসকে বলেছিল আজকে আর আসবে না। বসও ঠিক মানা করে নি। আর ক্যাম্পাসটা ওর নিজেরও। প্রতিবার গেলে পুরোনো কারো না কারো সাথে ঠিকই দেখা হয়ে যায়। গত দিন গিয়ে তেমন ভাবে হাটছিল। মিতুর ডিপার্টমেন্টের সামনে যেতেই মিতুকে দেখতে পেল। তখনই দাঁড়িয়ে গেল। কারন মিতু একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। মিতু ওর দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে তাই ওকে ঠিক দেখতে পায় নি। ছেলেটার চেহারা সুমন পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে। ছেলেটাকে চেনে।

একই ক্যাম্পাস হওয়ার সুবাদে মিতুর সব কথাই সুমন জানতো । বিয়ের আগে মিতুর একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। অবশ্য সেটা মিতুর বিয়ের বেশ কিছুদিন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। মিতু নিজেই ওকে বলেছিল সেসব কথা। সেটা নিয়ে সুমনের কোন সমস্যা ছিল না। ও নিজেও কিছু দিন একটা সম্পর্কে জড়িয়েছিল। শেষে ভাল লাগে নি বলে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু বিয়ের পরে আবার সেই ছেলের সাথে কথা কেন?

সুমন কেবল অনুভব করলো ওর পুরো শরীর কাঁপছে। সে কি রাগ নাকি অভিমান সেটা সুমন বুঝতে পারলো না। তখনই বাসার দিকে রওনা দিল। প্রথম দিন মিতু কোন কারনই বুঝতে পারলো না যে সুমনের কি হয়েছে। খুব বেশি কথা না বললেও সুমন ওর সাথে বেশ ভালই কথা বলে। অন্তত বাসায় ওদের সময় ভাল কাটে কিন্তু সুমনের ভার মুখ দেখে মিতুর বুঝতে কষ্ট হল না যে কিছু একটা হয়েছে। কি যে হয়েছে মিতু বুঝতেই পারছে না। কয়েকবার জানতে চেয়েও কোন উত্তর পায় নি। কিন্তু পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়েই জানতে পারলো যে সুমন নাকি গতকাল ক্যাম্পাসে এসেছিল। কিন্তু ওর সাথে দেখা করে নি। ঠিক তখনই ওর কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল। সুমন নিশ্চয় ওকে অনিকের সাথে কথা বলতে দেখেছে। রাতে খেতে বসে মিতুই প্রথমে কথা বলল

-আমি ঠিক করেছি আর ক্যাম্পাসে যাবো না। সুমন চুপ করে খাচ্ছিলো। ওর দিকে চট করে তাকালো। তারপর বলল
-কেন?
-না, এই যে মানুষ জন দূর থেকে দেখে আমি কার সাথে কথা বলছি। কাছে গিয়ে দেখেও না কি কথা বলছি। ভুল বোঝে। ক্যাম্পাসে না গেলে তো আর এসব হত না। সুমন কি বলতে বুঝতে পারলো না। মিতু আবার বলল
-অনিক এর আগেও আমার সাথে কথা বলতে এসেছে। আমি প্রতিবারই এড়িয়ে গেছি। গতদিন এড়াতে পারি নি কারন আমার সাথে আর কেউ ছিল না। সামনে পড়ে গেছিলাম। মিতু আরও কিছু সময় চুপ করে রইলো। তারপর বলল

-বিয়ের পর আমি তুমি ছাড়া আর কাউকে আমার মনে স্থান দেই নি। কারো কথা ভাবিও নি আমি । এখন সেই তুমি যদি আমাকে এমন ভাবো তাহলে আমি কোথায় যাবো!! সুমন কি বলতে খুজে পেল। ওর কেবল মনে হল এভাবে চট করে রেগে যাওয়া ওর মোটেই উচিৎ হয় নি। অন্তত ওর সাথে কথা বলা দরকার ছিল। এভাবে রাগ করা উচিৎ হয় নি। সুমন বলল

-আসলে এই কদিনে আমার কি হয়েছে জানি না, তোমার পাশে অন্য কাউকে ভাবতেই পারি না। আমি মানে তার উপর ঐ ছেলেটা মিতু বলল
-আগের প্রেমিক ছিল তাই ভেবে বসলে যে আমি ঐ ছেলের সাথে আবার কিছু সুমন তাড়াতাড়ি করে বলল
-আরে আমি তাই বললাম নাকি…
-তাহলে কি বলেছো শুনি? কেন আমার সাথে কাল থেকে কথা বল নি? কেন আমাকে কাল জড়িয়ে ধরে ঘুমাও নি কেন সুমন মনে হয় ভাল যন্ত্রনায় পড়া গেল। কই ও নিজে রাগ করে ছিল এখন ওরই রাগ ভাঙ্গাতে হবে। কারো সাথে বসবাস করা বুঝি এমনই একটা যন্ত্রনার ব্যাপার। আনন্দময় যন্ত্রনা।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত