সংসার শুরু করার সময়, আমার স্বামী প্রাইভেট ফার্মে সাধারণ একটা চাকুরী করতো।আমরা অনেক খুজে মোহাম্মদপুরে দুই রুমের একটা বাসা ভাড়া নেই।আসবাবপত্র বলতে তেমন কিছুই ছিলো না।আমাদের পছন্দ করে বিয়ে।আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাসার বাড়ি ওয়ালার নাতনী কে আমি পড়াতাম।সেখান থেকে আমি দু’ হাজার টাকা পেতাম। তাই দিয়ে কত কিছু কিনতাম। একমাসে একটা বিছানার চাদর। কোন মাসে একটা সো- পিছ। আবার কাঁচের টুকটাক জিনিসপত্র। মাত্র দু’ হাজার টাকার টিউশনির টাকা দিয়েও, আমি আমার অনেক শখের জিনিস কিনেছি। সংসারটাকে এত সাজাতে ইচ্ছে করতো। আমার প্রিয় সংসার। তখন সংসার সাজানোর সাধ্য ছিলো না। এখন হয়েছে। কারন আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগ।আমরা যা পেয়েছি তার বর্তমান বাজার মূল্য সাত আট কোটির কম না। এক সময় এই সব জায়গার কোন মূল্য ছিলো না। কিন্তু এখন ঢাকার ভেতরে এই সব জমির মূল্য অনেক।
আমার জায়গাটা আমি ডেভেলপার দের দিয়ে দিয়েছি। ওরা এক কালিন যে টাকা দিয়েছে। তা দিয়ে আমার স্বামী চাকুরী ছেড়ে ব্যবসা করতে শুরু করেছে। ভালই কাটছে দিন। এর মধ্যে আমাদের ফ্লাট রেডি। বিশাল অনুষ্ঠান করে আমাদের ফ্লাট আমাদের বুজিয়ে দিয়েছে ডেভেলপার কোম্পানি । আমি পেয়েছি পাঁচটা ফ্লাট। চারটা ভাড়া দিয়েছি। একটায় নিজেরা থাকি। প্রতিমাসে নতুন নতুন জিনিস কিনে ফ্লাট সাজাই। বন্ধুদের দাওয়াত দেই। নিজের বাড়ি দেখাই।এত ভালো লাগে।আগে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকদের কাছে আমার তেমন কোন মূল্য ছিলো না। আমার শাশুড়ী মা আমাকে নিয়ে অনেক কটু কথা বলতো। আমার গায়ের রং কালো এটা সে মানতে পারতো না। তাদের ছেলে ভালো ছাত্র ছিলো।
পাশ করে বড়ো চাকুরী করবে। তাদের ধারনা ছিলো ছেলেকে গ্রামে বিয়ে করালে তারা অনেক লাভবান হবে। ছেলে শহরে বিয়ে করেছে কিছুই পায় নাই। কারন আমার বাবা’রা ঢাকার স্হানীয়। আমাদের পরিবারের অনেক জমি ছিলো। আমাদের পরিবারের পুরুষ মানুষেরা জায়গা বেঁচে আর খায়। কোন কাজ করে না। বেচতে বেচতে আমাদের জায়গা – জমি এখন প্রায় শেষ। এই সময়ে আমাদের মায়ের নামের একটা নিচু জায়গা ছিলো। যা আমাদের বোনদের নামে অনেক আগেই লিখে দেওয়া হয়েছিলো।তাই বাবা সেটা বিক্রি করতে পারে নাই।সেই জায়গার পাশে সব নিচু জায়গা ভরাট করে, বড়ো বড়ো ডেভলপার কোম্পানি এপার্টমেনট বানাচ্ছিল। তখন আমরাও আমাদের যায়গাটা ডেভলপার কে দেই।তখন থেকে আমার কদর বেড়ে যায় শ্বশুর বাড়িতে।
আমার স্বামী আমার এই সম্পত্তি পাওয়াটাকে তার নিজের অধিকার মনে করে। আমার ফ্লাট পাওয়ার সময় ও বলছিলো সব ফ্লাট কি তোমার নামে থাকবে? আমি বললাম কি বলছো বুঝতে পারছি না। তখন ও বলল না স্বামীরা যদি বৌয়ের নামে ফ্লাট কিনতে পারে। তবে বৌয়ের ফ্লাট তো স্বামীর নামে দেওয়া এমন কিছু বিষয় না।আমি বললাম আমাদের সব কিছু হবে আমাদের সন্তানদের। তবে আমি জানি। আমার বিয়ের আগে আমরা যখন প্রেম করতাম। তখন থেকেই হাসিব, মানে আমার স্বামী।
আমাদের পরিবারের সম্পত্তির হিসাব নিয়ে কথা বলতো। আমাদের বিয়ের আগে অনেক বার আমাদের সমপর্কের টানা-পোড়ণ হয়েছে।হাসিব কি আমাকে বিয়ে করার আগে ওর লাভ – লোকসান হিসাব করেনি? করেছে।কয়টা প্রেমের বিয়ে হয় লাভ – লোকসান হিসাব না করে? আমাকে বিয়ে করে হাসিবের লোকসান হয় নাই। লাভই হয়েছে। আমার কি লোকসান হয়েছে? না? আমি পেয়েছি ভালো পরিবারের শিক্ষিত ছেলে।আর সব চাইতে বড়ো কথা আমি যাকে ভালোবাসি তাকে পেয়েছি। তা না হলে আমার বিয়ে হতো স্হানীয় কোন মেট্রিক ফেল ছেলের সাথে।যে হয়তো দোকানদারি করতো। আর তা না হলে জায়গা বেচে খেতো।আমি আমাদের পরিবারের একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শিক্ষিত মেয়ে।আমার বাবার বাসায়ও সবাই আমাকে দাম দেয়। কারন আমি তাদের শিক্ষিত বোন।তবে আমি জানি যেখানে আমার মূলায়ণ বেশি থাকার কথা। সেখানে আমার চাইতে, আমার টাকার মূল্য বেশি।
সবার কপালে কি সুখ সয়? না সয় না। আমার কপালে স্বামী, সংসার, বাচ্চা, আমার অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা, এর কোন কিছুর সুখ ভোগ করার ভাগ্যে নাই। আমার হাতের বগলের নীচে একটা শক্ত গুটি হয়েছে।ডাক্তার দেখালাম। কপাল খারাপ হলে যা হয়। একজন বলল হোমিওপ্যাথি খাও। এই রকম টিউমার একদম কয়দিনে ভালো হয়ে যায়।হোমিওপ্যাথিক খেলাম ছয় মাস। যা হবার তাই হয়েছে। ভালো তো হওয়া দূরের কথা। ক্যানসার যখন ধরা পড়লো পরীক্ষার মাধ্যমে। তখন তার স্টেজ বিপদ সীমা পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে আমর কোথায় চিকিৎসা করাবো, তা ঠিক করতে গেছে আরো কিছু সময়।
আমার হাজব্যানড বলছে টাকা- পয়সা সব তো ব্যবসায় লাগানো। ক্যাস টাকা যা ছিলো তাতো গাড়ি কেনার সময় চলে গেছে।আমাকে দেখতে আসা লোকজনের সামনে সে এমন ভাব করে। যে টাকার চিন্তায় সে শেষ। আমার চিকিৎসা করার জন্য মনে হয় সে পথে বসবে।আমি শুধু দেখছি সে কি করে। আমার আপা এসে যখন বলল। টাকা জোগাড় করতে দেরি হলেতো সমস্যা। তানিয়া চিকিৎসা এখন শুরু না করলে তো বিপদ হয়ে যাবে।তখন সে বলল, আসলে আপা আমি গ্রামে কিছু জমি কিনার জন্য টাকা দিয়ে ফেলেছি।আপা বললেন সেই টাকা ফেরত আনো।তখন ও বলল এই সব কি বলেন? আমাদের পরিবারের একটা সন্মান আছে গ্রামে। এটা কখনই সম্ভব না।
আমি আর থাকতে পারলাম না। ওদের সামনে থেকে চলে আসলাম আমার বেড রুমে।তার পর রুম লক করে শুয়ে আছি। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত। এই হলো আমার মূল্য আমার সংসারে।অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছি কখন নিজেও জানি না। দরজায় বাহির থেকে ধুম ধাম শব্দ। আমার দরজা মনে হয় ভেঙ্গে ফেলবে এমন অবস্থা।সেই সাথে আমাকে ডাকছে।আস্তে করে দরজা খুলে দিলাম। আর বললাম কি হয়েছে? আমি ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। আমারকে হাসিব বলল রুম লক করেছিলে কেন?আমি বললাম এমনিতেই।
সবার সাথে টেবিলে বসে একসাথে খেলাম। খাওয়া শেষ করে বললাম।আজ আমি আমার রুমে একা থাকবো। হাসিব কে বললাম, তুমি হাটাচলা করো মোবাইলে থাকো, আলো আসলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। হাসিব খুশি মনে গেস্ট রুমে চলে গেলো।ওর জন্য ভালোই হলো। সারারাত ফেসবুকে থাকবে না হলে আরামে ঘুমাবে। অসুস্থ বৌয়ের সাথে থাকতে কার ভালো লাগে।আবার দরজা লক করে দিলাম।তার পর আমার কলেজ জীবনের বন্ধু বাবুকে কল দিলাম।আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ও-ই একমাত্র বন্ধু, যে চাকুরী করে না। ওদের হোটেল ব্যবসা আছে, সেখানে বসে আর পরানো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। আর সবার উপকার করে বেড়ায়।
ওর সব টাইপের মানুষের সাথে যোগাযোগ আছে।বাবুকে বললাম আমার অসুস্থতার কথা।পারলে বাবু রাতেই চলে আসে, আমাকে দেখতে।প্রথমেতো বিশ্বাসই করছিলো না। পরে যখন বুঝতে পারলো সত্যিই আমার ক্যানসার। তখন ওর গলায় যে কান্না আটকে কথা বলছে। তা বুঝতে আমার কষ্ট হচ্ছিল না।বাবুকে বললাম দোস্ত আমাকে তোর হেল্প করতে হবে।বাবু আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো আর বলল তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি আজ রাতেই পলটুর সাথে কথা বলবো। আর কালকে দিনের মধ্যে যে যেখানে আছে সবাইরে খবর করে দিবো। তোর কোন টেনশন নাই। তুই যে ভাবে চাইবি সে ভাবেই সব হবে।তবে আর একবার ভাবে দেখ হাসিব তোর সিদ্ধান্ত মানতে পারবে তো?না মানলে তখন আরো ঝামেলা হবে।তুই অসুস্থ শরীরে এই সব ধকল নিতে পারবি? আমি শুধু বললাম। দোস্ত মরার আগে মরতে চাই না।একবার নিজেরে নিজে মূল্য দিতে চাই।
গতকাল সারারাত ঘুমাতে পারি নাই।সারাক্ষণ শুধু মনে হয়েছে। আমি অসুস্থ মানুষ। আমি কি পারবো আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে? যত বার এই প্রশ্নটা মনে আসে। ততবার চোখ বন্ধ করলেই হাসিবের চেহারাটা মনে পড়ে। আর আমি আমার ভেতরে কুঁকড়ে যাই।শুধু মনে হয় আমার সংসারে আমার মূল্য এতটুকু নাই। এই সংসারটা কত কষ্ট করে সাজিয়েছি।একসময় কত অর্থনৈতিক সমস্যা ছিলো। তখনও আমি হাসিব কে, সামান্য টিউশনি করে সাহায্য করতে চাইতাম।আর আজ আমার টাকায় বাড়ি – গাড়ি হাসিবের বিজনেস সব কিছু। আর যখন আমার ক্যানসার ধরা পরেছে। তখন টাকা জোগাড় নাই। আমাকে কোথায় চিকিৎসা করানো হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হীনতা? আমি কি ফেলনা?না আমি আমার কাছে ফেলনা না।আমি যুদ্ধ করবো হাসিবের স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে। এবং আমার ক্যানসারের বিরুদ্ধে। আমি মরার আগে মরবো না।
ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি।দরজায় জোরে জোরে থাপ্পর দেওয়ার শব্দে ঘুম ভেঙলো।মোবাইলে সময় দেখে আতকে উঠলাম। এখন বেলা দশ-টা বাজে। আরে আজ তো বন্ধু বাবুর আসার কথা। দরজা খুলে বের হলাম। নাস্তা খেলাম। হাসিব এখনও বাসায়। ওকে বললাম আজ বিশেষ কাজ না থাকলে বের হইয়ো না।আমার কিছু কথা আছে, তোমার সাথে।হাসিব বের হবে না, বলল।হাসিব কে বললাম আমাদের বাড়ির দলিল গুলো বের করে দাও। ও বলল কেন? আমি বললাম দরকার আছে।এমন সময় দরজায় বেল বাজলো। দরজা খুলতে উঠে গেলাম।কারন আমি জানি আমার বন্ধু’রা এসেছে।কাল রাতে বাবুর সাথে এমনই কথা হয়েছে।
দরজা খুলার সাথে সাথে আমি অবাক হয়ে গেলাম। বাবু একা আসে নাই। সাথে আমাদের আরো তিন বান্ধবী আর বাবুর বৌ এসেছে। আর একজনকে চিনতে পারছি না।সবাই আমাকে জড়িয়ে ধরছে একজন একজন করে।আমার চোখে বার বার পানি চলে আসছে।ওরাও কান্না চেপে রাখছে বুঝতে পারছি।সবাই সবার খোঁজ খবর নেওয়া শেষ। ওরা আমাকে নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন করলো না।এতে বুঝতে পারলাম। বাবু’র সাথে গতকাল যে আলোচনা হয়েছে। তা বাবু ওদের সাথে শেয়ার করেছে।
সবাই কে বললাম তোরা সব একসাথে কি ভাবে হলি।এবার বাবু বলল তোর তো খবর নাই।খালি সংসার আর সংসার।আমরা সবাই ফেসবুকে দিনের মধ্যে একবার হলেও একজন আরেক জনের খবর পাই।আমি রাতে ওদের মেসেজ দিয়ে রেখেছিলাম আজ তোর বাসায় আসবো।আর দেখ এগুলো সঙ্গে সঙ্গে হাজির। মনে হয় বিয়ে খেতে যাচ্ছি। যদি ভাগ কম পড়ে। বাবুর কথায় সবাই হেসে উঠলাম।আমি জানি বাবুই ওদের সবাই কে নিয়ে এসেছে। আমার ভালো লাগবে বলে।আমরা সবাই ছবি তোললাম।মনে মনে ভাবলাম আমি যখন থাকবো না তখন ওরা আমার ছবি ফেসবুকে দেখবে। কারন এখানে বসেই মিতু ছবি পোস্ট শুরু করে দিয়েছে।আমার কেমন জানি ওদের সাথে এই হইচই ভালোই লাগছে।কেন যে সংসার সংসার করে, বন্ধু – বান্ধব একটু বেড়ানো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা সব ছেড়ে দিয়েছিলাম।
হাসিব ওদের সাথে হাই -হ্যালো করেই ভেতরে চলে গেছে। বাবু এবার বলল। তোরা সবাই চুপ কর আমি এখন কিছু দরকারী কথা বলবো নাজুর সাথে।সবাই চুপ হয়ে গেলো বাবু শুরু করলো কথা।প্রথমেই আমাকে বলল-শোন নাজু তুই কি তোর সিদ্ধান্তে অটল? তুই কি একবার হাসিব ভাইয়ের সাথে আলোচনা করবি?তোর সিদ্ধান্ত নিয়ে। দেখ হাসিব ভাই যদি তোর সিদ্ধান্ত শুনে পজিটিভ ভাবে নেয়। তবে তোর জন্য ভালো হবে। সবার প্রথমে ঘরের মানুষের সাহায্য লাগে সব বিষয়ে।
তখন আমি বললাম, শোন বাবু, আজ হাসিবের ক্যানসার ধরা পড়লে আমি কি করতাম? সবার আগে আমি বলতাম বাড়ি – গাড়ি কার জন্য?আমাদের জন্য। দরকার হলে সব বেচে দেবো। তার পরেও আমি তোমাকে ভালো করে তুলবো।তোমার চিকিৎসা হবে সবার আগে। টাকার চিন্তা তোমার না।আমি আছি তা হলে কেন? আমি হলে এই কদিনে ঠিক করে ফেলতাম, ওকে কোথায় নিয়ে চিকিৎসা করাবো তা। এবং রওনাও হয়ে যেতাম।আর হাসিব আমার ক্ষেত্রে কি করলো?বলে গ্রামের জমি কেনার টাকা ফেরত আনা যাবে না। তাতে তার সন্মানে লাগবে।আমার জীবনের চেয়ে ওর গ্রামের বাড়িতে জমি কেনা বড়ো হলো? আমি কি ঘরের আসবাবপত্র? যাতে ঘুণ ধরেছে। একটু ঠেকা দিয়ে কদিন চালাই। তার পর ফেলে দেবো? আমার বান্ধবীরা চোখ মুছছে। এবার বাবু বলল, তবে আর দেরি করার দরকার নাই।
ফ্লাটের দলিল নিয়ে আয়। ফটোকপি করতে হবে। আর ও হচ্ছে মাসুদ আমার চাচাত শালা। ও তোর ব্যাংক লোন পেতে সাহায্যে করবে।আর আমি তোর ফ্লাট বিক্রির জন্য। আমাদের বন্ধু পলটু কে বলে দিয়েছি। ও দালালির কাজ করে। ও কালকে আসবে তোর ফ্লাট দেখতে। তোর ফ্লাটের ছবি আর ভিডিও করবে।এবার বান্ধবী সমপা বললো।আমার ভাসুর ক্যানসার হসপিটালে বসে। তোর সব রিপোর্ট ফটোকপি করে ভাইয়াকে দিতে বলেছে।কিছু কাগজ পত্র লাগে বাহিরে চিকিৎসা করাতে গেলে।উনি সব ঠিক করে দিবে। আর কোথায় কত টাকা লাগবে চিকিৎসা করাতে। তারও একটা ধারনা পাবি।আর একটা কথা, এখন টাকা কেমন আছে তোদের হাতে।আমি বললাম হাসিব বলতে পারবে।তবে তোরা চেষ্টা কর ব্যাংক লোনের।হঠাত আমার মনে হলো পর্দার আড়ালে হাসিব,ও আমাদের কথা শুনছে। আড়াল থেকে। বন্ধুরা সবাই চলে গেলো।
ক্লান্ত লাগছে একটু ঘুমানো দরকার।বিকেলে ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা।হাসিব আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না।আমিও কিছু বললাম না।রাতে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে হাসিব আমাকে বলল। ডাক্তার কে যে বললা, অপারেশন তুমি দেশের বাহিরে করাবে।এত টাকা’তো এখন আমার কাছে নাই। আর এখন বিজনেসের একটা সমস্যা চলছে। এটার সমাধান না হলেতো,আমার পক্ষে ঢাকার বাহিরে যাওয়া সম্ভব না।আমি বললাম তোমাকে কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আমার চিকিৎসা কোথায় কি ভাবে হবে। কত টাকা লাগবে। কোথা থেকে টাকা আসবে সব আমি দেখবো।হাসিব মুখ কালো করে বলল, ঠিক আছে বাসায় গিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করবো।
বাসায় এসে কিছুই ভালো লাগছে না। একটু পরেই হাসিব আমাকে নিয়ে বসবে।এবং আমার সিদ্ধান্ত শুনে ওর প্রতিক্রিয়া কি হবে ভাবছি। আমি কি পারবো আমার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে।হাসিব রুমে ঢুকেই আমাকে বলল। বলো তুমি কি সিদ্ধান্ত নিলে? কি ভাবে তুমি তোমার চিকিৎসা করাবে শুনি।ওর বলার মধ্যে একটা রাগ আর অামার প্রতি অবজ্ঞা ছিলো।
আমি শান্ত গলায় বললাম।হাসিব আমি আমার সিদ্ধান্ত গুলো তোমাকে জানাচ্ছি। আমি ঠিক করেছি একটা ফ্লাট এখন বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে লোন নেবো।আর তা দিয়ে আমার চিকিৎসা শুরু করবো।আর এর মধ্যে আরো দুটো ফ্লাট আমি বিক্রি করে দেবো।আমার কাছে থাকবে দুটা ফ্লাট। একটায় আমরা থাকবো আর একটা ভাড়া থাকবে।যেহেতু আমার রোগটা কঠিন। তাই সব সময় টাকা হাতে থাকা দরকার।বার বার ঝামেলা না করে, একবারে ফ্লাট বিক্রির টাকা ব্যাংকে এফ ডি আর করে রাখবো।মাসে মাসে একটা টাকাও পাবো। আর দরকার হলে তখন উঠেয়ে কাজে লাগাতে পারবো।তোমাকেও টাকার চিন্তা করতে হবে না।আর তোমাকে যে আমি বিজনেসের জন্য টাকা দিয়েছি, তার একটা লাভের অংশ আমাকে দেওয়ার কথা।কারন আমাদের বিজনেসের ৩০% শেয়ার আমার নামে। গত দু’ বছরের লাভ-ক্ষতির হিসাব আমি চাই নাই। আর তুমিও আমাকে কোন হিসাব দাও নাই।এখন থেকে বিজনেসের একটা টাকা প্রতি মাসে আমার একাউন্টে দিবে।আমার কথা শুনে হাসিব থ হয়ে গেলো।ও মনে হয় আমার কথা বুঝতে পারছে না।
হতবিহ্বল ভাব কাটিয়ে উঠে হাসিব প্রচনড রেগে গেলো।আর আমাকে বলল এই সব বুদ্ধি কি তোমার বন্ধু’রা দিয়ে গেলো?আমি যেন তোমার এই সব ফালতু বন্ধু’দের আমার বাসায় না দেখি।এবার আমি বললাম হাসিব এগুলো আমার সিদ্ধান্ত। এবং এই সিদ্ধান্তের নড়েচড় হবে না।তুমি যদি আমার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে কোন সহযোগিতা না করতে চাও তবে ভালো কথা।আমি কিছু বলবো না।তবে কোন প্রকার বাধা দিতে আসবে না।আমি মৃত্যুর মুখে দাড়িয়ে আছি। তোমার কাছে আমার চাওয়া বা পাওয়ার বা হারাবার আর কিছু নাই। আমি এখন বুঝতে চাই আমার জীবনের মূল্য কত?আমি আমার মতো করে বাচঁতে চাই। জীবন শুধু অন্যের জন্য বিলিয়ে দেওয়া জন্য না।নিজের জন্যও বাঁচতে হয়।
হাসিব রেগেমেগে আমাকে কিছু না বলেই চলে গেলো রুম থেকে।আমার কেন জানি ভয় করছে না। আমার ভালো লাগছে।আমার মনে হচ্ছে আহারে কেন যে এই সিদ্ধান্ত গুলি আগে নিতে পারি নাই।তবে তো মানুষের মতো বাঁচতে পারতাম। কেন এত সমঝোতা করে চলতাম।কোন শান্তির জন্য এত ত্যাগ?হাসিবের মতো মানুষেরা তাদের সংসারের শুধু নিজের লাভ খোঁজে।