সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষা

সূর্যোদয়ের প্রতিক্ষা

খুব সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল কারন নতুন বাড়িতে আমার একদম ঘুম হয় না। আর এই বাড়িতে গত তিনদিন হলো আসছি। তিন দিন শুধু ঘড়টা গুছাতে সময় চলে গেল তাই আমি খুব ক্লান্ত। ঘুম ঠিক মত হচ্ছে না কারন জায়গাটাও নতুন বলে। তবে সময়ের সাথে আশা করি সব ঠিক করে নিতে পারবো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র ভোর সাড়ে ৫টা বাজে। আর চারিদিকটা আলো ফুটতে শুরু করছে। তাই সকালের সূর্যটা দেখতে মায়ের রুমে গিয়ে ছাদেঁর চাবিটা নিয়ে উপরে যেতে লাগলাম।

যখন ছাদের কাছে গেলাম তখন দেখলাম ছাদের দরজা খোলা। এটা দেখে তেমন অবাক হলাম না কারন শুনছি যে, ছাদের চাবি প্রতিটা ফ্ল্যাটের লোকের কাছে আছে। তখন বুঝলাম হয়ত কেউ এতো সকালে ছাদে উঠছে। তবে শহরের মানুষ যে এতো সকালে ছাদে যায় তা দেখে ভাল লাগলো। কৌতুহল বশত দেখতে গেলাম কে ছাদে উঠছে। ছাদে ডুকতে খেয়াল করলাম একটা মেয়ে দুই হাত বাড়িয়ে আকাশের দিকে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। প্রথম দেখেই কেমন জানি লাগলো। হয়ত সিঙ্গেল ছেলেদের মেয়ে দেখলে প্রথমে এমনই লাগে। যাই হোক, আমি একটা কাশি দিলাম। আর মেয়েটা কেমন যেন বিরক্তসূচক চোখ নিয়ে আমার দিকে দৃষ্টিপাত করলো। মনে হচ্ছে খুব বিরক্ত করে ফেলছি। তখন মেয়েটা আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমিই বললাম……

— আসলে গত তিন দিন হলো আমি এই বাড়িতে ভাড়া এসেছি। কিন্তু আপনাকে তো কখনো দেখি নি।
–( মেয়েটি শুধু চুপ করে তাকিয়ে রইলো)
— আচ্ছা আপনার নামটা কি?
–( পুনরায় শুধু চুপ করে তাকিয়ে রইলো)
— আচ্ছা আপনি কি কথা বলতে পারেন না নাকি আমার সাথে কথা বলতে চান না।

আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে বরং মেয়েটি চলে গেল। আচ্ছা আমি এমন কি বললাম যে কথা না বলে চলে গেল। তাও নামটা বললে কি দোষ ছিল? এটাও হতে পারে মেয়েটি কথা বলতে পারে না। খবরটা তো নিতে হবে কারন যেহেতু একই বাড়িতে থাকি। তবে খবর নেওয়াটা মনে হয় কঠিন হবে না কারন এই বাড়িতে তিনটি ফ্যামিলি থাকে। আমরা নতুন আসছি আর আমাদের পাশের ফ্লাটে থাকে আরেকটা ফ্যামিলি আর নিচ তলায় থাকে মালিকের পরিবার। যদি এটা মালিকের মেয়ে হয় তবে একটু সমস্যা আছে। যাই হোক, এইসব নিয়ে আর না ভেবে ছাদ থেকে এলাকাটা যতটা দেখা সম্ভব ততটা দেখে নিচে চলে আসলাম।

এভাবেই প্রায় প্রতিদিন সকালটা শুরু হয়। কিন্তু একটা দিনও কথা বলে না। মনে হয় মেয়েটা সত্যি বোবা। নয়ত অবশ্য একবার হলেও তো কথা বলতো। এভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল এই বাড়িতে আসা। বিকালে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম তখন আমার পাশের রুমে মেয়েলী কন্ঠে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কন্ঠ শুনে বুঝলাম যে এটা আমার ছোট বোন দিয়ার গলা না। আর আমার পাশের রুমটা হলো আমার মা বাবার ঘর। তাই কৌতুহল বশত দেখতে গেলাম কে? মায়ের রুমের কাছে যেতেই দেখি একটা মেয়ে পিছন ফিরে বসে মায়ের সাথে কথা বলছে। আমায় দরজায় দেখে মা ডাক দিলো….

— কিরে রাজ কখন ঘুম থেকে উঠলি?
— এই তো
— ভেতরে আয়। দেখ কে এসেছে আমাদের সাথে দেখা করতে। আর এর নাম হলো শ্রাবনী। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। মেয়েটা আমার দিকে তাকালো আর আমিও তাকালাম মেয়েটার দিকে। ওরে দেখে আমি পুরু অবাক না হলেও অল্প অবাক হলাম। কারন এই তো সেই মেয়ে যাকে প্রতিদিন দেখে আমার সকালটা শুরু হয়।

— শ্রাবনী এই হলো আমার ছেলে রাজ। আর দিয়া কলেজে আছে। মনে হয় চলে আসবে তাহলে পরে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো নে।

আমি শ্রাবনীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কারন এতদিন যাকে আমি বোবা ভেবে আসলাম এখন এর পুরু উল্টো টা হলো। তবে মানতে হবে মেয়েটার কন্ঠ খুব সুন্দর। যদিও এটা ওরে বলতে চাই তাহলে ভাববে অন্য কিছু। তাই ওরে আর কিছু না বলাতেই ভাল হবে। আমি আর কোন কথা বলে আমার রুমে চলে আসলাম। যদি বেশিখন মেয়েটার পাশে থাকি তাহলে হয়ত মেয়েটা আমাকে নিয়ে ভুল ধারনা তৈরি হতে পারে।

আমি রুমে বসে আমার বই গুলো গোছাছিলাম। তখন আমার রুমের আয়নাতে আমার চোখটা পরলো আর খেয়াল করলাম দরজার পাশে শ্রাবনী আমার রুমে উকিঁ মারছে। আমি তাই পেছনে তাকালাম আর ও সাথে সাথে সরে গেল। আর আমি দরজার কাছে যেতেই ও তারাতারি রুম থেকে চলে গেল। আমি রাতে রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। কয়েকটা চাকরীর জয়েন পরীক্ষা দিয়ে ছিলাম। এখন দেখছি কোন জয়েন ই-মেইল আসছে কি না। কিন্তু কি কপাল আমার একটাও আসে নি ই-মেইল। মনে হয়, মামা চাচার জোর ছাড়া এইসব সম্ভব না। হঠাৎ আইসক্রিম খেতে খেতে আমার ছোট বোন দিয়ার আগমন……

— ভাইয়া তোর সাথে আমার একটু কথা ছিল?
— ওরে বাব্বা আমার ছোট বোনটা কবে থেকে এতো সিরিয়াস মুড নিয়ে কথা বলার পারমিশন চাওয়া শুরু করলো?
— ভাইয়া আমি খুব সিরিয়াস।
— আচ্ছা বলতে থাক, আমি শুনছি?
— না আগে তুই ল্যাপটপ বন্ধ কর তবেই বলবো।
— ওকে আমার মিষ্টি বোন বল।
— আসলে আমি তোর জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করছি।
— ও সত্যি। তো থাকে কোথায় মেয়ে?
— এই বাড়িতে…
— ও আচ্ছা তুই কি শ্রাবনীর কথা বলছিস?
— না তো

— তাহলে কে? আমি তো ওরে ছাড়া আর কাউকে দেখি নি।
— অনু, এই বাড়ির মালিকের মেয়ে।
— কি বলছিস এইসব? মা জানলে আমার ১২ টা থেকে ১৩ টা বাজাবে।
— এইসব আমার উপর ছেড়ে দে। আগে তো তুই অনুর সাথে কথা বলে দেখ।
— থাক বোন। আমার এইসব কোন কিছু করার ইচ্ছে নাই।
— ওকে তাহলে আমি অনুকে না করে দিবো নে।
— মানে?
— মানে ও নিজে থেকে তোর সাথে দেখা করতে চাইছে।
— কি বলিস? তোর সাথে ওর পরিচয় হলো কি করে?
— আমি আর অনু একই ক্লাসে পড়ি।
— তার মানে ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে।
— হুমম ভাইয়া।

— তুই জানিস তোর বান্ধবী আমার কত দিনের ছোট হবে?
— আচ্ছা ভাইয়া তুই কি তোর থেকে বড় বিয়ে করবি নাকি এই রকমই তো বিয়ে করবি তাই না।
— তুই কি শুরু করলি বল তো?
— যা করছি বেশ করছি।
— ওকে এখন তুই যা আমি ভেবে দেখবো নে।
— ভেবে দেখ তবে উত্তর যেন পজিটিভ হয়।
— ওকে।
— কাল আমায় নিয়ে তুই কলেজে যাবি আর ওর সাথে দেখা করবি।
— দেখা করলে তো বাড়িতেও করতে পারি তাই না।
— সমস্যা আছে। যা বললাম তাই যেন হয়। আমায় নিয়ে কাল তুই কলেজ যাবি।
— ওকে এবার যা।

ও চলে গেল আর আমায় টেনশন দিয়ে গেল। এমনি আমি চাকরীর সমস্যায় বাচিঁ না। তার উপর আবার এইসব প্রেম নিয়ে পরলো। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছাদে চলে যেতে লাগলাম। আর এটা আমার ক্রমাগত রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। ছাদে শ্রাবনীও থাকে তবে কথা বলি না। ও ছাদের এক পাশে দাড়ালে আমি অন্য পাশে দাড়াই। বলতে গেলে ওরে দেখাও আমার একটা অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে। ছাদে যেতেই প্রতিদিনের মত নজর পরলো ওর উপর। শ্রাবনীও আমার দিকে একটু তাকালো। তারপর যে যার মত দুই দিকে চলে গেলাম। কিছুখন দাড়িয়ে থাকতেই হঠাৎ দিয়া আসলো…..

— কিরে ভাই তুই এখানে? আমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
— ও তুই নিচে যা আমি আসছি।

দিয়া চলে গেল তবে শ্রাবনীও আমাদের কথা শুনলো আর তাকিয়ে ছিল। আমি আর কোন কথা না বলে চলে আসলাম নিচে। তারপর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে দিয়াকে নিয়ে রওনা দিলাম। কলেজের গেটের সামনে যেতেই দেখি একটা লেডি বাহিনী দাড়িয়ে আছে। আমি যখন কলেজে পরতাম তখন তো এমন বাহিনী গেটে দাড়িয়ে থাকতো না। পরে দেখি আমার বোন দিয়াও এই গ্রুপ সার্কেলে যোগ দিলো। আর সবার সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি শুধু বোকার মত দাড়িয়ে ছিলাম। তারপর দিয়া একটা মেয়েকে আমার সামনে নিয়ে আনলো।

— ভাইয়া এই হলো অনু? আর আমি তোরে এর কথাই বলে ছিলাম।
— ও আচ্ছা
— কেমন আছেন?( অনু)
— জ্বী ভাল আর আপনি কেমন আছেন?
— ভাল। ( অনু)
— আচ্ছা দিয়া আমি এবার যাই। আমার একটা কাজ আছে।
— ওকে
— ভাল করে যাইয়েন।( অনু)

আমি কোন মতে একটা রিকশা নিয়ে ওইখান থেকে চলে আসলাম। কারন এত গুলো মেয়ে যদি কেউ বলতো ফুসকা খেতে তাহলে তো আমি শেষ। যাক কোন মতে বেচেঁ আসলাম। আর অনু মেয়ের ব্যবহার দেখলাম খারাপ না বরং ভালই।

এভাবে দিন গুলো যেতে লাগলো। প্রতিদিন সকালে শ্রাবনীর সাথে দেখা হয় তবে কথা হয় না। আর বাড়িতে অনুর সাথে দেখা হলে কোন মতে পাশ কাটিয়ে চলে আসি। কারন, মালিকের মেয়ে বলে কথা। আমি চাই না আমার জন্য পরিবারের কোন বদনাম হোক। একদিন দুপুরের দিকে আমি রিকশা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন খেয়াল করলাম আমার সামনে দিয়ে একটা রিকশা যাচ্ছিল। যার মাঝে অনু একটা ছেলের সাথে বসা ছিল। তবে আমি ছেলেটাকে চিনি। ও এই এলাকায় থাকে আর ওর নাম আবীর। আমি একটু অবাক হয় নি বরং নিজের ছোট বোনের উপর রাগ হচ্ছিল। কারন আজও সে মানুষ চিনতে ভুল করে।

আমি বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে দিয়াকে ডাকলাম। আর ও আমার রুমে আসতেই ওরে আমি সব বলি। ও প্রথমে একটু অবাক হয়ে যায়। তবে আমার কথা গুলো মেনে নেয় কারন এটাই তো স্বাভাবিক। তারপর দিয়া চলে যায় আর আমি ল্যাপটপ নিয়ে বসি আর মেইল চেক করতে থাকি। হঠাৎ দেখি একটা মেইল আসছে একটা কোম্পানি থেকে। আমাকে সাব-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পদে নিয়োগ নিয়েছে। তবে তার আগে দুই মাস ট্রেনিং এ থাকতে হবে। এটা দেখার পর এতো খুশি হলাম যা বলার মত না। এখন থেকে কেউ আমায় বেকার বলতে পারবে না। খবরটা মা, বাবা আর দিয়াকে দিতে ওরাও অনেক খুশি হয়। কালকে অফিসে যোগাযোগ করে ট্রেনিং এ চলে যেতে হবে। তাই বিকাল থেকে ব্যাগ গুছানো শুরু করে দিলাম।

বিকাল আর রাতে ব্যাগ গুছিয়ে প্রায় ক্লান্ত হয়ে যাই। পরে রাত প্রায় ১০ টার দিকে ছাদে আসি। হয়ত আর দুইটা মাস আসা হবে না। কারন এখানে আর দেখাও হবে না শ্রাবনীর সাথে। আমি ছাদে দাড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ কে যেন আমার হাত স্পর্শ করলো। তাকিয়ে দেখি অনু আর সাথে সাথে আমি আমার হাত সরিয়ে নিলাম। তারপর ওরে আমি কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম। কিন্তু পরে ওর কথা শুনে আমিই অবাক হয়ে যাই। কারন ও বলতে আসছিল যে আবীরের সাথে ওর রিলেশন আছে। কথা গুলো সে কেদেঁ কেদেঁ বলে। কারন আমি ওরে প্রথমে রাগ নিয়ে কথা বললাম। এতে আমারও খারাপ লাগলো। তাই আমি ওর দুইটা হাত ধরে সরি বলি। আর তখনই পাশে তাকিয়ে দেখি শ্রাবনী। আমি অনুর হাতটা ছেড়ে দিয়ে যখনই শ্রাবনীর সামনে গেলাম। সাথে সাথে ও দৌড়ে নিচে চলে গেল। এবার আমি বুঝতে পারছি না কি করবো? কিন্তু এটা ঠিক যে আমি হয়ত শ্রাবনীকে ভালবেসে ফেলছি। তাই বেশি ভাবলাম না কারন সকালে ভোরে ছাদে এসে ওর সাথে কথা বলে নিবো নে। এই ভেবে রাতে রুমে এসে ঘুমিয়ে পরি।

খুব সকালে এলার্মের আওয়াজে ঘুম থেকে উঠি। তারপর তারাতারি ছাদে যাই। কিন্তু ছাদে শ্রাবনীকে দেখতে পাই নি। প্রায় ২ ঘন্টা অপেক্ষা করি কিন্তু ও আসে না। শ্রাবনীকে না দেখেতে পেরে বুকের বাম পাশটায় ব্যাথা অনুভব করি। হা হয়ত অল্প অল্প দেখায় গভীর ভালবাসার জন্ম হয়েছে। পরে ওর খবর নিতে চেষ্টা করি দিয়াকে দিয়ে কিন্তু জানতে পারি ও বাড়ি নেই। খুব সকালেই ওর কোন বান্ধবীর বাড়ি নাকি গেছে।

আমি হতাশ হয়েই কাধেঁ ব্যাগ নিয়ে অফিসের ট্রেনিং এর জন্য বার হয়ে যাই। বাড়ির গেটে দাড়িয়ে ভুল বশত হলেও চোখ গুলো শুধু ওরে খুজতেঁ থাকে। কিন্তু ওর দেখা পেলাম না। আমি একটা রিকশা ঠিক করে অফিস চলে আসি। সেখানে আসতেই একটা গাড়িতে মোট ৪ জনকে ট্রেনিং এর জন্য পাঠানো হলো। এর মাঝে আমিও ছিলাম। তবে মেধা পরীক্ষায় ওদের মাঝে ৩য় হই আমি।

আমাদের ট্রেনিং এর জন্য প্রথমে মাওয়া নিয়ে আসা হয়। এখানে প্রায় ১ মাস রেখে নদী পথের সেতুর কাজ দেখায়। পরে আমাদের খাগড়াছড়ি ও ময়মনসিংহ মিলিয়ে ১ মাস ট্রেনিং করায়। তারপর আমাদের ৪ জনকে ৪টা জেলাতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমার ভাগ্যবশত আমার নিজ জেলাতেই আমার পদ নিয়োগ হয়। এতে আমি খুব খুশি হই। এবং বাড়ি ফিরে আসি আর পরশু দিন আমার অফিসে জয়েন দিতে হবে।

রাত প্রায় ১২টার দিকে বাড়ি আসি। বাড়ির সবাই আমাকে দেখে খুব খুশি হয়। তবে শ্রাবনীকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু এতো রাতে ওদের ফ্ল্যাটে নক করা ঠিক হবে না। তাই এখন শুধু ভোর হওয়ার অপেক্ষায় আছি। যদিও আমি খুব ক্লান্ত তবু ভোরের পাখির জন্য জেগে আছি। কিন্তু জেগে থাকলেও ভোরের দিকে এসে আমার চোখটা লেগে যায় আর আমি ঘুমিয়ে যাই। কিন্তু কপালের ফেরে আমার সকালেই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। পরে খেয়াল করি ঘরে বিড়াল ডুকে ছিল। আর বিড়ালের কারনে রান্না ঘরে কি যেন পরে যায় আর যার ফলে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। আমি কোন মতে দৌড়ে ছাদে যাই আর চারপাশটা পাগলের মত খুজতে থাকি কিন্তু শ্রাবনীর দেখা পাই না। তবু আমি প্রায় ১ ঘন্টা ছাদে দাড়িয়ে অপেক্ষা করি। পরে বাধ্য হয়ে আমি নিজেই ওদের ফ্ল্যাটের দরজায় গিয়ে নক করি। নক করতেই আন্টি এসে দরজা খুলে। ওনি আমায় ভালই চিনে….

— আরে রাজ বাবা তুমি। কখন আসলে ট্রেনিং থেকে?
— জ্বি আন্টি কাল রাতে আসছিলাম। আন্টি শ্রাবনী আছে?
— হুমম ও ওর রুমে। ওর যে কি হলো বাবা? কত দিন গুলো ধরে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না। এমনকি ঘর থেকেও বার হয় না।
— আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি।
— অবশ্যই, তুমি যাও ও ওর রুমেই আছে। ওর রুমের কাছে যেতেই দেখি দরজা খুলা রেখেই শুয়ে আছে।
— ভিতরে আসার অনুমতি কি পেতে পারি?
— ( ও পিছন ফিরে অামায় দেখে কেমন যেন অবাক হয়ে গেল)

ওর চুপ থাকা দেখে আমি ভিতরে চলেই আসলাম। কিন্তু ও আস্তে আস্তে ওর ঠোট গুলো ভেঙ্গে কেদেঁই দিলো। আর সাথে সাথে আমায় জড়িয়ে ধরলো।

— আরে কি হলো?
–( ও কেদেঁই চলেছে)
— বলবে নাকি আমি চলে যাবো?
— বড্ড বেশি ভালবাসি তোমায়। তোমাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না।
— আমি আবার কার হলাম?
— ওই দিন অনুর হাত ধরায় আমি ভুল বুঝে ছিলাম। পরে অনু আমায় সব বুঝিয়ে বলে। এতে তোমার দোষ ছিল না আর আমি তোমায় ভুল বুঝি। যখন আমার ভুল ভাঙ্গে তখন তুমি আর এখানে ছিলে না। আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও।

— মাফ করতে পারি তবে একটা শর্তে?
— কি?
— যদি বাকি জীবনটা আমার সাথে সকালের সূর্য দেখ।
— হুমম দেখবো। ( ও বলছে আর কাদছেঁ)
— আরে পাগলী এখন কাদছো কেন?
— এতো সুখ এইভাবে পেয়ে যাবো জানতাম না তো। বলেই ও আমায় জড়িয়ে ধরলো। আমিও ওরে শক্ত করে আগলে রাখলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত