অবন্তি,পুরো নাম অবন্তিকা সেন। বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের কন্যা। ওর বাবা বিমল সেন একজন সরকারী চাকুরীজিবী। নিত্য বদলির বলয়ে ঘুরতে থাকেন ভদ্রলোক, সেই সুবাদে সেভেনের বছর অবন্তি আমাদের স্স্কুলে ভর্তি হয়। ক্লাসের একমাত্র হিন্দু শিক্ষার্থী, বেশ মায়াভরা চেহারা, লাজুকতা এবং সৌন্দর্যতার অপরুপ মিশ্রন ঘটেছে ওর দেহ-পল্লবে। ও হাসলে যেন ধরা হাসে,অভিমানের ধরনটাও অদ্ভুত,তবে কান্না দেখার সৌভাগ্য হয়নি এতদিনে। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সহাস্য বদনটাই চোখে পরেছে বারবার। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠেছি,তলে তলে কিয়ত পাঁজি হলেও গায়ে পড়ে মেয়েদের সাথে খুব একটা ভাব জমেনা আমার।ঠিক অহংকার না, তবে আমিত্ববোধের ভাবটা প্রকট। বিশেষত অবন্তির সাথে কথাই হতনা; যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম। অদৃষ্টের বুঝি সেটা সহ্য হলোনা।
বাদল স্যার আমাদের অংকের মাস্টার। ভীষণ রাগী এবং বদমেজাজি হিসাবে গোটা স্কুলে ওনার সুনাম-সুখ্যাতি অতুল্য। পোড়াকপাল আমার!অন্য সব সাবজেক্টে কোন রকম উতরে গেলেও অংকে এসে মাথা একেবারে গুলিয়ে ফেলি, সূত্রগুলো ধরে রাখতে পারিনা। প্রায়দিন ভুল করার কারনে স্যার আমাকে শাস্তি দেন, বিচিত্র সব শাস্তি! সাজার ধরন দেখে গোটা ক্লাস না হেসে পারেনা; এর চেয়ে কষে বেতের দু’চার ঘা খাওয়া বুঝি অনেক সোজা।
স্যার রীতিমত আমার উপর বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। ক্লাসে এসেই আমার উপর ১০-১৫ মিনিটের ছোটখাট একখানা লেকচার দেন, অপূর্ব সব শব্দের সমাবেশ থাকে তাতে, পাশাপাশি বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর সাথে আমাকে এমন কায়দায় তুলনা করেন, সবিশেষ মনে হয়-পশুকুলেরই বুঝি মর্যাদাহানি ঘটে গেল। আমার মত মাথামোটা নাকি জগতে দু’টি দেখেননি, এরূপ বলে আমাকে অন্যতম প্রমাণের চেষ্টায় ত্রুটি করেননা। অধিকন্তু স্যার যেদিন ওনার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বাঁধান এবং নিয়মানুযায়ী পরাজিত হন, সেদিন হৃদয়ের যত ঝাল সব আমার উপরেই ঢেলে থাকেন। বিসর্জনের গতি দেখে আমি বুঝতে পারি, বাক-বিতণ্ডা আজ কতদূর গড়িয়েছিল।
থাক এ-সব বাজে কথা। এতদিনে ক্লাস সেভেন ডেঙ্গিয়ে এইটে পদার্পণ করলাম। নাকের নিচে গোঁফের রেখা দেখা দিয়েছে।স্বপ্নে মাঝে মাঝে ললনারা এসে চরিত্রহনন করছে। এদিকে নোভেল-নাটক আর দেহতত্ত্বের কবিতাদি পড়ে ভিতরে ভিতরে আমি আরো পেঁকে উঠেছি। সাহিত্যের ভাষায় যাকে ‘ইঁচড়ে পাঁকা’ বা ‘অকালপক্ব’ বলে থাকে।জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা গল্প “তিনগোয়েন্দা”আর এ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর”মাসুদ রানা”ততদিনে নেশার মত জেঁকে ধরেছে। পরিবারের চোখ এড়িয়ে যেভাবে পারছি ভলিউমগুলো একটার পর একটা গোগ্রাসে গিলে যাচ্ছি। বাথরুমকে বানিয়েছি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ‘পাঠশালা’।
স্যারদের আখি ফাঁকি দিয়ে ক্লাসটাইমও বাদ যাচ্ছেনা। একদিন বাদল স্যারের চারচোখ আমাকে ধোঁকা দিল, চশমার নিচ দিয়ে বুঝে ফেললেন-আমার মনোযোগ অন্য কোথাও নিবিষ্ট। ধীরপদে আমার দিকে এগিয়ে এলেন, মিনিট দুয়েক কঠোর পর্যবেক্ষণ করার পরও যখন আমার ধ্যান ভাঙ্গলনা, তখন বাধ্য হয়ে আমার অর্ধপঠিত বইখানায় ছোঁ মারলেন। প্রথমে মনে হল-কোন বন্ধু বুঝি ইতরামি করছে, যা প্রায়শই করে থাকে। বিরক্তি ভরে বললাম-“ছাড়!কুত্তা।”
কিন্তু দৃশ্যপটের কোন পরিবর্তন এলোনা, অগত্যা মাথা তুলতেই হল।
মাস্টার সাবকে দেখামাত্র অযাচিত আতঙ্কে আত্মা একেবারে শুকিয়ে এল আমার। “কুত্তা”নামক বহুল ব্যবহৃত শব্দটি শুনে-বাদল স্যারের মুখে যেন বাদলার-কালোছায়া নেমে এসেছে।উনি কালক্ষেপণ করলেন না, কান ধরে সোজা প্রিন্সিপালের রুমে টেনে নিয়ে আসলেন আমাকে। তারপর ঘটা করে আমার সকল গুণাগুণ বর্ণনা করতে লাগলেন এবং যে সকল গুণের বহিপ্রকাশ এখনোধি আমার চরিত্রে ঘটেনি সেগুলোও অগ্রীম জুড়ে দিলেন। প্রিন্সিপাল স্যার শান্তপ্রকৃতির বিচক্ষণ মানুষ। বাদল স্যারের অভিযোগ বর্ষণ শেষ হওয়ার পর ওনাকে বললেন। “আপনি এখন আসুন, আমি ওর সাথে একটু একা কথা বলব।” বাদল স্যার বের হয়ে গেলেন। রুমে এখন শুধু অসমবয়সী দু’টি মনুষ্য-নিঃশ্বাসের সংঘর্ষ হচ্ছে। “পড়াশোনায় মন নেই কেন?” পিনপতন নীরবতায় যেন বিকট বাজ পড়ল। কোন উত্তর করলাম না। স্যার কিছুটা উত্তেজিত হয়ে “জবাব দিচ্ছনা যে!” “ক্লাসের পড়া পড়তে ভালোলাগেনা স্যার”। আমতা আমতা করে বললাম। তো কী ভাল লাগে শুনি? “গল্পের বই পড়তে।”
“গল্পের বই পড়াতো ভাল। তবে ক্লাসের পড়াওতো পড়তে হবে। সামনে বোর্ড পরিক্ষা সেদিকে নজর আছে? যতটুকু জানি, অংক ব্যতিত অন্য সকল সাবজেক্টে তুমি মোটামুটি ভাল। অংকে সমস্যা কী বাবা?” বেশ স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বলে গেলেন প্রিন্সিপাল এইচ.এম আজহার সাহেব। ওনার কথায় শিক্ষকত্বের চেয়ে পিতৃত্বের দিকটি বেশি ফুঁটে উঠেছে। মনে স্বস্তি এবং সাহস দু’টোই পেলাম। বললাম-“বাদল স্যারকে খুব ভয় লাগে,তাই কোন অংক না বুঝলে তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করতে সাহস হয়না।” কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন-তারপর বললেন, “যদি কোন স্টুডেন্ট তোমাকে বুঝিয়ে দেয় তাহলে পারবেতো?” ইনশাআল্লাহ-স্যার,পারব। প্রিন্সিপাল বাদল স্যারকে ডেকে পাঠালেন। “অংকে সবচেয়ে ভাল কে,আপনার ক্লাসে?””অবন্তিকা নামে একটি মেয়ে আছে অংকে খুবই পাঁকা। বললেন বাদল স্যার।
-“আচ্ছা,তাহলে ওকে ডেকে আনুন।”
কিছুক্ষণ পর অবন্তিকা রুমে ঢুকল, চেহারায় অজানা আতঙ্কের ছাপ। “এই মেয়ে তোমার নাম অবন্তিকা?” “জ্বী,স্যার।” “শোন, ও ম্যাথে একটু দূর্বল, শুনলাম-তুমি নাকি ভাল বুঝ; ওর ম্যাথের প্রবলেমগুলো সলভ করে দিবা। আর যদি সলভ না হয় তাহলে নেক্সটাইমে ওকে না, তোমাকে আমি ধরবো।” “জ্বী,স্যার” বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল অবন্তিকা। “তোমরা এখন যেতে পার।” নিজের কাজে মন দিলেন প্রিন্সিপাল স্যার। পরের দিন টিফিনের সময় ওর কাছে গেলাম। কিছুটা লজ্জা নিয়ে বললাম-“অবন্তি, অংকে হেল্প করার কথা ছিল! আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলাম, আমার কথা বেঁধে বেঁধে আসতেছিল, ঠোট কাঁপিতেছিল। ও সম্ভবত বুঝতে পেরেছিল যে, আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতে তেমন অভ্যস্ত নই। “বারে, না করে কি উপায় আছে? প্রিন্সিপালের আদেশ যে।”
একটু ঢং করে বলল অবন্তি। “কিন্তু একটা শর্ত আছে!” “কী শর্ত?” “আমাকে গল্প শুনাতে হবে।” “কিন্তু আমিতো গল্প পারিনা।” “একদম মিথ্যা বকবেনা,আমি জানি তুমি অনেক গল্পের বই পড়,সেখান থেকে না হয় দু’একটা শুনিয়ে দিবে। জানো, ছোটবেলায় ঠাম্মা অনেক গল্প বলত-সুয়োরানী-দুয়োরাণীর গল্প, বাঘ-ভাল্লুক, ভূত-প্রেত, রাক্ষস-খক্ষস, আরো কত কিসিমের গল্প। ঠাম্মা গত হওয়ার পর কেউ আর গল্প শোনায়না।” প্রয়াত ঠাকুরমার স্মৃতিতে অবন্তির চোখদুটি ঝাপসা হয়ে এল। হে জগদীশ্বর! নীরব অশ্রু বিসর্জনের দৃশ্য কত অপরূপ!!
অংকে আমার উন্নতি এখন চোখে পড়ার মতন। বাদল স্যার লেকচার ঝাড়ার হেতু না পেয়ে মনের কথা মনেতেই দাফন দেন আজকাল। তবে ওনার বিশ্বাস এ উত্থানে আমার কোন হাত নেই, সব ক্রেডিট অবন্তির’ই প্রাপ্য।চলনে-বলনে, আকারে-ইঙ্গিতে উনি সেটাই প্রকাশ করতে ব্যস্ত। অল্প দিনে আমরা খুব ভাল বন্ধু বনে গেলাম। অংকের সূত্র আর গল্পের চরিত্র আমাদের সাঝে মেলবন্ধন হিসাবে কাজ করল। “তুই”-“তুমি” দু’টি সম্বোধনেই অভ্যস্ত ছিলাম আমি। কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম-অবন্তি “তুমি”র নিচে নামেনি, বরঞ্চ কালেভদ্রে”আপনি”ও বলে বসে। একদিন ঝাড়ি দিয়ে বললাম,”কীরে তুই আমাকে আপনি বলিস যে? সেদিন ও ডান হাতের অঙ্গুলি দিয়ে মুখের উপর আছড়ে পরা চুলগুলি সরাতে সরাতে বলেছিল,”আপনি আমার বড়তো তাই বলে ফেলি।” দ্বিতীয় কথাটি বলার জো রইল না আমার।
টুকটাক কবিতা লেখার অভ্যাস ছিল, স্কুলের মৌসুমি অনুষ্ঠানগুলিতে বারকয়েক রবীন্দ্র-নজরুল আবৃতিও করেছি। একবার স্কুলের বার্ষিক দেয়ালিকায় আমার লেখা একটি কবিতা জায়গা পেল। তখন থেকে ও আমাকে কবি বলে ডাকে, আমি লজ্জা পাই, নিষেধ করি- কিন্তু কে শুনে কার কথা। ছোটবেলায় প্রচুর বই পড়ার দরুন গুছিয়ে কথা বলার অভ্যাসটা ছিল। অবন্তি মুগ্ধ হয়ে আমার কথা শুনে, চোখে চোখ পড়লে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। ওর লাজে প্রকৃতি বুঝি নব্য সজ্জায় সেজে উঠে। ইদানিং প্রায়ই কবিতা শুনানোর আবদার করে বসে।সমস্যা হল রবীন্দ্র,নজরুল,জীবনানন্দ, নির্মলেন্দু’তে তার পোষে না। আখেরে কাঁচা হাতের সরল কবিতা তাকে শুনাতে হয়, নিষ্পাপ প্রেমের কবিতা; যে প্রেমে শরীর নেই, আছে শুধু আত্মার নীরব উপস্থিতি। ও মুগ্ধ হয়ে শুনে-অবাক নয়নে, সে চাহনি চিরবিস্মৃত। আবৃতি শেষে ব্যাগের সাইড পকেট থেকে দু’টাকা দামের লাভ চকলেট বের করে দেয়।
বারো চাকায় ভর করে দেখতে দেখতে বছরটি চলে গেল। জে.এস.সি’তে বেশ ভাল ভাবেই উতরে গেলাম। নাইনের বছর ক্লাসে প্রেমপত্রের আদান-প্রদান বেড়ে গেছে। বন্ধু-বান্ধবরা এক্ষেত্রে আমার উপর শতভাগ ভরসা রাখে। আমার ক্লাসমেট নাহিদ, ডাকসাইটে প্রেমিক পুরুষ, লাভ লেটার লিখে দেওয়ার জন্য আমাকে একরকম ছাই দিয়ে ধরলো।বন্ধুত্বের কর্তব্য নেভালাম।নাহিদের প্রেম হয়ে গেল এক ব্যাচ জুনিয়র নোভার সাথে।
কদিন ধরে অবন্তিকে মন মরা দেখছি, মুখে হাসি নেই, ঠোটে কথা নেই। সেদিন ক্লাস শেষে দেখি কৃষ্ণচূড়ার বেঞ্চিতে বসে আছে। “কী হয়েছে রে, অবু? একেবারে পাথর হয়ে আছিস যে! এ রূপে তোরে মানায়, বল!” অবন্তি খপ করে আমার হাতদু’টি চেপে ধরে বলল-“আমাকে একটা ‘প্রেমপত্র’লিখে দিবেন!” ওর চোখে অনুরাগ ছলছল করছে। আমি ওকে হাসানোর জন্য বললাম- “এ্যাই, তুই প্রেমপত্র দিয়ে কী করবিরে? কাকে দিবি হুমম..ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে, না..?” অবন্তি অভিমানে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। রহস্য যে বড্ড বেমানান হয়ে গেল, তা বুঝতে বাকি রইলনা। ওর অভিমানের তাপে মুহূর্তেই যেন সব ছাড়খাড় হয়ে গেল। “কীরে চোখে পানি কেনরে তোর-কাঁদছিস নাকি?” “কিছুনা, চোখে কিছু একটা পড়েছে হয়তো।” ধরা গলায় বলল অবন্তি। বুঝলাম, ডাহা মিথ্যে বলছে। অবন্তি চলে যেতে উদ্যত হল। “আচমকা চলে যাচ্ছিস যে?” “হ্যাঁ, একেবারে চলে যাচ্ছি।” “কী যে বলিস অবন্তি, আগামাথা কিছুই বুঝিনা।” “কিভাবে বুঝবে? অবুঝকে বুঝানোর ক্ষমতা যে ভগবান আমায় দেননি।” পরিতাপের সুর ঝরে পরল বাক্যটি থেকে।
আমি ঠায় বসে রইলাম,অবন্তি চলে গেল আজ জোৎস্না তার পূর্ণ যৌবন নিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করার চেষ্টায় মগ্ন। দক্ষিণের জানালা গলে ঝিরঝির হাওয়া বইছে। স্নিগ্ধ-শীতল পরিবেশ; চমৎকার এই রজনীতে জ্যোৎস্না বিলাস করাই যায়। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠছে অবন্তির ব্যথিত মুখখানা। এপাশ-ওপাশ করে ঘুমানোর বৃথা চেষ্টা করলাম, কিছুতেই চোখের পাতা এক করতে পারছিনা। বারবার কানে বাজছে ওর শেষ কথাটি- অবন্তি আসলে এই অবুঝকে কী বুঝাতে চায়? ধীরে ধীরে জমে থাকা কুয়াশা দূরীভূত হতে থাকল, হৃদয়াকাশে সূর্যালো উদ্ভাসিত হল। হ্যাঁ,এখন সব স্পষ্ট। সুদূরের দৃশ্যটি প্রস্ফুটিত, দিগন্তরেখা বোধগম্য। ল্যাম্পের আলো জ্বালিয়ে আমি প্রেমপত্র লিখতে বসলাম, অবন্তির জন্য নয়; আমার জন্য। আজ নিজের জন্য লিখব- তবে অবন্তির তরে লিখব- হৃদয়ের যত আবেগ ছিল সব ঢেলে দিলাম পত্র-পাতায়। প্রতিটা শব্দ যেন আন্দোলিত হতে লাগল ভালোবাসার মৃদু হাওয়ায়। কালো অক্ষরের মাঝে আমি দেখতে পেলাম অবন্তির প্রতিচ্ছবি, দেখতে পেলাম আমার অনাগত প্রেমের ছবি।
উত্তেজনায় সারারাত ঘুম হলনা, সকাল হলেই শুক্র, তারপর শনি- রবিবারের অপেক্ষায় শিরা-উপশিরা রবির ন্যায় জ্বলছে। দু’টি দিবস যেন দুই শতাব্দীকেও হার মানায়। আজ রবিবার-আকাশটা ভীষণ মেঘাচ্ছন্ন, পৃথিবীর রূপ বিষণ্ণ, প্রকৃতি তন্দ্রাচ্ছন্ন। স্বপ্নের চিঠিটা বইয়ের ভাজে রেখে স্কুলের পথে পা’বাড়ালাম। সবার মাঝে অবন্তিকে খুঁজে ফিরলাম, কোথাও তার দেখা নেই। চিঠিখানার ভার আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। ওর বান্ধবী জান্নাত’কে জিজ্ঞাসা করলাম-“অবন্তিকে দেখছিনা যে!” অবন্তিরা ওদের বাসার পাশেই ভাড়া থাকত। ও আমার দিকে এক রাশ বিস্ময় নিয়ে তাকাল। “কিরে ড্যাব ড্যাব করে কী দেখছিস?” জান্নাতের সন্দিহান প্রশ্ন”তুই কিছু জানিস না?” আমি-“নাতো” “সত্যি জানিস না?”প্রশ্নে দিগুণ অবিশ্বাসের সুর।
উত্তেজনায় আমার শরীর কাঁপছে। “কী হয়েছে, বলবিতো, অবুর কিছু হয়নিতো আবার?” “ওরা যে এখান থেকে একেবারে চলে গেছেরে।” পায়ের তল থেকে মাটি সরে গেল আমার, কোনমতে সামলে নিয়ে বললাম, “কী বলিস,কোথায় গেছে?” “তাতো জানিনে, তবে শুনলাম ওর আব্বুর নাকি বদলি হয়েছে। আর হ্যাঁ, তোকে এই চিঠিটা দিয়ে গেছে।” জান্নাত ভাজ করা একটি কাগজ ধরিয়ে দিল আমার হাতে। কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটি খুললাম-সাদা কাগজের কয়েক স্থানে অশ্রু-ফোঁটার তপ্ত দাগ এখনো সতেজ। তারই মাঝে অভিযোগের লাল কালিতে লেখা-“হায়!অবুঝকে বুঝানোর ক্ষমতা যদি ভগবান আমায় দিতেন!”
-আরো কয়েক ফোঁটা নোনাজল চিঠি’টাকে নতুনকরে ভিজিয়ে দিল।