দরজা খুলেই এমন একটা দৃশ্য দেখবে ভাবতেও পারে নি। তারই বেড রুমে,তারই বিছানায় অন্য এক মেয়ের সঙ্গে উলঙ্গ হয়ে একে উপরের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে অনতরঙ্গ ভাবে ফিজিক্যাল রিলেশন করছে। তাদের শরীরে কোনো জামা-কাপড় নেই,এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
তার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না,এটা কি সে স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব? খনিকের মধ্যে তার সর্ব শরীর বরফের ন্যায় হয়ে গেছে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। পুরো পৃথিবী গোল গোল দেখছে রুমের মধ্যে। চোখ বেয়ে পানি পরছে। বুকের ভিতরে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ভেঙে-চুরে,ডলে-মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৫মিনিট অতিক্রম হওয়ার পর জোরে একটা চিৎকার করে উঠলো রায়হাননন।
চিৎকারের শব্দ শুনে একে-অপরকে ছেরে দিয়ে
ফ্লোর থেকে জামা-কাপড় তুলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো তারা।মেয়েটা ওড়না হাতে নিয়ে শরীরের গোপনাঙ্গ
ঢাকার চেষ্টা করেই চলছে তারপর খনিকের মধ্যে
রুম থেকে দৌড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। আর অন্যদিকে রায়হান টাওয়ালটা প্যাচিয়ে নিলো তারপর একপা দু পা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
-আমার কথা শোনো একটু।
কাছে গিয়ে ধরার চেষ্টা।
-Please আমাকে ঐ হাতে ছুবে না।শুধু কয়েক দিনের জন্য মা(শ্বাশুড়ী) ও বাবাকে(শ্বশুর) নিয়ে রুমানার
(ননদ) শ্বশুরবাড়ি গেয়েছিলাম ওকে দেখতে আর তার মধ্যে এমন একটা কান্ড করে ফেললে।ছিঃ আমার ঘৃণা করছে অনেক এসব দেখে। ভাগ্যিস ভালো মা-বাবা আরিয়ানকে নিয়ে পাশের বাড়ির স্বর্ণা আন্টি ও তার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলতে গেছে। না হলে আজ তাদের কি অবস্থা হতো একবারও কি ভেবে দেখেছো রায়হান।একবারও কি আরিয়ানের কথা মনে পড়লো না।ওর নিশ্বপাপ মনে যদি একবার আঘাত হানে তোমার এমন কুকর্মের দৃশ্য দেখে। তাহলে বুঝো তার সামনে কিভাবে মুখ নিয়ে দাড়াবে।
-তুমি যা ভাবছো সেটা নয়….(কথা শেষ করার আগেই)
-দূরে থাকো আমার থেকে।একথা বলেই চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে 😭😭😭😭😭
-আনিকাআআআআআ
-দূরে থাকো আমার থেকে।(একথা বলেই চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে।)😭
_আনিকাআআআআ
আনিকা আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলো দৌড়িয়ে। তার লজ্জায় ঘৃণায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে।তাদের এতো বছরের বিয়ের বয়সে এমন কর্ম কখনো দেখে নি রায়হানের কাছ থেকে।
ওর মনো মুগ্ধ স্বতব্যবহারে কারণেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলো আনিকা।
তখন হয় তো ওর ঐরকম ব্যবহার ছিলো বানোয়াট।
না হলে কি আজ দেখতে হতো এমন কুকাজ।
ছাদের এক কোণায় বসে দুপা মেলে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বাধ ভাঙা ঝর্ণার মতো দুচোখ বেয়ে পানি ঝরে চলছে অবিরত ভাবে।হাজারও প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মনে। আসলেই কি সে এতোখন যাবত বাস্তবে মুখোমুখি হয়ে দেখেছে নাকি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার মতো হয়েছে?
যদি এই দৃশ্য দেখানোরই ছিলো আল্লাহর।তাহলে কেনো দুচোখ অন্ধ করে দিলোনা আগে তার?ভাবতে পারছে না আর সে।কি করবে,কোথায় যাবে,মরে গেলে দুধের শিশুটিকে কে দেখবে?
শুনেছে মা মরে গেলে বাপ হয় যেনো তাওই।আর সৎ মা করে বেড়ায় অঢাল অত্যাচার,শেষ পরিণতি হয় তার রাস্তায়।না না রায়হান এমন কাজ করতে পারে।তার কলিজার টুকরা আরিয়ানকে অনার্থ করতে পারে না।
এমন আরও অনেক কথা চিন্তা করতে করতে কখন যে আনিকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে ছাদের কোণাতে বসে।
অন্যদিকে রায়হান রেডি হয়ে চলে গেলো বাহিরে।
যখন বাহিরে যায় তখন সদর দরজা দিয়ে রায়হানের বাবা মা আর এক মাত্র ছেলে আরিয়ান প্রবেশ করছে।
আরিয়ান: আব্বু কোথায় যাচ্ছো?
রায়হান: এই তো বাবা একটু বাহিরে।
-ওকে আমার জন্য মজা নিয়ে এসো কিন্তু?
-আচ্ছা বাবা।
রায়হানের মা: কি রে আজ তোর অফিস ছিলো না?
রায়হান: ছিলো।
রায়হানের মা: তাহলে এতো তাড়াতাড়ি যে আজকে?
রায়হান : একটু কাজ ছিলো তাই এসেছিলাম।
বলেই হু হু করে হাটতে লাগলো সামনে।পিছন থেকে রায়হানের আব্বু জিঙ্গাসা করলো বউমা কোথায় রে?
কিন্তু কে শুনে কার কথা?ও ওর মতো দূরুত্ব হেটে স্থান ত্যাগ করলো ঐখান থেকে।না হলে যে তার অনেক প্রশ্নের সম্মুখী হতে হতো এতোখনে।
সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হতে চললো।আনিকার খোঁজ পাচ্ছে না বাসার কেউই?অন্যদিকে রায়হানও বাসায় ফিরছে না। এতবার কল করলো আশরাফ সাহেব রায়হানকে তবুও রিসিভ করছেই না।রেগে গিয়ে কয়েকটা কথা শুনে ফেললো মিসেস সালেহা বেগমকে।
-এই তোমার কারণে আজ এতো মাথায় উঠেছে।
ঘরে বউমার খবর নেই আর সে আছে আড্ডা বাজি নিয়ে রাতের বেলাও।আরে বিয়ে করেছিস,বাচ্চা হয়েছে, এখন আড্ডা দিবি বউ বাচ্চা নিয়ে।আমিও তো ইয়াং ছিলাম এক সময় কিন্তু দ্বায়িত্ব কাধে আসার পর থেকে প্রায়টাই বাদ দিয়ে দিয়েছি বদঅভ্যাস গুলো।
আজ আসুক ও বাড়ি,ওর খবর আছে বলে রাখছি রায়হানের মা তোমাকে। যদি বউমার কিছু হয়ে যায় না তাহলে……
এমন রাগান্বিত দেখে মিসেস সালেহা বেগম কিছু বলার সাহস পায় তা বলতে।তাই আরিয়ানকে কোলে নিয়ে চলে যায় নিজ রুমে চুপ করে।
আরিয়ানটাও আজ অনেক কেঁদেছে মা মা বলে।
সারা সন্ধ্যা পার করে দিছে কেঁদে কেঁদে।হয় তো কেঁদে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই ঘুমিয়ে পরেছে।শিশুর মন তো,মাকে না দেখলে কু মন ডাকবেই।
বাহিরে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।হঠাৎ রায়হানের আগমন দরজা ভেদ করে ড্রয়িং রুমে।রাত প্রায় ১২টা
আশরাফ সাহেব সোফায় বসে বই পড়ছে।পায়ের শব্দ শুনে।
-দাড়াআআ (একটু উচ্চ সরে)
-জি আব্বু
-এতোখন কোথায় ছিলি?
-এইতো পাশেই….
-কোন পাশে?আর তোর ফোন কোথায়? কতবার কল করেছি সেইটা দেখেছিস একবার?
-কো..কো.. কোথায়?(বলে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ৪০+ মিস কল।)
-কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না যে?
-ইয়ে মা..মানে ফোনটা সাইলেন্স হয়ে গেয়েছিলো, খেয়াল করি নি।
-সেটা খেয়াল করবি কি?তোর তো এখন আর সংসার ভালো লাগে না, ঠিক না?
-না মানে হ্যাঁ..
-চুপ হারামজাদা। তোর বউকে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুই হ্যাঁ না মানে খুঁজছিস?অন্যদিকে দুধের শিশুটা মা মা বলে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে গেছে সেটা খোঁজ নিয়ে দেখেছিস?একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ,আমার রক্তে মাংসে করা যা কিছু করেছি সব
কিছু বউমা আর আরিয়ানের নামে দিয়ে যাবো।
যদি শুনি এমন-তেমন কখনো করেছিস।
বলে চলে যেতে লাগে।পিছু ফিরে বলে।
-বউমাকে ভোর হওয়ার আগে দেখতে চাই বাড়িতে।
না হলে সকাল হলে ত্যাজ্যপুত্র করবো মনে যেনো থাকে।
থ হয়ে দাড়িয়ে থাকে রায়হান ঐখানেই।কোথায় গেলো আনিকা ওকে ছেড়ে।এতো ঝড়বৃষ্টি বাহিরে। যদি কিছু হয়ে যায় আনিকার,কিছুই ভাবতে পারছে না আর।ও যে বাঁচবে না আনিকাকে ছাড়া এক মূহুর্তে। হঠাৎ করে মনে পরে গেলো। আনিকা তো রাগ করলে ছাদে চলে যায় মাঝে মাঝে।আজ যায় নি তো,গিয়ে দেখে আসবে কি যেয়ে। দেড়ি না করে এক দৌড় দেয় ছাদে।
রাত বেরেছে অনেক,আধারও আছে বোটে। তার সাথে ঝড়বৃষ্টিত তো আছেই। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকিয়ে আলোর আভাস পরলো ছাদের এক কোণে।গুটিশুটি হয়ে পরে আছে আনিকা যে।
রায়হানের বুকের একপাশে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে উঠলো খনিকের মধ্যে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো আনিকাআআআআআআ
রায়হানের বুকের একপাশে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো করে উঠলো খনিকের মধ্যে।শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো
আনিকাআআআআআআ
কিছুখনের জন্য পুরো পৃথিবীটা থেমে গিয়েছিলো রায়হানের কাছে।তার জন্য আনিকার আজ এই পরিস্থিতি।কেনো তখন সে আটকালোনা তাকে?
বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।পা দুটো অবাস হয়ে গেছে।হেটে যাওয়ার শক্তিও নেই তার কাছে।তবুও মনের শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে আনিকার কাছে হাটুগেরে বসে পরে। পাজোর কোলে নিয়ে অতিদ্রুত রুমে দিকে পা বারিয়ে চলে।
রুমে এনেই আগে ভেজা জামা-কাপড় পরিধান করিয়ে দিয়ে ডাঃ ওয়াজেদ কে কল করে আসতে বলে।
আশরাফ সাহেবকেও ডাক দিতে ভয় পাচ্ছে। যদি ত্যাজ্যপুত্র করে বসে।রুমে পায়চারি করতে থাকে সিগারেটের পর সিগারেট ধরিয়ে। আনিকার কিছু হলে তার বাবা যে ত্যাজ্যপুত্র করবে। না না এটা কখনোই হবে না।না আনিকা চলে যাবে। না তার বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করবে।এসব কথা ভাবতে ভাবতে ডাঃ ওয়াজেদ সাহেব রুমে প্রবেশ করে।পারিবারিক ডাঃ বলে সব জায়গায় তার পরিচিত।তাই আর এগিয়ে আনতে হয় নি রায়হানের রুম পর্যন্ত।
-যাক ডাঃ আংকেল আপনি এসে গিয়েছেন। please আনিকাকে সুস্থ্য করে তুলুন।
-আরে রায়হান চুপ করবি তো একটু।আগে দেখতে দে।
ওর এমন অবস্থা কি করে হলো বলতো একটু?
-ইয়ে মানে আংকেল..
-বুঝতে পেরেছি।থাক আর ইয়ে মানে বলতে হবে না।
বুঝি না,তোদের মধ্যে ঝগড়া হবে কি নিয়ে?ভালোবেসে বিয়ে করেছিস সংসার হবে সুখের। তবুও কেন যে ঝগড়া করিস এই বাপ-মা হারা মেয়েটার সাথে?
রায়হান কোনো কথা বলছে না?চুপচাপ কথা গুলো মিষ্টির সিরার মতো গিলে গিলে খাচ্ছে।
ডাঃ ওয়াজেদ আনিকাকে ভালোভাবে দেখে মেডিসিন
লেখে দিয়েছে যেনো নিয়মিত দেয়।আর ইনজেকশন দিয়েছে যেনো মস্তিষ্কে কোনো ক্ষতি না হয়।যে পরিমাণ ভিজেছে আর মানসিক চাপের মধ্যে গেছে সেই কারণে।
ডাঃ বিদায় নিলো যাওয়ার জন্য।তখনই রায়হান বলে উঠলো।
-আংকেল আব্বুকে এসব কিছু জানিয়েন না please.
ডাঃ ওয়াজেদও ওর মুখখানা দেখে বুঝতে পেরে শুধু মাথা নারিয়ে হ্যাঁ সূচক জানিয়ে প্রস্থান করলো।
রায়হান বেলকনিতে গিয়ে গিরিলে এক হাত দিয়ে দূর পানে চেয়ে রয় অনেকখন।তারপর কি ভেবে রুমে ফিরে এসে আনিকার মাথার পাশে বসে পরে।আলতো করে মাথা বুলাতে থাকে।কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে ঐভাবেই বসে থেকে।
সকালবেলা,
আম্মু আম্মু উঠো না উঠোওও..
ঘুম ঘুম চোখে।তাকাতেও পারছে না তাকে কে ডাকছে।
মাথাটা যে তার অনেকটা ভারি হয়ে আছে।প্রচন্ড ব্যথাও আছে।তবুও আনিকা বুঝতে পেরেছে এটা তার এক মাত্র মানিক রতন আরিয়ান।
মাথায় হাত দিয়ে উঠতে উঠতে দেখে রায়হান তার মাথায় কোণায় বসে ঘুমাচ্ছে।গতকালকের কথা মনে করে দূরে সরে বসে তরিঘরি করে। টান দিয়ে বুকে জরিয়ে নেয় আরিয়ানকে।কাঁদতেও পারছে না এইটুকু ছেলের সামনে।নয় তো হাজারটা প্রশ্ন করে বসে বড়দের মতো করে?জড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে..
-আম্মু তুমি কোথায় ছিলে?জানো আমি ঘুমাতে পারি নি।যদি আমায় রেখে পালিয়ে যেতে ঐ দূর আকাশে নানু-নিনুর মতো করে। তখন আমায় কে ভালোবাসতো বুকে নিয়ে?
আরিয়ানের কথা শুনে আটকিয়ে রাখতে পারলো না লুকানো কান্নাটাকে।গরিয়ে পরলো দুচোখ বেয়ে। খনিকের মধ্যে হু হু করে শব্দে বেগ হয়ে উঠলো রুমের চার দেওয়ালের মাঝে।
রায়হানের ঘুম ভেঙে গেলো কান্নার ধ্বনি শুনে।অযথা চেষ্টা করলো আনিকাকে মাথায় হাত রেখে বুঝাতে।
তার আগেই বললে উঠলো।
-এখানে আরিয়ান আছে। এমন কিছু বলার বাধ্য করো না, যাতে মুখতে হয় আমাকে।
রায়হান চুপ করে উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।ফ্রেস হয়ে একেবারে রেডি হয়ে বেরিয়েছে অফিসের উদ্দেশ্য।
রুম থেকে বেরুনোর সময় পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখলো আনিকাকে।তারপর চলে গেলো অফিসে।
আনিকা দেখেও না দেখার ভান করে। আরিয়ানকে বুকে নিয়ে বসে রয় একই স্থানে মাথা নিচু করে।
দরজায় নক..
-আসবো রে মা।
আনিকাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে
থাকে মিসেস সালেহা বেগম।
-জানি না গতকাল কি হয়েছে তোদের মাঝে?তবুও একটা কথা বলবো মা তোকে রাখবি।যদি তুই আমাকে ভরসা দিস তাহলে নির্ভয়ে বলতে পারি তোকে।
-মা তোমার এমন কোনো কথা নাই যে রাখি নি আজ পর্যন্ত বলো তো একবার আমাকে।
-রাখছি..আজও আগে কথা দে আমাকে?
আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকালো। পরে কি মনে করে হাতের পর হাত দিয়ে বলে ফেললো?
-হুমম কথা দিলাম প্রতিবারের মতো তোমাকে।
বিকাল পার হয়ে রাত অবদ্ধি গনিয়ে এলো
এখনও রায়হানের বাসায় আসার নাম গন্ধ না হলো।
সারাদিন বেডে ফুল রেস্ট নিয়ে এখন আনিকা আগের থেকে অনেকটা ভালো আছে।
রায়হানকে অনেকটা মিস করছে।ওকে যে এখন অনেক ভালোবাসে।বিয়ের আগে জোরপূর্বক হলেও
আরিয়ান পেটে আসার কিছুদিন আগ থেকে ভালোবেসে ফেলেছে রায়হানকে।
একটা মানুষ প্রতি কিভাবে পারে ভালোবাসা তৈরি করতে সেটা রায়হানের থেকে কে বা ভালো বুঝে।
আজ থেকে ১০বছর আগে যখন প্রথম গ্রাম থেকে শহরে পা রাখে আনিকা।তখন তার জীবনে প্রেম ভালোবাসা বলতে কিছুই ছিলো না।
কিভাবে বুঝবে সে?জন্মের আগে বাবা মারা যায়। জন্মের পর মাটাও চলে যায়। পরে থাকে একমাত্র বড় বোন।তাদের দুবোনকে বড় করেছে চাচা চাচিরা।তারা ভালোই ছিলো।তাই তো দুবোনকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করে তুলেছে।বড় বোনকে বিয়ে দিয়েছে ভালো পরিবারেই।শহরে থাকে সে এখন।অনেক বার বলেছে ওর কাছে থাকতে কিন্তু পড়াশোনার জন্য যাওয়া হয়ে উঠেনি আনিকার?
আনিকা হঠাৎ একদিন ভাবে।আর পড়ে কি হবে?
তার থেকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।তাই সে অনার্সে এডমিশন না নিয়েই পা বাড়ালো শহরের পানে চাকরির উদ্দেশ্য।
বড় বোন আনিয়ার বাসায় উঠলো।বেশ দিনগুলি কাটছিলো।চাকরির জন্য ট্রাইও করছে এখানে সেখানে।হয়েও গেলো একজায়গায় তার।আনিয়া অনেক খুশি বোনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে বলে।
আগামীকাল প্রথম অফিসে যেতে হবে। তাই বুঝাচ্ছে
-আনিকা তুই কিন্তু সেখানে গিয়ে বক বক করবি না।
কম কথা বলবি।আর পারলে তোর দুলাভাইয়ের প্রস্তাবটা ভেবে দেখতে পারিস।
আনিকা তুই কিন্তু সেখানে গিয়ে বক বক করবি না।
কম কথা বলবি।আর পারলে তোর দুলাভাইয়ের প্রস্তাবটা ভেবে দেখতে পারিস।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গন্তব্যের স্থানে রওনা হলো।গাড়ির জন্য পথের পাশে দাড়িয়ে আছে কিন্তু
গাড়ি হয় তো তার সাথে সময়ে মতো বেইমানি করছে?
অবশেষে একটা গাড়ি এলো ঠিকিই,বসার জন্য সিট খালি নেই তিল পরিমানে।
বাসের এ পাশে রেলিং ধরে ঝুলে ঝুলে যাওয়া ওর জীবনে প্রথম বলেই, অনেকটা অসত্থি লাগছে চারপাশে লোকগুলো দেখে।নিজেকে গুটিশুটি করে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ পাশ থেকে..
-হ্যালো মিস..
কণ্ঠটা অনেকটা মিষ্টি।কাকে ডাকছে বুঝার চেষ্টা করছে?হালকা আড় চোখে তাকালো লোকটির দিকে।
না দেখতেও অনেক মিষ্টি।কণ্ঠের সাথে একদম মিল আছে দেখতে।চোখ দুটো হালকা ঘোলা।মায়া মায়া চোখে যে কোনো মেয়েই নেশা ধরে যাবে তাতে সন্দেহ নেই তার।তাড়াহুড়ো করে চোখ দুটো সরিয়ে নেয়। না হলে যে কোনো একটা accident হতে পারে তার দু নয়নে তাকিয়ে থেকে।
-আপনি এখানে বসুন।(একটু কাশি দিয়ে)
আনিকা মুখ দিয়ে কিছু বললো না।কারণ বার বার তার বড় বোন বারন করে দিয়েছে বক বক না করতে?
তাই তো ঠোঁট একটু বাকিয়ে,মুচকি একটু হেসে,বসে পড়লো লোকটির সিটে।খনিকের মধ্যে চলে এলো গন্তব্যে।
আজ সে জীবন তৈরি করার প্রথম ধাপে পা দিলো আল্লাহর নাম নিয়ে।কোম্পানিটাও অনেক নাম করা
আর সেখানে যে চাকরি পেয়েছে সেটাই তার কাছে অনেক পাওয়া।কম শিক্ষিত।তবুও তো তার ভাগ্যে জুটেছে এতেই অনেক খুশি।
জয়েন্ট লেটার নিয়ে স্যারের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে।
কর্মষ্ঠ জীবন শুরু করার জন্য ম্যানেজারে সাথে এক এক করে সবার সঙ্গে পরিচয় বিনিময় করে ফেললো।
হঠাৎ করে সেই একই লোকের সাথে তার দেখা হয়ে গেলো অফিসের ভিতরে।আনিকা এতোটাই বোকা যে,
তাড়াহুড়ো করে নেমে পরলো কিন্তু ধন্যবাদ জানানোর বোধটুকু ভুলে খেয়েছে।তাকে দেখে অনেকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে সরি বলে ফেলে।
এমন অবস্থা দেখে ম্যানেজার সাহেব প্রশ্ন করে বসে?
-কি ব্যপার আনিকা?ওকে সরি বলছো কেনো?
বাসস হয়ে গেলো কল রেকর্ডিং কে খেপিয়ে।এমনিতেই কথা বলার জন্য বেচারির মুখটা উশু উশু করছে। ম্যানেজার সাহেব দিলো তো তার মুখটা ছুটিয়ে।
A to Z দিলো বলে একদমে। এটা দেখে লোকটি তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কারণ, ধন্যবাদ বলতে পারে নি বলেই অনুসূচনায় মুখটা মলিন হয়ে গেছে তাকে দেখে।
ম্যানেজার সাহেব আর কোনো কথা না বাড়িয়ে
লোকটিকে বললো কথাবার্তা সেরে তাকে যেনো কাজকর্ম বুঝিয়ে দিতে।বলে চলে গেলো তার নিজ কাজে।
-হ্যালো মিসসসসসসসস(নাম না জানলে যা হয় আর)
-আমি আনিকা
-ওওও..আমি রাজ আহমেদ
-সরি আসলে তখন অনেক তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলাম
তো ধন্যবাদ টুকু বলতে পারি নি। বাই দ্যা ওয়ে
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
-হয়েছে আর এতো ধন্যবাদ দিতে হবে না।এখন কাজে মন দাও।আমার ডান পাশে তোমার কেবিন আর তোমার পাশেরটা আদিরার।তো শুরু হয়ে যাও পথ চলা। না পারলে এই রাজকে বলবে সব বুঝিয়ে দিবো।
তার মধ্যে তো আদিরা আছেই কোনো চিন্তা করো না।
পরিচয় পর্ব শেষ করে। চলে গেলো নিজ কাজে।
ভালোই কাজকর্ম চলছে আনিকার।এর’ই মধ্যে আদিরার সাথে তার বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলো।ধরতে গেলে তারা একে অপরের প্রান।কথায় আছে না।যার মধ্যে চঞ্চলতা আছে,তার বন্ধুত্ব সবাই হয়ে যায় অল্প সময়ের মাঝে।আদিরার ছাড়াও যে রাজের সাথে বন্ধুত্ব ঘণত্ব হয়ে গেছে অনেক দূর পর্যন্ত সেটা তারা ছাড়া সবাই দেখে দেখে হিংসে করে মরে।
ভালোই দিনকাল কাঁটছে আনিকার ওদের মতো বন্ধু হিসেবে পেয়ে।এতোটাই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে যে। একজন আরেকজনকে ছাড়া পেটের ভাত হজমই হয় না তাদের মধ্যে।
রাজ যে আনিকার প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে।
অন্যদিকে আদিরা অনেক আগে থেকেই পছন্দ করে
রাজকে।
রাজ চিন্তা করে এই দুর্বলতা কি ভালোবাসা নাকি বন্ধুত্ব?সেটা সিউর হতে ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে সব বলে।
সে রাজকে জানায়। হ্যাঁ সে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু মেয়েটা কে এখনও জানে না সে।হয় তো আদিরা।এতোদিন ধরে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব।সেই প্রেক্ষিতে প্রেম নামক তীর কেনো লাগবে না তার বুকে।
রাজ আর দেরি না করে প্রপোজ করেই ফেলে আনিকাকে।আনিকাও অবাক হয়ে যায় তার কান্ড দেখে।
-আমি তো কখনো এমনটা ভেবে দেখি নি।
-ভেবে দেখো এখন। সময় আছে,কোনো তাড়া নেই আমার?
আনিকা চুপ হয়ে চলে গেলো বাসাতে।সারা রাত চিন্তা করলো শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে কি বলবে তাকে?
আনিকা চুপ হয়ে চলে গেলো বাসাতে।সারা রাত চিন্তা করলো শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলে কি বলবে তাকে?
রাতের তারা আজ তার কাছে অনেকটা সুন্দর লাগছে সেই ভেবে বেলকনিতে একটু কাটাবে বলে বিছানা থেকে নেমে পা বাড়ালো এরই মধ্যে দরজায় নক পরলো। তার আর যাওয়া হলো না ঐ পথে। পা টা ঘুরিয়ে দরজার কাছে গেলো খোলার জন্য।দরজা খুলে অবাক হলো আনিকা।দরজার ওপারে দাড়িয়ে আছে
তার এক মাত্র দুলাভাই।মুচকি হেসে…
-ঘুমিয়ে গিয়েছিলো নাকি আমার শালিকা?
-আরে নাহ।তো এতো রাতে কি মনে করে এই অদম শালিকার রুমে?
-কেনো আসতে নেই বুঝি?কোনো সমস্যা তোমার, আমি আসাতে?
-ধ্যাত ভাইয়া কি যে বলেন না?বোনের রুমে ভাই আসবে তার আবার সমস্যা।আমার কোনো ভাই নেই,সেটা কিন্তু জানেন?যখন আপুর সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে তখন থেকেই ভেবে নিয়েছি,আপনাকে দুলাভাই নয়,ভাইয়া বলে ডাকবো।যাতে আমার ভাইয়ের অপূর্ণতা দূর হয়ে যায়।
এখন আসেন তো ভিতরে এতো কথা রেখে…
কথা শেষ করার আগেই পিছনে আনিয়া।
-আমি একা নয় শালিকা বেগম।তোমার বোনও সঙ্গে আছে। দেখেছো আনিয়া তোমার বোনের মতো শালি পেয়ে অনেকটা ভাগ্যবান।আমারও বোন নেই।আর তোমার বোনেরও ভাইয়ের আশা পূর্ণ হলো।সত্যিই আনিয়া তোমাদের পেয়ে আমি ধন্য।
-হয়েছে আপনার পাম দেওয়া।কি ব্যপার দুজন এক সাথে সেটা আগে বলেন?
-কোনো ব্যপার সেপার না বোন?একটু ইচ্ছা হলো তাই তোর দুলাভাইকে বলাম আর কি?
-ডাল মে কুস তো কালা হে।তোমার মতলব তো বলছে অন্য কিছু আজ, দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
-হয়ছে হয়ছে তোর সাথে কথায় পারবো না রে।রুমে প্রবেশ করতে করতে।
দুজন এক সাথে খাটে বসলো আর আনিকাকে সামনে বসালো।
-আনিকা আজ কয়েক বছর ধরে তোকে একটা কথা বলেই যাচ্ছি আমি আর তোর দুলাভাই মিলে। বিশেষ করে দুলাভাই বলেছে বার বার তোকে।সেটা কি একবারও চিন্তা করে দেখেছিস বল না?
আনিকা কি বলবে বুঝতে পারছে না?তাই চুপ করে রয়েছে।
-দেখো আনিকা তুমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছো।তার উপরে আমি তোমার ভাই এখন।বুঝার চেষ্টা করো।
বোন বড় হলে ভাইয়ের চিন্তা অনেক হয় সব সময়ে।
তাই বলছি কি….?
আনিকা অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে।শহরে যখন আসে তখন থেকে তার বোন ও দুলাভাই অনুরোধ করে বিয়ে করে নিতে।পাত্রর অভাব নেই যেনো আনিকার জন্য।কারণ, আনিকা HSC পড়া কালিনই অনেকের কাছে বলেছিলো তার একটা শালি আছে। দেখতে মাশাল্লাহ। কোনো কিছুর কমতি নেই তার মাঝে।তার উপরে অনেকে তো আনিকার ছবি দেখে পছন্দ করেই ফেলছে।তাই আনিকার দুলাভাই বার বার বলছে। যদি পড়াশোনা না করো তাহলে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করে দাও বোন।
আসলে আনিকার বাবা মা বেঁচে থাকলে হয় তো এমনই চিন্তা করতো। তাই তো বার বার একই কথা বলে যায় আনিকার কাছে।কিন্তু ফলস্রুতিতে সে বলে, তার এখন জীবন গড়ার সময় তাই এখন বিয়ে ঠিয়ে করতে পারবে না,ছাফ না করে দিয়েছে।
এখন তারা যেভাবে চেপে ধরেছে।আনিকার তো পালিয়ে যাওয়ার পথও খুঁজে পাচ্ছে না।তাই অনেক খন চুপ করে থেকে।তার দুলাভাইয়ের এক হাত আর বোনের এক হাত ধরে বললো..
-আমাকে কিছু দিনের সময় দিবে তোমরা চিন্তা ভাবনার
জন্য।
এমন কথায় আনিয়া আর মিরাজ খুশি হয় আর তার মাথায় হাত রেখে বলে ঠিক আছে।পরে তারা নিজ রুমে চলে যায়।
আনিকার চিন্তা তিনগুণ বেড়ে যায়।আগামীকাল কি করবে সে?এক দিকে রাজ অন্য দিকে তার পরিবার।
কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।রাজের কথা কি বলে দিবে আনিকার তাদের কাছে। নাকি ভুল হবে তাদের মনে কষ্ট দেওয়া। না না যদি হিতে বিপরীত হয় ।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় ১টা।মনটা যে তার আজ অন্য রকম লাগছে।
ভিতরে ভয় ভয় কাজও করছে। তাহলে কি কোনো..
নাহ যা হবার কাল হবে, এমন কথা মনে মনে বলে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলো।
আনিকা ভাবছে হয় তো তার জীবনে সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।কিন্তু…
পরের দিন ভোরে কল আসলো।তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
-হ্যালো আনিকা?(অচেনা কণ্ঠ)
-জি(ঘুম ঘুম কণ্ঠে)
-একটু তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসবে……?
হাসপাতাল এমন কথা শোনার পর………
-হ্যালো আনিকা?(অচেনা কণ্ঠ)
-জি(ঘুম ঘুম কণ্ঠে)
-একটু তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসবে……?
-হাসপাতাল এমন কথা শোনার পর………
আনিকার মাথায় বাধ ভেঙে পরলো।ভোরের সূর্যটা সবার জন্য উজ্জ্বলতা বয়ে আনে না।কারো কারো জন্য কালো কালবৈশাখী ঝড়ের ন্যায়ের মতো বয়ে আনে।
আনিকা আর এক মূহুর্ত না বসে থেকে।কোনো রকম ফ্রেস হয়ে রওনা হলো হাসপাতালে দিকে।কথায় আছে না,বিপদের পথ শেষ হয় না কখনো? আজ তার বেলাতেও একই মনে হচ্ছে।বুকের ভিতরে অন্য রকম ভয় কাজ করছে। আল্লাহ এমন কি হতে চলেছে আমার জীবনে? কি এমন হয়েছে?নাহ আনিকা আর কিছুই ভাবতে পারছে না। আগে সেখানে যাবে তারপর বিস্তারিত শুনবে।কি হয়েছিলো ভিতরে ভিতরে খুড়ে খুড়ে খাচ্ছে আনিকার?
নানান কথা ভাবতে ভাবতে চলে আসলো হাসপাতালে।
দু তলায় ২২৪নং কেবিনে রাখা হয়েছে তাকে।দৌড়ে গিয়ে দাড়ায় কেবিনের বাহিরে চকচকে আয়নার এপারে।ওপাশে অক্সিজেন মাক্স লাগানো মুখে।সেটা দেখে বুকের ভিতরে হু হু করে উঠলো খনিকেই।এ সে কি দেখছে?
কেন এটা করলো?আর আমাকেই কেনো আসতে বললো?হঠাৎ হাত পরলো আনিকার কাঁধে।পিছু ফিরে তাকাতে তাকাতে কিছুটা ভয় কাজ করছে।অসহায়ের মতো তাকালো তার দিকে।তার চোখ কথাও বলছে কে আপনি কাঁধে হাত রাখলেন যে?
-তুমি কি আনিকা?
এমন প্রশ্নে আনিকা আরও অবাক হলো খানিকটা?
পরে হ্যাঁ সূচক জানায়!!!
-আমিই আনিকা..আপনি…???
কথা বলা শেষ করার আগেই বলে উঠলো।
-আমি ওর আম্মু।আর ওর আব্বু স্ট্রোক করেছে,এক মাত্র ছেলের এমন অবস্থা দেখে।পাশের কেবিনে আছে।ও হ্যাঁ আমিই তোমাকে কল দিয়েছি।ওর ফোনে তোমার নাম্বার সেভ করা ছিলো আর ফোন গ্যালারীতে শুধু তোমারই ছবি দিয়ে ভর্তি ছিলো।তাই তো তোমার কাছে কল করে আসতে বললাম মা।
এমন কথা শুনে আনিকা আকাশ থেকে পরে।এটা কি শুনছে সে? এটা কি করে হবে?না না এটা হতে পারে না।আমি তো তাকে ভালো করে চিনিই না।শুধু কয়েকদিন দেখা হয়েছিলো। কিন্তু তেমন কথা হয়নি?
এমন কথা ভাবতে থাকে।পাশ থেকে ভদ্র মহিলাটা আনিকাকে কিছুটা ঝাকুনি দিলো কাধে হাত দিয়ে।
-হুমম আন্টি…..( ভাবনা ভেদ করে,দুঃচিন্তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আনিকার মুখে।)
-তুমি হয় তো ভাবছো আমার বাবুটার সাথে তুমি ভালো করে কথাবার্তা বলোও নি, তবুও কিভাবে কি,ঠিক না মা?
-জি আন্টি!(মাথা নারিয়ে)
ভদ্র মহিলাটা সব কথা শুরু করার আগে আনিকার হাত ধরে নিয়ে যায় পাশের কেবিনে যেখানে ভদ্রলোকটা স্ট্রোক করে ভর্তি আছে ছেলের শোকে।
সেখানে গিয়ে তো আনিকা বাকরুদ্ধ।কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছে।এটা কাকে দেখছে সে? স্যাররর😨একটু জোরেই বলে ফেললো।
-হ্যাঁ তোমার অফিসের স্যার আশরাফ চৌধুরী।আর তার এক মাত্র ছেলে রায়হান চৌধুরী।
–😰😰😰😰😰
-তুমি হয় তো ভাবছো।তার অফিসে চাকরি করো কিন্তু এখনও রায়হানকে চিনোই না ভালো করে,এটা কি
করে হয়?
আসলে কি জানো?আমার ছেলেটা একদম অন্যরকম।
কাজকর্ম করতে চায়তোই না।কিন্তু হঠাৎ কারো সাথে ওর দেখা হয় আর তখন থেকে প্রায় সময় রায়হান অফিসে যাওয়ার নেশা হয়ে যায়।সেটা কিছুটা ask করতে পারি আমি,তাই জিঙ্গাসা করলে একটা মেয়ের কথা বলে?আশ্চর্য বিষয়টা কি জানো?
–😒?????
-গত পরশুও অনেক ভালো ছিলো।জানি না গতকাল থেকে কি এমন হয়েছে রাজের ফোন আসার পর থেকে।পরে যা হয়েছে তোমার চোখের সামনে বেডে শুয়ে আছে মৃত্যুর সঙ্গে লড়চ্ছে।
-রাজজজ…রাজের সাথে রায়হানের কি সম্পর্ক?
-আরে ভুলেই তো গেছি বলতে।রাজ হলো রায়হানের বেস্ট ফ্রেন্ড।রাজ পড়াশোনা শেষ করেই আমাদের অফিসে জয়েন্ট করেছে আর রায়হান কাজের কথা শুনলেই দৌড়াতো।হঠাৎই ঐ মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার পর থেকে কাজ ওর জীবনে আবির্ভাব হয়ে উঠেছে।
আনিকা তো পুরাই অবাক হয়ে গেলো রাজের সাথে রায়হানের বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা শুনে।কিন্তু এতোদিন কেনো বললো না রায়হানের কথা রাজ?আর রায়হানও বা মরার সিন্ধান্ত নিলো কেনো হুট করেই।তার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।মাথা ধরে বসে পরে পাশের বেঞ্চে।
তারপাশে বসে পরে মিসেস সালেহা বেগম।আনিকার মাথায় হাত রেখে..
-মা আনিকা তোমার কাছে একটা জিনিস ভিক্ষা চাই।(দু হাত চেপে ধরে)
-এমন কথায় আরও অবাক হচ্ছে আনিকা।তার কাছে এখন সব কিছুই অবাকের মতোই লাগছে।ভিক্ষা..
কি এমন চাইবে যে এভাবে বলছে?আনিকাকে চুপ করে থাকতে দেখে মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।
-কি গো মা..ভিক্ষা দিবা না আমাকে?আজ যদি আমি তোমার মা হতাম।তাহলে কি ফিরিয়ে দিতে আমাকে?
আনিকার মার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বুকের ভিতরে
কষ্টে বাধ ভেঙে দিলো নিমিষেই।বেচারি এমনিতেই মা হারানোর কষ্ট ভুলতে চেষ্টা করে তার উপরে দিলো কাটা গায়ে লবণের ছিটে দিয়ে।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো অঝরে।
-মা মা আমার মা আমাকে সে তো জন্ম দেবার পর পরই মারা গেছে।মায়ের ভালোবাসা কি সেটা তো জানিই না আন্টি?
আনিকা আর কোনো কথা বলতে পারছে না। অবিরত কান্না করেই যাচ্ছে।এমনটা দেখে মিসেস সালেহা বেগম
-আমার দিকে তাকাও please…
কাঁদো কাঁদো চোখ মুখ নিয়ে তাকালো তার দিকে।
-আমার মেয়ে হবি তুই?অনেক ভালোবাসবো তোকে।
এমন কথা শুয়ে জড়িয়ে ধরে বাহুডোরে মিসেস সালেহা বেগমকে।ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে।ওর কান্নার তাল মিলিয়ে মিসেস সালেহা বেগমও কান্না করে দিলো এতোখনে।
-এখন বল মা আমাকে…
আনিকা আর কথা বলতে দিলো না।কিভাবে দিতো তাকে আর কথা বলতে কারণ, তাকে যে মা স্থান দিয়েই দিয়েছে।তাহলে কি মা ভিক্ষা চাইবে মেয়ের কাছে আর সেটা কেউ মেনে নিবে।সেই জন্য চুপ করে থেকে।
-আপনি শুধু হুকুম করেন কি চাই?
-আগে মা বলে ডাক আর তুমিও বলে ডাক তারপর চাইবো তার আগে না।(অভিমান করে একটু)
-আনিকা একটু মুচকি হেসে তারপর..আচ্ছা বাবা তুমি তুমি তুমি হয়েছে এখন বলো মা তোমার।
দুজনেই এক সাথে হেসে দেয় খনিকেই।
-হ্যাঁ হয়েছে….তুই রায়হানকে বিয়ে করলো আজ এই মূহুর্তে।
এমন কথা শুনে আনিকার মুখ মূহুর্তেই মলিন গেলো।এটা সে কি বলছে?ভিতরে ভিতরে যেই ভয়টা ছিলো তাহলে কি এটাই সেটা হবে।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
-মা এসব তুমি কি বলছো?আর এটা হয় না কখনো?
-কেনো হয় না বল মা?তুই কি চাস না রায়হানের বাবা সুস্থ্য হয়ে যাক আর আমার রায়হানটাও। দেখ মা ডাঃ বলেছে যদি উনি আরেকবার স্ট্রোক করে তো আর বাঁচাতে পারবে না উনাকে।তারপরে আসে আমার ছেলে,কিভাবে ওদের ছাড়া থাকবো একা বল।
আনিকাকে ছেড়ে দিয়ে ফ্লোরে বসে পরে হাটু গেরে। কাঁদতে থাকে চিৎকার করে।মা তো পা ধরে ভিক্ষা চাই স্বামী সন্তানকে।
আনিকাও আর এক মূহুর্ত উপরে বসে না থেকে। বসে পরে সঙ্গে সঙ্গে তার সাথে তাল মিলিয়ে ফ্লোরে।
তারপর পৃথিবীর আর কিছু চিন্তা ভাবনা না করে
হ্যাঁ বলে দেয় রায়হানকে বিয়ে করবে বলে।
বাসস হয়ে গেলো সব ব্যবস্থা খনিকের মধ্যে।
আনিকাও আর এক মূহুর্ত উপরে বসে না থেকে। বসে পরে সঙ্গে সঙ্গে তার সাথে তাল মিলিয়ে ফ্লোরে।
তারপর পৃথিবীর আর কিছু চিন্তা ভাবনা না করে
হ্যাঁ বলে দেয় রায়হানকে বিয়ে করবে বলে।
বাসস হয়ে গেলো সব ব্যবস্থা খনিকের মধ্যে।
সব কিছু ব্যবস্থা করতে করতে রায়হানের আর আশরাফ চৌধুরীও জ্ঞান ফিরে আসছে।
অন্য দিকে সারাদিন কল করেই চলেছে রাজ ও আনিকার বোন দুলাভাই মিলে। এক প্রকার পাগল হয়ে গেছে ওর জন্যে।
আনিকারও হাত পা বাধা।কি করবে? কিছুই তো করার নেই এখন তার যে।কথা দিয়ে ফেলেছে।অন্যদিকে ওর আপু দুলাভাইয়ের কথা অনেক মনে পরছে।ভয়ে কলও রিসিভ করতে পারছে না তাদের।রাজের কথা বাদই দিলো না হয়।কিন্তু তাদের সামনের যাওয়ার মুখটুকুও রাখলো না আর?বেচারি মুখ চেপে কেঁদেই চলেছে।
রেজিস্টার অফিসার ও একজন মাওলানাও এসেছে সঙ্গে।হাসপাতালেই তাদের বিয়ে পড়ানো হবে।নেই কোনো সাজসজ্জা,নেই কোনো আয়োজন।শুধু কলমের খোচা আর মুখে আল্লাহর কালেমা পড়লেই হয়ে যাবে বিবাহিত সম্পর্কে আবদ্ধ।
বিবাহের কাজ সম্পূর্ণ করে।আনিকাকে সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার আগে,আশরাফ সাহেবের কাছে নিয়ে গেলো দুজনকে।একসাথে সালাম করার সাথে সাথে আশরাফ সাহেব বলে উঠলো রায়হানের উদ্দেশ্য।
– আগে যা যা করেছিস ভালো কথা কিন্তু এখন যেনো ঐসব না শুনি?আর পাগলমিটাও কমিয়ে দিবি।তোর চিন্তায় কবে যেনো মরে যাই।
রায়হানও মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়লো কোনো কথা না বলে।পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।
-ঐ বজ্জাত এখন কথা বলছিস না কেনো?কিছু একটা তো বলবি।না হলে সব হারাবি।
এমন কথা শুনে রায়হান সঙ্গে সঙ্গে নিচু সরে বলে উঠলো।
-হুমম আব্বু।
আর কিছু বলার সাহস হলো না মনে হয় রায়হানের।
ওর মনে যে কি আছে, একমাত্র আল্লাহ তাআলায় জানে?এর জন্যেই এমন হুমম বলে কাটিয়ে দিলো কোনো মতে।
আর কোনো কথা না বারিয়ে ডাঃ ওয়াজেদের সাথে কথাবার্তা শেষ করে আনিকাকে নিয়ে চলে গেলো রায়হানের বাড়িতে।রাতটাও প্রায় মাঝ বরাবর হবে।
বাড়িটা একদম ফাকা।কেউ নেই বোধহয় এ কয়েকজন ছাড়া।আনিকাকে নিয়ে গেলো রায়হানের রুমে মিসেস সালেহা বেগম নিজেই।কি করবে সে?তার একটা মাত্র মেয়ে।তাও তাঁর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে গতমাসে।আর এতো তাড়াতাড়ি বিয়েটা দিয়ে দিয়েছে তাদের,কাউকে বলার সুযোগও হলো না।মিসেস সালেহা বেগম আর আশরাফ সাহেব বলে দিয়েছে পরে বড় করে আয়োজন করা হবে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটা।
আনিকাকে দিয়ে গেলো রায়হানের রুমে খাটের উপরে বসিয়ে।চুপ করে বসে রয়লো। মাথা নিচু করে, হাটুর মধ্যে দিয়ে কেঁদে চলেছে। বার বার রাজের কথা ভাবছে।
-ওর কি দোষ?ওকে তো ভালোই বেসেছিলাম
শুধু বলতে পারলাম না একটি বারের জন্যে, হ্যাঁ হ্যাঁ ভালোবাসি তোমাকে অনেক যে।কেনো বললাম না ফোনে?কেনো অপেক্ষা করিয়ে রাখলাম তারে।
অন্যদিকে বোন দুলাভাইয়ের কথা মনে করে জোরে জোরে কেঁদে ফেললো খনিকের মধ্যে।তারা হয় তো মাফ করবে না এ জনমে।
মিসেস সালেহা বেগম বলেছে।সকাল হলে নিজে গিয়ে আনিয়া ও মিরাজকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে বুঝিয়ে।
কিন্তু রাজের সাথে কি এ জনমে মুখ নিয়ে দাড়াতে পারবে।
আনিকা আর কিছুই ভাবতে পারছে না।তার কাছে পুরো পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগছে।এরই মধ্যে দরজায়
নক পরলো।রুমে প্রবেশ হওয়ার শব্দ শুনতে পারছে কারো।এক অজানা ভয়ে বরফে জমে যাচ্ছে।কান্না থামিয়ে,নিজেকে সাহস দিতে লাগলো নিজে নিজেই।
দুহাত দিয়ে ওড়নাটা শক্ত করে চেপে ধরে, দম আটকিয়ে বসে রয়লো খাটের মাঝে।
রায়হান যখনই খাটের পাশে এসে আস্তে করে বসে আনিকার কাছে আসার চেষ্টা করলো তখনই চিৎকার দিয়ে উঠলো ।
-please কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। মনের বিরুদ্ধে বিয়েটা হয়েছে তাই বলে শরীরের জোর খাটাতে আসবেন না।না হলে…..
-না হলে কি??? বলো…
-নিজেকে শেষ করে দিবো।
এমন কথা শুনে রায়হানের মুখটা মলিন হয়ে যায়।চুপ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে।
আনিকাও বালিশে মুখ চেপে শুয়ে পরে।
ভোরের সূর্য আনিকার জন্য কি অপেক্ষা করছে?সেটা হয় তো নিজেও জানে না যে।কালো অন্ধকারের মতো আটকেও ধরতে পারে তার জীবনের প্রথম দিনটাতে।
আনিকাও বালিশে মুখ চেপে শুয়ে পরে।
ভোরের সূর্য আনিকার জন্য কি অপেক্ষা করছে?সেটা হয় তো নিজেও জানে না যে।কালো অন্ধকারের মতো আটকেও ধরতে পারে তার জীবনের প্রথম দিনটাতে।
সুদূরে সুরেলা কণ্ঠে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে।
আনিকার ঘুম ভেঙে গেলো তারই আওয়াজ শুনে।
বিছানায় আর শুয়ে না থেকে উঠে পড়লো তাড়াহুড়ো করে নামাজের উদ্দেশ্যে।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে অজু করে বের হলো।
এই প্রথম কোনো অজানা অচেনা জায়গায় রাত কাটালো আনিকা।রাতে তো ঘুমও হয় নি তার ভালো করে। সে যে অপরাধ করে ফেলেছে,তার ক্ষমা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।যেনো সবাই তাকে ভুল না বুঝে। আল্লাহ কাছে সেই দোয়া করবে।নামাজ আদায় করে
আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো…
আল্লাহ তুমি তো সব জানো।তুমি তো সবই দেখেছো।
আমার কোনো দোষ নেই। আমি কারো মনে কষ্টও দেই নি।তবুও আমার সাথে এমন হলো কেনো?এখন তো সবাই আমাকে ভুল বুঝবে।আপু, দুলাভাই, রাজ সবাই।
ওরা যদি ভুল বুঝে, আমি কোথায় গিয়ে দাড়াবো।
আল্লাহ তুমি এমন কিছু করো। যাতে ওরা আমাকে ক্ষমা করে দেয়।ওদের ছাড়া যে পঙ্গুত হবে আমার জীবন।চলতে পারবো ঠিকই কিন্তু বাঁচতে হয় তো কষ্ট হবে পঙ্গুত্বের মতোরই জীবন?😭
তুমি পরম দয়ালু।করুণাময়। তুমি চাইলে সব হয়।
আমার বেলাতেও সেই রকম চমৎকার দেখাও আল্লাহ একবার।😭😭😭
বলে কাঁদতে থাকলো চিৎকার করে।রুমে যে রায়হান ছিলো ভুলেই গেছে সে।আনিকার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরে।খনিকটা ভয়ের মতো কাজ করে তার বুকে।চোখটা হালকা ডলতে ডলতে আনিকার সামনে গিয়ে বসে।
আনিকার জায়নামাজ থেকে সরে যখনই উঠতে যাবে
রায়হানের সাথে ধাক্কা লাগে।অবাকের থেকে ভয়টাই বেশি পায় সে। কিছুখন চেয়ে থেকে, চুপ করে মাথা নিচু করে সরে যায় রায়হানের কাছ থেকে।
রায়হান চুপ করে ঐ একই জায়গায় থ হয়ে বসে থাকে।
কিছু বুঝার চেষ্টা করতে থাকে।সকাল সকাল এমন কি হলো যে আনিকার জায়নামাজে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না সে।আনিকার কষ্ট যে তার সহ্য হয় না।তাই তো উঠে তার কাছে এগিয়ে যায়
কি হয়েছে জিঙ্গাসার উছিলায়।
-কি হয়েছে বলা যাবে একটু?
আনিকা কিছু বললো না।অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো।কারণ এখনও আলোর হয়নি বাহিরে?চারিদিকে অন্ধকার রয়ে গেছে অনেকটা।
রায়হানও আর কিছু জিঙ্গাসা না করে।পুনরায় শুয়ে পরলো সোফাতে।
দুজন দু জায়গাতে,এক আলাদা অনুভূতি কাজ করছে।
কারো পাওয়ার অনুভূতি।আর কারো হারানোর অনুভূতি।
কিছুখন আগে চোখ বন্ধ করলো।আনিকার কাছে মনে হলো,বাহিরে একটু হইচইয়ের শব্দ।ঘুম ঘুম চোখে ওয়ালের সাথে দেওয়াল ঘড়ি আটকানো তার দিকে তাকিয়ে থ হয়ে যায় কিছুখনের জন্যে।প্রায় ১২টাআআ
এতো বেলা পর্যন্ত কখনো আনিকা ঘুমাইয়ো নি।
কিন্তু আজ…..?তার উপরে এ বাসার কেউ ডাকলো না কেনো এখনও আনিকাকে?
সেটা ভেবে রুম থেকে বের হয়ে নামতে থাকে সিঁড়ি দিয়ে এক পা এক পা করে, কারা যেনো চিল্লাচ্ছে,
সেই উদ্দেশ্য দেখার জন্যে।
সিঁড়ির শেষ প্রান্তে যখন এসে হাজির আনিকা।তখন তো অবাক হয়ে গেছে ড্রয়িং রুমে যারা চিল্লাচিল্লি করছে তাদের দেখে।
কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে সে।ভিতরে ভুমিকম্পের মতো নরে উঠলো মুহূর্তে।ভয়ে তো শব্দও বের হচ্ছে না একটাও যে।বড় বড় চোখ করে,শুকনা গলায় ঢোক গিলে কষ্ট করে বলে উঠে…আপুউউ
আনিয়াও চিল্লানো বন্ধ করে আনিকার কাছে হুরমরিয়ে এগিয়ে যায়। শক্ত করে দু হাতের ডানা ধরে ঝাকিয়ে বলতে শুরু করে….
-তোর মনে এই ছিলো আনিকা।তাহলে আগেই বলতি আমাদের।আমরা কি তোর এতোটাই পর হয়ে গেলাম এক বেলাতেই?এতো বড়লোক ছেলেকে ফাঁদে ফেলে হাত করে নিয়েছিস যে, সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও প্রস্তুত হয়ে গেছে তোর ভালোবাসার পাবার পাগলে।
এর জন্য তুই এতোদিন ভারে ভারে রেখেছিস আমাদের,
বিয়ে করবি না বলে।আরে তোর দুলাভাই আর আমি গতকাল পাগলের মতো খুঁজেছি এখানে সেখানে।
আর তুই এখানে বিয়ে করে বাসর রাত সেরে ফেললি আমাদের একবার না বলে।বাহ বাহ..তোকে বাব্বাহ দিলেও কম হবে।
এই কারণে মা তোকে আমার হাতে তুলে দিয়ে গেছে। শুধু এই দিনটি দেখার জন্যে।আগে জানলে তোকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম রে।তোর মতো বোন কোনো ঘরে থাকার চেয়ে মেরে ফেলাটা অনেকটা ভালো রে।
আনিকা যে কোনো কথা বলবে সেটাও পারলো না
ওর বোনের ভুল বুঝা দেখে।শুধু অঝরে কেঁদে চলছে মাটির দিকে মাথা নিচু করে।😭
-please তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ কর।তোর জন্য আজ আমাদের পুরো বংশের মুখে আচ পরলো।আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু সম্মানটা ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি এবছরে?কিন্তু তোর কারণে আজ সেটা মাটিতে মিশে গেলো আর তুই মাটিতে চেয়ে চেয়ে রঙ্গো দেখছি।
যাক তোর মুখ দেখেই বুঝা হয়ে গেছে সব। আর কিছু বলার নেই।শুধু একটা কথায় বলবো। যার জন্য আজ এমন কান্ড করলি বংশের মুখে কালি মেখে।একদিন পঁচকাবি বলে রাখলাম এই আমি তোকে।
বলে চলে যেতে লাগলো আনিয়া মিরাজের হাত ধরে।
কি মনে করে ফিরে আসলো পা ঘুরিয়ে।
আনিকার মুখোমুখি হয়ে…তোর জন্য আমাদের দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো শুনতে পেরেছিস কান দিয়ে।মানে তুই আজ থেকে আমাদের কাছে মৃত…..
বলাটা যতটুকু, স্থান ত্যাগ করতে সেকেন্ডও লাগেনি ওদের বের হয়ে যেতে।
এমন কথা শুনে আনিকা ফ্লোরে বসে পরে।
কেঁদে ফেলে জোরে জোরে করে।
মিসেস সালেহা বেগম দৌড়িয়ে এসে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত হতে বলে।কারণ ঘরে যে দু দুজন রোগী আছে।
আবারও মায়ের ভালোবাসা আর অসুস্থতা রোগীদের নিয়ে ব্লাকমেইল করে বলে…
-মা রে তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস আমাকে।মায়ের দেওয়া কথা ভুলে গেলি এক রাতেই।
বাসস হয়ে গেলো ঠিক জায়গায় তীরটা মেরে।শান্ত করতে চেষ্টা করছে একটু একটু করে ফ্লোরে বসে।
হঠাৎ দরজা ভেদ করে প্রবেশ করলো অতি প্রিয় মানুষটা যে, এতো তাড়াতাড়ি ফেস করতে হবে আনিকার ভাবতেও পারে নি একবারের জন্যে।
প্রবেশ করতে করতে রায়হান বলে চিৎকার করছে।
হঠাৎ করে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে আনিকাকে।
অবাক হয়ে যায় সে।
-আনিকা তুমি এ বাড়িতে।
আনিকার মুখ দিয়ে এবারও কথা বের হচ্ছে না।
হয় তো এবারও বোবা হয়ে গেছে।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে।এক অনু সূচনা কাজ করছে আনিকার মধ্যে। কি বলবে তাকে?তার কাছে যে কোনো প্রশ্নের উত্তরই নেই আজ যে? তাই তো অসহায়দের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে কেঁদে চলছে।
-কি হলো কথা বলছো না যে?
এবার মিসেস সালেহা বেগম মুখ খুললো। আরে রাজ তুই… কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলো মিসেস সালেহা বেগম কিন্তু কোনো কাজ হয় নি?
রাজ একের পর এক প্রশ্ন করেই চলছে?তাই আর থাকতে না পেরে মিসেস সালেহা বেগম বলেই ফেলে।আনিকা মিসেস রায়হান চৌধুরী হয় এখন এবাড়িতে।
রাজ একের পর এক প্রশ্ন করেই চলছে?তাই আর থাকতে না পেরে মিসেস সালেহা বেগম বলেই ফেলে।আনিকা এখন থেকে এ বাড়িতে মিসেস রায়হান চৌধুরী হয়।
।
।
রাজ এ কথাটা শুনার সাথে সাথে মাথায় বাধ ভেঙে পরে আকাশ থেকে বর্জ্য পাতের মতো করে।চিৎকার করে বলে উঠতেও পারছে না আনিকাকে, এটা তুমি কি করলে আমাকে ঠকিয়ে?মাথা নিচু করে থ হয়ে দাড়িয়ে রয়লো একই জায়গাতে।
মিসেস সালেহা বেগম রাজকে বসতে বলে চলে যায় উপরে।যেখান থেকে আশরাফ সাহেব বার বার ডাক দিচ্ছে মিসেস সালেহা বেগমকে।তাই আর দেরি না করে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ানোর আগে,আনিকাকে বলে যায় রাজকে চা নাস্তা দিতে। আর রায়হানের সাথে কথাবার্তা বলিয়ে দিতে।আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না সে,বার বার তার ডাক পরছে উপর তলা থেকে।তাই সে দূরুত্ব প্রস্থান করলো খনিকেই।
মিসেস সালেহা বেগম চলে গেলো ঠিকই কিন্তু রেখে গেলো একা বেচারি আনিকাকে?
আনিকা বুঝে গেছে রাজের মুখ দেখেই।আজ হয় তো ওর শেষ দিন হবে।কি বলবে বুঝি উঠতে পারছে না সে?
তবুও মুখ থেকে করুন সুরে বলতে গেলে রাজ থামিয়ে দেয় সঙ্গে সঙ্গে।
দাঁতে দাঁত চেপে মাটিতে চেয়ে থাকে।ওর ভিতরে যে ভেঙেচুরে যাচ্ছে আনিকাকে এমন অবস্থা দেখে।মনে হচ্ছে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।চোখ দুটো লাভার লাল বর্ণের মতো ধারণ হয়েছে।যে কোনো সময় জ্বালিয়ে ছারকার করে দিবে।
-কেনো করলে আমার সাথে এমন?
–😭😭😭(ওর এমন অবস্থা দেখে ভয়ে কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে।শুধু কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে)
– কি আর বলবে?মুখ থাকলে তো বলবে?নাকি আমি রায়হানের মতো টাকাওয়ালা নয়।প্রভাবশালীও নয়।সুখে রাখতে পারবো না ইত্যাদি ইত্যাদি ঠিক না বলো আনিকা।তাই আমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়েই ওর কাছে চলে গেলে।
-please 😭🙏একবার তো আমার কথা শোনো আগে।
–😂😂😂কি কি যে বলবে সেটা তো আগেই বলে দিলাম তোমাকে?okkk একটা কথা বলার চান্স দিলাম বলো বলো তাড়াতাড়ি করে।
-বিশ্বাস করো এই বিয়েতে আমার মতে হয় নি।
-হা হা হা😂😂 বাহ প্রশংসার কথা তুলে ধরলে।
কোনো মানুষের মতের বিরুদ্ধে কিছু করানো যায় সেটা তোমাকে না দেখলে বুঝতামি না যে।
দাড়াও একটু হেসে নেই।😂😂😂
এমন কথা বলেই রাজ অট্টোলিকার হাসি দিতে লাগলো।আনিকারও বুঝতে বাকি রয়লো না।এটা যে ওর কষ্টে হাসি।ভিতরে যে ওর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সবই।দু বছর ধরে দেখে আসছে ওকে।
এটুকু তো চিনতে পেরেছে এ দু বছরে। কিন্তু পাগলটাকে কিভাবে বুঝাবে এখন যে,সে কোনো দোষ করে নি।ওকে ঠকায় নি।ঠকেছে তো নিজেই।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে রাজকে ধরে বসে পরলো পায়ের কাছে।
-সব কিছু সহ্য করবো please অবিশ্বাস করো না।
-বিশ্বাসই ছিলো কবে আমাদের মাঝে।আর তো অবিশ্বাস। দেখো আনিকা,ওহো সিট..মিসেস রায়হান হবে তো..ভুলেই গেছি।
অবিশ্বাস তাকেই করা যায় যে বিশ্বাসের মর্যাদা রেখে যায়।কিন্তু আপনি তো কোনোটারই যোগ্য নন।
আমার সাথে এ কয়েক বছর ছিলেন কিন্তু একবারের জন্যেও রায়হানের কথা বললেন না বাহহহ 👏প্রশংসার যোগ্য।👌
আমি এতোটাই পর হয়ে গেছিলাম যে, আমার সাথে চললেন ফিরলেন তবুও বলার প্রয়োজন করলেন না রায়হানের সাথে এফেয়ারের কথা।
আনিকার কথা বলার সুযোগই দিচ্ছে না রাজ,এমন কি ওর কোনো কথাই বিশ্বাস করছে না? ফ্লোরে বসে বসে কেঁদেই চলছে অবিরত। 😭
-দেখেন এমন ন্যাকা কান্না বন্ধ করবেন।আপনাকে দেখে যেকোনো মানুষই ধোকা খাবে আর তো রাজ।😂
যাক ম্যাডাম দোয়া করি।সুখে থাকেন।কিন্তু একটা কথা বলার ছিলো?
আনিকার এবার চোখ মুছে হা করে তাকিয়ে রয় রাজের দিকে।ও ভাবে এই তো রাজ হয় তো বলবে আনিকা আমি তোমার অনেক ভালোবাসি। কিন্তু হলো উল্টো কিছু?
-দেখেন ম্যাডাম আমি গরীব হতে পারি কিন্তু অভিশাপের সময় বড়লোক গরীব দেখেনা আল্লাহ মালিক?তাই আপনাকে আজ একটা কথা বলে যাচ্ছি ।এই রাজের কষ্টে ফল ফেরত পাবেন কঠিনতর।তখন হয় তো বার বার আমার কথা মনে করেন।কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে?
পরে রাজ আর কিছু বললো না।অতিদ্রুত স্থান ত্যাগ করলো সেখান থেকে।না হলে যে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেও ফেলতে পারে। এটা যে ভালো হবে না সমাজের চোখে।বাজে কথা শুনাবে পরকীয়া ভেবে।
আনিকা ফ্লোরে আবারও বসে পরলো। আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো।
-কি দোষ করেছি?বার বার প্রিয় মানুষ হারানো আমার ভাগ্যেই লিখে রেখেছো বুঝি?😭😭😭
হারানোর ব্যথা আর সহ্য হচ্ছে না আমার।মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে আল্লাহ।আমাকে নিয়ে যাও তোমার কাছে। না হলে যে সবার অভিশাপ ফলে যাবে আমার কপালে।
হঠাৎ খেয়াল করে,উপরের সিঁড়ি বেয়ে কেউ নেমে আসছে।তাই তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে ফেলে।
ফ্লোর থেকে উঠে কিচেন রুমে দৌড়ে যায় চোখে মুখে পানি দিতে।
চোখে মুখে পানি দিয়ে যখনই ঘুরে দাড়ালো সামনে রায়হান।আনিকা কিছুটা আমতা আমতা করে বলতে লাগলো।
-আপনি এখানে?কিছু লাগবে।আমাকে বললেই হতো নিয়ে যেতাম উপরে।কষ্ট করে নিচে না নামলেই ভালো হতো আপনার শরীরের জন্যে।
-আরে নাহ..এখন আমি সুস্থ আছি।শুনলাম রাজ এসেছে তাই দেখা করতে আসলাম আর কি?কিন্তু তুমি এখানে কেনো?আর রাজ কোথায় দেখছি না তো ওকে?
আনিকা কি বলবে বুঝতে পারছে না?তাই একটা বানিয়ে কথা বলে ফেলে।
-উনার কি যেনো জরুরি ফোন আসলো আর চলে গেলো?বললো পরে আসবে।☺
-ওও….হয় তো আমাদের কোম্পানির কাজ ঠাজ হবে। অনেকটা কষ্ট করে আমার দোস্তোটা,আমার হয়ে। তাই চিন্তা করছি সুস্থ হলেই রেগুলার অফিসে যাবো। আর সব কাজ বুঝে নিয়ে এখন থেকে মন দিয়ে করবো।
তুমি কি বলো আনু?
আনিকা কোনো কথা বললো না,উপরে উপরে দেখালো মুচকি হেসে রায়হানকে, হ্যাঁ মন দেন কাজে।এটা বুঝিয়ে দিলো।
।
।
।
।
এভাবেই কেটে যাচ্ছে আনিকার দিনকাল মাস বছর।
রায়হানও অফিসে যায় নিয়মিত।আবার সময় মতো বাড়িও ফিরে আসে লক্ষী ছেলের মতো।রায়হানের মুখ থেকে শুনেছে রাজ যেনো চাকরি ছেরে দিয়েছে। অন্য জায়গায় চাকরিও নিয়েছে।এমন কি কিছু দিন আগে আদিরাকে বিয়েও করে নিয়েছে?
এমন কথা শুনে কষ্ট পাওয়ার থেকে খুশিই হয় অনেকটা।কারণ,রাজকে ভালো ভাবে বুঝে আনিকা আর আদিরা।মন থেকে দোয়া করে সব সময়।ওরা যেনো অনেক সুখি হতে পারে। আল্লাহ সেই ইচ্ছাটা পূরণ করেছিলো তাদের।যখন কয়েক মাস পার হয়ে গেছে শুনতে পায় রাজ বাবা হবে।সেটা শুনে যে আনিকা খুশি হয়েছিলো বলে বুঝাতে পারবে সে।
ও যতোটা খুশি হয়েছিলো,মনে হয় নিজেরই বেবি হবে।ঐ প্রথম রায়হানকে জড়িয়ে ধরে রাজের বাবা হওয়ার কথা শুনিয়েছিলো বলে।
এই কান্ড দেখে রায়হান অনেকটা অবাক হলেও
পরখনেই কি ভেবে আনিকার সাথে তাল মিলিয়ে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে? কিছুটা উঁচু করে নেয় বুকের ভিতরে।দুজনেরই এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে।আস্তে আস্তে রায়হান সুযোগের সৎব্যবহার করেই ফেললো এই দু বছরে।আনিকার কোমড়ে আলতো করে হাত রেখে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দিলো
হঠাৎ করে।
আনিকাও বুঝে উঠতে পারে নি এমন হবে।কি করবে?
বাঁধা দিবে নাকি যা হচ্ছে হতে দিবে? শত হলেও রায়হান তার স্বামী। এই দু বছরে এতো ভালোবাসা কেয়ার করেছে বলে শেষ করা যাবে না। কখনো জোরও করে নি।শুধু বলেছিলো.. যেদিন স ইচ্ছায় কাছে আসবে, সেদিনই স্বামীর অধিকার ফলাবে।
এখন তো আর সে ঠেকাতে পারবে না।স্বামীর অধিকার আছে ওর সম্পূর্ণ।তাই আর বাঁধা না দিয়ে তালে তাল মিলিয়ে অতুল সমুদ্রে পারি জমায় দুজনে।যেখানে আছে দুটি প্রাণের ভালোবাসার মিলন।পূর্ণতা পেয়েই গেলো আনিকা রায়হানের বিবাহ জীবনের পথ চলার জন্য।
এখন তো আর সে ঠেকাতে পারবে না।স্বামীর অধিকার আছে ওর সম্পূর্ণ।তাই আর বাঁধা না দিয়ে তালে তাল মিলিয়ে অতুল সমুদ্রে পারি জমায় দুজনে।যেখানে আছে দুটি প্রাণের ভালোবাসার মিলন।পূর্ণতা পেয়েই গেলো আনিকা রায়হানের বিবাহ জীবনের পথ চলার জন্য।
দিনকাল ভালোই কাটছিলো।হঠাৎ একদিন রায়হান বললো রাজের বেবিটা নষ্ট হয়ে গেছে।সেটা শুনে কষ্টে ফেটে যায় আনিকা বুকটা।সে ভাবে আল্লাহ কেনো রাজের হাসি খুশি জীবনটা বার বার ভেঙে দিয়ে যায়।
যার জন্য অকুল দরিয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলো জীবনটা কিন্তু তার জীবন যে হবে এমনটা,ভাবে নি আনিকা?
চোখ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পানি পড়তে থাকে।সেটা দেখে রায়হান প্রশ্ন করে?
-কি হলো আনু?কাঁদছো কেনো?
রায়হানের প্রশ্ন করা দেখে আনিকা নিজেকে স্থির করে বলে ফেলে?
-কোথায়??চোখে পোকা পড়েছিলো তো,তাই পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়ছে চোখ দিয়ে।(মিথ্যা কথা না বললে অনেক কথার সম্মুখে হতে হতো আজ ওকে)
এ কথা বলে চলে যেতে লাগে।তখনিই মাথা ঘুরে পরে জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে যায়।সঙ্গে সঙ্গে রায়হান চিৎকার করে উঠে আনিকাআআআ বলে।ওর কণ্ঠ শুনে সবাই দৌড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে। আনিকাকে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে পারিবারিক ডাঃ কে কল করে তাড়াতাড়ি আসতে বলে।
এদিকে ডাঃ আসতে দেরি দেখে রায়হান একবার রুমের এমাথায় যায় তো ঐমাথায় যায়।আর মাথার চুলগুলো টেনে টেনে প্রায় ছিরেই ফেলছে।এটা দেখে মিসেস সালেহা বেগম বলে।
-বাবু ভয় পাস না তো,ওর কিছুই হবে না।যে এতো ভালোবাসে বউকে।তার কিছু হতে পারে বল।এখন পাগলামি বাদ দিয়ে চুপ করে ওর পাশে বয়।
রায়হান এ কথা শুনে চুপ করে আনিকার মাথার কাছে বসে।এক নজরে চেয়ে রয়।আর মনে মনে আল্লাহুকে বলছে ওর যেনো কিছু না হয়। এমন সময় ডাঃ চলে আসে।
-ডাঃ ওয়াজেদ আনিকাকে দেখে রায়হানকে বলে এটা কি করে হলো?আমার দোস্তোকে খবর দেন ভাবী তাড়াতাড়ি।
এমন কথা শুনে রায়হানের ভিতরে তুফান শুরু হয়ে যায়।চোখ থেকে পানি পরবে পরবে এমন ভাব।অসহায়ের মতো ডাঃ ওয়াজেদের মুখে চেয়ে রয়।
মিসেস সালেহা বেগমেরও একই হাল।তখনই ডাঃ ওয়াজেদ বলে উঠে
-আরে বেটা তুই বাবা হতে চলেছিস।যাহ তাড়াতাড়ি মিষ্টি মুখ করাবি তো সবাইকে।
রায়হানের এতোখন চোখ টলমল করছিলো।এমন কথায় টপ টপ করে ঝরে পরে।হয় তো এটা তার আনন্দের পানি।মুখে কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
কি বলবে সেটা না পেয়ে জোড়ে করে বলে ফেলে?
-আমি বাবা হবো আমি আমি….😅😅😅😅😅
এমন কথাতে সবাই হেসে ফেলে বলে।তাহলে কি অন্য কেউ হচ্ছে?এটা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে মিষ্টির দোকান তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে।
পুরো বাড়িটা এখন খুশির জোয়ারে ভাসছে।
দেখতে দেখতে পার হলো ১০মাস।নতুন অথিতি পৃথিবীতে এসে মুখরিত করে দিলো চারপাশ।
সবাই অনেক অনেক খুশি।আর এতো খুশিই হবে না কেন?বংশের প্রদীপ বলে কথা যার।
নাম করনও করে ফেলে,আনিকা আর রায়হানের নামের সাথে মিল করে আরিয়ান চৌধুরী।😍
।
।
অন্যদিকে রাজেরও বেবি হয়,আনিকার বেবির এক বছর হওয়ার পর। দুপাশ থেকে আলাদা আলাদা মানুষ দুটা অনেকটা সুখে জীবন জাপন করে দিনগুলো পার করে যায়।
।
।
কিন্তু এই খুশি কতোটা যে সেটার সরুপ দেখতে পারছে বর্তমানে আনিকা?
১০বছর আগের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে আনিকা ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে সেটার খেয়াল নেই আর।
বাস্তবের জগতে ফিরে আসে..
পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো ঝলমল করে হেসে উঠাতে। জানালা ভেদ করে আনিকার মুখের উপরে।রোদে চাইতে না পেরে, চোখ বন্ধ অবস্থায় পাশে হাত দিয়ে খুঁজে চলে তার ভালোবাসার মানুষটাকে।
যখন পাশে খুঁজে পায় না।চোখ আস্তে করে খুলে পুরো রুমে খুঁজতে থাকে কোথায় গেলো সে।পরখনেই মনে পরে গেলো, গতকাল তো সে বাসায় আসে নি যে।
ছেলেকে বুক থেকে নামিয়ে।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে চলে যায় রান্না ঘরে।প্রিয়জনের জন্য রান্না করতে থাকে মন ভরে।
আনিকা ভাবে গতকাল আসে নি হয় তো অভিমান করে।কিন্তু আজ তো সে আসবেই ভালোবাসার টানে?
এখন যে সে একা নয়।ঘরে যে তার বউ বাচ্চা দুজনি রয়।
হয় তো যা দেখেছে,সেটা জোড়পূর্বক হয়।তাহলে সেখানে রায়হানের কোনো দোষই নয়।
রায়হান তো কিছু বলতে চেয়েছিলো।কেনো যে তখন শুনলো না এমন কথা বার বার মনে করে রান্নার কাজ
শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
পিছন থেকে আশরাফ সাহেব বলে উঠে…
-কি রে মা তুই রান্না ঘরে?তোর না শরীর খারাপ। তবুও কেন রান্না করতে আসছিস?
এমন কথায় আনিকা মিষ্টি হেসে আশরাফ সাহেবকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বলে।
-বাবা তোমার মেয়ে এখন অনেকটা ভালো বুঝলা।
চা টা খেয়ে বলো কেমন হলো…আজকেরটা।
আশরাফ সাহেবের মন ঘুরানো এক মাত্র আনিকাই ভালো জানে। তাই তো কথা না বাড়িয়ে,চায়ের কাপটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।😄
যে মেয়েটা বাড়ির সকলের এতো খেয়াল রাখে।ভালোবাসা বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে।তার জীবনে
কি হতে পারে নিজেই জানে না এখন পর্যন্ত যে?
কথায় আছে না…যত হাসি তত কান্না।আনিকার জীবনেও সেটাই অপেক্ষা করছে।দিন শেষ হবার আগেই তার প্রমাণ পাবে।
কথায় আছে না…যত হাসি তত কান্না।আনিকার জীবনেও সেটাই অপেক্ষা করছে।দিন শেষ হবার আগেই তার প্রমাণ পাবে।
দুপুর পার হতে চললো।রায়হানের কোনো খবর নেই বলে সবাইকে খাবার দিয়ে দিলো টেবিলে ঠিকিই
কিন্তু দরজার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে বার বার?
আশরাফ সাহেব এটা লক্ষ্য করে মিসেস সালেহা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে।
-জীবনেও মানুষ হবে না তোমার ছেলে।
মিসেস সালেহা বেগম বুঝতে পেরে মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বিষম খেয়ে বসে।পাশ থেকে আনিকা পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় আর বলে।
-আম্মু একটু ধীরে খাও না।আর আব্বু তুমিও না সব সময় এতো দোষারোপ করো না তো।
-দোষারোপ করছি না রে মা।সময় হলে বুঝতে পারবি ঠিকই কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে দেখিস মা?
আশরাফ সাহেবের বলতে দেরি অন্যপাশে আনিকার ফোন ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠে।
সবাইকে খেতে বলে ফোনটা রিসিভ করে একটু পাশে গিয়ে রিসিভ করে।কিছুখন অতিক্রম হওয়ার পর একটা জোরে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পেয়ে।
আশরাফ সাহেব আর মিসেস সালেহা বেগম এক প্রকার খাবার রেখে দৌড়ে আসে আনিকার কাছে।
এসে দেখে ফ্লোরে বসে কান্না করছে।মিসেস সালেহা বেগম আনিকাকে পাজর কোলে উঠিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে কুলসুমের মাকে এক গ্লাস পানি দিতে বলে।পানি খেয়ে একটু স্থির হয়ে বসতে বলে।তারপর বলতে বলে কে কল করেছিলো?
আনিকার আবারও কান্না পায়।আশরাফ সাহেবকে ধরে কান্না জরিত কণ্ঠে রায়হানের কথা বলেই যায়।
-রায়হানের কি হয়েছে বলবি তো?না বললে বুঝবো কি করে বল?
মিসেস সালেহা বেগমেরও ছেলের কথা শুনে মুখখানা মলিন হয়ে যায় ভয়ে।
-আব্বু ওকে ছাড়িয়ে আনো।কারা যেনো ওকে আটকিয়ে রেখেছে টাকার বিনিময়ে।আর বলেছে যদি টাকা না দেই তাহলে জোড় করে অন্য কারো সাথে বিয়ে করিয়ে দিবে।
এমন কথাতে ইতি মধ্যে আশরাফ সাহেব অবাক হলো এক প্রকার।এতোকাল শুনে এসেছে,কিডন্যাপ হলে টাকা না পেলে মেরে ফেলে কিন্তু আজ এই প্রথম শুনলো উল্টো কথা?
-তোকে কে কল করেছিলো?
-আপনার ছেলে নিজেই।
-ও কিভাবে কথা বললো তোর সাথে?
-জানি না।এতো কথা বাদ, তুমি টাকা দিবা কিনা বলো?
নাকি আমাকে সতীনের ভাত খাওয়াতে চাও।
এমন কথায় আশরাফ সাহেব আর কোনো কথা না বারিয়ে চুপ চাপ টাকা পাঠিয়ে দেয়।তারপর আশরাফ সাহেব একটা কথায় বলে।
-মা রে তোর মনটা অনেক নরম আর ভালো। তার জন্য সবাই তোকে কষ্ট দেয়।দেখিস হিতে বিপরীত না হয়।
দোয়া করি তবুও যেনো সুখি হোস।বলে চলে গেলো আশরাফ সাহেব।
টাকা পাঠানোর পরও এক-দু দিন কেটে যায়।তবুও রায়হানের কোনো খবর না পেয়ে।ওর ফ্রেন্ড জীতুর বাড়িতে যায়।এই প্রথম রায়হানের কোনো ফ্রেন্ডদের বাড়িতে যায় আনিকা, মিসেস সালেহা বেগমকে সাথে করে।
আনিকাকে দেখে জীতুর মা অবাক হয়ে বলে।গরীবের বাড়ি হাতির পা কি ভাবে পরলো রে। এ কথাতে আনিকা কিছুটা লজ্জা পেলেও,যে কাজের জন্য এসেছে, সেটা তো সফল হতে হবে।
-আন্টি জীতু ভাইয়া বাসায় আছে?
জীতুর মা কিছুটা বুঝতে পেরেছে মুখ দেখে তাই আর কথা না বারিয়ে জীতুর রুমে নিয়ে যায়।জীতুও একটু অবাক হয়েছে বটে।
-বসো আনিকা। মা উনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসো।
বসেন আপনারা বলে জীতুর মা যেই পা বারাতে যায় তখনই আনিকা…
-আন্টি আপনি এখানে বসেন।কিছু লাগবে না।
কয়েকটা কথা আসছি।আপনিও বসেন পাশে।
আসলে হয়েছে কি ভাইয়া?আজ কয়েকদিন ধরে রায়হান বাসায় নেই।গতকাল হঠাৎ কল আসে।
তারপর সব খুলে বলতে থাকে…লাস্টের যে একটা কথা বললো তখন জীতু বলে
-তুমি যে ঠিকানার কথা বলেছো।ঐখানে আমার মামাতো বোনের শ্বশুর বাড়ি। দুলাভাই থাকতে চিন্তা কি আর?
জীতু ওদের সামনেই ওর দুলাভাইকে কল করে সব কিছু ভেঙে বলে।তারপর সে বলে কোনো চিন্তা না করে। সে সব খোজ খবর নিয়ে দেখবে আর যেনো ক্ষতি না করে সেই ভরসা দেয়।
জীতুর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করতে না করতে রায়হান কল করে আনিকার কাছে।তার এখন কোথায় আছে কি করবে খুলে বলে সব?
জীতুর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করতে না করতে রায়হান কল করে আনিকার কাছে।
সবার সামনেই রিসিভ করে কথা বলে আনিকা।রায়হানকে বলে জীতুর দুলাভাইয়ের কথা।ভয় যেনো না পায় সেই আচ্ছ্বাস দেয় আর বলে দুলাভাইয়ের কাছে সব বলেছে,তো সে বলেছে কোনো চিন্তা করো না শুধু ভালো করে ঠিকানা বলো কোথায় আছে।দুলাভাই কি করবে না করবে খুলে বলে সব রায়হানের কাছে?
অবাক কান্ড হলো___কারণ,এই সব কথা বলার পর পরই রায়হান ফোনের লাইন কেটে দিলো টুস করে অপাশ থেকে।
আনিকা চুপচাপ কিছুখন বসে থেকে।মাথা উঁচু করে সবার সাথে চোখ মিলাতে পারছে না যদি প্রশ্ন করে বসে।তাই আর দেরি না করে আরিয়ানকে কোলে নিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায় সেখান থেকে মিসেস সালেহা বেগমকে সঙ্গে করে।
জীতু আর ওর পরিবার অনেক কথা আলোচনা করে রায়হান আর আনিকাকে নিয়ে।আনিকার কপাল পুরার কথায় বললো জীতু।কারণ রায়হানের হাবভাব যেনো ভালো দেখছে না অনেক দিন ধরে।
বেচারা আনিকা সারা রাস্তা শেষ করেছে ঠিকই কিন্তু রুমে ডুকার সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে ফেলে দরজা বন্ধ করে?
আরিয়ানকে মিসেস সালেহা বেগমের কাছে দিয়ে এসেছে।না হলে ঐ ছোট্টো শিশুটি প্রশ্ন করে বসতো অনেক যে?
বিকাল গরিয়ে সন্ধ্যা,সন্ধ্যা থেকে রাত হয়ে গেলো।আনিকার বুকের ভিতরে কালবৈশাখীর মতো কালো হয়ে উঠতে শুরু করলো।তার জীবনে কি হতে চলেছে?আসলেই কি তার জীবন তছনছ হয়ে যাবে কোনো এক ঝড়ে?
খাটে থেকে নেমে,বেলকুনিতে গিয়ে,গ্রীল ধরে দাড়িয়ে দূর দূরান্তে দেখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে নিজের কষ্ট বিলিন করার জন্যে।
চোখ থেকে ঝরনার মতো পরে চলছে পানি।শত চেষ্টা করেও পারছে না থামাতে।হঠাৎ করেই দরজায় নক পরে,কোনো রকম পানি মুছে,দরজার কাছে এগিয়ে যায়।দরজা খুলেই অবাক হয়ে যায়।কাকে দেখছে
আর কি অবস্থা করে ফেলেছে চেহারাতে?পুরো শরীরটা অবস হয়ে গেছে তাকে দেখে।মুখ দিয়ে যে কথা বলবে সেটাও হারিয়ে ফেলেছে।অনেকখন অতিক্রম হওয়ার পর চিৎকার দিয়ে উঠলে পাশের রুম থেকে সবাই দৌড়ে এসে দেখে রায়হান এসেছে।
পায়ে জুতা নেই।নেই কোনো মুখে হাসি।মুখটা শুকিয়ে গেছে।শরীরের এখানে সেখানে মারের দাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে শার্ট প্যান্টের ফাকে ফাকে।এমন অবস্থা দেখলে যে কোনো মানুষেরই বুকের ভিতরে হু হু করে উঠবে।
রায়হানকে বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে দুহাত দিয়ে আনিকা।ওর কান্না দেখে মিসেস সালেহা বেগমও পাশ থেকে কান্না করে দেয়।আশরাফ সাহেব কান্না করছে ঠিকই কিন্তু চোখ থেকে পানি পরছে না?বুক ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে তাকে দেখে।
রায়হানকে রুমে এনে বসিয়ে সবার প্রশ্নের পাহাড় জুড়ে ফেলে?রায়হান হঠাৎ করে বলে উঠলো..
-তোমরা আমাকে না খাইয়ে মেরে ফেলো নানান প্রশ্ন করে?
এমন কথাতে কেউ আর কোনো প্রশ্ন করলো না?
রায়হানকে গোসল করিয়ে।খাইয়ে দাইয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে সবার সামনে।আশেপাশের অনেক মানুষও এই রাত বেরাতে দেখতে এসেছে রায়হানের আশার খবর শুনে। অনেকে হায় হুতাশ করে চলে যায়।
রাত পার হয়ে যায় আনিকার বুকের উপর ঘুমিয়ে। আনিকারও কষ্ট হয় একভাবে শুয়ে থাকতে। তবুও যাকে ভিশন ভালোবেসে ফেলেছে তাকে বালিশে রাখে কি ভাবে?
সকাল হয়ে যায়..
রায়হানকে এমনভাবে আদর যত্ন করে অনেক দিন
পার করিয়ে দেয়।
কিন্তু রায়হানের হাবভাব আগের মতো নেই?আনিকাকে ভালোবাসলেও কল আসলে আড়ালে চলে যায় ফোন নিয়ে।
আনিকার এসবের কোনো গুরুত্ব নেই?কারণ তার জীবন সশরীরে তো বাড়ি ফিরে এসেছে?কিন্তু এটাই তার বড় ভুল?কাউকে এতোটাও বিশ্বাস করাটা। হোক সে ভালোবাসার মানুষটা।
১সপ্তাহ পার হতে না হতেই আনিকাকে কল করে রায়হানের এক বন্ধু।তার কাছ থেকে এমন একটা কথা শুনতে পাবে জীবনেও ভাবে নি।
পুরো পৃথিবীটা ঘুরতে শুরু করে।মনে হয় এই বুঝি ভেঙে পরবে তার মাথায়।ফ্লোরে বসে পরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।এমন সময় আরিয়ান রুমে এসে দেখে তার এই অবস্থা।ছোট্টো শিশু তার মায়ের এমন অবস্থা দেখে প্রশ্ন করে বসে?
-ও মা তুমি কাঁদছো কেনো?কথা বলো না কেনো?
কি হয়েছে তোমার মা,বলো না বলো বলো.?
অনেকটা ঝাকি দিয়ে আনিকার শরীরটা।
ছোট্টো এই ছেলেকে কি করে বলবে আনিকা?তার কথার কোনো উত্তর নেই যে আজ।কিভাবে বলবে যে তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে? তার কপাল যে পুরেছে।পুরো পৃথিবী যে তার কাছে এখন নিঃসঙ্গ লাগছে। কার কাছে বলবে তার কষ্টের কথা?
হয় তো বাবা-মার সাথে আমাকেও নিয়ে গেলে ভালো হতো,এসব ভাবছে আনিকা।কেঁদে কেঁদে তার ৬বছরের ছেলে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।
আনিকার কাছে মনে হচ্ছে।সবাই ঠিকই বলেছিলো সুখি হবো না কোনো দিনও। তাহলে কি এটাই তাদের অভিশাপ মূল ছিলো?
আনিকার কাছে মনে হচ্ছে।সবাই ঠিকই বলেছিলো সুখি হবো না কোনো দিনও। তাহলে কি এটাই তাদের অভিশাপ মূল ছিলো?
আনিকা ভাবছে,জীবনে কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি,প্রতারণা-ঠকায়ও নি।তবুও কেনো নিজের জীবন হলো এমন।
কারো ভালো করতে গিয়ে,নিজের কাছের মানুষদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।তাদের অভিশাপের ভাগিদার হয়ে নিজেকে শক্ত করে তৈরি করতে চেয়েছে।কিন্তু তার মূল্য এমনভাবে পাবে,কখনোই ভাবে নি সে?
আনিকার কান্নার শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে মিসেস সালেহা বেগম ছুটে আসে,সঙ্গে আশরাফ সাহেবও আসে।আনিকার চোখের পানির থেকে বংশধরের চোখের পানির মূল্য বেশি মনে হলো মিসেস সালেহা বেগমের কাছে।
নাতিকে কোলে নিয়ে আনিকাকে ধমকের সরে বলে উঠে…
-তোর কি দুদিন পর পর ভূতে ধরে?মাঝে মাঝে তোর এমন আচরণে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।তোকে বার বার বলেছি, যদি কান্না আসে তো আরিয়ানের সামনে কখনো কান্না করবি না।ওর মস্তিষ্কে বিঘ্ন ঘটে অনেক।
এমন কথাতে আনিকা অসহায়ের মতো মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে।হয় তো এটাই ভাবে।
হায় রে মানুষ।পরিবর্তন হতে সময় নেয় না রাতের প্রহালে।
পাশ থেকে আশরাফ সাহেব বলে উঠে…
-রায়হানের মা একটু বেশিই বকে ফেলছো কিন্তু? মানুষ এতো তাড়াতাড়ি চেঞ্জ হয়, তোমাকে দেখেই শিখবে।
মুখ খুলাবে না এখন কিন্তু?চুপ করে নাতিকে নিয়ে দারিয়ে আছো।থাকো দাড়িয়ে।অযথা মাথা খারাপ করবে না আমার।
এমন কথা বলে,আনিকার কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে পরে।মাথায় হাত রেখে জিঙ্গাসা করে?
-কি হয়েছে রে মা?বলবি আমাকে।
আনিকার কান্না বাধ ভেঙে গেলো শ্বশুরের ভালোবাসার পরশে।থাকতে না পেরে,আশরাফ সাহেবের কাধে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে উঠে।মনে হয় কালো মেঘ জমে ছিলো বুকের ভিতরে।হালকা আভাস পেতেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরছে অঝরে দু’নয়ন ভরে।
-আ..আ..আব্বু..
-কি হয়ছে???
-আব্বু রায়হান বিয়ে করেছে।
এটা শুনে মিসেস সালেহা বেগমের মুখ কালো হয়ে গেলো।কথা বলার মুখ নেই তার।অন্যের মেয়েকে যতই বলুক না কেনো মেয়ে হিসেবে আগলে রাখবে?সেটা কি কোনো শ্বাশুড়ী গ্যারান্টি দিতে পারে?নিজের পেটের মেয়ের বেলা ১৬ আনা।কিন্তু অন্যের বেলার খালি ন্যাকা কান্না মনে হয় মিসেস সালেহা বেগমের কাছে।
সেটা তার ব্যবহারেই প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছে ইদানীং।
আশরাফ সাহেবের মাথায় চোখে মুখে আগুন জ্বলে উঠে।হয় তো এখন রায়হানকে হাতের কাছে পেলে কুপিয়ে মেরেই ফেলবে।বার বার মিসেস সালেহা বেগমের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায়।মনে হয় এখনই কয়েকটা কিলঘুষি দিয়ে ফেলবে চোখ মুখ বুজে।
-এই তোমার জন্য এমন হয়েছে।বার বার বলেছিলাম ছেলেকে একটু শাসনে রাখো।কিন্তু তখন কান দিয়ে নাও নি তিল পরিমাণে, আরও আমাকে বলেছো ইয়াং বয়সে একটুআকটু এমন করবেই। পরে বয়স হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন তো দেখলে কি করে ফেললো অন্যের মেয়ের কপাল পুরিয়ে ? ওকে আমি আজ এই মুহূর্তে….
কথাটা শেষ কথার আগেই থামিয়ে দিলো মিসেস সালেহা বেগম আশরাফ সাহেবকে।
-আচ্ছা এখন এটা না বলে ওকে খুঁজে এনে দু তিনটা বাটাম দিয়ে বারি দিলেই হয়ে গেলো তো আর কে কি বললো সেটা আগে একটু ভালো ভাবে খোজ নিতে তো হবে।পরে না হয় ঐ মেয়েকে বাদ দিয়ে দিবে।
মিসেস সালেহা বেগম কতোটা যে চালাক কেউ তার সাথে না মিশলে বুঝবে না।ত্যাজ্যপুত্র করবে বলে
কথার ধরনটা চেঞ্জ করে দিলো অন্য দিকে। আসলে উনার মতো মহিলা অনেক কম আছে এ পৃথিবীতে।
সেটা আনিকা হারে হারে টের পাচ্ছে।
আনিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় আশরাফ সাহেব,সেই বন্ধুর বাড়িতে,যার কাছ থেকে রায়হানের খবর পেয়েছে।
সেখানে গিয়ে আসলেই সব সত্য জানতে পারে।আর প্রমাণ হিসেবে ফোনে তুলা ছবিগুলো পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখিয়েছে।
একজন স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তার স্বামী।কিন্তু স্বামীর এমন দৃশ্য দেখলে,কোন স্ত্রী সুস্থ থাকবে জানা নেই কোনো নারীর?
যে মেয়েটার ছবি দেখালো।তাকে দেখে আনিকা থ হয়ে দাড়িয়ে রয়লো।যাকে কয়েক মাস আগে দেখেছিলো তারই বেড রুমে রায়হানের সাথে অন্তরঙ্গভাবে।সেই হলো তার সতীন।বুক ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে আনিকার কি অভাব ছিলো তার মধ্যে?যে অন্য নারীর দরকার ছিলো তার।
চুপ হয়ে বসে রয়লো।আর পাশ থেকে আশরাফ সাহেব রায়হানের বন্ধুকে সব জিঙ্গাসা করতে লাগলো এক এক করে।কে এই মেয়ে?কোথায় থাকে?কোথায় দেখা হয়েছিলো আর কিভাবে বিয়ে হলো? তখন বলতে শুরু করলো সব…
-আংকেল আপনি তো অসুস্থতার কারণে অফিসে আসেন না ঠিক মতো করে।রায়হানের উপর সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তায় ঘরে বসে আছেন।আর অন্য দিক দিয়ে আপনার ছেলে অফিসে নতুন পিএ রেখেছে। ওর নাম রিয়া। এ শহরে নতুন এসেছে।ওর পরিবারসহ আপনাদের বাড়ির পাশে ভাড়া নিয়েছে।আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়।ওর বাবা মা দুজনই কাজ করে ছোটখাটো ফ্যাক্টরিতে।ছোট একটা বোন আছে।এবার হয় তো ৪-৫ম শ্রেনীতে উঠেছে।
রিয়া যেদিন অফিসে জয়েন্ট করেছে। সেদিন থেকেই রায়হানের সঙ্গ দিতেই থাকে। মেয়েটার রুচিশীলতাও ভালো নয় মোটে শুধু চেহারাটাই সুন্দর আর স্মার্ট কিন্তু নোংরা টাইপের মেয়ে?রায়হান বিবাহিত,বাচ্চা আছে জেনেও রায়হানকে সঙ্গ দিতে কতবার আপনাদের বাসায় গিয়েছে,তার কোনো ঠিক নেই আপনারা বাসায় না থাকলে।
এই কথাতে আশরাফ সাহেবের রাগ তিনগুণ বেরে গেলো।অন্যদিকে আনিকা মাটির দিকে তাকিয়ে কেঁদে চলেছে।কারণ, সেই দৃশ্য তার দেখা হয়ে গেছে কবেই। তবুও তাকে মাফ করে দিয়েছে ভুল হয়ে গেছে বলে।
আবার বলতে থাকে…
-রিয়া সপ্তাহখানেক আগে রায়হানকে চাপ দেয় বিয়ের জন্যে।সেটা আবার রায়হান নাকজ করে দিলে রিয়া রেগে মরার ডিসিশন নিয়ে ফেলে আর বলে কয়েক মাস ধরে ধর্ষণ করেছে সেটার প্রমাণ রেখে যাবে।তারপর বিয়ে করে ফেলে হারানো ও মান-সম্মানের ভয়ে।পরে রিয়ার পরিবার আপনাদের এলাকা থেকে ভয়ে চলে যায়,যদি লোকজন শুনে তো রামপেদানি পেদাবে।তাদের যাওয়ার দুদিন পরে, রায়হানকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় রিয়াদের গ্রামে।তাদের সপরিবারে বলে আনিকাকে ছেরে রিয়াকে নিয়ে সংসার করতে।
এমন কথা শুনে আনিকার বুকের বাম পাশে চিন করে উঠে।
-পরে সেখানে যে কয়েক দিন ছিলো তাদেরকে টাকা পয়সা ভেঙে ভেঙে খাইয়ে শেষ করে ফেলেছে সব।
পরে ফোন আর বাইকটা পর্যন্ত বিক্রি করে খাইয়েছে।
তারপর যখন বাসায় আসার কথা ছিলো তখন রিয়ার পরিবার রিয়াকে সঙ্গে করে নিয়ে ফিরতে বলেছে।
তখন চিন্তায় পরে যায় রায়হান কি করা যায় কি করা যায়?হঠাৎ মাথায় বাসার কথা আসে।তখন আপনাদের কাছে টাকা চায় মিথ্যা বলে।যেনো ঐটাকা দিয়ে রিয়াকে আলাদা ফ্লাট ভাড়া করিয়ে থাকতে পারে।
কারণ আপনারা ওকে ঘরে তুলবেন না কখনো এটা শুনলে।এখন বর্তমানে রিয়াকে নিয়ে আপনাদের অফিসে থেকে দূরে বাসা নিয়েছে যেনো অফিস থেকে যাতায়াত সহজ হয় ওর সেই ভেবে।
একথা শুনে আশরাফ সাহেব রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করতে থাকে।নিজের ছেলেকে চিনতেও এতো বছর পার করতে হলো তার।সে ভাবছে,তারও তো একটা মেয়ে আছে।যদি তার সাথেও এমন হয়ে যায় যেকোনো সময়ে।
সম্পূর্ণ কথা শেষ করে আনিকার দিকে বার বার দেখে অসহায়ের দৃষ্টিতে।আনিকাও বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা না করে আশরাফ সাহেবকে নিয়ে চলে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।
সম্পূর্ণ কথা শেষ করে আনিকার দিকে বার বার দেখে অসহায়ের দৃষ্টিতে।আনিকাও বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা না করে আশরাফ সাহেবকে নিয়ে চলে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।
সদর দরজা দিয়ে প্রবেশের সময়,মিসেস সালেহা বেগম এক গাদা কথা বলে উঠে…
-কি গো তোমরা এসেছো?ঐখানে গিয়ে তো মনে হয় কিছুই পেলে না।তবুও ছেলেটার পিছে লেগেছো দুজন।অযথা মিথ্যে অপবাদ দিয়েছো আমার ছেলেটার মাথায় উপর।মাঝে মাঝে মনে হয় সৎছেলে তোমার।একটা কথা শুনো।কখনো কারো কথায় কান দিয়ে নিজের ছেলের উপর রাগ করে থাকবে না।ছেলেটার উপর এমনিতেই কার কু নজর পরলো বুঝতে পেরেছি এখন।
আনিকার দিকে ব্রু কুচকিয়ে
আনিকাও বুঝতে পারলো কাকে উদ্দেশ্য করে বলছে?
কষ্টে বুকটা ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।ভিতরে এমনিতেই কষ্টের জোয়ার,তার উপরে দিলো আধখান বাঁশ।
পাশ থেকে আশরাফ সাহেব..
কে কেমন সেটা জানি?এখন চুপচাপ ঘরে যাও,না হলে….
এমন কথাতে মিসেস সালেহা বেগম আর একটা কথাও বললো না।চুপ করে চলে গেলো।পরে আশরাফ সাহেব
এডভোকেটকে কল করলো।কিছু খনের মধ্যে চলে আসলো এডভোকেট,এসে কি কি কাগজপত্র বের করে আশরাফ সাহেবের সামনে এগিয়ে দিলো?ধাপ ধাপ করে সিগনেচার করে দিলো।বাসস সে চলে গেলো।
পরে আনিকাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলো নিজের রুমে। আর বললো যেনো কোনো চিন্তা না করে।
এটা বলে আশরাফ সাহেব চলে গেলো।আনিকাও নিজ রুমের উদ্দেশ্যে পা বারালো।দু মিনিটের পথ,তার কাছে মনে হচ্ছে রাত পাড় হয়ে যাবে।
রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।এতো বছরের সংসারে,তার কাছে আজ মনে হচ্ছে নারী হয়ে জন্মিয়ে অনেক ভুল হওয়াতে।
রাত হয় তো শেষ হবে না তার কোনোভাবেই।পুরো রুমটাও ফাঁকা ফাঁকা লাগছে আজ।কার কাছে তার কষ্টের কথা শেয়ার করবে।যাকে একটু একটু করে জায়গা করে দিয়েছিলো মনে।সেই তো আজ দিলো ক্ষতবিক্ষত করে।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরে ঘুমের রাজ্যে।
ভোরের আলো ছড়াতে শুরু করলো সমগ্রতে।
চোখ মেলে একটু একটু করে চেয়ে দেখে চারিদিকে।
আনিকা কি করবে ভাবতে থাকে?ছেরে চলে যাবে নাকি… এমন সময় কল আসলো আনিকার ফোনে।
রিসিভ করে কথা বলার পর পরই শ্বশুরের রুমে সামনে দৌড়িয়ে গিয়ে দরজার কাছে দাড়ায় একটু তারপর জোড়ে জোড়ে হাপাতে থাকে সেটা দেখে মিসেস সালেহা বেগম বলে,বাঘ তারা করেছে নাকি তার পিছে।
আসলেই মহিলাটা কেমন যেনো হয়ে গেছে।কষ্ট লাগছে তবুও সেটা চেপে রেখে বলে…
-আম্মু রায়হান এক্সিডেন্ট করেছে।
মিসেস সালেহা বেগম চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে।
কোথায় আছে জিঙ্গাসা করে দ্রুত চলে যায় সেখানে?
আনিকাও পিছন পিছন দৌড়াতে থাকে।
যেমনই হোক না কেনো?স্বামী তো হয় ওর। স্বামীর এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে কোনো স্ত্রী ঘরে বসে থাকতে পারে।ওর কাছে মনে হয় না। তাই তো ছুটে যায় হাসপাতালে।
হস্পিটালে পৌছে দেখে রায়হানের ক্ষতবিক্ষত দেহ পরে আছে।এটা দেখে তো আনিকা বসে পরে।আর মিসেস সালেহা কেমন ছেলের শোকে কান্নায় ভেঙে পরে।
একটুপর আশরাফ সাহেবও আসে হস্পিটালে।আরিয়ানকে কাজের মহিলার কাছে রেখে আসে।
তারও খারাপ লাগছে কিন্তু মূখ ফুটে বলতে পারেছে না? তবুও শক্ত করে রাখে নিজেকে।হঠাৎ করে পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলতে থাকে…
-এই তোমার জন্য আজ আমার কলিজার টুকরারে হারাতে বসেছি।কি এমন দোষ করেছে সে,যে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে?বিয়েই না হয় করেছে আরেকটা।তো কি হয়েছে,সেটা আমি শুনেছি অনেক আগেই?তবুও বলি নি,যদি এই কান্ডটা করে বসো ওর সাথে।যেমনই হোক না কেনো?কেনো বুঝো না ওও তোমার ছেলে,তাই বলে এমন করবে ওর সাথে।আমার মনে হয় সব আনিকার কার সাজি।তার জন্য আমার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে।ওর মতো মেয়েকে…..
-চুপ বজ্জাত মহিলা। তোর স্বভাবটাই পেয়েছে।
তবুও উঁচু গলায় কথা বলে যাস।
এমন কথায় আনিকা অবাক হয়ে যায়। এতো বছর ধরে সংসার করছে।কখনো আশরাফ সাহেবকে তুই করে বকা দিতে দেখেনি।এই প্রথম শুনলো এমন।আর কি স্বভাব?স্বভাবের কথায় উঠলো কেনো এখন?
-রায়হানের আব্বু বেশি বকে ফেলছো কিন্তু?তুমি কি?সেটা আগে ভাবো।তারপর অন্যের দিকে আঙুল তুলো,লজ্জা করে না বুঝি।
আনিকা আগা মাথা কিছুই পাচ্ছে না।শুধু হা হয়ে চেয়ে চেয়ে শুনে যাচ্ছে তাদের ঝগড়া।
-লজ্জা হা হা হা… সত্যিই আমার লজ্জা নেই।যদি একটুও লজ্জা থাকতোই,তাহলে তোর মতো নারীর সঙ্গে কিভাবে সংসার করেছি এতো বছর যাবত ভেবে দেখ। যে নারী অন্যের সংসার ভেঙে নিজে সুখী হবার জন্যে,সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে অনেক বছর আগে।আবার লজ্জার কথা তুলে।এখন আমি ভাবি আসলেই আমি একটা অভাগা?না হলে এমন হতো আশরাফ চৌধুরীর সাথে বল একবার।মনে করেছিলাম আনিকার জীবন যেনো এমন না হয়,তবুও হয়ে গেলো মাত্র তোর কারণে সালেহা। এখন একটু ভাব তো,যদি তোর মেয়ের কপালেও এমন হয়। তখন কি করবি বল?
মিসেস সালেহা বেগম এখন চুপ হয়ে গেলো। কারণ, তার মেয়ের প্রসংগে তুললো বলে।
আশরাফ সাহেব হু হু করে কেঁদে উঠে।আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি এমনভাবে দিবে বুঝি নি রে।তোর মতো নারীকে কেন সেদিন জুতা দিয়ে পিটালাম না রে।তাহলে আজ এমন দৃশ্য দেখতে হতো না চোখে সামনে।
পাশ থেকে আনিকা..
-আব্বু please যা ঝগড়া করার বাসায় গিয়ে করবে।
এটা পাবলিক প্লেস বুঝো না কেন?সংসারের খবর বাহিরের লোক জানবে কেনো?আগে রায়হান সুস্থ হোক তারপর ওকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যা ব্যবস্থা করবে।
এখন চুপচাপ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যাও।
একটা কথা মনে রাখবেন আব্বু,ভালো নিয়ে সবাই সংসার করে।খারাপ নিয়ে কয়জন সংসার করতে।
তো ভাবো তোমার লাইফেও তেমনটা হয়েছে।এখন হয় তো আমার কপালে এমনটা হবে।বলে কাঁদতে থাকে শ্বশুর বউমা মিলে।
অন্য দিকে রায়হানের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়।১সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ্যও হয়ে যায়।পরে ওকে নিয়ে বাসায় ফিরে রায়হানের মা।আশরাফ সাহেব আর কোনো কথাও বলে না।আনিকাও আগের মতো কথা বলে না রায়হানের সাথে কিন্তু সেবাযত্নের কোনো ত্রুটি রাখে না?
রায়হানও অনেক বার আনিকার সাথে কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু সে কাজের বাহানা দেখিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে সেখান থেকে প্রতিবার?
রিয়ারও কোনো খবর নেই এ কয়েকদিনে?কেমন মেয়ে আল্লাহ মাহমুদ জানে।আল্লাহুর কালাম পড়ে বিয়ে করেছে রায়হানকে।তবুও একটু টান নেই তার প্রতি তিন পরিমাণ।হয় তো চিকিৎসার বহন নিতে হবে বলে।দূরে সরে আছে কোনো খোজ খবর নিচ্ছে না কারো কাছে।
সময় হলে বের হয়ে যাবে মনসার মতো করে।
(হয় তো আপনারা ভাবছেন এই মনসা আবার কেডা?
আরে চিনলেন না..সাপ গো সাপ। সময় হলে গর্তে থেকে বের হবে।দেখবেন পরেরবার)
রিয়ারও কোনো খবর নেই এ কয়েকদিনে?কেমন মেয়ে আল্লাহ মাহমুদ জানে।আল্লাহুর কালাম পড়ে বিয়ে করেছে রায়হানকে।তবুও একটু টান নেই তার প্রতি তিল পরিমাণে।হয় তো চিকিৎসার বহন নিতে হবে বলে।দূরে সরে আছে কোনো খোজ খবর নিচ্ছে না কারো কাছে।সময় হলে বের হয়ে যাবে মনসার মতো করে।
হয় তো বিষটা বেশি হবে মনসার ছবলের বিষের থেকেও খারাপ হবে তার আবির্ভাবে।তার জন্য হতে পারে সংসার ভাঙনের নতুন প্রভাব।
রায়হানের সুস্থ্যতার জন্য সব রকমের সেবাযত্ন করে যাচ্ছে আনিকা।দিনের পর দিন,রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছে নিঃস্বার্থভাবে তার প্রাণ প্রিয় স্বামীকে সুস্থ্য করার জন্যে।তবুও কি সেই ফল পাবে।আল্লাহ হয় তো তার জীবনে সেইটুকু সুখ লেখেও রাখে নি অভাগি বলে।দুদিন পার হতে না হতেই তার প্রমাণ পেয়ে যাবে।
ঘুম ঘুম চোখে হেলান দিয়ে বসে আছে খাটের এক কোণে রায়হানের মাথার পাশে।হঠাৎ করে এমন করবে আনিকাও বুঝতে পারে নি একবারের জন্যে। আচমকা হ্যাচকা টান দিয়ে যাপ্টে ধরে ফেলে দিয়ে তার উপরে উঠে পুরুষত্ব প্রকাশ করবে। শত চেষ্টা করার পরেও, পেরে উঠতে পারছে না রায়হানের সাথে।দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে বেরি বাধ ভেঙে যাওয়ার মতো করে। জোরে চিৎকারও দিতে পারছে না আবার সহ্যও করতে পারছে না।কি করবে সে?অবশেষে হাল ছেরে দেয়,না পেরে।তার মতো সে পুরুষত্বের পরিচয় দিয়েই যাচ্ছে তো যাচ্ছে।তাকে দেখে যে কোনো মানুষই বলবে কতোদিনের খুদার্থ সে?তাই তো সে শকুনের মতো ছিরে ছিরে মনের সুখে খেয়ে চলেছে তাকে।
অনেকখন পর কেটে গেলে,ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
আনিকা পাশ থেকে সরে গিয়ে নেমে পরে ফ্লোরে।
শূণ্য শরীরে ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে আনিকার।
এই কি সেই রায়হান?যে কিনা পাওয়ার জন্য কত বছর কাটিয়ে দিয়েছে একই বিছানায় এক কোণায় শুয়ে, মাঝে বালিশেরও প্রয়োজন পরে নেই তাদের মাঝে।আর এখন কি সে ছিঃ ছিঃ ঘৃণায় জ্বলে যাচ্ছে?????
কান্না করারও শক্তি হচ্ছে না আনিকার।কিভাবে করবে কান্না?তার যে সব শক্তিও হ্রাস হয়েছে রায়হানকে দিনরাত সেবাযত্নে সুস্থ করে ফেলাতে। নিজের শরীরই দুর্বল হয়ে গেছে তার জন্য এমন জঘন্য কাজ করে ফেলতে পেরেছে।
নিথুন দেহ নিয়ে আস্তে আস্তে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
গোসলটা সেরে নিলো অনেক কষ্টে ধীরে ধীরে। সর্ব শরীর যে তার আমা-বর্শা চাঁদের মতো ঘীরে রেখেছে।
বের হয়ে আস্তে করে শুয়ে পরে সোফাতে।চোখটা বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে চলেছে আল্লাহ আল্লাহর নাম নিয়ে।এমন করতে করতে কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে সেটার হুসই নেই নিথুন দেহ নিয়ে।
হঠাৎ ই চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসে আনিকার কানে।
এমন ভাবে চিল্লাচ্ছে।মনে হয় কোনো মূল্যবান রতন ডাকাতি হয়ে গেছে?কোনো রকম চোখ খোলার চেষ্টা করে চলেছে।তবুও পারছে না চোখ মেলে তাকিয়ে চারিদিকে দেখতে।আসলে মেয়েটার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।তার উপরে মানসিক ও শারিরীক টর্চার করেছে।সেই অনুযায়ী চোখও খোলা সম্ভব হবে নাকি আল্লাহ মাবুদ জানে।
কোনো রকম চোখটা কচলাতে কচলাতে নামতে থাকে সিঁড়ি বেয়ে।হঠাৎ ই কণ্ঠের সরটা খুব চেনা চেনা লাগলো আনিকার কাছে?ভালো করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতেই বুকের ভিতরে চিন করে উঠে।পাশ থেকে রায়হান তার আগে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে দ্রুত গতিতে।
-কি ব্যপার রিয়া তুমি এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো এখানে?
-তো কি করবো নাচবো?আজ এতো দিন হলো তোর খোঁজ খবর নাই কেন?বিয়ে করছোস কি আমারে রেখে বড় বউকে নিয়ে শুয়ে থাকতে?
এমন কথাতে আনিকা অবাক হয়ে যায়।এটা কোন ধরনের কথাবার্তা ছিঃ।(মনে মনে ভাবে)
-তুমি কি চুপ করবে?সবাই চলে আসবে তো।
এমন সময় আশেপাশের সবাই চলে আসে।তখন মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।
-আনিকা ভিতরে নিয়ে যা তো রিয়াকে?
আনিকা অসহায়ের মতো করে মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে থাকে।আনিকার তাকিয়ে থাকতে দেখে মিসেস সালেহা বেগম চোখ বড় বড় করে রাগ রাগ ভাব দেখিয়ে উঠে। আনিকা আর কোনো দিশে না পেয়ে নিয়ে যায় তার রুমে রিয়াকে। ভিতরে ভেঙে যাচ্ছে তবুও শান্ত ভাবে চলছে।অন্যদিকে রিয়ার ভাব ই অন্যরকম।
আনিকার হাত সরিয়ে দেয়। মনে হয় ওর জামাইকে কেরে নিয়েছে আগে ওর থেকে।
রিয়াকে বসিয়ে দিয়ে চলে এলো নিচে। রান্না ঘরে ঢুকে আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারলো না।ভিতরে জমে থাকা জলগুলো পরতে শুরু করে দিলো।পাশ থেকে মিসেস সালেহা বেগম বলে উঠে।
-এমন কান্না কাটি বাদ দিয়ে। রিয়ার আর রায়হানের জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আস।আর সবার সামনে যেনো এমন ভাব না দেখি।যা হয়ে গেছে তো হয়েই গেছে।কত মানুষ সতীনের ভাত খায়।তাদের তো সমস্যা হয় না।আর রায়হান তো তোকে ভাত কাপড় সবই দিবে তাহলে তোর সমস্যা কোথায় বুঝি না বাপুরে।এখনকার যুগে এবেল এবেল দুটা তিনটা বিয়ে করে ছেলেরা।আর তো রায়হান ভুল করে ফেলছে।তবুও তোকে অনেক ভালোবাসে।তো এসব মেনে নিয়ে খা ভালোই হবে তোদের।
আনিকা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনেই চলেছে।
-আরেকটা কথা।তোর শ্বশুর বিদেশে গেছে একটা কাজের উদ্দেশ্যে।আসতে আসতে কোরবানির ঈদ পার হয়ে যাবে,তো এসব ব্যপার তার কাছে যেনো তিল পরিমাণে কানে যায় না যেনো কোনো মতে।যদিও এসে দেখে আর শুনে তো তুই উনাকে বুঝিয়ে শুঝিয়ে সব ঠিক করে ফেলবি।কারণ,তোর কথা অমান্য করবে না কোনো দিনও উনি।
পরে মিসেস সালেহা বেগম চলে গেলো নানান ধরনের জ্ঞান জ্ঞুয়েন দিয়ে।
আনিকা কাঁদবে কি আর?তার চোখ তো এখন বন্ধ হওয়ার পালা।অপেক্ষা শুধু মরার।
চুপচাপ নাস্তা বানিয়ে নিয়ে গেলো রায়হানের রুমে।ততখনে রুম পুরো ভরে গেছে এলাকার মানুষ দিয়ে।
সবাই নতুন বউ দেখতে এসেছে।ভালোই বলছে কেউ কেউ চেহারার প্রসংশা হিসেবে।আবার কেউ কেউ বলছে,শুধু চেহারা থাকলেই হবে নাকি?চরিত্রটা কি দেখবা না একটিবারের জন্যে?এমন অসভ্য মেয়ে আর কোথাও আছে।যে বউ বাচ্চা দেখেও আসে সংসার ভাঙতে নিজের স্বাদ আল্লাদ পূরন করতে।
এসব কথা ফুসফাস করে বলতে থাকে সবাই। এমন সময় আনিকা রুমে প্রবেশ করতেই সবাই চুপ হয়ে যায়।
ওকে দেখে হাই হুতাস বলে চলে গেলো যার যার বাড়িতে।
আনিকা ওদের দুজনকে খাইয়ে দাইয়ে নিচে চলে এলো পরের সব কাজ সম্পূর্ণ করতে।রিয়া আর রায়হান পটের বিবির মতো রুমে খাটের উপরে গল্প সালাপ করতে থাকে।মনে হয় তারা কত বছর ধরে কথাবার্তা বলে না দুজন দুজনের সাথে।
আনিকার সারাদিন কেটে যায় কাজ কর্মের মাধ্যমে।
সমস্যা হচ্ছে রাত কিভাবে পার করবে?রাত অনেক হয়ে গেছে,এখন তো ঘুমানোর জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে গেছে।মিসেস সালেহা বেগমও বলে গেছে তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘুমে পড়তে।আনিকা কি করবে ভাবতে থাকে।
অবশেষে উপরে চলে যায় নিজ রুমে।আনিকাকে দেখে
রায়হান বলে উঠে।
-এতোখন লাগে তোমার কাজ শেষ করতে।এখন আসো ঘুমাবে।
আনিকা বড় বড় করে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে রায়হানের দিকে।এমনটা দেখে রিয়া বলে উঠে।
-হ্যাঁ আনিকা আসো আমরা তিনজন একসাথেই শুয়ে পড়ি।(আসলে রিয়া এই কথাটা বলেছে দাঁতে দাঁত চেপে)
-আমি সোফায় শুয়ে পরি।তোমরা খাটে শুয়ে পরো।
এটা শুনে রায়হান চিল্লেয়ে উঠে।
-কি বলছি কান দিয়ে যায় না তোমার?
এমন দেখে আনিকা আর কথা না বারিয়ে খাটের এক কোণে বালিশ নিয়ে শুয়ে পরে।মাঝে রায়হান আর তার ঐপাশে রিয়া।
আনিকার কি আর সারা রাত ঘুম হবে এটা দেখে?শুধু মনে হবে এই বুঝি পাশে শুয়ে ওরা দুজন কিছু করে বসবে।আর সেটা ওর পাশ থেকে অনুভব করতে হবে।
এটা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে আসলো আনিকার।
হঠাৎ কারো পায়ের ছোয়া পেলো।আস্তে করে চোখ মেলে,ডিম লাইটের আলোতে দেখার চেষ্টা করে চলেছে কি হচ্ছে……..?
এটা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে আসলো আনিকার।
হঠাৎ কারো পায়ের ছোয়া পেলো।আস্তে করে চোখ মেলে,ডিম লাইটের আলোতে দেখার চেষ্টা করে চলেছে কি হচ্ছে……..?????????
ওপাশ থেকে রায়হানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে রিয়া।
তার জন্য একটু ছোয়া লেগে গেছে আনিকার। সেটা দেখার পর সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে সোফাতে মুখ গুজে শুয়ে পরে।কান্না যে করবে,সেটাও হ্রাস পেয়েছে। খাটের প্রাণে একবারের জন্যে দেখে দেখেওনি জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যায় যদি ভিতরে।
রাতও বেঈমান হয়ে গেছে এখন তার কাছে।শেষ হওয়ার নামও নিচ্ছে না কোনো মতে।হয় তো সবাই ঠিকই বলে।দুঃখে কষ্টের রাত পার হয় না কারো জীবনেই।সেটাই হয়েছে আনিকারও আজ।
দূর পর্বতের আজানের ধ্বনি শুনতে পেয়ে।তাড়াতাড়ি করে উঠে পরে ফজরের নামাজ আদায় করবে বলে।
চলে যায় পাশের রুমে।যাওয়ার সময় একবারের জন্যে ঐদিকে ফিরে তাকিয়ে দেখেনি তারা এখন কোন পরিস্থিতিতে আছে?
অযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে,নামাজের পর্ব শেষ করে দুহাত মোনাজাত তুলে আল্লাহর কাছে দুঃখ কষ্টের কথা তার কাছে শেয়ার করবে বলে। আসলে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া, কেউ নেই এই দুনিয়াতে,যে তাকে ভালোবাসার বাধনে আগলে রেখে বেধে রাখবে সারাটা জীবন ভরে।যাই হোক আল্লাহই পারে তার মনের সব কিছু বুঝতে তাই কেঁদে কেঁদে ভিজিয়ে ফেলছে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করার দু হাত আর জায়নামাজের কিছু অংশ।মোনাজাত শেষ করে। চলে গেলো ছাদে কিছুখন প্রকৃতির আবহাওয়া অনুভব করতে।
ভোরের সূর্যটা নতুন নয়।তবুও আনিকার কাছে আজ অন্যরকম মনে হয়।সুন্দর বললে ভুল হবে।কষ্টের ছাপটাই বেশি ফুটে উঠেছে চারিদিকে।হঠাৎই কাঁধে কারো হাতে স্পর্শে ভয়ে পাওয়ার মতো দাড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করছে।পরক্ষণেই বুঝতে পারলো..
এই ছোয়া তার অনেক দিনের চেনা।সে এখন যতই পর হোক না কেনো?তবুও কি এই ছোয়া ভুলা সম্ভব?
কিছু না বলে চুপ করে সামনের দিকেই চেয়ে আছে।
এমন চুপচাপ থাকতে দেখে।পাশ থেকে বলে উঠে।
-কি ব্যপার এতো ভোরে,তাও আবার ছাদে একা একা দাড়িয়ে?
আনিকা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে পাশ ঘেষে চলে যেতে নিলে হ্যাচকা টান দিয়ে বুকের সাথে জাপটে ধরে
মুখো মুখি হয়ে…
-রাগ করেছো আমার উপরে।
এখনও কোনো উত্তর নেই? নিশ্চুপ…
-কি হলো?কথা বলবে না আমার সাথে। আমি কি খুবই খারাপ? নাকি গতকাল রাতের জন্য মন খারাপ।আমি জানতাম না রিয়া এখানে এভাবে চলে আসবে।আগে যদি জানতাম তাহলে….
এবার আর মুখ আটকে রাখতে পারলো না আনিকা।
-আমি কি তোমাকে সেই ব্যপারে কিছু বলেছি বা কোনো রাগ দেখিয়েছি।এখন তোমার ব্যপার।তোমার বউ কোথায় যাবে না যাবে,সেটা তোমার বউয়ের ব্যপার।
বলে চলে যেতে লাগে রায়হানের বাহু ডোরের থেকে।দু এক পা গিয়ে আবার ফিরে আসে।
-আরেকটা কথা,কোনো মেয়ে তার স্বামীর ভাগ দিতে চায় না।তবুও বলছি তোমাকে..রিয়াকে দিলাম স্বামীর ভাগ কিন্তু কয়েকটি কথা আছে?কখনো হিংসা করতে না করবে।আর পারলে নিজের সংসার জীবন সুন্দর করে সাজানোর চেষ্টা করতে বলবে।সেটাতে আমার কোনো আপত্তি নেই?কিন্তু আমার রুমে এক দিনের জন্য আর যেনো না দেখি ওরে।
বলে চলে গেলো দ্রুত গতিতে। মুখে বলতে সহজ হলেও ভিতরে ভেঙে চুরে নিচ্ছিলো ওর। আসলে আনিকার মতো মেয়ে হয় তো পৃথিবীতে ২-১জন হাতে গুনা পাওয়া যাবে ভাগ্যক্রমে। তাও সন্দেহ আছে। এমন মেয়ে খুজে পেতে।
অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে আনিকার দিকে।
তারপর নিজের রুমে এসে রিয়াকে ঘুম থেকে উঠালো ফ্রেস হওয়ার জন্যে।
-কি হয়েছে তোমার?এভাবে উঠাচ্ছো কেনো আমাকে?
-ফ্রেস হয়ে নাও,বাসায় যাবো।
-কোন বাসায় যাবো?
-কোন বাসায় ছিলে?সেই বাসায় যাবো এখন নাস্তা করে।
-কেন???এটা কি বাসা না? আর এখানে থাকলে কি হবে আমার?
-তোমার কিছু হবে না।এখানে দুজন এক সাথে রাখবো না।তো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
-দু জনে এক সাথে মানে…
কথা আর বলতে দিলো না রিয়াকে।তার আগেই থামিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে যেতে বললো রিয়াকে।
রিয়াও ওয়াশরুমে ডুকে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো দেখে নিবে।
ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে শ্বাশুড়ীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেতে লাগলে। বলে উঠে মিসেস সালেহা বেগম
-মা মাঝে মধ্যে এসো বেড়াতে। ভালোই লাগবে সবার, তোমার আসাতে।
এমন কথাতে রিয়া তো মাথার উপরে উঠে গেলো লাফ দিয়ে। মাথা নিচু করে ৩২টা দাঁত কেল্লিয়ে বলে
-আচ্ছা আম্মা আসবো চিন্তা করবে না। আর আপনার শরীরের প্রতি খেয়াল করবেন কেমন।
পাশ থেকে আনিকার চোখ টল টল করছে। তবুও কোনো মতে আটকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।
চলে গেলো ঠিকই তারা।সপ্তাহ পার হয়ে যায় কিন্তু বাসার মুখে আসার নাম নেয় না রায়হান আর?
চিন্তা করতে থাকে,পরক্ষণেই মনে পরে যায়,এখন তো আর সে একা নয়,সে তো আরেকজনের সাথে।তাকে ডিস্টার্ব করাটা এখন কি আর ঠিক হবে?
প্রায় এক মাস অতিক্রম হতে চলেছে। তবুও রায়হানের কোনো খবরই পায় না কারো কাছে?সামনে ঈদ
বাসায় না আসলে ছেলেটার শপিং কে করবে?তাই বাধ্য হয়ে রায়হানকে ফোন করে…
অনেকবার কল করার পরেও রিসিভ করার নামই নিচ্ছি না ওপাশ থেকে।পরে আর দেয় না কল।
মন খারাপ করে রেখে দিয়ে চলে যায় ইফতার করতে।
ইফতার সেরে যখন রুমে প্রবেশ করে তখন শুনতে পায় ফোন বাজছে।সেটা হয় তো ওর কাছে অনেকটা ভালো লাগার মতো কাজ করে বুকের ভিতরে।তাই দৌড়িয়ে গিয়ে রিসিভ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।
অপরপাশ থেকে…
-কি ব্যপার???এভাবে হাপাচ্ছো কেনো?আম্মুর কিছু হয়েছে কি?
রায়হানের কথায় অবাক হলেও,চুপ করে রয়।কারণ,এতোদিন পর নিজের থেকে কল করে খোঁজ নেওয়াও হয় তো ভুল হয়ে গেছে।তাই তো এতো কিছু জিঙ্গাসা করলো কিন্তু একটিবারের জন্য আমার কথা জিঙ্গাসা করলো না কেমন আছি?
আগের কথা আনিকার অনেক মনে পড়চ্ছে।যখন সেকেন্ডে সেকেন্ডে কল করে জ্বালাতন করতো।তখন শত বারন করার পরেও বলতো তোমার খোঁজ খবর না নিলে দম আটকে আসে।
আর এখন দিনের পর দিন কেটে যায় খোঁজ নেওয়া কি দূরে থাক?আগে তার মার কিছু হলো কিনা সেটা জিঙ্গাসা করে যায়?ফোনের অপরপ্রান্তে ভেসে আসে
-কি হলো কথা বলছো না যে?
কিছুটা নরেচরে উঠে কণ্ঠে পেয়ে..
-হুমম বলো শুনছি তো।
-শুনছো তো ভালো কথা।কিন্তু কথা বলছো না কেনো?
আর কিসের জন্য কল করেছো?
-ইয়ে মানে.. আজ কতো দিন হলো তোমার কোনো খোজ নেই।তার উপরে কিছু দিন পর ঈদ।আরিয়ানও অনেক খিজি করছে তোমার জন্য, কবে এসে শপিং করবে।
-এর জন্য কল করেছো।আরে আমি তো এমনিতেই দুদিন পর আসছি বাড়িতে।
-দুদিন পরে মানে??এখন তুমি কোথায়?
-আরে গ্রামের বাড়িতে আসছি রিয়ার সাথে।ওর আত্মীয় স্বজন আসতে দিতে চাচ্ছে না।তার উপরে রিয়ার ছোট বোন বলছে ঈদ এখানেই করে যেতে।
তবুও অনেক বুঝানোর পর আসতে পারবো দুদিন পর বাড়িতে।
এসব কথা শুনে আনিকার চোখ থেকে পানি টপ টপ পরতে থাকে গড়িয়ে গড়িয়ে।😭😭😭নিজের পেটের সন্তান এখন তার কাছে পর হয়ে গেছে শালিকে আপন ভেবে।হায়রে দুনিয়া রে..
-আর চিন্তা করো না।আমার আসতে দেরি হলেও আম্মু শপিং করে দিবে,বলে দিয়েছে আম্মু আমাকে?
তার মানে মা ছেলের ঠিকই কথাবার্তা হয় আর মাঝখান থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়।
বাহ বাহ মনে মনে ভাবে আনিকা এসব কথা।
-আচ্ছা চিন্তা করো না।আমি ভালো আছি আর তাড়াতাড়ি চলে আসার ব্যবস্থা করছি।এখন রাখি আল্লাহ হাফেজ।
নিজের মতো নিজে কথা বলে রেখে দিলো। এপাশ থেকে কানের কাছে ফোন এখনও ধরে ঠাই দাড়িয়ে রয়লো।মানুষটা শুধু চেঞ্জ হয় নি।ভুলেও গেছে অনেক কিছু বুঝতে পেরে গেছে আনিকা।
কান থেকে ফোনটা সরিয়ে খাটে ধপ্পাস হয়ে শুয়ে পরে বালিশ নিয়ে।জীবনে বড় ভুল করে ফেলেছে, সেটা যে এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
বাবা মার ভালোবাসা পেলো না জন্মের পরে। বোনের আদর সোহাগে বড় হয়েও কোনো লাভ হলো না,তার দাম না দিয়ে অন্য জনের মুখের হাসি ফুটাতে গিয়ে
মায়ের মতো বোনকে হারালো আনিকা।
আজ তার কাছে বড় শত্রু মনে হচ্ছে ভাগ্য। ভাগ্যের জন্যেই আজ তার কপালটা পুরা। কেন যে সেই ভাগ্য হলো না তার বাবা মার কাছে চলে যাওয়ার।তাহলে হয় তো এতো কষ্ট পেতে হতো না আজ তার।
আজ তার কাছে বড় শত্রু মনে হচ্ছে ভাগ্য। ভাগ্যের জন্যেই আজ তার কপালটা পুরা। কেন যে সেই ভাগ্য হলো না তার বাবা মার কাছে চলে যাওয়ার। তাহলে হয় তো এতো কষ্ট পেতে হতো না আজ তার।
জীবনের শুরুটা ভালো হলেই যে,শেষটা ভালো হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই আনিকা এখন মনে করে।তার ভাগ্য এখন অকুল দরিয়ায় ভেসে গেছে সেই কবে সেটাও সে বুঝে গেছে।ভিতরে হৃদয় বলতে কিছুই নেই এখন তার মাঝে।সবই পাথরের ন্যায় হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।
দূর আকাশের পানে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে।এটাই কি জীবন?নাকি এর পরে আরও কিছু লিখে রেখেছে উপরওয়ালা তার ভাগ্যে।যদি তাই ই হয় তো,তাহলে যেনো অতিদ্রুত তার পথ বেছে নিতে হবে,সেই সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
বেলকনি থেকে বের হয়ে শুয়ে পরে,একমাত্র ছেলে আরিয়ানকে বুকে নিয়ে। বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে।হাপাতে হাপাতে পাশের টি-টেবলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।স্বপ্নটা দুঃস্বপ্ন থাকলেও কেমন যেনো বাস্তব বাস্তব মনে হচ্ছে তার কাছে।
আরিয়ানের মুখের দিকে অনেকখন তাকিয়ে থেকে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে।আনিকা ভাবছে,
যদি আরিয়ান না থাকতো তার জীবনে,কবে সে চলে যেতো এই নরক থেকে,দু চোখ যেদিকে যায় সেদিকে।
কিন্তু এখন কিভাবে যাবে সে?শত হলেও ছোট বাচ্চা,
এমন করে কোনো মাই পারবে না নিঃস্বার্থভাবে ফেলে অন্যথায় চলে যেতে।
এমনটা ভাবতে ভাবতে কখন যে আবারও ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়েছে সেটা বুঝতোই না যদি মিসেস সালেহা বেগম ডাকতে ডাকতে দরজা ভেঙে ফেলার মতো করতো।
ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় ৯টা বেজে গেছে।এর জন্যেই হয় তো মিসেস সালেহা বেগমের এমন রাগ রাগ ভাব।
তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিয়ে বলে…
-আসলে আম্মু কয়েকদিন যাবত শরীরটা অনেক দুর্বল দুর্বল লাগে তার উপরে মাথাটাও উঠাতে পারি না।
তাই হয় তো এমন হয়েছে।
মিসেস সালেহা বেগম কিছু না বলে,রুমে প্রবেশ করে
আরিয়ানকে কোলে নিয়ে চলে গেলো নিচে আর যাওয়ার আগে বলে গেলো…
-ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয় অনেক বেলা হয়েছে
খেয়ে নিবি তারপর তো ইফতারের ব্যবস্থা করতে হবে।
আনিকা গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে রয় মিসেস সালেহা বেগমের দিকে অনেকখন।তারপর আর দেরি না করে ফ্রেস হয়ে চলে যায়।
সেহরীতে মিসেস সালেহা বেগম ডেকেছিলো আনিকাকে কিন্তু শরীরের কন্ডিশন যে পরিমাণে খারাপ তার জন্য হয় তো উঠতে পারে নি।তাই মিসেস সালেহা বেগম সব বুঝতে পেরে ঐরকম ব্যবহার করে গেলো।
যাক তবুও ভালো,অনেকদিন পর এমন ব্যবহার করলো
সেটাতেও অনেক খুশি আনিকা।
দেখতে দেখতে দিন পার হতে থাকে।অন্যদিকে রায়হানের আসার নাম নিচ্ছে না সেই চিন্তায় আনিকা আরও শুকিয়ে যাচ্ছে।দু দিন পর ঈদ আজও আসার কোনো নাম গন্ধ নাই।তাই ভাবছে কল দিবে আবারও।
এর ই মধ্যে আরিয়ান চিল্লিয়ে উঠে…
-আব্বু এসেছে আব্বু এসেছে।
এটা শুনে আনিকা এক প্রকার দৌড়িয়ে এসে দেখে ড্রয়িং রুমে সত্যিই রায়হান এসেছে।মুখটা কেমন যেনো শুকনো শুকনো লাগছে।হয় তো যার্নি করে আসছে এর জন্যে।আর কোনো ভাবনা না ভেবে কাছে গিয়ে জিঙ্গাসা করে…
-তুমি কি রোজা আছো?
-না..থাকতে পারি নি।
আনিকা আর কিছু জিঙ্গাসা না করে চলে গেলো রান্না ঘরে খাবার রেডি করতে।টেবিলে খাবার সাজিয়ে রায়হানকে খাওয়ার জন্য ডাক দেয় ফ্রেস হয়ে খেতে আসতে।
কিছুখন পরই চলে আসে খেতে।খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে।আরিয়ানকেও সঙ্গে নিয়ে যায় কোলে করে।আনিকা আর মিসেস সালেহা বেগম ইফতার সেরে এক সাথে নামাজ আদায় করে চলে যায় যার যার রুমে।রুমে প্রবেশ করার পর আনিকাকে কাছে টেনে নিয়ে বসিয়ে দেয় রায়হান।মুখে আলতো করে হাত রেখে…
-কি হয়েছে তোমার? এমন লাগছে কেনো তোমার চোখ মুখের অবস্থা।
আনিকা কিছু যে বলবে,সেটাও পারছে না।যেটা সযত্নে ভিতরে গুছিয়ে রেখেছে অনেক দিন আগে একটু একটু করে।
-আচ্ছা বলতে হবে না।যাও রেডি হয়ে নাও শপিং এ বের হবো।
এমন কথাতে আনিকা একটু হলেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে।কারণ,ছেলেটা রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন জামা-কাপড় করতে করতে মাথা খেয়ে ফেলেছে।
আজ ছেলেটার আশা পূরণ করতে যাবে।তাই খুশি হওয়া স্বাভাবিক।নিজের জন্য কখনো মেয়েটা হাসি ফুটে না।শুধু অন্য অন্য বলতে বলতে নিজের জীবন দিয়ে দিতেও পারবে আর তো তার নাড়ি ছেরা ধন।
আর দেরি না করে অতিদ্রুত রেডি হয়ে চলে গেলো শপিং এ।সেখানে গিয়েও আনিকার দয়ালুর শেষ হয় না তিল পরিমাণে।শ্বশুর,শ্বাশুড়ী,ননদ, ননদের বর, ননদের সন্তান,নিজের সন্তানসহ সবার জন্য শপিং করে।
অবশেষে ওর জন্য কিছু নিতে বললে বলে…
-রিয়ার জন্য শপিং করেছো কি?
-না.. পরে করে দিবো।
-কবে করবে?পরশু ঈদ,যদি আজ না করো আর যদি শুনে এবাসার সবার শপিং করা শেষ তো অনেক কষ্ট পাবে।তাই বলছি কি?ওর আর আমার একই ড্রেস কিনো তাতেই অনেক ভালো হবে।
পরে রায়হান মুচকি হেসে,আনিকার কথা মতো সব কিছু শপিং করে ফেলে।তারপর চলে যায় বাসার উদ্দেশ্যে।
বাসায় গিয়ে রুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরে।
এমন সময় রায়হানের ফোনে কল আসে আর অনেকখন ধরে কি যেনো কথা কাটাকাটি হয় কার সাথে?তারপর ফোনটা রেখে শুয়ে পরে আনিকার পাশে।বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আরিয়ানকে অনেক মাস পর।এতোটাই নিঃস্বার্থ হয়ে গেছে যে,এক মাত্র ছেলেকেও বুকে নেওয়ার সময় পায় না।আজ তার অনেক ভালো লাগছে, তাদের সেই আগের পরিবার এক সাথে একই খাটে শুয়ে বিলি কেটে দিচ্ছে আরিয়ানের মাথাতে।
এই ভালো লাগার সময় কতখন থাকবে একমাত্র আল্লাহ স্বয়ং জানে।
চোখ বুজে ঘুমের রাজ্যে পারি দেই দেই ভাব এমন সময় কল আসে।রিসিভ করতে পারে না ঘুম ঘুম চোখে একটু বেশিই বলে।লাস্টবার রিসিভ করতেই আরেক মুহুর্ত থাকলো না সেখানে। কোনো রকম রেডিয়ে হয়ে বেরিয়ে গেলো ফোন কলের সেই মানুষটির উদ্দেশ্যে…
শুধু যাওয়ার সময় আনিকা বলে উঠলো
-এতোদিন পর এলে তাও একটি রাত থাকবে না নিজের মানিক রতন ছেলেকে বুকে নিয়ে।কতদিন ধরে শুধু বায়না ধরে আব্বু যাবো আর আব্বুর কাছে ঘুমাবো।
তবুও আম্মু(মিসেস সালেহা বেগম)ছিলো বলে তাই সব কিছু সামলিয়ে নিয়েছে কিন্তু……..
আর কোনো কথা বলার সময় দিলো না?তার আগে চলে গেলো বলতে বলতে,,
-এসে শুনবো,এখন দেরি হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে রিয়ার যে….
এটা শুনে আনিকা কেঁদেই দিলো।ছেলের থেকে এখন রিয়াল সব হয়ে গেলো। যে একটা রাত তাকে একা রাখতে ভয় পায়।হায় আল্লাহ কেমন হয়ে গেছে এই মানুষটা।
রাত কেটে গেলো কোনো রকম করে।সারাদিন পারও হয়ে গেলো কিন্তু রায়হানের আসার নামই নেই আর?
আজকের দিন পার হলেই ভোরের সূর্যতে ফুটে উঠবে ঈদের আমেজে।”ও মোর রমজানেরি রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ “এই খুশিটা সবার মাঝে হলেও
নেই শুধু আনিকার ভিতরে।কল করেও পাচ্ছে না রায়হানকে। পরে আর থাকতে না পেরে কল করে রায়হানের বন্ধু জীতুর কাছে..
-(কয়েকবার কল করার পর রিসিভ করে) হ্যালো,,,আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাইয়া।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবী।কেমন আছেন?
-আমর কথা বাদ দেন।আপনি কেমন আছেন সেটা বলেন ভাইয়া?আর বাসার সবাই কেমন আছে?
-আমরা সবাই ভালোই আছি।কিন্তু??
-কিন্তু কি ভাইয়া??
-আজ রায়হান আর রিয়া আমাদের বাসার পাশের ইউনিটে উঠেছে।গতকাল রিয়া অনেক পাগলামিনী করেছিলো যেনো রাতে।তাই বাড়িওয়ালা বাসা থেকে চলে যেতে বলেছে।পরে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না তাই আমাকে কল করে বলে যে আমাদের পাশের ইউনিটে উঠবে।আর ভাড়াও দিবে।
কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে একটাই?
-কি সমস্যা?
-আমার ছোট বোন অন্য রকম।এমন তেমন অন্যায় দেখলে ঘার থাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।দেখবে না সে কার কি হয় সম্পর্কে।হোক সে আমার বন্ধু বান্ধব।
তাই সেটাই রায়হানকে খুলে বলার পর সব স্বর্থে রাজি আছে।তো আর না করতে পারি নি এখানে থাকতে।
এসব কথা শুনে আনিকা বিদায় নিয়ে আলগ্রস্থে রেখে দিলো।
এক সময় ছিলো আনিকার জন্য পাগলামিনি করে যেতো আর এখন…..বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।
রাতের তারা মিট মিট করছে।দিনের আলোর জন্যে। নতুন সূর্য কালও আসবে না আনিকার জীবনে।
এক সময় ছিলো আনিকার জন্য পাগলামিনি করে যেতো আর এখন…..বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।
রাতের তারা মিট মিট করছে।দিনের আলোর জন্যে। নতুন সূর্য কালও আসবে না আনিকার জীবনে।😒
আসবে তো ফণী মনসা।যে কিনা ছবল দিয়ে যাবে
তার বিষাক্ত বিষে।প্রাণ হানিও হতে পারে যেকোনো সময়ে,সেই ছবলে।
ভোর হলো।নতুন সূর্য, নতুন দিন,বছরে এলো খুশির দিন।সেটা হলো ঈদের দিন।ঈদ মানেই ছিলো আনিকার জীবনে রায়হান আর ওর পরিবার।আর এখন শুধু তার একমাত্র সন্তান আরিয়ান।
ঘুম থেকে উঠে সম্পূর্ণ কাজ সেরে ফেলে আরিয়ান ঘুম থেকে ওঠার আগে।তা না হলে যে, ছেলেটা পাগল হয়ে যাবে ঈদ ঈদ করে।
এসব কথা একটু উচ্চ সরেই বলে বলে কাজ করে যাচ্ছে।এমন সময় পিছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো?
-পাবনা থেকে ফেরত এলে কবে?
কণ্ঠটা চেনা লাগছে বলে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রিয়া……
মুচকি হেসে বলে..
-হুমম কিন্তু তোমার থেকে পরে ফেরত?
এটুকু কথাতেই তেলে বেগুনে ছেদ করে উঠলো রিয়া।
আর কোনো কথা না বারিয়ে চলে গেলো ড্রয়িং রুমে।
বাংলার পাঁচ করে রেখেছে চেহারাটাকে।সোফায় বসে বসে কি এমন ভাবছে যে,আশেপাশে বাড়ির আন্টিগন এসেছে,তাদের দিকে একবারও দেখছে না সে।
তার উপরে আনিকা কাজের উপর কাজ করে চলেছে আর সে নবাব নন্দিনী হয়ে সোফায় পা তুলে গভীর চিন্তায় চিন্তি হয়ে বসে আছে।
আন্টিগনরা বলে উঠে..
-কি গো নতুন বউ?কোনো মুরব্বী আসলে যে তাকে সালাম করতে হয়,সেটা শিখিয়ে দেয় নি তোমার বাবা মা।
এমন কথাতে রিয়ার ইগোতে তীরের মতো লেগেছে।তাই আর এক মূহুর্ত থাকলো না সেখানে বসে।সবার সামনে থেকে হন হনিয়ে চলে গেলো রায়হানের রুমে।
এটা দেখে আন্টিগনরা নানান জনে নানান রকমের কথা বলে যাচ্ছে মিসেস সালেহা বেগমকে।কিন্তু মিসেস সালেহা বেগমও হয়েছে তেমন?তাদের কথা কানে না নিয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরে আনিকার কাছে সবাইকে নাস্তা দিতে বলে।তারা নাস্তা খেয়ে আনিকাকে দোয়া করে যায়।যেনো আল্লাহ দুঃখ-কষ্ট না দেয়।
অন্যথায়,রিয়া ফুস ফুস করতে থাকে সারাদিন।রাতে চলে যায়,তার বাসায়।আর পরে রয় একা রুমের কোণায় আনিকা।
দিন চলে যায়।রায়হান আবারও আসা বন্ধ করে দেয় আনিকার বাসায়।আনিকারও শরীরটা কেমন কেমন হয়ে গেছে।ঠিক মতো কিছু খায় না।কিছু মুখেও যেনো দিতে পারে না।মুখে দিলেই যেনো পেট থেকে আপনা
আপনিই বের হয়ে যায়।কার কাছে কি বলবে?কেউ
তো নেই এখন তার পাশে।এরই মধ্যে আরিয়ানেরও অনেক জ্বর এসেছে।আব্বু আব্বু করে প্রলেপ বকছে।
মিসেস সালেহা বেগমও কম আদর যত্ন করে না নাতনী নাতনী করে তবুও বাবার আদর সেটা কি পূরণ করতে পারে কেউ?তাই হয় তো আরিয়ানের জ্বর কমছে না কোনো মতেই।
এবার কল করেই বসে রায়হানকে আনিকা।কয়েকবার দেওয়ার পর রিসিভ করলে আসতে বলে আরিয়ানের অবস্থা বেশি ভালো না।সেটা শুনে এক মূহুর্ত দেরি না করে চলে আসে রকেটের মতো করে।
আরিয়ানকে সঙ্গে করে চলে যায় ডাঃ এর কাছে রায়হান।চেকআপ করে মেডিসিন নিয়ে চলে আসে।
বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে বসে রেস্ট নিতে থাকে এমন সময় পানির গ্লাস নিয়ে রায়হানকে দিয়ে চলে যেতে নিলে,মাথা ঘুরিয়ে ফ্লোরে পরে যায় ধাপ্পাস হয়ে।
রায়হান পানির গ্লাসটা হাত থেকে তাড়াতাড়ি রেখে আনিকাকে পাজর কোলে তুলে নিয়ে যায় রুমে।
তারপর ডাঃ ওয়াজেদকে কল করে অতিদ্রুত বাসায় আসতে।
আনিকার এমন অবস্থা দেখে এতোটা ভয়ে আত্মা যায় যায় বলে।এমন সময় ডাঃ ওয়াজেদ চলে আসে।
সব কিছু চেকআপ করে আনিকার কাছ থেকে কিছু তথ্য নিয়ে অনুমান করে বলে রায়হান আবারও বাবা হতে চলেছে।বাকিটুকু সিউর হবে টেস্টগুলো হাতে পেলে।এসব বলে চলে যায় ডাঃ ওয়াজেদ।
পাশে বসে পরে আনিকার।মাথায় হাত রেখে আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে আর বলতে থাকে
-কেনো বলো নি আমায় আগে,তোমার এ অবস্থা?
আনিকা নিজেই অবাক।আর রায়হানকে কি বলবে?
চোখ বেয়ে পানি পরে চলেছে বেবি আসার কথা শুনে।
ভাবছে,,নিজেরই কোনো খবর নেই আর তো আরেকটা বেবি।একটা নিয়েই জীবন শেষ এখন কিভাবে তাকে ফেলে দেবে।যদি হারিয়ে যায় তো,তখনএই বাচ্চা রেখে কি হবে?তার থেকে এ বাচ্চা পৃথিবীতে আসার আগে শেষ করে ফেলতে হবে।নয় তো….
-কি হলো,কথা বলছো না যে?
ভাবনার জগত ভেদ করে রায়হানের ডাকে।
-কোথায় কিছু না তো? আমার ভালো লাগছে না।আমাকে একা থাকতে দিবে একটু।
-আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও। আমি আম্মুকে বলছি কিছু দিয়ে যেতে।
এটা বলে চলে গেলো বাহিরে।কিছুখন পর আবার এলো নিজেই মিসেস সালেহা বেগমের সাথে।মিসেস সালেহা বেগমও কিছুটা খুশি হয়েছে।কারণ তার বংশধর আবার পৃথিবীতে আসছে।আনিকাকে বলছে
-এবার কিন্তু একটা মেয়ে চাইরে আনিকা তোর কাছ থেকে?
এমন কথাতে আনিকার ভিতরে ফেটে যাচ্ছে।মেয়ে চায়
বউকে মেয়ের মতো কখনো দেখেছে যে আবার মেয়ে চায়।যদি দেখতো তাহলে আজ এমন হতো না তার।
সেই রাতে ধর্ষণ হয়েছে।কোনো ভালোবাসার ফলন নয় তার পেটে।শুধু স্বামী-স্ত্রী নামে হলেই হয় না।ভালোবাসার মাধ্যমে মিলন হলেই সেটা সুদ্ধ ফলন হয়।
অবৈধভাবে জোড়পূর্বক করে মিলন করলেই তাকে বৈধ বলে না সন্তানকে।ধর্ষণের মতো অত্যাচার করে গেছে সেদিন রাত।
চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলতে চাচ্ছে।এই বেবি চাই না আর।ঘৃণা করছে শুনে এটা কি করে পৃথিবীর মুখ দেখায়?হঠাৎ পাশ থেকে কলের আওয়াজে ভাবনা শেষ তার।তাকিয়ে দেখে রায়হানের ফোন বেজে চলেছে একটার পর একটা।যখন রায়হান রিসিভ করছে না।তখনই বুঝে গেলো আনিকা।এটা আর কেউ না?এটা রিয়া…তার সুখের ঘরে আগুন লাগানোর একমাত্র দিয়াশলাই।
মুখ ঘুরিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছুখন।
আনিকার তাকানো দেখে রায়হান বাহিরে চলে যায় ফোন হাতে করে।অনেকখন পর রুমে এসে আনিকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় রিয়ার বাসায়।
আনিকাও কোনো রকম ঠেকানোর চেষ্টা করে না আর।
কাকে ধরে রাখবে সে এখন আর।যে আগেই পারলো না ধরে রাখতে আর তো এখন।চলে গেলো মিসেস সালেহা বেগমও।যাওয়ার আগে বলে গেলো।
-আজ থেকে তোর কোনো কাজ করতে হবে না।তুই শুধু নিজের আর বেবির খেয়াল রাখবি।এটাই হলো তোর বড় কাজ।
আনিকা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।আজ বেবি হবে বলে কতো আদর যত্ন তাদের মধ্যে।কিন্তু রায়হান মুখে খুশি হলেও কি ভিতরে খুশি হয়েছে?
এটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।সন্ধ্যার সময় ঘুম ভেঙে গেলো আরিয়ানের আম্মু আম্মু ডাক শুনায়।
চোখটা মেলে দেখে আরিয়ান পাশে শুয়ে জ্বরে সারা গা পুরে যায়।হাতে ফোনটা নিয়েই রায়হানকে আবারও কল করে আসতে বলে আরিয়ানের জ্বর বেরে গেছে বলে।
রায়হান এসে ডাঃ এর কাছে নিয়ে যায়।ভালো করে চেকআপ করে মেডিসিন দেওয়ার পরে রাত অনেক হয়ে যায়।বাসায় ফিরে আসে তিনজনের মিলে।আরিয়ান বায়না ধরে তার কাছে রাতে থেকে যায় যেনো।রায়হানও আর মানা করে না।কারণ,রাতে যদি জ্বর আরও বেড়ে যায় তখন কি করবে আনিকা গর্ভাবস্থায়।
সবাই মিলে ডিনার সেরে চলে যায়,যার যার রুমে।
রাত প্রায় সাড়ে ১১টা।এমন সময় আবারও কল আসে রায়হানের ফোনে।রায়হান তো মরার মতো ঘুমে পরে আছে।তাই আনিকাই রিসিভ করে রিয়ার নাম সেভ দেখেই।
রিসিভ করার পর পরই।আনিকা হ্যালো বলতেই রিয়ার মাথায় রক্ত গরম হয়ে যায় টগবগিয়ে।
-তোর হাতে ফোন কেন?রায়হান কয়?ওর কাছে শুইতে মন চায় তোর অনেক তাই না।ভাতার কাছে পাইলে আর ছারতে মন চায় না।তাই তো পেটে আরেকটা
বাজায় ফেলাইছোস।
এমন কথা শুনে আনিকা আসমান থেকে পরে।ছিঃ এগুলা কি সব বলে রিয়া?এগুলা তো রিয়ার মুখে মানায় না।এটা তো নিজের বলা উচিত।তবুও তার দিয়েছি বলে সে আজ এমন কথাগুলো বলতে
পারলো ছিঃ।
হঠাৎ কান থেকে ফোন নিয়ে যায় রায়হান।রিয়াকে বলে কাল আসবে।এটা শুনে রিয়ার মাথা আরও খারাপ হয়ে যায় এক মূহুর্তে।
ফোনের ওপাশ থেকে কি কি বলে?সেটা আনিকা একটুও শুনতে পায় নি বলে।বার বার জিঙ্গাসা করে রায়হানকে কি হয়েছে তাদের মধ্যে আজ?রায়হান চুপ করে ঘুমিয়ে থাকতে বলে আনিকার শরীর খারাপ হবে বেশি টেনশন করলে।
আর কিছু না বলে আনিকা ঘুমিয়ে পরে।রায়হানও আর দেরি না করে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।
আল্লাহ আজ তাদের ঘুম কতোটুকু ভাগ্যে লেখে রেখেছে ঘন্টাখানেক পর প্রমাণ পেয়ে যায়। যখন আবার কলের উপরে কল আসতে রয়।
আর কিছু না বলে আনিকা ঘুমিয়ে পরে।রায়হানও আর দেরি না করে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।
আল্লাহ আজ তাদের ঘুম কতোটুকু ভাগ্যে লেখে রেখেছে ঘন্টাখানেক পর প্রমাণ পেয়ে যায়। যখন আবার কলের উপরে কল আসতে রয়।
এতো আওয়াজ হলে কি ঘুম হয়?কলের উপরে কল বাজতেই আছে।অবশেষে রিসিভ করেই বসে আনিকা।
-আসসালামু ওয়ালাইকুম।কে বলছেন?
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভাবী আমি জীতু..
-ওও হ্যাঁ বলুন ভাইয়া.. এতো রাতে কি করতে কল করেছেন?
-ভাবী রিয়া সুইসাইড করার জন্য দরজা বন্ধ করে থাপ্পাস থাপ্পাস কিসের যেনো আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
-কি বলছেন?আর কেনো বা রিয়া সুইসাইড করতে যাবে হঠাৎ করে।
-উফফ ভাবী আপনিও না..একদম বোকা,কিছুই বুঝেন না।
-বোকার কি করবলাম ভাইয়া?😒
-আপনার কাছে কি রিয়া কলই করে নি?আর এমন তেমন ব্যবহারও প্রয়োগ করে নি আপনার সাথে।
এখন আনিকা মন খারাপ করে চুপ করে থাকে।
-কি হলো ভাবী..কথা বলছেন না কেনো?
জীতুর সারা পেয়ে ভাবনার জগত ভেদ করে..
-হুমম..বলেন ভাইয়া।কি আর বলবো তাকে?ভাগ্যের লেখা কেউ খন্ডাতে পারে।
-খন্ডাতে পারে না মানে,,,কে বলেছে আপনাকে?
জানেন রিয়া কি কি করেছে?
-কি???
-জানি না আপনারা যাদু টোনা বিশ্বাস করেন কিনা?
কিন্তু আমার বোন আর আম্মু বলেছে?রিয়া যেনো রায়হানকে তাবিজ কবজ করে বেধে রেখেছে।
-ধ্যাতত কি যে বলেন না?বর্তমানে কি এসব বিশ্বাস যোগ্য হয় আপনার কাছে?
-কে বলেছে হয় না?আর বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার..তবুও বললাম যেটা সেটার প্রমাণ পাচ্ছেন।তাও নাকজ করছেন। থাক আর কোনো কথা বাড়াবো না।এখন রায়হানকে একটু দেন।
-কিভাবে দেই ভাইয়া ওকে।ছেলেটা যে আজ বায়না ধরেছে বাবার বুকে ঘুমাবে।
-দেখেন ভাবী..সবই বুঝি তবুও ওকে দিতে হবে।কারণ
রিয়াকে আমার ছোট বোন আর আম্মু এক মূহুর্ত রাখবে না সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
পাশ থেকে রায়হানের ঘুম ভেঙে গেলে বলে উঠে..
-কি ব্যপার আনু??এতো রাতে কার সাথে বক বক করছো এতোখন ধরে।
-ইয়ে মানে…. (রায়হানকে ফোন দিতে চাচ্ছে না।কারণ, দিলেই চলে যাবে রিয়ার কাছে তাই।)
-ইয়ে মানে কি?কে কল করেছে বলবে কি?
-ইইইয়ে.. জীতু ভাইয়া..
-তো এতো তোতলানোর কি আছে?দাও আমার কাছে।
ফোন ধরে আর বেশি দেরি করলো না এতো রাতে।
চলে গেলো সেই মনসার কাছে।বিষকে মনে করছে মধু।
সেটা যে কত মধু হবে..সময় হলেই টের পাবে।
রায়হান চলে গেলো।পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখলো না
আনিকার মুখের অবস্থা।বেচারির ভিতরে কুরে কুরে খাচ্ছে রাত শেষ হচ্ছে না বলে।কখন রাত পোহাবে আর কখন জীতু ভাইয়ের বাসাতে গিয়ে দেখবে রিয়ার কি হয়েছে?
রাত গেলো কোনো রকম কেঁদে আর ফোনের উপরে ফোন দিয়ে।অন্য পাশ থেকে বার বার কল কেটে দেওয়া রায়হানের বাহানা। তবুও লেইলা কুত্তার মতো সারা রাত কল করা বন্ধ হচ্ছে না আনিকার।লাস্ট সময়ে রিসিভ করেছে তবুও শুনতে হয়েছে চু**মা***, খা**মা**বে***
ইত্যাদি বিচ্ছিরি বকা।যেটা শুনলে যেকোনো মানুষই বমি করবে।
হায়রে লিলাখেলা,,,সব দুঃখই কি লিখে রেখেছিলো আনিকার একার কপাল পোড়ার?এই কপাল পোড়া
হয় তো বেড়ে যাবে ভোর হওয়ার সাথে সাথেই।
কোনো রকম ঘুমের জগত পার করলো।তারপর সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলো জীতুদের বাড়িতে।বাসায়
প্রবেশ করার পর পরই দেখতে পেলো এখানে সেখানে জিনিস পত্র ভেঙে চুরে একাকার।দরজাও ভেঙে ফেলা হয়েছে।আনিকা বুঝতে পারে গতকাল রাতে বড় সর একটা ব্যাপার ঘটে গেছে।এখন শুধু সেটার আসল তথ্য জানার জন্য জিঙ্গাসা করে।
-কি হয়েছে কাল রাতে?
-সেটা কি তোর কাছে বলতে হবে?
-আমার কাছে বলতে হবে না তো কার কাছে বলতে চাও।
-তোর মতো নষ্টা মেইয়ার কোনো কৈফিয়ত করতে চাই না।আর তুই এ বাসায় আইছোস কেন?বিগার উঠছে নাকি রায়হানকে কাছে পাওয়ার।
এমন কথাতে এবার আনিকা নিজেকে আর ধরে রাখতে না পারে..
-ঐ চুপ কর বলছি…অনেক সহ্য করেছি প্রায় এক বছর ধরে তোকে।কাকে কি বলছিস এসব বাজে কথা?
তোর মতো রাস্তার মেয়ে আবার আমারে বলে বিগারের কথা।আরে আমার যদি বিগারই থাকতো তাহলে নিজের জামাইরে তোর কাছে শুইতে পাঠাইতাম না।
আর তাবিজ কবজ করে বেধে রাখতাম না।
বিগার তো তোর বেশি।তাই তো বিয়ের আগেই আমার জামাইর সাথে এক বিছানায় শুইতেও তোর ঘৃণা প্রীত্তি হলো না।তবুও স্বাদ মেটে নাই তোর।যাদু টোনা করে নিজের এলাকাতে নিয়ে মানুষ জনের সামনে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছিস প্রেগনেন্ট বলে।তার উপরে যে তোর অনেক লোভ রে। ওর সম্পত্তির উপরে।তাই তো আর দেরি না করে,এ এলাকাতে এসে আগে চাকরিতে জয়েন্ট করে ভাড়া নিলি আমাদের বাড়ির পাশে।যেনো পেট ভরে ভাত কাপড় পাস দেওয়ানা বানিয়ে।
-ঐ…😕😕
-চুপ তোর ঐ ঐ..ভাতার ভাতার করোস খালি।আরে আমি তোরে ভিক্ষা হিসেবে দান করেছিলাম।আমি সব জানতাম তোর ফ্যামিলির অবস্থা।তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখে রায়হানকে বলেছিলাম রিয়াকে মেনে নিয়েছি কিন্তু ওর সংসার ও নিজেই গুছিয়ে যেনো নেয় আর আমার সংসারে নাক যেনো না গলায়।
ইত্যাদি কথা বলতে বলতে রায়হান বাহির থেকে চলে আসে।আর রিয়াও রায়হানকে দেখে ন্যাকা কান্না জুড়ে বসে আর বানিয়ে বানিয়ে এক গাদা কথা বলে আনিকার নামে।তার উপরে আরও বলে আনিকা এসেই মারধর করেছে, এমন কি মেরে ফেলার হুমকিও দেয় এতোখন ভরে?এসব শুনে রায়হানের মাথা়র রক্ত টকবগিয়ে উঠে.! আর কিছু বুঝতে না দিয়ে,আনিকার চুলের মুঠা খপ করে ধরে আর বলে..
-তোরে বার বার বলছি না,রিয়ার সাথে কথা বলবি না এমন তেমন করে।তার উপরে কে বলেছে তোকে এবাড়িতে আসতে?
অন্যদিকে আনিকাকে কিছুই বলার চান্স দিচ্ছে না একবারের জন্যে।কথা বলবে কি করে?যে পরিমানে চুলের মুঠো ধরে রেখেছে প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে হাতের মধ্যে।তার সাথে কিছুখন পর পর ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে
এপাশ ওপাশ করে চলেছে চুল সহ আনিকাকে।
আনিকাও সহ্য করতে না পেলে বকা দিয়ে ফেলে।
-জানোয়ার ছার বলছি।যত পারোস আমার সাথেই খালি।আর রিয়া কি তোর…?
বলার আগেই হাতের কাছে একটা বাটাম পেয়ে আনিকাকে ফেলে ইচ্ছা মতো পিটাতে থাকে।আনিকার চিৎকার শুনে দৌড়িয়ে আসে জীতুর মা বোন আর অন্য ভাড়াটিয়ারা।
যতখনে সবাই দৌড়ে আসলো।ততখনে মাটিতে নিথুন দেহ নিয়ে লেপ্টে রয়লো আনিকা।জায়গায় জায়গায় ফুলে গেছে বেচারির।রক্তও জমাট বেঁধে গেছে।এখানে সেখানে চুল পরে পরে রয়েছে।অন্যপাশে রিয়ার মনে হয় তো তৃপ্তি মিটেছে। তাই তো ন্যাকা কান্না বন্ধ করে পিটানোর উপভোগ করছে,ঠেকানোর বদলে।
জীতুর মা আর বোন এবার রেগে গেলো রায়হানের উপরে।বলে উঠে…
-ছিঃ রায়হান…তোর কাছ থেকে এসব কখনোই আশা করি নি ।বিয়ে করেছিস ভালো কথা।তাই বলে কি তোদের খোপ ঝারবি বেচারির আনিকার উপরে?
আর এটাও ভুলে গেলি আনিকা গর্ভবতী এখন যে।
জীতুর মা কথাগুলা শেষ করার আগেই পাশ থেকে জীতুর ছোট বোন এবার বলে উঠে..
-ছিঃ ভাইয়া…এতো বছর ভেবে আসছি,আমার ভাই দুটা।এক জীতু আরেকজন রায়হান।কিন্তু এখন আমার ঘৃণা হচ্ছে এমন একজনকে ভাইয়ের স্থান দিলাম বলে?
আরে ভাই যদি তোমার এতোই মেয়েলি স্বভাব ছিলো তো তাহলে একটা কাজ করতে..এখন দেশে ওলি গলিতে পতিতালয় খোলা আছে,সেখানে গিয়েই নিজের ইচ্ছা পূরণ করে আসতে।আর এই যে রিয়া..ওকে আমি প্রথম দিন ই বলেছি…
বিয়ে যখন হয়েছে তখন একটা কাজ করো plzzz..
আনিকা অনেক ভালো মেয়ে।তাই তো তোমাদের মেনে নিয়েছে।যদি তুমি মিলে মিশে খাও তো সারাজীবন খেতে পারবে।কিন্তু একটা কথা মনে রেখো সব সময় ?
তোমার কাছে যদি রায়হান ভাইয়া দুদিন থাকে তাহলে আনিকা ভাবীর কাছে তিনদিন থাকার অধিকার আছে।
কারণ সে বড় বউ বলে।তো হিংসা বাদ দিয়ে ছোট বোন হিসেবে থাকো।দেখবে তোমাকে বড় বোন হিসেবে জীবন দিয়েও সব উজার করে দিবে যে কোনো সময়ে।
কিন্তু আজ এমন একটা কাজের জন্য নিকৃষ্ট লাগছে তোমাদের দুজনকে?বেশি লাগছে রিয়াকে।কোনো ভালো ঘরের মেয়ে বউ সন্তান দেখে এমন কাজ করবে না।আমার তো রিয়ার জন্ম নিয়ে সন্দেহ আছে।
এই কথাতে রিয়া ফুস ফুস করে উঠে সাপের মতো করে।
অন্যপাশে জীতুর মা আনিকাকে জ্ঞান ফিরানোর জন্য চোখে মুখে পানি দিয়েই চলেছে নিজের কোলে শুইয়ে।
কিন্তু আজ এমন একটা কাজের জন্য নিকৃষ্ট লাগছে তোমাদের দুজনকে?বেশি লাগছে রিয়াকে।কোনো ভালো ঘরের মেয়ে বউ সন্তান দেখে এমন কাজ করবে না।আমার তো রিয়ার জন্ম নিয়ে সন্দেহ আছে।
এই কথাতে রিয়া ফুস ফুস করে উঠে সাপের মতো করে।
অন্যপাশে জীতুর মা আনিকাকে জ্ঞান ফিরানোর জন্য চোখে মুখে পানি দিয়েই চলেছে নিজের কোলে শুইয়ে।
অনেকখন পর আনিকার জ্ঞান ফিরে।জ্ঞান ফিরেই বুক ফাটা কান্না জড়িত চিৎকার করে বলতে থাকে…
-হে আল্লাহ কি দোষ করেছিলাম আমি যে এমন ফাটা কপাল দিয়েছো আমারে?এতোটাই নিকৃষ্ট ছিলাম তোমার কাছে গর্ভবতী হয়ে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে হয়।যে স্বামীকে মন প্রাণ সবই দিলাম সব হারিয়ে।এখন কেনো সে ই অবহেলা অপমান করে
চলে সবার সামনে।ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি।ওর প্রতি তো করুনা হচ্ছে।সময় থাকতে বুঝছে না আমায়।
চলে গেলে পাগলের মতো খুজবে।
পাশ থেকে রিয়ার মুখটা একটু বাকিয়ে আস্তে করে বলে উঠে..
-ভাবের কান্না আর জীবনেও শেষ হবে না ওর।যা দেখলে গা জ্বলে উঠে!!!!😏
সেটা আবার জীতুর বোন শুনে ফেলে…
-ভাব আনিকা দেখায় না বুঝলা।ভাব তো তুমি দেখাও।
আমার তো মনে হয়,এমন ভাব তোমার পরিবারও প্রশিক্ষণ দিয়ে রয়।তোমার মতো রাস্তার মেইয়াদের
যে কিনা টাকার বিনিময়ে সব কিছু করতে পারে।
এমন কথাতে রিয়া তো ৪২০ডিগ্রী ভোল্টে জ্বলে উঠলো
পাশে রায়হানকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো…
-ঐ বেজন্মা..তোর সামনে, তোর বউরে এসব কথা বলে আর তুই সেটা মনের সুখে গিলে গিলে খেয়ে যাস রে।
এতোখন রায়হান চুপ করে ছিলো।এখন মনসার কথায় তেরে উঠলো….
-মিতু(জীতুর বোন)তুই চুপ করবি বোন?
এখন তো জীতুর বোন রেগে গিয়ে বলে..
-মাইগা মানুষ দেখছি কিন্তু তোমার মতো আমার বয়সে দেখি নি একজনও।
আহা রিয়া রায়হানের কোলার ধরে বলে..
-এইটুকু বলেই তোর কথা শেষ আর কিছু বলার নেই তোর…
-আর কি বলবো?
-আর কি বলবি মানে??ভাত কি ওরা খাওয়ায় না তুই খাওয়াস সয়া**বাচ্চা?
জীতুর বোন বড় বড় করে হাত তালি দিয়ে বলে👏👏
এই সব মেয়ে যেনো আর এক মূহুর্ত এবাড়িতে না দেখি। এখনই বেড়িয়ে গেলে দুজনের জন্যেই ভালো হবে।না হলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবো পতিতার মানুষ হিসেবে।😠
এসব কথা সবাই ঠিকই শুনছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না মিতুকে?কারণ,ওকে এখন কিছু বললে আরও রেগে লাঠি দিয়ে পিটাতে পারে, যেই ঠেকাতে আসবে।
পাশ থেকে রায়হান মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
আর রিয়া ফুস ফুস করতেই আছে।কিছুখন পর রায়হান বলে উঠে…
-রিয়া সব গুছিয়ে বের হও।
এটা বলে চলে গেলো রায়হান।আর আনিকাকে ধরে নিয়ে গেলো জীতুদের বাসায়।একটু সুস্থ হওয়ার পর
আনিকাও চলে গেলো বাসায়।
রায়হান আর রিয়াও চলে যায় জীতুদের বাসা থেকে।
কোথায় গেছে এখনও সঠিক ভাবে কেউ জানে না।
সুখের দরিয়া রেখে,অকুল সমুদ্রে সাঁতার কেটে মরার জন্য এমন কাজ করে চলেছে রায়হান।
মানুষ যেনো সেই সুখের স্থানটা ঠিকই বুঝে।যখন সে সব হারিয়ে পথে পথে ঘুরে।রায়হানেরও ভাগ্যে সেটাই অপেক্ষা করছে।
কয়েকদিন অতিক্রম হয়ে গেলো আনিকার মাঝে।
শরীরটাও আগের মতো নেই চলাফেরার জন্যে। একে তো প্রেগনেন্ট দ্বিতীয়ত যা মার খেয়েছে,সেটার জন্য
মেয়েটা বিছানায় পরে গেছে।আরিয়াকে আর আগের মতো কাছে আসতে দেয় না তার শ্বাশুড়ী মিসেস সালেহা বেগম।আনিকার দোষ সে কেনো আগ বাড়িয়ে গিয়ে ঝগড়া করে মার খেয়ে এলো এমন অবস্থাতে।
যদি তার বংশের কোনো ক্ষতি করতে হতো।
সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।শুধু পরে রয় এক কোণায় আনিকা।তারও যে একটা মন আছে।মনের ভিতরে হাজারও ইচ্ছা আছে।সেটা দেখার মতো কেউ নেই এখন তার পাশে।অনেক কান্না করেছে।তাই সে আর কান্না করতে রাজি নয়।আরিয়ানকে তো দেখার সবাই আছে।এখন আনিকা না থাকলেও তার অপূর্ণতা হবে না তিল পরিমাণে।তাই সে ডিসিশন নিয়ে ফেলে।সকাল হলে অজানা পথে পারি দিবে।
রাতের তারা মিটি মিটি করে জ্বলে উঠে দূর পর্বতে।
আনিকার হৃদয় জমিনে প্রদীপ জ্বালোর মতো কেউ
নেই সেটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে ।ঘুম ঘুম চোখের পাতাতে দেখে দেখে বলে..
-একদিন ঐ আকাশের তারা হবো।তখন শত চেষ্টা করলেও তারা ছোয়ার সাহস হবে না তোমার।শুধু কাঁদবে আর বলবে…আনু অনেক মিস করছি গো তোমায়। চিৎকার করে বলবে…একবার বুকের পাজরে এসে লুঠিয়ে পরো তৃপ্তি মিটাই। শত চাইলেও পারবে না,যদি আনুর অস্থিত না পাও কোথাও।যদি বেঁচে থাকি তো তোমার হৃদয় জমিনে চাইলে পাবে সব কিছু আগের মতো করে। অন্য কাউকে তখন দিবো না তিল পরিমাণে ঠায় করে।একা রাজত্ব করতে চাই তোমার মন জমিনে।তখন কি দিবে তোমার আনুকে সেই স্থানটা করে দিতে?
এসব কথা বলে চলে গেলো ঘুমের রাজ্যে।ভোর হওয়ার সাথে সাথে নামাজ পড়ে চলে গেলো অজানা পথে। যাওয়ার আগে জীতুর ফোনে কল করে বলে গেলো।
-ভাইয়া দেখে রাখবেন সবাইকে।আর পারলাম না থাকতে।তাই চলে যাচ্ছি অজানাতে।যদি বেঁচে থাকি তো দেখা হবে কোনো একদিন আমাদের।পারলে মাফ করে দিবেন যদি কখনো ভুল করে থাকি আপনাদের কাছে।
জীতুকে বলার কোনো চান্স ই দিলো না।তার আগেই কথা শেষ করে, রেখে দিলো আস্তে করে কলটা।
জীতুও অবাক হয়ে যায়।কি করবে বুঝতে না পেরে রায়হানকে কল করে সব কিছু খুলে বলে?
রায়হানও ছুটে যায় বাসাতে।যতখনে যায়, তখন কি আর লাভ হয় গিয়ে?হারিয়ে ফেলেছে আনিকাকে কোনো এক দিগন্তের আঙিনায়।পুরো বাড়ি হাহা
করছে আনিকার বিহনে।এখন কাঁদলে কি কাজ হবে?
.
.
.
দিন চলে যায়,সপ্তাহ চলে যায়,মাস চলে যায় আনিকার খোজ খবর পাচ্ছে না কোথাও।
অন্য পাশে রিয়ার চরিত্র আরও ফুটে উঠেছে সবার সামনে।জীতুদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পার হতেও দেয় নি রিয়া।তার আগেই যেনো
ধরা খেয়েছে পরকীয়া করতে গিয়ে।সমাজের মান্য
গন্য মানুষজন এটা নিয়ে বিচার পর্যন্ত বসিয়েছে।এতে রায়হান আর ওর মা মিসেস সালেহার মরার মতো পথ তৈরি করে দিয়েছে।ভাগ্যিস ভালো রায়হানের আব্বু বিদেশ থেকে এসে স্ট্রোক করে মারা গিয়েছে।আনিকার শোকে।কিন্তু সে যে মরে গেছে অপর পাশে রায়হান আর মিসেস সালেহা বেগমকে ফকির করে দিয়ে গেছে।
সব সম্পত্তি যে আরিয়ান আর আনিকার নামে লেখে দিয়ে গেছে।এটা শুনার পর থেকে রায়হান আর মিসেস সালেহা বেগম হায় হায় করে মাথা ফাটিয়ে ফেলে।
অন্য দিকে রিয়াকে অপয়া অলক্ষী বলতেই থাকে।
এখন শুধু আনিকার অপেক্ষা করে রয়।কবে আসবে তাদের জীবনে ফিরে সেটা কি মিসেস সালেহা বেগম দেখে যেতে পারবে।কারণ তার পাপের বোঝা অনেক মনে করছে।তাই মরার আগে ক্ষমা চেয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চায়।
#সমাপ্ত…..