আমি তোমার নই

আমি তোমার নই

বেশ কয়েকদিন হলো লিমন লক্ষ্য করে
দেখছে সে যে বাড়িতে ভাড়া থাকে সেই
বাড়িওয়ালার মেয়ে তাকে ফলো করে।প্রথম
সপ্তাহে ব্যাপারটা খামখেয়ালী মনে হলেই তিন সপ্তাহের মাথায় ব্যাপারটা খুব সিরিয়াস হয়ে
উঠলো।যদি কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে ফলো করে তবে সেইটা যতটা সাধারন বিষয় ঠিক ততটাই অসাধারণ বিষয় যদি কোনো মেয়ে কোনো ছেলেকে ফলো করে।

এই ফলো করা ব্যাপার টাতে লিমন খুব বিরক্ত হয়। হবারই কথা।কোনো মেয়ে কেন একটা ছেলেকে রীতিমতো ফলো করবে।আশ্চর্য,,

আজকে লিমন খুব সিরিয়াস,,,আজকে কারন টা জানতেই হবে

এই যে আপ্নার উদ্দেশ্য কি।
মেয়েঃ মানে।
লিমনঃ আপ্নার নাম কি?
নীরাঃ আমার নাম দিয়ে আপনার কি কাজ?
লিমনঃ না মানে….. এমনি !
নীরাঃ না মানে….. এমনি ? এমনি মানে কি ? আমি প্রায় সময় খেয়াল করি আমি ছাদে উঠলে আপনি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেন ! রাস্তা দিয়ে হাটার সময় আপ্নি পেছন পেছন তাকিয়ে আমাকে ফলো করেন।এইগুলো কি ব্যাবহার। আপনার জ্বালায় আমি ছাদে পর্যন্ত উঠতে পারি না । আপনাদের মত ছেলেদের আমি খুব ভাল করেই
চিনি ! প্রথম দিন বলবেন- হাই ! দ্বীতীয় দিন-
নাম্বারটা চাই ! তৃতীয় দিন- ভালবাসি তোমায় !
যত্তসব !

(ধুরর কি দরকার ছিলো আজাইর‍্যা মাইয়ার সাথে কথা বলার।উল্টো আরো কথা শুনিয়ে দিলো।)

লিমনঃ সরি আমার আসলে ভুল হয়ে গেছে।

নীরাঃ By the way, আমার নাম নীরা, আপনার নাম কি?
লিমনঃ সরি আমি আপ্নাকে আমার নাম বলব কেন?
নীরাঃ কি আশ্চর্য, নাম বললে কি আপ্নার নাম আমি মাথায় করে বাসায় নিয়ে যাব নাকি।
লিমনঃ সরি যাকে তাকে আমি আমার নাম বলি না। ( এইবার দেখ ভাব নেওয়া কাকে বলে)
নীরাঃ এক্সকিউজ মি,যাকে তাকে বলতে কাকে বুঝাচ্ছেন।
লিমনঃ এইখানে ত আপ্নি ছাড়া আর কোনো গরু বাছুর ঘোড়া বলদ নেই।
নীরাঃ জাস্ট শার্ট আপ।
লিমনঃ অহ সরি লিমন । আমার নাম লিমন ।
নীরাঃ লিমন আবার কারো নাম হয় নাকি।
লিমনঃ ও আচ্ছা ! কি আর করব বল ?
আম্মায় আব্বায় রাখছে । তখন ছোট ছিলাম তো,তাই বুঝতে পারি নি এটা ভালো নাকি খারাপ নাম !!
নীরাঃ হুম । সেটাই ! আচ্ছা এখন যদি কেউ আপ্নাকে আপ্নার নিজের নাম রাখতে বলে তাহলে কি রাখবেন?

(আজব ত এই মেয়েত দেখি টুপটাপ প্রেমে পড়ার মতো অনেক কথাই কয়। আমি আবার এই মেয়ের ফাদে ধরা পড়ে যাব নাতো)

লিমনঃ কিছুই রাখতাম না। নাম যা একটাই
নীরাঃ হা হা হা ! লিমন নামটাও খারাপ না ।

( এই মেয়েটা আমাকে এত হাওয়া দিচ্ছে কেন।মতলব টা কি)

লিমনঃ তোমার নামটাও খারাপ না । নীরা অনেক সুন্দর একটা নাম ।
নীরাঃ আপনি এখন নিয়মিত ছাদে আসেন না কেন?
লিমনঃ আসলে আমার সামনে এক্সাম ত তাই।
নীরাঃ আপ্নাকে খুব মিস করি।
লিমনঃ থ্যাংক্স

লিমন জানে যে এই মেয়েটা তার ফুল বায়োডাটা যোগাড় করে ফেলেছে।কিন্ত লিমনের কিছুই করার নেই।গত তিন মাস আগে পুরনো বাসা টা তাকে ছাড়য়ে হয়েছিলো এইরকম একটা মেয়ের জন্যই। তবে বাসা থেকে ভালোভাবে সে বের হতে পারেনি। ঘাড় ধাক্কা টাইপের কিছু একটা মেরে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। বের হউয়ার সময় তেমন কোনো সদয় মানুষ সে পায়নি যার কাছে একটু বলবে যে আমার কাপড়চোপড় টা একটু বের করে দিন। উল্টো আরো রুমের মদ্ধে যে পাচ হাজার টাকা ছিলো সেইটা বেপাত্তা। তার মতো টিউশনি করে ইননকাম করা ছেলের কাছে পাচ হাজার টাকা অনেক কিছু। জোরে একটা নিঃসাস ছেড়ে লিমন কলেজের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

পরের দিন যথাসময়ে এমনকি যথাস্থানেই নীরা নামক মেয়েটা লিমন কে পাকড়াও করলো।লিমন অনেক কস্টে এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করেও ব্যার্থ হলো। বললো চলো তোমাকে আমার বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

লিমন যদিও স্মার্ট তার পরেও কোনো মেয়ের সাম্নে যায় না।কিন্ত মেয়েটা তাকে টেনে নিয়ে গেলো। মেয়েটা সবার সামনে লিমনকে তার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিলো। আরো অনেক প্রসংসা করলো যেমনঃ ক্লাস ফাইবে বৃত্তি পেয়েছে এসএসসিতেও গোল্ডেন আর এইচএসসিতেও আর এমন কোনো ক্লাস নেই যে যে তার রোল এক থেকে দুই এ নেমেছে।
যদিও নীরা সবগুলো কথাই সত্যি বলেছে তারপরেও লিমনের খুব লজ্জা লেগেছিলো।

আসলে প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারটা লিমনের মতো ছেলের জন্য না। লিমনের মতো ছেলে শুধু পেট বাচিয়ে চলে। তাদের সারামাসের টিউশনির টাকা দিয়ে সারা মাস যায় না। তারপরেও আবার কলেজের সেমিস্টার ফি। এইসবের মধ্যেই লিমন গলা পর্যন্ত ডুবে আছে।

মেয়েটা পরের দিন ছেলেটাকে মেয়েটির কলেজ ক্যাম্পাসে ইনভাইট করলো। লিমন জানে যে মেয়েটি তাকে কি বলার জন্য তাকে ইনভাইট করেছে।কিন্ত সে কথাটা শোনার কোনো আগ্রহ কিংবা রুচি লিমনের নেই।

নীরাঃ ঠিকয়াছে কাল দেখা হচ্ছে তাহলে। সময়মতো আসবে কিন্ত। এক মিনিট ও দেরি করবে না।
ভালো থেকো।
লিমনঃ তুমিও ভালো থেকো,,বিদায়

কথাগুলো বলে নীরা আর নীরার বান্দবীরা হাসতে হাসতে সেইখান থেকে চলে গেলো।লিমন শুধু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে ছিল।

দূরে দাড়িয়ে সে যে কথা গুলো বলেছিলো।

নীরা যে কথাটি তোমাকে বলা হয়নি-

এর পর আর কোনোদিন আমার সাথে কথা বলার সুযোগ তুমি পাবে না ! কথা বলাত দুরের কথা।দেখাও হবে না কোনোদিন।বাসা চেইঞ্জ করা হয়েছে ।জিনিসপত্র ট্রান্সফার চলছে । কাল সকাল
সকাল চলে যাব তোমাদের বাসা ছেড়ে । জীবনে হয়ত আর কোনদিন দেখাও হবে না ।
কোন দিন বলাও হবে না মেয়ে, তোমাকে ভেবে অনেক কবিতা লিখেছিলাম । দেখেছিলাম অনেক স্বপ্নও ! স্বপ্নে তোমাকে নিয়ে অনেক রাস্তাও হেটেছিলাম।থাক । সব কথা সব সময় বলতে হয় না । শুধু বলব- ভালো থেকো তুমি ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত