রাত ১২ঃ৪০ বাজে। আমি বাবার রুমে উঁকি মেরে দেখি বাবা এখনো বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে। আমি বাবার রুমে ঢুকে বাবার পাশে বসলাম। বাবা বইটা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~ কি রে, কিছু বলবি? আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,
— বাবা তোমার কাছে সিগারেট আছে? এখন এত রাতে নিচে গিয়ে সিগারেট আনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বাবা আমার কথা শুনে পাশে থাকা সিগারেটের পেকেটটা আমার হাতে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~তুই তো সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলি এখন আবার শুরু করলি কবে? আমি বাবার কথা শুনে কিছুটা সময় নিরব থেকে বললাম,
— যার জন্য সিগারেট ছেড়ে ছিলাম তার সাথেই তো এখন ঝামেলা চলছে বাবা এইবার তার চোখ থেকে চশমাটা খুলে বললো,
~ কি হয়ছে আমায় খুলে বল.
— শ্রাবণীর ( আমার গার্লফ্রেন্ড) বাবা আমাদের সম্পর্কটা মানতে পারছে না। কিন্তু আমি শ্রাবণীকে ছাড়া কিংবা শ্রাবণী আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। তাই শ্রাবণী বলছে ওকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। এখন কি করবো ঠিক বুঝতে পারছি না বাবা আমার কথা শুনে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
~ তুই যদি পালিয়ে যাস তাহলে শ্রাবণীর বাবা মা কষ্ট পাবে। আর বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে কোন সন্তান সুখী হতে পারে না। তুই বরং এক কাজ কর , সকালে শ্রাবণীর বাবার কাছে যা। যতক্ষণ উনি রাজি না হবেন ততক্ষণ তুই উনার পা ধরে বসে থাকবি। দেখবি সন্তানের কথা ভেবে হলেও শেষ পর্যন্ত উনি রাজি হবেন। আমি বাবার কথা শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে বললাম,
— বাবা, উনি যদি আমাকে বাংলা মুভির ভিলেন রাজীবের মত আমায় লাথি মারে? বাবা জোরে হেসে দিয়ে বললো,
~ তুই তখন নায়ক ওমর সানীর মত করে বলবি , চৌধুরী সাহেব আমি গরীব হতে পারি কিন্তু আমার মন অনেক বড়। আপনার মেয়েকে আমি ঠিকই সুখে রাখবো। আমি বাবার কথা শুনে যখন হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে যাবো তখন বাবা বললো,
~পিয়াস, সিগারেটের প্যাকেটটা দিয়ে যা। আশা করি এটা তোর আর কোন কাজে আসবে না বাবার বুদ্ধি কাজ হলো, উনি রাজি হলেন। বড় মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে আমরা না চাওয়া শর্তেও আমাকে ঘর ভর্তি আসবাসপত্র উপহার দিলেন। নিজের মেয়ের নামে নতুন ফ্ল্যাট কিনে দিলেন বিয়ের ২ মাস পর লক্ষ্য করলাম শ্রাবণী কেমন যেনো পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বাবার সাথে একটু অন্যরকম ব্যবহার করে। আজ খেয়াল করলাম বাবা চা চাইলো আর শ্রাবণী মুখের উপর বলে দিলো সে এখন চা বানাতে পারবে না আমি বাবার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে বাবার পাশে বসলাম। বাবা আমার মাথায় হাত রেখে বললো,
~কিছু বলবি বাবা? আমি তখন কিছুটা সময় নিরব থেকে বললাম,
— বাবা, আমরা মাঝে মাঝে ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেলি। আর সেই ভুল মানুষটা হাজারটা ভুল করলেও আমাদের নিরব হয়ে মেনে নিতে হয় বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎ শ্রাবণী বললো,
– আমি তোমার সংসার করতে পারবো না। হয় তুমি আমার সাথে নতুন ফ্ল্যাটে উঠবে নয়তো তোমার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে। আমি শ্রাবণীর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
— তোমার মাথা ঠিক আছে, আমি আমার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখবো।
– তাহলে তোমার বাবাকে এইখানে রেখে আমার সাথে নতুন ফ্ল্যাটে উঠো।
— শ্রাবণী আমার বাবা হাটতে পারে না। হুইলচেয়ারে চলাফেরা করে। এই অবস্থায় আমি আমার বাবাকে একা রেখে তোমায় নিয়ে নতুন ফ্ল্যাটে উঠবো? শ্রাবণী আমার কথা শুনে রাগে চিৎকার করে বললো,
– আমি এত কিছু বুঝি না। হয় তুমি আমার সাথে নতুন ফ্ল্যাটে থাকবে নয়তো তুমি তোমার বাবার সাথে থাকবে… শ্রাবণী ঘুমিয়ে আছে। আমি বাবার রুমে এসে দেখি বাবা এখনো জেগে। আমায় দেখে বাবা বললো,
~ আয় ভিতরে আয়।
আজ এত বছর পর কেন জানি বাবা বলা শর্তের আমি রুমে ঢুকলাম না। আমি না শুনার অভিনয় করে চলে গেলাম সকাল ১১ টা বাজে। আমি শ্রাবণীকে ডেকে বললাম,
— তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। বাসার সব জিনিস পত্র গাড়িতে তোলা হয়ে গেছে। শ্রাবণী আমার গলা জড়িয়ে বললো,
– আমি জানতাম আমার পিয়াস আমাকে বাদে থাকতেই পারবে না। তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি তৈরি হয়ে আসছি শ্রাবণী আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,
— তুমি নতুন ফ্ল্যাটে না গিয়ে আমাদের বাসায় এসেছো কেন?
– নতুন ফ্ল্যাটে উঠার আগে তোমার বাবার সাথে একটু কথা বলে যায়। আমার সামনে আমার শ্বশুর দাঁড়িয়ে আছে। আমি উনার পায়ে ধরে বললাম,
— একদিন আমি আপনার পায়ে ধরে আপনার মেয়েকে চেয়েছিলাম আজ আবারও আপনার পায়ে ধরে বলছি আপনি আপনার মেয়েকে ফেরত নিয়ে নিন। আপনার মেয়ের সাথে আমি সংসার করতে পারবো না। এর আগের বার উনি আমাকে লাথি দেয় নি কিন্তু এইবার ঠিকিই আমাকে লাথি দিয়ে বললো,
– আমি জানতাম তুই আমার মেয়ের যোগ্য না। আমি তখন নাকে হাত দিয়ে বললাম,
— আমি তো মানুষ আর আপনার মেয়ে অমানুষ। মানুষ তো কখনো অমানুষের যোগ্য হতে পারে না। তাই আপনার সমস্ত জিনিস আপনার কাছে ফেরত দিলাম রাত ১১ঃ২০ বাজে। রাস্তার সোডিয়ামের হলুদ আলোর নিচে বাবাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নিয়ে আমি হাটছি। বাবা মুচকি হেসে আমায় বললো,
~ নাকে ব্যান্ডেজ কেন? আমি মুখটা গোমড়া করে বললাম,
— শ্রাবণীর বাবা ভিলেন রাজীবের মত এইবার সত্যি সত্যি লাথি মেরেছিলো। বাবা জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললো,
~ পকেটে একটাই সিগারেট আছে। চল শেয়ার করে খাই