বকশিস

বকশিস

বাসরঘরে বউ আচমকা বলে উঠলো- খবরদার আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না, আপনি কি জানেন, আগে আমার একটা মাস্তান বয়ফ্রেন্ড ছিলো।। সে খুব ডেঞ্জারাস ছেলে, আমি শুধু বাবা-মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি।। আমি সোহানের মুখে এই কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলাম।। বেচারার কাছে গতকাল রাতে ওর বাসরের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চেয়েছিলাম।। অতঃপর সোহান আমাকে এই কথা শুনিয়ে, অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। আমি হাসি থামিয়ে, তাগাদা দিয়ে বললাম- তারপর কি হলো বল?? সোহান মুখ কালো করে বললো- পরে আর কি, সারারাত আর তাকে ছুঁবো না নিয়ত করে, বিছানার এককোণায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লাম।।

আমি হাসিকে প্রশমিত করে বললাম- ওরে ভাই রে, এই কাহিনী, এটা কেমন বাসরের গল্প শোনালি তুই আমাকে।। পরে কি ঘুমিয়েই কাটালি?? সোহান জবাব দিলো- আরে না শোন, পরে কি হইছে?? আমি কৌতুহলী কণ্ঠে বললাম- কি হইছে?? সোহান বলে যাচ্ছে- আরে কিছুক্ষণ পর বউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে, এই যে মিস্টার আপনার বোন বললো আপনি নাকি খুব সাহসী একটা ছেলে।। আপনার নাকি অনেক সাহস, তা এখনো তো দেখি নিজের বিয়ে করা বউকে ধরতেই ভয় পাচ্ছেন।। কাল এই কথা আমি আপনাদের পুরো বাসায় এলান করে দিবো, সব্বাইকে বলে দিবো।।

আমি এবার মজা পেয়ে বললাম- আচ্ছা, বলিস কি, ভাবী তো সেই জিনিস রে, আচ্ছা তারপর কি হইলো??
সোহান এবার একটু লাজুক স্বরে বললো- আরে ও আমার সাথে মজা করছিলো, তারপর কি হইলো মানে, আর কি জানতে চাস, এইসব বাদ দিয়ে বিয়ে কর।। বিয়ে করার মধ্যে আলাদা একটা তৃপ্তি আছে, একটা আলাদা নেক কাজের ব্যাপার আছে।। এই সব প্রেম বাদ দিয়ে এবার নাতাশাকে বিয়ে কর, বুঝলি।। আমি সোহানের কথাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম- শুন না দোস্ত, তুই না একটু সিওর হ ভাই, সত্যি ভাবীর এমন কোন এক্স বয়ফ্রেন্ড নাই তো।। দেখ ভাই রিসেন্ট যে ঘটনা ঘটে গেলো, তোর একটু সাবধানে চলা উচিত।।

সোহানের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে।। এদিকে আমার শয়তানী হাসি আরও প্রশমিত হচ্ছে, খানিক বাদে সোহান জড়ানো কণ্ঠে বলে- দোস্ত, ভয় পাইয়ে দিলি তো।। আমি কি শায়লাকে ভালো করে জিজ্ঞেস করবো??
আমি সোহানকে বললাম- অবশ্যই জিজ্ঞেস করবি।। লাগলে আগামী কয়েকদিন কিছু বডিবিল্ডার হায়ার করে নিজের বডিগার্ড বানিয়ে রাখতে পারিস।। সোহান এবার নিচু গলায় বললো- যাহ্ দোস্ত, তুই খালি মজা নেস।। তবে আমার চিন্তা হচ্ছে যত যাই বলিস।। আমি এবার সোহানকে অভয় দিয়ে বললাম- আরে এসব কিছু না, ভাবী মজা নিছে, এমন মজার বউ পাওয়া বেটা ভাগ্যের ব্যাপার।।

সোহান মনে হলো ভরসা পেয়েছে।। সোহানের বিয়ের পর থেকে আমারও বিয়ে করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু আমার আর নাতাশার প্রেমে একমাত্র বাঁধা নাতাশার বাবা।। আজ খুব সাহস করে নাতাশার বাবাকে একটা কল দিলাম, এই লোকটা একটা গো ধরে বসে আছেন।। উনি সরকারী চাকুরীজীবি ছাড়া মেয়ে বিয়ে দিবেন না।। নাতাশার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে উনি আমাকে একদম সহ্যই করতে পারেন না, অথচ নাতাশার আম্মা আর ছোট বোন আমাকে যথেষ্ট পছন্দ করেন।। কপাল!! আমার হবু শ্বশুর এমন না হলেও হতো।।

উনি ফোন ধরেই একপ্রকার হুংকার ছেড়ে বললেন- হ্যালো, কে? উনার হুংকারযুক্ত “হ্যালো” শুনেই বুঝেছি, উনি আমাকে চিনেছেন।। কিন্তু ভাবখানা এমন যে আমার নাম্বার উনার কাছে সেভ নাই।। আমি যথাসম্ভব স্বাভাবিক কণ্ঠে বললাম- আংকেল আমি রায়হান।। আসালামুয়ালাইকুম, কেমন আছেন?? নাতাশার বাবা চড়া গলায় বলে গেলেন- কোন রায়হান?? কি চাই আপনার?? আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, খানিক বাদে সামলে নিয়ে বললাম- আংকেল আমি নাতাশার ফ্রেন্ড রায়হান।।

-নাতাশার ফ্রেন্ড তো আমি কি করবো?? কি বলার দ্রুত বলো, আমার কাজ আছে!!

আমি আমতা আমতা করে বললাম- আংকেল, নাতাশার সাথে আমার বিয়ের ব্যাপারটা কিছু ভাবলেন?? উনি এবার তিরষ্কারের সুরে বলতে শুরু করলেন- দেখো ভাই, আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি আমার মেয়েকে আমি সরকারী চাকুরীজীবি ছাড়া বিয়ে দিবো না।। আর এত শখ থাকলে গার্ডিয়েন দিয়ে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও, নির্লজ্জের মত আমার সাথে কিসের কথা।। আমি মনে মনে ভাবলাম, উনাকে বলি আংকেল, আর উনি বলে ভাই, অপমান করার জন্য আর কি লাগে।। আসলে আমি তো জানি উনার কাছে আমার পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে উনি সোজা না করে দিবেন।। তাই তো আগে উনাকে বুঝাতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু আমি একটু দৃঢ় কণ্ঠে বললাম- আংকেল আসলে আমি যেখানে চাকরী করি, বেসরকারী হলেও যা বেতন পাই তাতে নাতাশা ভালোই থাকবে।।

-দেখো বাপু, আমার মেয়ে ভালো থাকবে না মন্দ থাকবে আমি জানি।। তুমি আমার মেয়ের ডিমান্ড জানো, ওর ওজন জানো?? সাথে সাথে মাথায় একটা দুষ্ট কথা ভর করলো, আমি বললাম- জ্বী আংকেল জানি, নাতাশাকে কোলে নিয়ে মনে হয়েছে ওর ওজন ৫৮ কেজির উপরে হবে না।। অনেকবার কোলে নেয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।।
আমার কথা শেষ না হতেই, নাতাশার বাবা গর্জে উঠলো- বেয়াদব ছেলে, তুই প্রেসিডেন্ট হলেও তোর কাছে মেয়ে বিয়ে দিমু না।।

আমি একদম আলাভোলা সেজে বললাম- আজব তো, আপনেই তো ওজন জিজ্ঞেস করলেন, আমার কি দোষ!!
আমার কথা শেষ না হতেই, নাতাশার বাবা ফোন কেটে দিলো।। একবার ভাবলাম, ওদের বাসায় যাই, নাতাশাদের বাসা আমাদের এই এলাকাতেই, আবার ভাবলাম থাক যেমন গর্জে আছে গেলে কামড় দিতে পারে আবার।। নাতাশা বিকেলে কল দিয়ে, আমাকে বকাবকি শুরু করলো- ওই রায়হান, তুমি আব্বার সাথে এইসব কি বেয়াদবি করেছো, কি বলছো আব্বাকে?? আমি জবাব দিলাম- তোমার আব্বা তোমার ওজন জানতে চাইছিলো, আমি ওজন বললাম ৫৮ কেজির উপরে হবে না, ভুল কিছু বলছি নাকি??

-তুমি আসলেই ফাজিল, তোমার আমার বিয়ে আর হবে না বুঝলা, আব্বা খুব চেঁতে গেছে।। আব্বা বলতেছে তোমারে নাকি গুন্ডা দিয়ে পিটাবে।। আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম- তোমার বাপেরে কল দিছিলাম, সেও তর্জন-গর্জন করলো, তুমিও এখন এমন শুরু করছো।। তোমাদের পূর্বপুরষরা কি সুন্দরবনের বাঘ ছিলো নাকি!! আর আমাকে গুন্ডা-মাস্তানের ভয় দেখাইয়ো না, আমি এইসবে ভয় পাই না।।

নাতাশা রাগের উপর রাগ দেখিয়ে বললো- তোমাকে আর কিছু বলার নাই, তুমি বরং আমাকে ভুলে যাও।। আর ফোন দিও না, তবে সাবধানে থাইকো, আব্বা সত্যিই তোমারে গুন্ডা পাঠাইয়া মাইর দিবো, আমিও চাই তোমারে মাইরা হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা হাতে ধরাই দিক।। আমি নাতাশার কথাকে পাত্তা না দেবার ভান করে বললাম- আরে আমি রায়হান কাউকে ভয় পাই না, আমাকে মাস্তানের ভয় দেখাও, কেউ আমার একটা পশমও ছিঁড়তে পারবে না।।

নাতাশা কল কেটে দিলো, নাতাশার বাবার মতই দেখি এর স্বভাব।। মানুষের কথার মধ্যে এরা বাপ বেটি ফোন কেটে দেয়, যাক্ নাতাশা যে নাতাশার এই বাপের সন্তান এতে কোন সন্দেহ নেই, এদের স্বভাবে প্রচুর মিলঝিল।। এদিকে বাস্তবে নাতাশার হুমকি শুনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ।। নাতাশার আব্বা এমন কাজ করলে করতেও পারে, অবাক হওয়ার কিছু নাই।। খোদা রে এবার আমার উপায় কি, আমি নাতাশাকে সরি বলার জন্যে আবার কল দিলাম, নাহ্ অনেকগুলো কলের পরেও সে আর কল ধরলো না।।

দুইদিন ধরে চোরের মত অফিসে যাই, কোন অচেনা লোকজন আমার দিকে তাকালেই আমি ভয়ে চমকে উঠি, খালি মনে হয় নাতাশার বাবার পাঠানো গুন্ডা বাহিনী না তো।। এরমধ্যে নাতাশা আর আমার কল রিসিভ করে নাই, ম্যাসেঞ্জারে কতগুলো ম্যাসেজ দিলাম, বাঘিনী রাগিনী নাতাশা সিনটা পর্যন্ত করে নি।। অফিস শেষ হয় ৫ টায়, আমি ইচ্ছা করে দেরি করে বাসায় ফিরি।। ভাবি যে গুন্ডাবাহিনী কেউ থাকলে যেনো টাইমিং মিস হয়ে যায়।। আজও অফিসের পর আরও কিছুক্ষণ অতিরিক্ত সময় অফিসে কাটিয়ে, এদিক সেদিক ঘুরে, সন্ধ্যা ৭ টার সময় বাসার দিকে রওনা দিলাম।।

বাসার কাছে এসে মেইন গেট দিয়ে ঢুকতেই চমকে গেলাম।। দেখি তিন-চারজন ছেলেপুলে বাসার কেচি গেটের এখানে দাঁড়ানো, কেচি গেট তালা দেয়া থাকে, চাবি আছে আমাদের সব ভাড়াটিয়াদের কাছে।। আমি গেট দিয়ে ঢোকার পর থেকে ওরা আমার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে, আমার কলিজার পানি শুকিয়ে সাহারা মরুভূমি, আবছা আলোতে ওদের চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না।। ওদের নড়াচড়া দেখে মনে হলো, ওরা আমাকেই খুঁজছে, আমি উল্টো ঘুরে গেট থেকে বের হতে নিলাম।। ওদের মধ্যে থেকে একজন আমাকে উদ্দেশ্য করে ডাক দিলো- এই যে ভাই, এই যে শুনেন।।

আর যাবে কোথায়, আমি যাস্ট চোখ বন্ধ করে গেট থেকে বেরিয়ে সোজা রাস্তা ধরে দিলাম ভোঁ দৌড়।। কিছুদূর গিয়ে এক লোকের সাথে খেলাম সজোরে এক ধাক্কা, লোকটা বাবাগো বলে মাটিয়ে ছিটকে পড়লো।। আমি লোকটার দিকে তাকাতেই ভয়ে জমে বরফ হয়ে গেলাম, এবার আমি শেষ, লোকটা আর কেউ না, নাতাশার বাবা।। আমি একবার ভূপাতিত নাতাশার বাবার দিকে তাকাই, আরেকবার তাকাই পিছনের দিকে, দেখি যে ছেলেগুলো আবার আমার পিছু নিলো কিনা!! নাতাশার বাবার মুখে কোন কথা নেই, উনি বিষ্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।। আমি উনাকে টেনেটুনে দাঁড় করালাম।। বেশ কিছু লোক জড়ো হয়েছে ততক্ষণে, উনারাও আমাকে সাহায্য করলো।। আমি মনে মনে ভাবছি, আমাকে মারার জন্যে বেটা সত্যি লোক সেট করছে, ভাবা যায় না।। নাতাশার বাবা কথা বলতে পারছে না, বার বার আগুন চোখে আমাকে দেখে নিচ্ছে।। লোকজন বলাতে, একটা রিক্সা যোগে উনাকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।। মনে মনে পুলকিত আমি, ধাক্কা খেয়ে ভালোই হইছে, এই সুযোগে নাতাশাকে দেখা যাবে।। কিন্তু ভয়েও আছি কখন না আবার ছেলেগুলো কোথা থেকে এসে পড়ে, যাক উনি যখন আছেন তখন আর আপাতত ভয় নেই।।

নাতাশাদের বাসার ড্রইং রুমে বসে আছি অনেকক্ষণ, নাতাশার ছোট বোনের সাথে মজার মজার গল্প করছি।। নাতাশা এবার রুমে এসে ওর বোন কুয়াশাকে রুম থেকে চলে যাবার ইশারা করলো, কুয়াশা একটা দুষ্টমি মার্কা হাসি দিয়ে রুম ত্যাগ করলো।। নাতাশা কটমট করে তাকিয়ে বললো- আব্বাকে তুমি ইচ্ছা করে ধাক্কা দিছো, তাই না??

-আরে না, কি বলো, ইচ্ছা করে না, শুনো কি হইছে শুনতে হবে না, তোমার জন্যে একটা সুসংবাদ আছে, আব্বা তোমার আমার বিয়েতে রাজী।। রুমে শুয়ে শুয়ে আম্মাকে এইসব বলছিলো, আমি আড়াল থেকে শুনেছি, আব্বা কিন্তু ভালোই ব্যাথা পাইছে।। আমি প্রায় চিৎকার দিয়ে বললাম- কি বলো, উনি রাজী মানে কিভাবে, ওই কি বলো, সত্যি, আমার তো এখন আনন্দে নাচতে মন চাচ্ছে।। আগে জানলে তো কবেই ব্যাটারে ধাক্কা দিতাম।। নাতাশা একটা আদুরে ধমক দিয়ে বলে- চুপ থাকো শয়তান, শুনো আজকে এখানে ডিনার করে যাবা, আম্মা একটু পর আসবে এটা বলতে।।

আমি দ্বিগুণ খুশি হয়ে গেলাম, পরক্ষণেই মনে হলো- আচ্ছা, হুট করে কথা নাই, বার্তা নাই বিয়েতে রাজী হলো মানে, আবার বলে ডিনারের করে যেতে।। এমন তো না, আসলে ওই পোলাগুলারে কল দিয়ে বাসায় আনতেছে, ওরা এসে আমাকে মারবে আর এটাই আমার ডিনার।। এসব ভাবতেই, আমার বুক ধুক্পুক্ শুরু হয়ে গেলো।।আমি নাতাশাকে কিছু বলতে যাবো, এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।। আমি এক প্রকার কেঁপে উঠলাম।। নাতাশা বিরক্তি নিয়ে বললো- কে এলো এখন আবার।। ড্রইং রুমের এক পাশে মেইন দরজা, আমার বসা সোফা থেকে সরাসরি দেখা যায়।। আমি হাত পা শক্ত করে বসে রইলাম, নাতাশা দরজা খুলে দিলো।। সর্বনাশ দরজায় সত্যিই কতগুলো ছেলে, সম্ভবত সেই ছেলেগুলোই।। আমি সোফা থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়ালাম, আজ আমাকে তো পুরা কিমা বানাবে সবাই।।

ছেলেগুলো দরজায় দাঁড়ানো নাতাশাকে অতিক্রম করে বাইরে থেকে আমাকে দেখে ফেললো, একজন বলে উঠলো- আরে ভাই আপনে এই বাসায়?? আপনের বাসায় গেলাম কতবার আপনি তো থাকেনও না, আবার একটু আগে বাসায় ঢুকতে গিয়েও ঢুকলেন না।। নেট বিলটা কবে দিবেন, আজকে তো ১০ তারিখ পার হইয়া যাইতাছে।।
আমি ওদের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, তাই তো ওরা তো নেটের পোলাপান।। দলবেঁধে এসে বিল নেয়, সাধারণত দুইজন তিনজন আসে, এবার কি মনে করে চারজন।। আমি এবার একটু স্বস্তির দম নিলাম, পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে করতে বললাম- নাতাশা তোমাদের নেট বিল কত? ওদের ওখান থেকে একজন বললো- আপুদের বিল ৫০০ টাকা।।

নাতাশা দরজায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, কিছু বলছে না, সে একবার আমার দিকে তাকায় তো একবার ওদের দিকে।।
আমি এক হাজার টাকার দুইটা নোট বের করে দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম, তারপর টাকাটা একজনের হাতে দিয়ে দিয়ে বললাম- নেও ভাই, শ্বশুর বাড়ির নেট বিল দিয়ে দায়িত্ব নেয়া শুরু করলাম, আমার বিল পাঁচশত, আর এখানের বিল পাঁচশত।। আর বাড়তি এক হাজার টাকা তোমাদের বকশিস।। ওরা খুশি অবাক মিশ্রিত কণ্ঠে বললো- বকশিস মানে ভাই, কি জন্যে।। ওরে মানে বুঝা লাগবে না, টাকা পাইছো এবার যাও।।

পোলাপানগুলো খুশি মনে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো।। আরও বাসা থেকে বিল নিবে মনে হচ্ছে।। নাতাশা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো- কিসের বকশিস দিলা, বুঝলাম না তাও পুরো এক হাজার টাকা।। আমি মেইন দরজা লাগিয়ে দিলাম, তারপর ওদের বাসার ভিতরের দরজার দিকে তাকিয়ে সুযোগ বুঝে চট করে নাতাশার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললাম- তোমার বোঝা লাগবে না, এই যে দিলাম তোমারও বকশিস।। বিগলিত নাতাশাকে অতি আবেগে কেবলি জড়িয়ে ধরতে যাবো, কই থেকে যেনো নাতাশার আব্বার অদৃশ্য কণ্ঠ ভেসে আসলো- বিয়েটা কিন্তু এখনো হয় নাই বাবাজী!! তা আমার বকশিস কই??

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত