শেষ

শেষ

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে দিনের সমস্ত ব্যস্ততাকে বলি দিয়ে সাজের বেলায় প্রতিটি মানুষ তার আপন ঘরে ফেরে অসংখ্য অগণিত কৌতূহলে। তেমনি আজ সন্ধায় হিমেল সাহেব আর আমি। দুজনই অবিবাহিত ব্যাচেলর। অফিস শেষে বাসায় ফিরছি। অফিস থেকে বাসাটা খুব বেশি দূরে নয়। হেটে পনের মিনিটের মত সময় লাগে। শহরের রাস্তার ফুটপাত ধরে আমি আর হিমেল সাহেব গল্প করতে করতেই বাসায় ফিরছি। হিমেল সাহেব আমার কলিগ। অত্যন্ত ভাল মানুষ। কথা খুব কম বলেন। কাজের বেলায় অনেক সিরিয়াস। পাঁচ বছরের ভিতরে কোন বস উনাকে টু শব্দ পর্যন্ত করতে পারেনি। ওনার একটা বাজে অভ্যাস আছে অতিরিক্ত সিগারেট খাওয়া। ওনার সাথে থাকতে থাকতে আমিও মোটামোটি ভালই সিগারেট খোর হয়ে গেছি। প্রতিদিনের মতই দুজনে সিগারেট টানছি আর হাটছি। লেম্পপুস্টের লাল আলোতে বিন গ্রহবাসী মনে হচ্ছে সবাইকে।
-শফিক সাহেব
-জ্বী
-সিগারেটও ইদানিং খুব তারারাতারি শেষ হয়ে যায়।
-আপনার মত সিগারেট খোরের সিগারেট তারাতারি শেষ হওয়াটা স্বাভাবিক না?????
-হুম সেটা অবশ্য মন্দ বলেননি। আচ্ছা যদি এমন হত সিগারেট শেষ না হত। কথাটা শুনে নিজের অজান্তেই শব্দ করে হাসি শুরু করলাম আবার পরক্ষণেই সেটার সমাপ্তি ঘটল। কারন আমি সচরাচর খুব কমি হাসি।
-শুনুন হিমেল সাহেব। পৃথিবীতে শুধু সব কিছুই ক্ষনস্থায়ী। সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে। আমাকে আপনাকেও একদিন চলে যেতে হবে পৃথিবীর সমস্ত মায়া ছেড়ে। একদিন আমরা থাকব না। এই রাস্তা ধরে হেটে হেটে সিগারেট খাওয়া হবে না। ঘরে বসে সাকিব আল হাসানের বেটিং দেখা হবে না, প্রিয় মানুষটির হাত ধরে সূর্যাস্ত দেখা হবে না, ভোরের আলোতে সবুজ ঘাসের চিকচিক করা শিশির দেখা হবেবে না, মনের সুখে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া হবে না, অকারনেই রাত জাগা হবে না। পৃথিবীর সমস্ত কিছুর মায়া ছাড়তে হবে। শেষ হবে সবকিছু।
এভবেই কোন না কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে পনের মিনিট শেষ হয় আমাদের। আমি একটু বেশিই বলি আর হিমেল সাহেব শুনেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত