– হ্যালো…আসসালামু ওয়ালাইকুম..। (আমি)
– ওলাইকুম’স সালাম। (নেহার আব্বু)
– কেমন আছেন স্যার?
– জ্বি ভালো, আপনি কে? কোথা থেকে বলছেন?
– আমি আপনার খুব কাছের মানুষ। বলতে পারেন আমি আপনার একজন ফ্যান।
– আরে না না আমার এখন ফ্যান লাগবে না বাসায় আছে অনেকগুলো।
– আরে স্যার ফ্যান মানে ভক্ত। আমি আপনার বিরাট বড় ভক্ত স্যার।
– ওহ তাই বলো। তা বাসা কোথায়? নাম কি?
– আমি নিলয়। বাসা হবে কেথাও।
– তা আমাকে কেনো কল দিয়েছো?
– আপনার জন্য একটা গুড নিউজ আছে আর একটা ব্যাড নিউজ আছে। কোনটা বলবো?
– গুড নিউজটাই বলো।
আমি একটু থামলাম। ফোনের ওপাশ থেকে নেহার আব্বু বারবার জানতে চাইছে কি নিউজ। আমি একটু মুচকি হেসে বললাম..
– গুড নিউজ হলো আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি। আপনি আমার শ্বশুর আব্বা আর আমি আপনার আদরের জামাই।
– কিহহহ..কি বললি ফইন্নি।
– এ বাবা…রাগ করেন কেনো?
– ঐ তোর বাসা কোথায়? আর আমাকে চিনিস আমি কে? আমার মেয়েকে ভালোবাসা হচ্ছে তাই না? আমাকে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে আমাকে শ্বশুর আব্বা বলা হচ্ছে? হারামি।
– আব্বু রাগ কইরেন না। রেগে যাবেন তো হেরে যাবেন।
– তোর হারার নিখুজি করে। তুই আমার মেয়েকে ভালোবাসিস তোকে তো পিটিয়ে পাটি সাপ্টা পিঠা বানামু খারা।
আমি চুপ হয়ে গেলাম। নেহার আব্বুকে রাগিয়ে বেশ মজা পাচ্ছি। উনি ওনার মত বকবক করেই যাচ্ছে। এইবার বললাম..
– আরে থামেন তো। এখন ব্যাড নিউজটা শুনবেন না?
– ক
– তার আগে বলি,,আপনি একটা সেই আকারের হিরো আব্বু। আপনাকে নিয়ে যদি বাংলা সিনেমা করা হয় তো সেই হিট হপপে।
– ঐ তাড়াতাড়ি বল।
আমি চুপ হলাম আবারো। ওপাশ থেকে একগাদা ঝাড়ি ভেসে আসছে। আর আমি এ দিকে হেসেই চলেছি। আসতে করে বললাম…
– আপনার একটা ভিডিও আছে আমার কাছে।
– ভিডিও? কিসের ভিডিও?
– আপনি আপনার বউ এর মানে আমার শ্বাশুড়ি আম্মুর কাপড় কেঁচে দিচ্ছেন তার ভিডিও। ওহ আপনাকে যা লাগছে না ভিডিও তে। দারুন দারুন। আপনার মোটা ভুড়ি আর কাপড় কাঁচার দৃশ্য যা লাগছে না। উফফ সিনেমাটা সেই হিট হবে আ..ব্বু।
– এই এই শোনো।
– কন।
– তুমি কে বাবা? (নরম সুরে তুমি করে)
– মানুষ।
– তুমি এই ভিডিও কোথায় পেলে?
– সবই বলবো। তার আগে আমার আর নেহার বিয়ের কথা আমাদের বাসায় এসে বলুন তারপর।
– চুপপ…হারামি ছেলে কোথাকার। তোর সাথে নরম ভাবে কথা বলছি দেখে কি ভাবছিস? আমাকে চিনিস না তুই। তোকে তো আমি খুজে বের করবোই।
– হিহিহিহি…আব্বু এই ভিডিওতে আপনি যে লুঙ্গি পরে ছিলেন সেটার পিছনে কিন্তু একটু ছেঁড়া আছে। ওহ দারুন লাগছে।
– এই বাবু ছেলে শোনো..
ফোনটা টুক করে কেটে দিলাম। ওপাশ থেকে ফোন আসতেই থাকলো। আর আমি হেসেই শেষ। এবার একটু আমার শ্বশুরের ব্যাপারে বলা যাক নেহা আর আমার রিলেশন তিন বছরের। তিনবছর আগে নেহাকে পটাতে আমার সে কি নাজে হাল অবস্থা। যাকগে সে কথা। সে কথা না হয় অন্যদিন বলবো। নেহার সাথে চুটিয়ে প্রেম চলছে। একদিন নেহা আমাকে ডেকে বললো..
– নিলয় শোনো?
– হুম।
– আমাকে তো পটালে। আমি না হয় তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আব্বু..?
– আব্বু মানে? তোমার আব্বু আবার কি করলো?
– আব্বু খুব ডেন্জারেস। আব্বুকে অনেক ভয় পায়। আব্বুকে যদি না পটাতে পারো তাহলে আমাদের আর এক হওয়া হবে না।
– এই রে..তোমার আব্বুকে পটাতে হবে? আগে জানতাম প্রেম করলে মেয়েকে পটাতে হয়। কিন্তু এখন দেখছি মেয়ের বাবাকেও পটাতে হয়।
– ফাইজলামি ছাড়ো। এখন বলো পারবে কিনা।
– আচ্ছা ঠিক আছে তোমার আব্বুর নাম্বারটা দাও। আর আমি যা যা করতে বলবো তাই তাই করবা।
নেহার থেকে ওর আব্বুর নাম্বার নিলাম। কিন্তু ভয়ে কোনোদিন কল দিতে পারিনি। আর এ দিকে ওর আব্বু খুব রাগি একজন মানুষ। সমাজে তার প্রভাব অনেক বেশিই। কারন তিনি মেম্বার পদে ভোটে দাড়িয়েছেন তিনবার। তবে দূর্ভাগ্যক্রমে একবারো জিততে পারিনি। এইবারো তিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। চারিদিকে তার অনেক পোষ্টার।
নেহার চাপাচাপিতে আজ কল দিতেই ঝাড়ি শুনলাম। কিন্তু মজা তো এখনো বাকি। আমি আবারো কল দিলাম..
– হাই কাকু..
– এই ছেলে তোর বাসা কোথায়?
– কেনো কাকু..বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন নাকি?
– তোকে আমি খুন করবো হারামি বান্দর ছেলে।
– ইসস নিজের জামাইকে কেউ এভাবে বলে?
– তুই ভিডিও কোথায় পেয়েছিস ইডিয়েট কোথাকার,তাড়াতাড়ি বল।
– কথা তো সেটা না, কথা হল গিয়ে. আপনি আনটির পা টিপে দিয়েছেন। আনটির কাপড় কেঁচে দিয়েছেন। সেই কাপড় গুলা আবার সযত্নে ইস্ত্রি করে রেখেছেন। আচ্ছা আনটিকে ভয় পান আপনি?
– দেখ বাবা, প্লীজ বলো না এসব কোথায় পেয়েছো?
– যেখানেই পাই না কেনো আপনাকে তো বলবো না। ওহ আরেকটা কথা। আপনি যখন কাপড়গুলা কাঁচতেছিলেন তখন আপনার মোটা ভূড়িটা যে কি সুন্দর ভাবে দুলছিল। আর আমি সেটা কার্টেসি করে একটা গান লাগিয়ে দিয়েছি। শুনবেন গানটা কি কা…কু??
গানটা হল.. “ও বন্ধু লাল গোলাপি কই রইলা রে এসো এসো বুকে রাখি যতনে” রিমিক্স করে আরো একটা গান দিয়েছি। “আমার ঘরে আমি মেম্বার আমার বউ চেয়ারম্যান”, আমার এত দুঃখ দিলি বন্ধুরে ও বন্ধু তোর প্রেমেরই দেওয়ানারে দেওয়ানা, মন জানে আর কেও জানেনা” এখন বলুন আপনি তো ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এই ভিডিও পাড়ার কম্পিউটারে ছড়িয়ে দিলে কত পাবলিক দেখবে বলুন তো? তখন কি আপনাকে আর ভোট দিবে? যে নেতা বউকে ভয় পায় সেই নেতাকে কি পাবলিক ভয় পাবে? বউ এর ভয়ে আপনি বাড়ির সব কাজ করছেন সেই নেতাকে কি সবাই দাপুটি নেতা বলবে? কেউ আর ভোট দিবে না কাকু। কথাগুলো শুনে তিনি চুপ হয়ে গেলেন। রাগি লোকটার মুখ দেখতে পারলে সেই লাগতো। কিন্তু আফসুস কয়েক বাড়ি পরে বাসা থাকাতেও যেতে পারছি না ভয়ে। তখনি তিনি গম্ভির হয়ে বললেন..
– তোমাকে আমি খুজে বের করবোই। ত্রমার নাম্বার ধরে খুজবো।
– হিহিহি…পারবেন না কাকু..আমি যে নাম্বার থেকে আপনাকে ফোন দিয়েছি সেটা আপনার মেয়েরই নাম্বার। আর নাম্বারটা নাকি সে আপনার থেকেই কিনেছে। আপনি নাকি নিজের নাম দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নেহাকে দিয়েছেন। তাহলে কি করে খুজবেন কাকু বলুন।
– প্লীজ বাবু ভিডিওটা পাবলিশ করো না। বারবার ফেল করছি এইবার পাশ করার মান বেশি। তুমি যদি এই ভিডিও ছেড়ে দাও আমার আর মেম্বার হওয়া হবে না।
– না না আমি তো হারামি তাই না? তাহলে তো করতেই হবে।
– কে বললো হারামি? তুমি তো কত লক্ষি একটা ছেলে। তোমার মত ছেলেই হয় না।
– আমি তো শয়তান, বান্দর ইডিয়েট, ফইন্নি। আপনিই তো বলেছেন।
– আরে বাবা আমরা আমরাই তো। সব কথা কি ধরতে আছে? আমি তো মজা করে বলেছি। আজ থেকে আমি তোমার শ্বশুর আব্বু। তুমি আমার জামাই।
– আচ্ছা ঠিক আছে। মেনে নিলাম সব। এখন রাখি। ফোনটা কেটে দিলাম। একটু বাদেই নেহার কল আসলো। আমি রিসিভ করতেই সে বললো…
– এই এই আব্বুকে কি করেছো হুম?
– কেনো গো বেবি?
– আব্বু এত তাড়াতাড়ি পটলো কি করে তাই বলো আগে।
– তোমাকে না বলেছিলাম তোমার আব্বুর সবরকম কাজ ভিডিও করতে সেটা দিয়েই ব্ল্যাকমেইল করেছি।
– কিহহ,,তুমি তো দেখি আসলেই ফাজিল।
– তা কি করবো? তোমার আব্বুর যা রাগ। আর শোনো তোমার আব্বুর ভিডিওতে গান ও লাগিয়ে দিছি। “ও বন্ধু লাল গোলাপি”
– এই থামো থামো। তুমি বেশি ফাজিল ছেলে। তবে আমি আব্বুকে যেয়ে কি বলেছি জানো?
– কি বলেছো গো?
– আমি আব্বুকে যেয়ে বলেছি। আব্বু তুমি টেনশন করো না। ঐ রকম ফাজিল ছেলেকে আমি সোজা করে দিতে পারবো। তোমার উপরে তাকে উঠতেই দিবো না। সারাদিন কাজ করিয়ে মারবো। সব রকম কাজ করাবো একবার খালি বিয়েটা হতে দাও।
– কিহহহ,,এই তুমি এসব বলেছো?
– হুমম..এটা শুনে আব্বু বললো যে তোমাকে নাকি চেয়ারম্যানে দাঁড় করি দিবে সামনের সময়। তোমার নাকি অনেক বুদ্ধি। এই শোনো না..আমি যা যা বলবো তুমি তাই তাই করবা তো সংসারে? আমি কিন্তু থালাবাসন মাজতে পারবো না। ঝাড়ু দিতে পারবো না। সব করবে তুমি আর যদি না পারো তবে তোমাকে আমি পুলিশে দেবো বলে দিলাম।
আমি ফোনটা কেটে দিলাম। কথাগুলো শুনে মাখার মধ্যে গোলাতে শুরু করেছে। চোখের সামনে ভেসে উঠল।
“আমি থালাবাসন মাজতেছি আর নেহা খাটে বসে পান চিবুচ্ছে।” কানে ভেসে আসছে একটি করুন গান “আগে যদি জানিতাম, তবে নেতার মেয়ে বিয়ে নাহি করিতাম, এই জ্বালা আর প্রানে সহে না রে” হালার মেম্বারের বউ যদি ৪৮০ ডিগ্রি ডেন্জারেস হয় তার মেয়ে মানে চেয়ারম্যানের বউ ৮৮০ ডিগ্রি ডেন্জারেস। কেই আমারে বিয়ে থেকে বাঁচাও। আমি বিয়ে করবো না। উহু..উহু..উহু..উহু
(সমাপ্ত)