ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজ

ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজ

তিশা গোসল করার জন্য বাথরুমে ঢুকলো। হঠাৎ বাথরুমের দরজার সিটকিনি বাইরে থেকে বন্ধের আওয়াজ পেলো সে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে সাথে সাথে সে বাথরুম হতে বাইরে বের হতে চাইলো। কিন্তু দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। বাসায় তিশা আর তার ১ বছরের বাচ্চা ছাড়া আর কেউ নেই। বাচ্চাতো হাটতে শেখেনি, তাহলে সে দরজা দিবে কী করে? কী করবে বুঝে উঠতে পারছিলো না তিশা। মনের ভিতর অজানা ভয় কাজ করা শুরু হলো। তাহলে কি কাল রাতে ভূত এফ এমে শোনা গল্প তার সাথে ঘটতে চলেছে? নাকি কেউ সদর দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেছে? ভূত নাকি চোর ডাকাত এ আশংকায় তার সারা শরীর ঠান্ডায় বরফের মতো জমে গেলো।

তিশা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। ঠিক বারোটার আগে সংসারের যাবতীয় কাজ শেষ করে সে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ঘুম পাড়ায় দেয়। তারপর ১২:৩০ সে নিজে গোসল করতে ঢুকে। গোসল আর রান্না করতে গেলেই সে গুনগুন করে গান গায়। এজন্য তার স্বামী রাহাত তাকে বাথরুম সিংগার বা কিচেন সিংগার বলে ক্ষেপিয়ে থাকে। তিশা জানায় গোসলের সময় গান গাওয়ার অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। আর রান্নার সময় গুনগুনিয়ে গান গেলে মনটা ভালো থাকে। রান্নার স্বাদও নাকি দ্বিগুন বেড়ে যায়।যদিও এটা মিথ্যা তবুও রাহাতের কথার প্রতিউত্তর সে এভাবেই দেয়। প্রতিদিনের মতো আজও সে বাথরুমে গিয়ে যখনি গুনগুন করে গান শুরু করেছিলো ঠিক তখনি বাইরে থেকে সিটকেনি লাগানোর আওয়াজ পেলো।

এমন ঘটনা তিশার সাথে আগে কখনো তো ঘটেনি। সদর দরজায় লক তালা মারা থাকে। চাবিটা একমাত্র তিশার স্বামী রাহাত আর তার কাছে ছাড়া কারো কাছেই নেই। গতকাল রাহাত ঢাকায় গিয়েছে। তারতো আজ ফিরে আসার কথা নয়। গোসলে ঢুকবার আগেও সে রাহাতকে কল করেছিলো। রাহাত বললো সে ট্রেনিং সেন্টারে আছে। তাহলে কি তার মনের আশংকা দুটোর একটা সঠিক? না না দিনে দুপুরে ভূত আসবে কোথা থেকে? নিশ্চিত ঘরে চোর ডাকাত ঢুকেছে। ভয় পেলে চলবে না। কারন বাইরে তার বাচ্চা রয়েছে। কিছু সময় স্তব্ধ থাকার পর তিশাা বাথরুমের দরজা খোলার চেষ্টা শুরু করলো। ঠিক তখনি রুমের ভিতর থেকে মোটা কন্ঠের একটা আওয়াজ এলো একদম চিল্লাপাল্লা করবেন না। তাহলে কিন্তু ফল ভালো হবে না। চুপচাপ থাকেন তাহলে আপনার আর আপনার বাচ্চার কোন ক্ষতি আমরা করবো না। চিল্লাপাল্লা করলে খুব খারাপ হবে।

একথা শোনার পর তিশার গলা দিয়ে যেন আর কথা বের হলো না। খবরের কাগজে কিংবা টেলিভিশনে সে এমন অনেক খবর পড়েছে যে ডাকাতরা এসে পরিবারের সকলকে হত্যা করে বাড়ির সকল টাকা পয়সা ও গহনাগাটি নিয়ে পালিয়েছে। দমটা যেন তার বন্ধ হয়ে আসছিলো। না তার নিজের জন্য নয়। বাচ্চাটার জন্য। বাচ্চাটার কোন ক্ষতি করবে নাতো?

রুমের ভিতর দুতিনজন মানুষের পায়ের শব্দ পাচ্ছিলো তিশা। আচ্ছা ডাকাতরাও তো কারো ভাই। তাদের ও তো সংসার আছে। তাদেরও বাচ্চা আছে। তাহলে নিশ্চয় তারা তিশার কথা ফেলবে না। তিশা অনেক কষ্টে কথা বললো। প্লিজ আপনারা দরজাটা খুলে দেন। আমার বাচ্চাটাকে আমার কোলে দিন ভাই। কথা দিচ্ছি আমি কোন চিল্লাপাল্লা করবো না। ঘরে টাকা পয়সা গহনাগাটি যা আছে সব দিয়ে দিব আপনাদের। তবুও আমার বাচ্চাটার কাছে আমাকে যেতে দিন। ওতো ছোট দুধের বাচ্চা। ওতো নিষ্পাপ শিশু। আপনারা ওর কোন ক্ষতি করিয়েন না। ঠিক তখনি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো। তিশাও ডুকরে কেঁদে উঠলো। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েও আর সে দাড়িয়ে থাকতে পারলো না। ধপ করে বাথরুমের ফ্লোরে সে বসে পড়লো।

কিছু সময় পর বাচ্চার কান্না থেমে গেলো। তিশা অনুভব করছিলো কেউ তার বাচ্চাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরভরে হাটাহাটি করছে। ওদিকে আলমারি খোলার আওয়াজ পেলো তিশা আবার বাইরের ড্রয়িংরুমে দেওয়ালে পেরেক ঠুকার মতো ঠুকঠুক শব্দ পাচ্ছিলো। ড্রয়িংরুমের ফ্লোরের নীচে একটা ছোট সিন্দুক আছে। কিন্তু তার উপর কার্পেট বেছানো। বাইরের কারো তো একথা জানার প্রশ্নই আসে না। একথা বাড়ির পুরানো কাজের মহিলা জানে। তাহলে কি সে কাজ করে যাবার সময় মেইনগেইটের চাবিটা চুরী করে নিয়ে গেছিলো? না না। সে তো অনেক বিশ্বস্ত। তাও মানুষের মনতো বোঝা যায় না। এসব সাত পাঁচ মাথায় আসছিলো তিশার।

আলমারিতে সম্পদ বলতে টাকা পয়সা আর তার জীবনের কিছু শ্রেষ্ঠ উপহার রয়েছে। তিশা ছোটবেলা থেকে পড়ালেখায় মোটামুটি টাইপের ছাত্রী ছিলো। কিন্তু খেলাধূলার ক্ষেত্রে সে তুখোড় খেলোয়ার ছিলো। সেই ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত সে অনেক প্রাইজ আর ট্রফি পেয়েছে। পরিবারের সাপোর্ট না থাকায় সে জেলা পর্যায়ের বাইরে কখনো খেলতে যেতে পারেনি এটা তার মনের ক্ষোভ ছিলো। বিয়ের পর সব প্রাইজগুলো সে বাবার বাড়ি থেকে এনে তার ঘরের আলমারীতে যত্ন করে রেখেছিলো। রাহাতকে সে বলতো আমার কাছে এগুলোই গহনাগাঁটি টাকা পয়সার থেকেও শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

হঠাৎ স্বশব্দে বাথরুমের দরজার সিটকিনি খোলার আওয়াজ পেলো তিশা। কেউ মনে হলো রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। আলমারির দরজা খোলা। সেদিকে নজর গেলোনা তিশার। খাটের কাছে এসে দেখলো খাটে তার বাচ্চা নেই। অজানা ভয়ে তার বুক কেঁপে উঠলো। দৌড়ে তিশা রান্নাঘর পেরিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলো। ঠিক তখনি দরজার পিছন থেকে বাচ্চা কোলে করে রাহাত বেরিয়ে এলো এবং জোরে বলে উঠলো সারপ্রাইজ। তিশা স্তব্ধ হয়ে দেখলো ড্রয়িংরুমের ওয়ালে একটা সুন্দর ওয়াল শোকেস আর তাতে সাজানো রয়েছে তার জীবনের পাওয়া উপহারগুলো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত