বৃষ্টি পাগলি

বৃষ্টি পাগলি

—এত্ত নড়াচড়া করলে ঘুমানো যায়???এত নড়াচড়া করার কী আছে হু???চুপ করে ঘুমাও (আমি)
—না কিছু না, এই চুপ করছি।
—সারা দিন অফিস করে এসে রাতে যদি একটু ঠিক মতন ঘুমাতে না পারি তাহলে হবে। (আমি)বেশ কিছুক্ষন পরে।
—কি হলো আবার নড়ছো কেন?? (আমি)
— ঘুম আসছে না, তো আমি কি করব?
—তাইলে অন্য বালিশে গিয়ে ঘুমাও। আমার বুকে ঘুমাতে হবে নানিজে তো ঘুমাচ্ছ না,আমাকেও ঘুমাতে দিচ্ছ না।(আমি)

—উহু, আপনার বুকেই ঘুমাবো, অন্য যায়গাই যাব কেন হুম????
—তাইলে চুপ চাপ ঘুমাও, একটুও নড়বে না।(আমি)
—আচ্ছা, শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন
—এই ধরছি, এখন ঘুমাও (আমি)

শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলাম, পাগলিটা মুখে যদিও বলেছে আর নড়বে না, কিন্তু ঠিকই ও নড়বে, সারাদিন অফিস করে এসে যদি রাতে ঠিক মতন ঘুম না হয় তাইলে কেমনে হয়। আর পাগলিটা আমার বুকে মুখ না গুজে ঘুমাবে না, আমিও নিষেধ করিনি। কিন্তু এই ভাবে নড়াচড়া করলে কী ঘুম হয়????

আসলে পাগলিটার উসখুস করার যে একটা কারন আছে ঘন্টা খানিক হতে চলল বৃষ্টি হচ্ছে, আমার পাগলী বউটা যখন বুঝতে পারছে, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তখন থেকেই এই উসখুস শুরু, বৃষ্টি দেখলে তো মাথা ঠিক থাকে না, যতক্ষন না ভিজবে বৃষ্টিও হয়ছে আরে বাবা এত্ত সময় ধরে হওয়ার কী আছে, মেঘ ভায়ের বুক থেকে তো নিজেআলাদা হচ্ছেই , অন্যকেও আলাদা করার ধান্দা আমার পাগলিটাও হয়ছে, বৃষ্টি হলেই ওর ভেজা চাই চাই,আমি বাড়ি থাকলে তেমন কিছু বলেনা, কিন্তু অফিসে থাকলে বৃষ্টি আসলেই হয়,ওর ভিজতেই হবে, এতটা বৃষ্টি পাগলি। বিকালে ভেজার পর সন্ধায় বৃষ্টি হলে আবার ভিজতে হবে, সব কাজ বাদ দিয়ে হলেও রাতে শুয়ে শুয়ে সেই গল্প শোনাবে নিরব শ্রোতার মতন আমিও শুনি বিয়ের কিছুদিন পরে শ্বশুর বাড়ি থেকে আমাদের দাওয়াত দিল, যথা সময়ে উপস্থিত হলাম দুজনে।

সবার সাথে কুসলাদি বিনিময় করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম,ঘুমানের ঘন্টা খানিক পরেই শুরু হলো তুমুল ঝড় বৃষ্টি, কিছুখন তাদের তান্ডব চালিয়ে ঝড় থেমে গেলো, বৃষ্টিু তখন ইচ্ছে মতন নেমে আসতে লাগল আকাশ ভায়ের বুক থেকে,আছড়ে পরতে থাকল মাটিতে,আর টিনের চালের উপর ঝঙ্কারের সুর তুলল তাই দেখে পাগলিটার সে কী আনন্দ,আমাকে বার বার বলতে লাগল,বৃষ্টিতে ভেজার জন্য আমি না না করছি নতুন শ্বশুর বাড়ি কেও দেখলে যে মান সন্মান সব বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাবে আবার বলতে লাগল, বিয়ের পড় এই প্রথম বৃষ্টি,বিয়ের পড়ে রাতে প্রথম যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিন বরের হাত ধরে ভিজবে, এইটা নাকি তাঁর অনেক দিনের ইচ্ছা। এমন করুন সুরে বললে যে আর না করতে পারলাম না কি আর করব, বিয়ের পর বউয়ের প্রথম ইচ্ছা, কিন্তু ভিজবো কোথায়??? উঠানে যদি ভিজি তবে শ্বশুর শ্বাশুরি দেখলে মান সন্মান সব শেষ । এমন সময় বউ বুদ্ধি দিল,ওদের বাড়ির পাশে যে স্কুল মাঠ আছেসেখানে যেতে, কেও দেখবে না আমাদের।

স্কুল মাঠটা আবার মাঠ মুখো,অন্য দিকে স্কুলের বিল্ডিং গুলো আছে,তাই কেও দেখতেও পাবে না দুজনে দেখে শুনে বাড়ির বাইরে চলে এলাম, গেট দিয়ে বেড়িয়ে স্কুল মাঠের দিকে ছুটতেলাগলাম, প্রথম দিকে বৃষ্টির ফোটা সরিরেপরতেই ঠান্ডা অনুভব করছিলাম, একটু পরেই বেশ ভাল লাগতে লাগল, সাথে নতুন বউ আমিও রোমান্টিক হয়ে গেলাম, টাইটানিক সিনেমার নায়ক নায়িকার মতন দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগলাম, বউ দুইহাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে আছে, আমি পেচন থেকে ওর কোমর জড়িয়েধরে আছি সে এক অর্বননীয় অনুভুতি, কোন কবি এমন দৃশ্য দেখলে নিশ্চয় কয়েকটা রোমান্টিক কবিতা লিখে ফেলত ঘন্টা খানিকের বেশি ভিজেছিলাম সেদিন, আসলে কারো হুসই ছিল না,

বৃষ্টির তেজ একটু কমতেই দুজনেরই হুস হলো খুব সাবধানে বাড়ি ফিরলাম আমরা, ঘরে এসে দুজনের পোশাক পাল্টে সেগুলো সুকাতে দিয়ে শুয়ে পড়লাম,পাগলিটা সেদিন অনেক খুশি হয়ছিল, খুশিতে আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল, সেদিন থেকেই আমাকে জড়িয়েনা ধরলে যেন ওর ঘুমই আসে না কী এতখন পাগলি পাগলি করছি, আমার বউ কিন্তু পাগলি না হু, বউটার কিন্তু খুব সুন্দর একটা নাম আছে, তার নাম টা হলো, মাইশা আক্তার মনি । এই নামটা আমি ছাড়া সবার জন্য!!! কিন্তু আমি পাগলিটাকে আদর করে “পেত্নি”বলি, পেত্নি বলে ডাকলে পাগলিটা যে রাগের বদলে মিষ্টি হাঁসিটা দেয়। ওহহ আমাকে খুন করতে এই হাঁসিটাই যথেষ্ট এই হাঁসির জন্য আমি শতবার খুন হতেও রাজি তো সেদিন রাতে দুজনে ইচ্ছামত বৃষ্টিতে ভিজে এসে ঘুমালাম, আমরা ভাবলাম কেও দেখেনি, মনে মনে সেই খুশি দুজনে সকাল বেলা এক সাথে সবাই খেতে বসছি,শ্বাশুরি আম্মা সবাইকে খাবার তুলে দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে শ্বশুর বললেন

—আগে আমার বাড়িতে সুধু ব্যাঙের মা ছিল,

এখন দেখি ব্যাঙের বাবাও যোগ হয়েছেন, এরা বৃষ্টি দেখলে আর ঘরে থাকতে পারে না, ব্যাঙের মত লাফালাফি শুরু হয়ে যায়। কথাটা শুনে তো লজ্জাই মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছা হলো, বউ খাবার রেখে উঠে গেলো, আমি পড়লাম মাইনকা চিপায়, না পারছি উঠতে না পারছি ঠিক মতন খেতে, কোন রকমে খাওয়া শেষ করলাম। বউ আমায় আগেই বলেছিল, বৃষ্টিতে ভেজার জন্য বাবা ওকে ব্যাঙের মা বলে, আর এখন বিয়ের পর আমি ওর সাথে যোগ দেয়াই আমি ব্যাঙের বাপ, আমরা যখন বাড়ি থেকে বের হই বা ফিরি কোন এক সময় সে হয়ত দেখেছিলেন আমাদের উঠে আসার সময় শুনলাম শ্বাশুরি আম্মা বলছেন

—মেয়ে জামায়ের সামনে এভাবে না বললেও পারতে, দেখতো লজ্জাই দুজনে ঠিক মতনখেতেও পাড়ল না।
—আমি জানতাম তোমার মেয়ে লজ্জা পেয়ে এভাবে উঠে যাবে??? আগে তো ব্যাঙের মা বললে খুশিতে লাফাতো। (শ্বশুর)
—আগে তো আর সামনে জামাই ছিল না, আগের সাথে এখন তুলনা করলে হবে??? (শাশুড়ি)
—যায় হোক দুটোতে কিন্তু খুব মিল, দেখ ওরা খুব সুখি হবে।(শ্বশুর)
—আল্লাহ যে তাই করেন সেদিনের সেই ঘটনার পর গত ১ বছরে শ্বশুর বাড়ি গেলেও শ্বশুরের সামনে কমই পড়ি।

ওহ অনেক ত আগের কাহিনী বললাম, এখন বর্তমানে আসি,,,,,কেমন? ওকে বউটার নড়াচড়া এতটাই বেড়েছে যে আজ বৃষ্টিতে না ভিজলে সেটা কমবেই না, বৃষ্টির শীতল পানিতে এই উতলা মন টান্ডা হবে নতুবা আমার ঘুম মাটি তাই বউকে কোলে করে ছুটলাম বাইরে

—এই কী করছেন, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়????
—বাইরে ফেলে দিয়ে আসি, না হলে যতক্ষন বৃষ্টি হবে, ততক্ষন তোমার ঘুমতো আসবেই না, আমাকেও ঘুমাতে দিবা না। সারা রাত জেগে থাকার চেয়ে ভালো তোমাকে বাইরে ফেলে দিয়ে আসি, শান্তিতে তো একটু ঘুমাতে পারব (আমি)

—হু বললেই হলো, ফেলে দিবে???
—দিবই তো,

এমন একটা বৃষ্টি পাগলিকে নিয়ে আমি কী করব শুনি???? যার বৃষ্টি দেখলে বৃষ্টিতে না ভেজা পর্যন্ত শান্তি হয় না, আর অন্যকেও শান্তিতে থাকতে দেয়না (আমি)

—ঐ ব্যাঙের বাপ চুপ, নইলে কিন্তু???
—কিন্তু কী???? (আমি)
—আজ থেকে সব সময় ব্যাঙের বাপ বলে ডাকবহা হা হা
—আমিও ব্যাঙের মা বলে ডাকবো (আমি)

এভাবেই খুনশুটি করতে করতে দুজনে উঠানে চলে এলাম, আব্বু আম্মু বাড়িতে নেই, তাই কেও দেখার চিন্তা ও নেই, পাগলিটাকে এখনো কোলে করে রেখেছি, আর সে দুহাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আছে ওভাবেই দুজন ভিজতে লাগলাম, বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে দেখলাম পাগলিটা চোখ বন্ধ করে চুপটি করে আছে। একটুও নড়া চড়া নেই। কোল থেকে নামিয়ে দিতেই পাগলিটা দু’হাত দুদিকে প্রসারিত করে দিয়ে মনের আনন্দে ভিজতে লাগল, আর আমি দেখতে লাগলাম।

বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে, আজো সেদিনকার মতন, রোমান্টিক ভাব জাগ্রত হলো মনে, তাই সেদিনের মতন পেছন থেকে ঝড়িয়ে ধরলাম, পাগলিটা বুকের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিল, মাঝে মাঝে দুরে কোথাও হতে মেঘ গর্জনের আওয়াজ ভেসে আসছে আর পাগলিটা কেঁপে কেঁপে উঠছে, বৃষ্টির সাথে দমকা বাতাস যখন শরির স্পর্শ করে যাচ্ছিল তখন অজানা এক শিহরন খেলে যাচ্ছিল মনের মাঝে, ঠান্ডা বাতাসের ছোয়ায় শরীরে কাটা দিচ্ছে, লোম গুলো খারা খারা হয়ে যাচ্ছে, একটা সময় বৃষ্টি ধরে এলো, আমরাও ঘরে ফিরব নিয়ে একরাশ ভালবাসার অনুভুতি, এই ছোট্ট ছোট্ট অনুভুতি গুলোই একটা সময় বেঁচে থাকবে, পাগলিটার এই ছোট্ট আবদার পুরন করতে পারলে বেশ ভালই লাগে, সাথে পাই এক অমূল্য অনুভুতি, যা কোটি কোটি টাকার মাঝেও পাওয়া সম্ভব না। পাগলিটার চাওয়া যে এই ছোট্ট আবদারের মাঝেই সীমাবদ্ধ

—এই ব্যাঙের মা হলো???? বৃষ্টি তো শেষ। (আমি)
—হুম হলো, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত্ত সুন্দর মহুর্ত আর কিছু অনুভুতি দেয়ার জন্য, বুঝলেন ব্যাঙের বাপ???

—আমার ব্যাঙের মা টার জন্যই তো সব, আর কে আছে শুনি???(আমি)
—আর কারো কথা মুখেও আনবেন না
—দুর পাগলি, আর কার কথা ভাববো, এই ব্যাঙের মাকে নিয়েই পারি না আবার আরেকটা!!! ওরে বাবা পারুম না।(আমি)

—হুম মনে থাকে যেন, এখন ঘরে চলেন। দুজনে ঘরে আসলাম
—এই দিকে আসেন তো ব্যাঙের বাপ ।
—কেন কী করবা??? (আমি)
—আগে আসেন।
—এই আসছি।(আমি)
—এখানে সোফায় বসেন।

আমি সোফায় বসতেই আমার পাগলী বউ গামছা দিয়ে আমার মাথা মুছে দিতে লাগল, নিজের যে সারা শরীর ভেজা তার খেয়াল নেই, আমাকে নিয়ে যত চিন্তা তার,

—আমারটা আমি দেখছি, আগে নিজের শরীর মুছো, ঐ লম্বা চুল থেকে আগে পানি ঝড়াও।(আমি)
—ঐটা পরে,

আগে আপনি পোশাক পাল্টে নেন। তারপর আমি!! মহারাণীর হুকুম, শিরধার্য!! তাই নিজের ভেজা কাপড় পাল্টে নিলাম, সে নিজেও তাঁর গুলো পাল্টে নিয়ে গামছা দিয়ে চুল ঝাড়তে লাগল, আমি শুয়ে পড়েছিলাম ততক্ষনে, হঠাৎ পাগলীটা এসে আগের মতই আমার বুকের মাঝে শুয়ে পড়ল কিছুসময় পর আমি আমার পাগলী বউটাকে বললাম,

—এই শোনোনা,,,,(আমি)
—শুনছি বলেন।
—আমার একটা ব্যাঙাচি লাগবে (আমি)
—ব্যাঙাচি কী????
—ব্যাঙের যে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা হয়, তাকেই ব্যাঙাচি বলে।(আমি)
—হুম বুজেছি, এখন এই মাঝ রাতে দুষ্টুমি করার ধান্দা, তা এখন আর হচ্ছে না। ওসব বাদ, ঘুমান

—দুষ্টুমি না করলে আমাদের ব্যাঙাচি আসবে কী করে শুনি???? (আমি)
—সময় হলেই আসবে।
—সময় টা কখন আসবে শুনি??? (আমি)
—সকালে না অফিস আছে আপনার??? এতো রাত হলো এখনও ঘুমাতে মন চাচ্ছে না??
—ঘুম তো পরেও হবে (আমি)
—ব্যাঙাচি ও পরেআসবে
—না আমার এখনই চাই (আমি)

বলেই শক্ত করে জরিয়ে ধরে কপালে একটা ভালবাসা এঁকে দিলাম, আস্তে আস্তে দুজনে হারিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে আসলে এই ছোট্ট ছোট্ট অনুভুতি গুলোই বাঁচার সবচেয়ে বড় অবলম্বন, ছোট্ট ছোট্ট চাওয়া পাওয়ার মাঝেই লুকিয়ে থাকে অফুরন্ত ভালবাসা যা কখনই শেষ হয় না, দিনের পর দিন শুধু বাড়তেই থাকে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত