_তুই এতবড় সর্বনাশ করতে পারলি, মা? নীলা চুপ! ফোন ধরে নিরবে চোখের পানি ফেলছে! সে তার বাবাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছে ৷ তার বাবা এমন কষ্ট হয়তো মৃত্যুর পরও ভুলতে পারবেনা ৷ কোনো বাবা চাইনা এমনটা ৷ প্রত্যেক বাবা চাই তার মেয়েকে নিয়ে মনের ভেতর জমিয়ে রাখা স্বপ্ন পূরণ করতে!
বাবাকে এত কষ্ট দিয়ে এবং তার কান্নামাখা কন্ঠস্বর শুনে নীলার মনে পড়ে গেল তার শৈশব কালের কথা! যখন নীলার বয়স ১৫ মাত্র তখন সে তার বাবার ডায়েরীটা চুরি করে ৷ সে ডায়েরীর প্রথম পাতাটা আস্তে করে উল্টায় এবং পরের পাতায় চোখ বুলাতেই সে বিস্ময়ে চমকে ওঠে! ডায়েরীর দ্বিতীয় পাতাতে সুন্দর করে তার বাবা তার ছবি এঁকেছে; হুবহু তার মত দেখতে, একটুও গড়মিল নেই! তার চারপাশে চারটা গোলাপ ফুল আঁকা হয়েছে ৷ নিচে সুন্দর করে লেখা “আমার প্রাণপ্রিয় আম্মাজান!” নীলা জানেনা যে তার বাবা এত সুন্দর করে ছবি আঁকতে পারে ৷ সে নিজেও ছবি আঁকে তবে তার আঁকা বাবার মত কখনোই হবেনা ৷ সে তার বাবার ছবি আঁকা আজ প্রথমবার দেখলো!
নীলা এরপর ধীরে ধীরে ডায়েরীর পরের পাতাগুলো উল্টিয়ে পড়তে থাকে ৷ শুধু তাকে নিয়েই লেখা ৷ পুরো ডায়েরীর প্রতিটা পৃষ্ঠা উল্টিয়ে কেবল তার নাম এবং তাকে নিয়ে যতসব স্মৃতিমাখা ঘটনা ঘটেছে সেইসবকিছু লেখা দেখতে পেলো! তাকে নিয়ে তার বাবা বেশ কয়েকটি কবিতাও লিখেছে!
মেয়ের প্রতি বাবার এত ভালবাসা দেখে নীলা নতুন করে তার হ্নদয়ে বাবার নামটি বসিয়ে নিলো ৷ বাবার প্রতি তার ভালবাসা আগের চেয়ে বেড়ে গেল ৷ খুশিতে আর আনন্দে নীলার চোখ দিয়ে অশ্রজল টপটপ করে পড়তে থাকে ৷ অশ্রু ঝরছে আর নীলা ডায়েরীর লেখাগুলো পড়ছে ৷ ডায়েরীর পাতাতে তার চোখের পানি পড়ছিল আর সে হাত দিয়ে মুচতেছিল! পাশে প্রিয় পোষা বিড়ালটা এক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে! বিদ্যুৎ ছিলনা তাই অন্ধকার ঘরটিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোকিত করেছিল আর জালানা খুলে দিয়ে ডায়েরী পড়ছিল ৷ হঠাৎ করে খুব জোরে বাতাস এসে ঘরে যতগুলো মোমবাতি জ্বালানো ছিল সবগুলো মোমবাতির আগুন নিভে যায় ৷ অন্ধকারের মধ্যে সে ডায়েরীর লেখাগুলো পড়ার বৃথা চেষ্টা করতে থাকে! হঠাৎ তার বাবা এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, এবং বলে,
___ডায়েরী পড়ার কি দরকার মা? আমার মুখ থেকেই সেসব গল্প শুনতে পারতিস!
নীলার চোখে এখনো পানি ছলছল করছে! বাবার স্নেহভরা পরশে চমকে ওঠে! কান্নামাখা স্বরে বাবা বলে ডাক দিয়ে সে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে! নীলার আজ মনে হচ্ছিল সে সবচেয়ে সুখী মানুষ! কারণ তার রয়েছে বাবার সীমাহীন ভালবাসা ৷ একটি মেয়ের জীবনে আর কি লাগে? যদি বাবার অফুরন্ত ভালবাসা থাকে! জাফর সাহেব তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে বাবা মেয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া স্মৃতিমাখা সব ঘটনার কথা, তখন নীলার মা অন্তসত্তা! ১০ মাস চলছে ৷ সন্তান ভুমিষ্টের শেষ স্টেজ! হয়তো দু’ একদিনের মধ্যে বাচ্চা প্রসব করবে! ১৫ দিন হলো অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে জাফর সাহেব! বউয়ের পাশেই সারাক্ষণ থাকার প্রয়োজন মনে করেন তিনি ৷ বউকে ভারি কোন রকমের কাজ করতে দেন না ৷ রান্না ঘরে পর্যন্ত যেতে দেন না ৷ জাফর সাহেব নিজেই কাজ করেন ৷ মধ্যবিত্ত পরিবার বলেই কাজের মেয়ে রাখার ইচ্ছা করেনি তারা!
হঠাৎ একদিন বিকেলে তানিয়ার প্রসব ব্যাথা শুরু হয়ে যায় ৷ জাফর সাহেব বাসায় নেই ৷ গেছে বাজারে, বাজার করতে! এসে দেখে তার বউ ব্যাথায় কাটা মুরগির মত কাতড়াচ্ছে! কোন উপায় না পেয়ে বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে বাসার নিচে নিয়ে আসে এবং একটা সিনএনজি’তে করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ গাইণি ডাক্তার সবাই বলছিল সিজার না করলে মা বাঁচবেনা কিন্তু জাফর সাহেব ঠেলেই বলছিল স্বাভাবাবিক ভাবেই হবে ৷ তানিয়া জাফরকে হাতজোর করার পর সিজার করানো হয় ৷ এবং ফুটফুটে একটা মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের!
এরপর থেকে জাফর সাহেব তার মেয়েকে যত্নে আর আদরে লালন-পালন করতে থাকে! মেয়ের জন্য তার রাত জাগতেও কষ্ট হয়না ৷ তানিয়া যতটা কষ্ট করে তিনিও তার মেয়ের জন্য সেভাবে কষ্ট করতে থাকে! যখন নীলার বয়স ৬বছর তখন সে খুব জ্বরে আক্রান্ত হয় ৷ জফর সাহেব তখন বাড়িতে ছিলেননা ৷ অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে ছিল ৷ যখনই তিনি জানতে পারলেন তার প্রাণপ্রিয় মেয়েটা অসুস্থ্য তখনই তিনি চমৎকার ও ভাল অঙ্কের স্যালারীর চাকরীর মায়া ত্যাগ করে জরুরী মিটিং উপেক্ষা করে মেয়ের জন্য বাসায় চলে আসেন!
এসে তার মেয়েকে অনেকটা সুস্থ্য দেখতে পান! মেয়েকে কাছে পেয়ে সেকি কান্নার কান্না! কান্নায় বুক ভাসিয়ে দেন চোখের অশ্রুজলে! আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানান মেয়েকে সুস্থ্য দেখতে পেয়ে! মেয়ের প্রতি বাবার এত ভালবাসা দেখে তানিয়াও আনন্দে চোখের পানি ফেলে! জাফর সাহেব ভেবেছিল এভাবে মিটিং উপেক্ষা করে বাড়ি আসায় এরজন্য তার চাকরিটা অবশ্যই বাতিল করা হয়েছে! ভয়ে ভয়ে পরেরদিন অফিসে গেলে তার বস তেমন কিছু বলেনা! শুধু এতটুকু বলে,
___মেয়ে অসুস্থ্য এটা জানালেও পারতেন, অন্যজনের মুখ থেকে শুনতে হয়েছে! কাজে মন দেন আর মেয়ে অসুস্থ্য হলে আমাকে বলে ছুটি নিবেন!
বসের এমন কথা শুনে জাফর সাহেব খুব খুশিই হউন! মেয়ের সপ্তম জন্মবার্ষিকীতে জাফর সাহেব কেনা কেকের ব্যাবস্থা না করে তিনি তার নিজ হাতে কেক বানিয়ে জন্মদিন পালন করেন ৷ এবং ৭বছরের পরীর মত মেয়েকে খুশিতে রাখতে মহল্লার যত সমবয়সী মেয়ে ছিল তাদের দাওয়াত দিয়ে আনে! ১মাসের বেতনের টাকা খরচ করে তিনি জন্মদিনটা ভাল করে উদযাপন করার ব্যবস্থা করেন ৷ এতে তিনি মেয়ের মুখে খুশির বন্যা দেখতে পান! বাবার মুখ থেকে নীলা সমস্ত কথা শুনছিল ৷ নীলা তার বাবাকে থামিয়ে নিজেই বলতে থাকে এইতো সেদিনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কথা!
নীলা ১০ম শ্রেণীতে পড়তো তখন! প্রতিদিন স্কুলে জাফর সাহেব তাকে পৌঁছে দিতেন ৷ ৯টার দিকে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিস যেত! একদিন যথাসময়ে মেয়েকে নিয়ে স্কুলের দিকে যাচ্ছিল ৷ বাবার হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিল নীলা ৷ হঠাৎ দুটা ছেলে তাকে উদ্দেশ্য করে ব্যাডসাউন্ড ইউস করে, শিষ বাজায়! জাফর সাহেব চুপ থাকতে পারেনা ৷ তার সামনে মেয়েকে এভাবে উত্ত্যাক্ত করবে এটা তিনি মেনে নিতে পারেননা! রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে ছেলে দুটির দিকে যায় ৷ মনে হচ্ছিল তাদের গায়ে আঘাত করবে ৷ কিন্তু না জাফর সাহেব নিজেকে সংযত করে মুচকি হেসে ছেলে দুটোকে বলেন,
___বাবা, ও আমার মেয়ে! হয়তো তোমাদের কোন বোন আছে?? তোমাদের বাবা যদি মেয়েকে নিয়ে এভাবে রাস্তায় বের হতো আর তোমাদের মত করে তোমার বোনকে তোমাদের বাবার সামনে উত্ত্যাক্ত করতো তবে তোমাদের সেই বাবার কেমন লাগতো বলোতো? দেখ বাবা, দু তিন মিনিটের সুখের জন্য কারো মেয়ে, কারো বোনকে উত্ত্যাক্ত করে কোন লাভ হবেনা বরং ক্ষতি হবে যাদের তোমরা উত্ত্যাক্ত করবে ৷ হয়তো তারা অপমানে নিজেদের শেষ করেও দিতে পারে; স্কুল কলেজে আসা বন্ধ করে দিতে পারে! তাই প্লিজ এমনটা করোনা বাবা? তারচেয়ে বিয়ে করে বউয়ের সাথে ভালবাসার মুহূর্ত কাটাও! জাফর সাহেবের কথা শুনে ছেলে দুটা অনুতপ্ত হয়ে তার নিকট মাফ চেয়ে চলে যায়!
নীলার জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত কক্স-বাজারে ঘুরতে যাওয়া! জাফর সাহেবের অফিস থেকে পুরো পরিবারসহ হলিডের ছুটি কাটানোর অফার দেওয়া হয় এবং এই সুযোগে তিনি মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে কক্স-বাজার চলে যান ৷ পুরো সাতটা দিন খুব খুশিতে ,আনন্দঘন মুহূর্তে কাটিয়ে আসেন ৷ নীলার খুশি দেখে জাফর সাহেব খুব বেশি খুশি হয় ৷ জাফর সাহেব তার মেয়েকে ভালবাসা দিয়ে বড় করে তোলেন ৷ মেয়ে বড় হয়ে গেলেও তার প্রতি ভালবাসা আরো বেড়ে যায় ৷ মেয়ের লম্বা চুলগুলো আচড়ে দেওয়া, চুলে বিনে করে দেওয়া এসব করতে তার কষ্ট হয়না ৷ মেয়ের ঘরটা সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে তিনি ভালবাসেন!
বৃষ্টির দিনে পুরো পরিবার নিয়ে তারা ভেজে এবং কখনো বা মা মেয়ে ও বাবা মিলে লুডু খেলায় মেতে ওঠে! সেই নীলা তার বড় বোনটার মতই বড় একটা ভুল করে ফেলে ৷ তার বড় বোনের ভুলের কারণে জাফর সাহেব ভুলেই যান তার আরো একটা মেয়ে ছিল ৷ এজন্য তিনি সকলকেই বলতেন তার একমাত্র মেয়ে নীলা ! নীলার বড় বোন হিন্দু একটা ছেলের সাথে পালিয়ে যান ৷ এটা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না ৷ তার এত আদরে বড় করা মেয়েটি প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করবে সেটা তিনি সহ্য করতে পারলেন না ৷ বেশ কয়েকদিন মেয়েকে খুঁজে যখন পেলেননা তখনই তার মন থেকে মেয়েকে চিরতরে মুছে ফেলেন! নীলার বড় বোন নীলিমা তার বাবার নিকট শেষ একটা চিঠি লেখে,
___বাবা, তোমাকে অনেক বড় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ৷ কিন্তু কি করবো বলো- আমাদের সম্পর্ক তো কিছুতেই মেনে নিতে না তোমরা ,তাই বাধ্য হয়ে পালাতে হলো! ও মুসলিম হয়েছে ৷ আগে থেকেই ওর মুসলমান হবার ইচ্ছা ছিল ,বিয়ের আগেই মুসলিম হয়ে যায় ৷ শুনে খুশি হবে ওর পরিবারও মুসলিম হয়েছে এবং তারা মেনেও নিয়েছে! জানি তুমি আমাকে কখনো মেনে নিবেনা কিন্তু আমি তোমাকে চিরকাল ভালবেসে যাবো ৷ ভুল জেনেও আমি ভুলটা করেছি ৷ মাফ করে দিও! ভাল থেকো!
এরপরও জাফর সাহেব মেয়েকে মেনে নিতে পারেনি ৷ সেই বড় মেয়ের মত তার ছোট মেয়েটাও একই রকম ভুল করে ৷ যাকে তিনি নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবেসেছিলেন সেই মেয়ে তাকে এতটা কষ্ট দিবে তিনি কল্পনাতেও ভাবেননি!
নীলা তখন অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্রী ৷ ক্লাসে একটা সুদর্শন ছেলে তাকে বেশ কিছুদিন ধরে ফলৌ করছে ৷ হঠাৎ একদিন প্রোপস করলে নীলা তাকে রিজেক্ট করে দেয় ৷ এরপরও ছেলেটা তার পিছু ছাড়েনা ৷ আগের চেয়ে বেশি সে নীলাকে ফলৌ করতে থাকে ৷ পুরো এক বছর ধরে সে নীলাকে ইম্প্রেসশড করার চেষ্টা করে ৷ ফোনে, ফেসবুকেও পটানোর চেষ্টা করে ৷ শেষপর্যন্ত নীলা ছেলেটার প্রেমের ফাঁদে পড়ে যায়! এতটাই সে ছেলেটার মোহে ডুবে থাকে যে সে তাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝতে চায়না!
জাফর সাহেব মেয়ের পরিবর্তন কিছুটা বুঝতে পারলেও তার প্রতি মেয়ের ভালবাসা দেখে সন্দেহ করা ভুলে যায়! নীলা সবচেয়ে বড় ভুলটা করে তার বয়ফ্রেন্ড রবিন কে অন্ধের মত বিশ্বাস করে ৷ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ও ভালবাসার কসম খাইয়ে নীলার সাথে রুমডেট করার প্রতিশ্রুতি নেয় ৷ নীলা অনেক ভাবার পর রবিনকে বিশ্বাস করে একদিন রুমডেটও করে! এরপর আরো দু’মাস সম্পর্ক চলে তাদের! হঠাৎ একদিন রবিন তাকে পালানোর কথা বলে ৷ নীলা কিছুতেই রাজি হয়না ৷ রুমডেটে ভিডিওয়ের ভয় দেখায় তাকে ৷ সে বাধ্য হয়েই পালিয়ে যায়! ভুলে যেতে হয় বাবা, মায়ের ভালবাসাকে! জাফর সাহেব যখন জানতে পারলো এটা, তখন থেকে তিনি শুধু অঝোর নয়নে কেঁদেছেন আর কপাল চাপড়িয়েছেন ৷ মেয়ের ওপর রাগ না করে নিজেকে দোষারোর করেছেন এজন্য যে মেয়েকে ভালবাসা দিয়ে মানুষ করতে পারেনি! তাকে হয়তো আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত ছিল!
মেয়ের প্রতি রাগ,ক্ষোভ করে তিনি কোন সমাধান পেলেন না ৷ তার এতদিনের স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেছে একটা ভুলে ৷ মেয়ের প্রতি রাগ দেখিয়ে সেই স্বপ্নটা আর পূরণ হবেনা! ঐদিন রাতে আর জাফর সাহেব কিছু খায়নি ৷ পুরো রাতে না ঘুমিয়ে চোখের পানি ফেলে কান্না করেছে ৷ তার স্ত্রী তানিয়াও ঘুমাতে পারেনি! বাইরে বের হবার সাহস হয়নি তাদের ৷ বাইরে বেড়োলেই অকথ্য কথা শুনতে হবে তাদের ৷ একেএকে দুটা মেয়ে এভাবে পালিয়ে গেল এটা মহল্লার লোকদের চোখে কখনো ভাল মনে হবেনা ৷ পুরো তিনটা দিন বাসায় মরার মত হয়ে ছিল তারা দুজন ৷ নাওয়া খাওয়ার কথা জাফর সাহেব ভুলেই গেছিলেন ,তানিয়া জোর করে তার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেন ৷৷শিশু বাচ্চার মত হাউমাউ করে কান্না করতে করতে তার স্ত্রীকে বলে,
___আমার নীলা মা’কে এনে দাও, আমার নীলা মা’কে এনে দাও! ৭দিন পর জাফর সাহেব মেয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছা করে ৷ তার আগের নাম্বারেই ফোন দেয় এবং নীলা ফোন রিসিভ করে! জাফর সাহেব কান্না মাখা কন্ঠে ভাঙ্গা গলায় বলতে থাকে,
__তুই এতবড় সর্বনাশ করতে পারলি, মা? উত্তর দেয়না নীলা জাফর সাহেব বলতে থাকে,
_এই প্রতিদান দিলি আমাদের ? এত ভালবাসা দিয়ে তোকে বড় করলাম ৷ আর আমাদের ভালবাসাকে কবর বানিয়ে দিলি ? একটুও বুক কাঁপলোনা তোর? একজনের ভালবাসার জন্য দুজনের ভালবাসাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলি? কষ্ট পেয়েছি মা! তবুও তুই চলে আয়! ঐ ছেলেকে সাথে নিয়েই আয়! ওদিকে রবিন এসে নীলাকে বলে,
___কে? নীলা উত্তর দেয়,
___বাবা ফোন দিছে!
এটা শুনেই রবিন ফোনটা কেটে দেয়! জাফর সাহেব আরো কিছু বলতে গিয়ে যখন দেখলো ফোনটা কেটে গেছে তখন সে স্তব্দ হয়ে যায় ৷ পাথরের মত রুপ নিয়ে দম বন্ধ করে রইলো, এরপর কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবতে থাকে, তারপরই কান্নায় আত্মহারা হয়ে অজস্র অশ্রু ফেলতে থাকে! মহল্লায় বেড়োতে পারেনা জাফর ও তানিয়া ৷ একেক জনের একেক কথা তাদের দুজনকে বারবার মৃত্যু সমতূল্য কষ্ট দিচ্ছিল! একদিন নিজেদের শামলাতে না পেরে দুজনেই বিষাক্ত বিষ পান করে তারপরই গলায় ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে! মরার আগে তারা ছোট্ট চিরকুটে লিখে যায়,
_একইসাথে দুভাবে আত্মহত্যা করার কারণ, “আমরা আমাদের দুটা মেয়ের একটাকেও মানুষ করতে পারিনি, এই অপরাধে এভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম!” নাহ, নীলা সুখী হতে পারেনি ৷ পৃথিবী সাক্ষ্যি, সাক্ষ্যি দুনিয়ার প্রতিটি “কাপল” যারা পালিয়ে বিয়ে করেছিল, তারা কখনো সুখী হতে পারেনাই; দূঃখ আর যন্ত্রণা তাদের প্রতিনিয়ত কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে! বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে কখনোই কোন ভালবাসা সফল হয়না, হতে পারেনা! একজনকে ভালবাসতে গিয়ে দুজনকে কষ্টে রাখা, মৃত্যুর চেয়ে কঠিন শাস্তিতে রাখা এর প্রতিদান কখনো ভাল হয়না! নীলাকে দু বছর পরই রবিন ডিভোর্স দিয়ে দেয়! নীলা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে রাস্তার পাগলী হয়ে যায়! এই পাগলীর সম্ভ্রম রক্ষার জন্য সেদিনের ঐ বাবাকে তার খুব বেশি দরকার! আপসোস! সেই বাবা তাকে ছেড়ে চলে গেছে বহু আগে!