কিডন্যাপ

কিডন্যাপ

আনিকা শরীরের কাপড়চোপড় সব খুলে ফেলতে চাইলো। আমি বললাম, থামো এতো তাড়াহুড়ো কীসের? আনিকা অমায়িক এক হাসি দিয়ে বললো, আপনাদের মতো পুরুষদের আমার ভালো করে চেনা আছে।

আমি একটা সিগারেট বের করে বললাম, কয় টা পুরুষকে চেনো তুমি? ও ভেংচি দিলো। আমি বললাম, আগুন আছে? ও ঝারি দিয়ে বললো, আমি কী সিগারেট খাই? আমার কাছে আগুন থাকবে কেনো? ওর সারা শরীরে রাগ টলমল করছে। রাগ হবেই বা না কেনো? ওকে চিঠিপত্র পাঠিয়ে কিডন্যাপ করেছি! একটি মাত্র রাতের জন্য। আমার ইচ্ছে হলে রাত দিনের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ক্ষুধা পেয়েছে নিশ্চয়? কী খাবে?

ও হাত দুটো নাড়াচাড়া করে বললো, আপনার মাথা টা খাবো, পারবেন দিতে? নিজের শরীরের ক্ষুধা মিঠিয়ে দয়া করে আমাকে উদ্ধার করুন।  আমি রুমের দরজা টা লাগিয়ে নিলাম। কেউ আমাদের বিরক্ত করতে আসবে না। আনিকা বললো, কাজ শেষে আমাকে শর্বতে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে দিয়েন প্লীজ, পারবেন না?

আমি, পারবো। বলে ওর পাশে বসলাম। ও যেন চোখ দিয়ে আমন্ত্রণ করছে আমাকে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও। আমি বললাম, এখন রাত দশ টা বাজে মাত্র। বারোটার পর নিজেকে তৈরি রেখো। ও অবাক হয়ে বললো, এই দুই ঘণ্টা কী করবেন? “গল্প শুনবো।” আমার সরাসরি উত্তর। ওর মুখ টা কেমন যেন হয়ে গেলো। বললো, আপনি খুব গল্প ভালোবাসেন না?” হুম, তার চেয়ে ও বেশি তোমাকে। ”

ও হো হো করে হেসে বললো, ভালোবাসা? হা হা হা, ভালোবাসার মানুষকে কেউ কিডন্যাপ করে? রাত কাটানোর জন্য পাঁচ তারকা হোটেলে নিয়ে আসে? হ্যাঁ এটা ও অবশ্য এক ধরনের ভালোবাসা। তবে এটা হলো শারীরিক ভালোবাসা, এটাকে ভালোবাসা বলে ভালোবাসাটাকে অপমান করবেন না প্লীজ। তাছাড়া আপনি এতো ঢং করছেন কেনো? আমি তো আপনাকে বাধা দিচ্ছি না। চিৎকার করছি না, তাহলে কেনো আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পরছেন না?

আমি, ঝাঁপ দিবো, তবে অন্যভাবে। বলে ব্যাগ বের করলাম। ব্যাগে দেয়াশলাই ছিলো, বের করে সিগারেট ধরালাম। একটান দিয়ে বললাম, তুমি আচ্ছা একটা মেয়ে। নিজে গল্প বলবে না। আচ্ছা আমিই বলি? তুমি শুনো, বেশি সময় লাগবে না।

ও ভেংচি দিয়ে ওপাশ করে বসলো। রুমে একটা জানালা আছে। জানালার চাদর সরালে সুদূর পাহাড় দেখা যায়। আমি পাহাড় দেখতে দেখতে বললাতে শুরু করলাম ” জানো আনিকা আমি কে? জানো না। আমি এমন একটা ছেলে যে জীবনের সব কিছু জোর করে পেয়েছে। এক প্রকার ছিনিয়ে নেয়া যাকে বলে। আমি আজ পর্যন্ত যা চেয়েছি সব পেয়েছি। নাহয় জোর করে নিজের করে নিয়েছি। আমি অনেক জেদি একটা ছেলে। পরাজয় শব্দ টা আমার ডায়েরীতে নেই। আমার মা বাবা কে আমি জানি না চিনি না। শুনেছি বেশ্যা পাড়ার কোনো বেশ্যার পেটে না কী আল্লাহ্‌ আমাকে লালনপালন করেছে।

জানো আমি রোজ পতিতালয়ে যাই। নিষিদ্ধ পল্লীতে একেক দিন একেক বেশ্যার কাছে। কিন্তু জানো আজ পর্যন্ত কোনো বেশ্যার শরীরে আমি হাত দেইনি! রাত জেগে তাঁদের গল্প শুনেছি। নিজের মাকে তো দেখিনি। ওদের গল্প শুনে মাকে কিছুক্ষণের জন্য খুঁজে বেড়াতাম। জানো অনেকে আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। কেউ সাংবাদিক ভেবেছে বা কেউ গোয়েন্দা।

এ শহরের রাতের অন্ধকারের সব গল্প আমার জানা। সেভাবেই তোমার খোঁজ পেয়েছিলাম। তুমি জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক মেয়ে। অনেক কষ্ট করে টাকা রোজগার করো। অবশ্য তোমার মা নেই, বাবা আছে। তবে বাবা থেকে ও তো নেই। সে জেলে পঁচে পঁচে মরছে।

একটা ছেলেকে ভালোবেসেছিলে। ছেলে বললে ভুল হবে, রমরমা পুরুষ নির্ঘাত। মন থেকেই ভালোবেসেছিলে। সে তোমাকে খুব কায়দা করে লুটেপুটে খেয়েছে। সর্বশেষ বিয়ের কথা বলে তোমাকে এই বেশ্যালয়ে ছেড়ে দিয়ে গেছে। তোমার দেহ রোজ ভদ্রবেশী সমাজ ভোগ করছে। বিনিময়ে একটা নোট কাঁধের কাছে রেখে যাচ্ছে।

তুমি এই জায়গা থেকে বেরোতে পারছো না। এখন বেরোতে চাচ্ছো ও না। রাতের অন্ধকারে তুমি ভোগ্য বেশ্যা আর দিনের আলোতে কয়েক’টা রাস্তার ছেলে-মেয়ের চোখের মণি। ওদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে তোমার খুব বেশি কষ্ট করতে হয়। দেখো আমি তোমাকে আলগা দরদ দেখাচ্ছি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমার প্রথম প্রেম টা ছিলো জীবনের একটা ঘটনা, তার পরিস্থিতি হলো তোমার এই অবস্থা আর ভবিষ্যৎ তোমার কাছে। আমি শুধু তোমার ভবিষ্যৎ চলার সঙ্গী হতে চাই। তোমাকে হয়তো প্রতি রাতে কিনতে পারবো কিন্তু তোমার মন তো না! মন বড় ঝামেলার জিনিষ আনিকা, জোর করে পাওয়া যায় না। ”

আমি এখনো পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। পিছন ফিরতেই দেখি আনিকার চোখে পানি। আমার পেছন ফেরা দেখে ঝটপট চোখের পানি মুছে নিলো। ও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, বারোটা বাজতে আরো অনেক বাকী। আপনার আর সইছে না নিশ্চয়?আমি দীর্ঘশ্বাস নিলাম। কাকে রামায়ণ কাহিনী শুনাচ্ছি! বললাম, বারো টা বাজার সাথে সাথে দরজা টা খুলো, আমি বিষ নিয়ে হাজির থাকবো। আপাতত বাইরে গেলাম। রাত বারোটা।

দরজায় টিং টিং শব্দ হলো। আনিকা দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলো! এটা সে কখনো ভাবেনি আজকের দিনে এমন টা হবে! কয়েক টা ছেলেমেয়ে এক ঝাঁকে হাতে হাতে বেলুন, ফটাস ইত্যাদি নিয়ে, হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার আনিকা। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। বলতে বলতে রুমে ঢুকলো। আনিকার খুব বেশি মন খারাপ ছিলো। কারণ আজকে ওর জন্মদিন, আর আজকেই আমার পাল্লায় পরেছে। এই ছেলেমেয়েদের আনিকা নিজের সন্তান মনে করে। শরীরের টুকরো যেন একেক টা। আনিকা ওদের পেয়ে খুশিতে যেন আত্মহারা। সবার কপালে চুমু দিতে দিতে বললো, তোরা এখানে কীভাবে? বাচ্চারা সবাই বললো, বলা যাবে না। আগে তুমি কেক কাটো।

সবাই জড় হয়ে কেক টা ফ্লোরে রাখলো। লেপটা দিয়ে বসেছে আনিকা সহ সবাই। আমি ও বাচ্চাদের একজন। সবাই আনিকাকে কেক তুলে খাওয়াচ্ছে, আমি ও। ও আমার দিকে কেমন ভাবে তাকালো, যেন আগন্তুক দেখছে। এক টা বাজার আগেই ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে পরেছে। কিছুক্ষণ হৈ-মৈ করে। আমি ব্যাগ টা কাঁধে নিলাম। আনিকা নীরব দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।  আমি গায়ে জ্যাকেট জড়াতে জড়াতে বললাম, তোমার উপরে ঝাঁপিয়ে পরা শেষ আমার, অনেক তৃপ্তি পেয়েছি। না বলা কথাগুলো বলতে আর তোমার সাথে “স্পেশাল” একটা রাত্রি যাপন করতে তোমাকে কিডন্যাপ করা। যাই কালকে আবার অন্য শহরের কোনো বেশ্যাকে কিডন্যাপ করতে হবে।

আনিকা কিছু বললো না। আমি রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। ও সবদিক থেকে শক্তপোক্ত একজন নারী। সমাদর যথা রিসিপশনের দিকে পা বাড়ালাম। দায়িত্বে থাকা লোক টা যেন কোথায় গেলো! এরই মাঝে পায়ের টুপ টুপ আওয়াজ!
ঘুরে তাকানোর সাথে সাথেই আনিকা আমার বুকে এসে পরলো! খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আমি কিছু বলবার আগেই ও বললো, আমাকে রোজ কিডন্যাপ করবে প্লীজ? কিডন্যাপ করে একেবারে তোমার মনের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখবে। আমি আর বেরোতে চাই না, প্লীজ!

আমি চুপ করে রইলাম। ও হঠাৎ আমাকে ছেড়ে বললো, না কী এখন আমাকে ঘৃণা হচ্ছে? আমি ওকে ” উইল ইউ ম্যারি মি?”বলার সাথেই সাথেই ও মাথা নাড়িয়ে আমার কপালে একটা চুমু আঁকলো। এরই মাঝে কোথ থেকে রিসিপশনের লোক টা এসে বললো, আপনারা এখানে কেনো? কোনো কিছু লাগবে?

আনিকা বললো, হ্যাঁ লাগবে। একটা স্পেশাল রুম রেডি করে রাখেন, আজকে আমাদের বাসর রাত। খুব জলদি। বলেই আমাকে নিয়ে বাইরে হাঁটা শুরু করলো। আমি বললাম, কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? ও ভেংচি দিয়ে বললো, বা রে, আমরা বিয়ে করবো না? না কী বিয়ে না করেই বাসর করার শখ? আমি, তা না। বলতে না বলতেই ও বললো, আমাকে কোলে নাও না প্লীজ। বেশি দূরে না, সামনেই কাজী অফিস আছে। যাষ্ট একটু।

আমি ওকে কোলে নিতেই বললো, আচ্ছা তুমি আমাকে কেন এর আগে কিডন্যাপ করলে না? তুমি করো কী? আজকের পর থেকে কিডন্যাপিং বন্ধ কিন্তু। একদম বাজে কাজ করা যাবে না। আচ্ছা তোমার মাথার চুল এতো বড় বড় কেনো? আমার না টাকলা ছেলেদের ভাল্লাগে হি হি হি। তোমার আবার ঘরে আরেক টা বৌ নাই তো? তুমি না খুব মুডি একটা ছেলে৷ আমি কাজী অফিসের সামনে এসে পরেছি। কয়েকজন আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো। এখনো মেয়েটার বকবক বন্ধ হয়নি। অবশ্য মেয়েটার বকবকানি আমার এত্তগুলা ভালো লাগছে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত