ছেলেটা জামাকাপড়
রোদে দিয়ে চলে যাচ্ছে। পিছন থেকে আইশা ডাক দিলো,
“এই যে শুনছেন?
ছেলেটা ঘুরে দাঁড়ালো।
—জ্বি বলুন।
“আপনি নতুন এসেছেন?
—হুম।
“ব্যাচেলর?
—হ্যা।
“শুনুন একটা কথা বলে দিচ্ছি, বাসায় জোরে হাঁটবেন না।
—কেন?
“কারন আপনাদের রুম বরাবর নিচে আমার রুম।আর জোরে জোরে গান ছাড়বেন না। জোরে কথা বলবেন না।আমার পড়ায়
ডিস্টার্ব হবে।
—আচ্ছা ঠিকাছে।
“আরেকটা কথা শুনুন।প্রয়োজন ছাড়া ছাদে উঠবেন না।কারন আমি প্রায়ই ছাদে থাকি।আপনারা ছেলে তাই ছাদে না এসে বাহিরে গিয়েও ঘুরে আসতে পারবেন।
—আর কিছু বলবেন?
“নাহ আপাতত এটুকুই মনে রাখলে চলবে।
—জ্বি মনে থাকবে।
“মনেতো আগের ব্যাচেলর ছেলেগুলোরও ছিলো।কিন্তু ওরা এসবের তোয়াক্কাই করেনি।
আপনাকে দেখে ভালোই মনে হচ্ছে।
আশা করি কথাগুলো মাথায় রাখবেন।
—জ্বি মনে থাকবে।
ছেলেটা চশমা ঠিক করতে করতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল।
রাগে জ্বলে যাচ্ছে আইশা।
গতবারের ছেলেগুলোর কথা মনে আছে। রুমে লাফালাফি থেকে শুরু করে জোরে গান বাজানো ছিলো তাদের নিত্যদিনের
রুটিন।
রাগে গজ গজ করতে করতে আইশা বাসায় চলে গেল।আজ যে করেই হোক বাবাকে ধরবে।
রফিক সাহেব অফিস থেকে এসেই পড়লেন মেয়ের পাল্লায়।
বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না আইশা।
দরজা আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“কিরে মা কি হয়েছে?এতো রেগে আছিস কেন?
—কি কথা ছিলো?
~ও স্যরি মা আইসক্রিম আনতে ভুলে গেছি।
—না আইসক্রিম না।
~তাহলে কি মা?আসতে দেরী করেছি?
—উহু । আরো বড় অপরাধ করেছো।
তোমাকে কতবার বলেছিলাম ব্যাচেলর ভাড়া দিতে না।তুমি ভাড়া দিলে কেন?
~নারে মা।ওরা খুব ভদ্র।
—ভদ্র?গতবারের ছেলেগুলোর মতই ভদ্র?
ওদের কথা মনে নেই?ওরা কি করেছিল?
জোরে গান চালাতো,জোরে কথা বলতো,ছাদে উঠতো,বাসায় জোরে হাঁটতো।
~না।ওদের বলে দিয়েছি। ওরা এসব করবে না।
—করবে করবে করবে অবশ্যই করবে আর আমার পরীক্ষা খারাপ হবে। কিছুদিন পর HSC পরীক্ষা।
~আমাকে বাসায় ঢুকতে দে। বলছি…
দরজা ছেড়ে দিলো আইশা।
রফিক সাহেব সোফায় বসে পড়লো।
আইশা তখনো আগের মতই দাঁড়িয়ে।
~মা রাগ করিস না।শোন,ওরা খুব ভালো। ভালো কলেজে পড়ে।অনেক দূর কে এসে ওরা পড়ালেখা করে।
আমরা যদি ওদের বাসা ভাড়া না দেই থাকবে কোথায়?
—কেন?হোস্টেলে।সেখানে যদি জায়গা না পায় অন্য রো বাসায়।আমাদের বাসায় কেন?
~অনেকে ওদের ভাড়া দেয়না মা। ভেবে দেখ আমিও একসময় এরকম ব্যাচেলরই ছিলাম।
আর ওদেরতো এখন তাড়িয়ে দেওয়া যায় না।
একটা মাস দেখি। এর পর না হয় ব্যাবস্থা করবো।
—ঠিকাছে।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো।
আমি খাবার দিচ্ছি।
খাবার আনতে চলে যায় আইশা।
আজ ৫ দিন কেটে গেল। ছেলেগুলো কোন সমস্যা করছে না। মনে হয় কথাগুলো ওদের মাথায় ঢুকেছে।
ছাদে উঠেই পুরো চিন্তাটা গায়েব
হয়ে গেলো আইশার।
ছেলেটা ছাদে উঠে কার সাথে যেন
কথা বলছে।
আইশা দাঁড়িয়ে থাকে।আজ
ছেলেটাকে আচ্ছা করে বকে দিবে।
আইশাকে দেখতে পেয়ে ছেলেটা মোবাইলটা রেখে দিয়ে নিচে নেমে যেতে সিঁড়িঘরের দিকে এগোয়।
“এই যে জনাব শুনুন।
—জ্বী বলুন।
~আপনাকেতো ভদ্রই ভেবে ছিলাম।
মনে করেছিলাম আপনারা আগেরগুলোর চেয়ে ভালো।কিন্তুু কিসে কি?ছাদে এসে প্রেম জুড়িয়ে দিয়েছেন।
সমস্যা কি আপনার?
—আসলে…
~আসলে কি?
ছেলেটার মোবাইল বেজে উঠলো আবার।
~এই যে কলটা ধরুন।নয়তো আপনার গার্লফ্রেন্ড রেগে যাবে।কথা শেষ করুন।
ছেলেটা একপলক আইশার দিকে এবং অন্য পলক মোবাইলের দিকে দিয়ে কলটা ধরে,
“হ্যালো মা… ছেলেটা কথা বলতে বলতে ছাদের
অন্যপাশে চলে যায়…
এদিকে আইশা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ছিঃ কি যা নয়
তা বরেছে ছেলেটাকে। ছিঃ নিজেই নিজের চুলগুলোকে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
দুমিনিটও কথা বলেনি।ছেলেটা আইশার সামনে এসে বললো,
‘স্যরি আসলে বাড়ি থেকে মা কল করেছিলো।রুমে আমার রুমমেট পড়ছিলো তাই ছাদে চলে এলাম।স্যরি।
~আপনাকে স্যরি। আসলে আমারই ভুল।
আপনাকে যা নয় তাই বলছি।
—না সমস্যা নেই।মানুষ মাত্রই ভুল।আর ভুল থেকে উচিৎ শিক্ষা গ্রহন করা।
~আপনার নামটা জানতে পারি?
—তানিম।আপনার?
~সুন্দর নাম।আমি আইশা এবারের HSC পরীক্ষার্থী।আপনি?
— Accounting Second year.
~আপনারা কতজন উঠেছেন রুমে?
—দুজন।আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড।
~ও। আপনার সাথে কথা বলে ভালোই লাগলো। শুধুমাত্র আপনি মাঝে মাঝে ছাদে আসতে পারেন।
আড্ডা দেওয়া যাবে।
—দেখবো আসতে পারি কিনা।আসি…
ছেলেটা বাসায় চলে গেল ভাবতে ভাবতে,
“মানুষ মরনশীল,আর মেয়েরা পরিবর্তনশীল।”
এভাবেই মাঝে মাঝে ওদের আড্ডা হতো।
আড্ডা থেকেই ভালো লাগা।আর ভালো লাগা থেকেই ভালোবাসা।কিন্তু তা কখনো কেউ কাউকে বলা হয়ে উঠেনি।
ও হ্যা আপনি শব্দটা প্রমোশন পেয়ে তুমিতে চলে এলো।
আড্ডাটাও ধীরে ধীরে কমে এলো।
কারন কিছুদিন পরই আইশার HSC Exam. মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা হতো। তাও শুধুই ফ্রেন্ড হিসেবে।তা ছিলো খুবই
সীমিত।
একদিন দুপুর বেলা বাসায় শুয়ে হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনছে তানিম।
দরজায় শব্দ হলো।
খুলতেই
দেখলো সামনে দাঁড়িয়ে বাড়িওয়ালা আঙ্কেল। হঠাৎ এখানে কেন?মাসেরতো মাঝামাঝি।
ভাড়া চাইতে আসার প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া ভাড়া নিতে আসবে কেন?
বাসায় গিয়েই ভাড়া দিয়ে আসি।
নাকি কোন আইন ভঙ্গ করার কারনে নোটিস নিয়ে আসছে।
একরাশ চিন্তা মাথায় নিয়েই আঙ্কেলকে সালাম দিলো তানিম।
কিন্তু আঙ্কেলকে বিষম্ন লাগছে।
“বাবা তোমাদের রক্তের গ্রুপ কি?
~কেন আঙ্কেল?
—আইশার জন্যে (O-) রক্ত লাগবে।
তোমাদের কলেজের
কারো যদি থেকে থাকে।একটু যোগাযোগ
করে দেখো বাবা।যত টাকা লাগে দিবো।
আমার একটি মাত্র মেয়ে।যদি কিছু হয়
যায়…
আঙ্কেল কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
—কি হয়েছে আইশার?
~মাথা ঘুরে পড়ে যায় হঠাৎ। ডাক্তারের কাছে নিয়ো যাওয়ার পর বলে রক্তশূন্যতা।
—আঙ্কেল আমারও (O-).আমি দিবো।
কিন্তু কিছুদিন হলো রক্ত দিয়েছি।
দুমাসও হয়নি।
তবুও দিবো।
রফিক সাহেবের গাড়িতে চেপে বসলো তানিম।
উদ্দেশ্য PG হসপিটাল।
এ বছর আর আইশার পরীক্ষা দেওয়া হয়না।
আগামী বছর দিবে।
বিকেল বেলা আজ অনেকদিন পর ছাদে উঠলো ওরা।
আগের মতই আড্ডা।কিন্তু আজ আইশা অন্যমনা।
‘এই যে জনাব একটু এদিকে আসবেন?
—জ্বি বলুন ম্যাডাম।
ছাদের এক কোনে করা আইশার ফুলের বাগানে ফুটে আছে একটি মাত্র লাল গোলাপ।
আইশা সেখানেই ডাকছে তানিমকে।
~দেখুনতো জনাব আমার বাগানটা কেমন?
—অনেক সুন্দের।বিশেষ করে একলা ফুটন্ত গোলাপটা।
~গোলাপটা গাছ থেকে একটু ছিঁড়ে দিবেন?
—অকারনে ফুল ছেঁড়া ভালো কাজ নয়।
~অকারনে নয়। কারন আছে।দিবেন?
গোলাপটা গাছ থেকে ছিঁড়ে আইশার দিকে তুলে ধরলো তানিম।
“না এভাবে দিবে নিবো না।
~কি ভাবে দিবো?
—হাঁটু গেঁড়ে বসে।হিহিহি বুঝতে বাকী রইলো না কি করতে হবে তানিমকে।
তানিম হাঁটু গেঁড়ে ঠিক যেভাবে একটা মেয়েকে প্রপোজ করে ঠিক সেভাবেই গোলাপটা এগিয়ে দিলো আইশার দিকে…
আইশা মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে গোলাপটা গ্রহন করলো।
সত্যিই আইশার হাসিটা সুন্দর।
হাসলে টোল পড়ে।
(সমাপ্ত)