মহামানবী

মহামানবী

— আজ না তোমার বেতন দিছে??
— হ্যাঁ! কেনো???
— চলো আজ শপিং করতে যাবো!
— শপিং!!!
— আবাক হওয়ার কি আছে!!?
— না মানে!!
— চলো…

নির্বোধের মত নীলার পিছে পিছে হাটতে লাগলাম। রিলেশনের এই প্রথম আমার কাছে কিছু আবদার করলো। এর আগে কখনো কি চায়নি উল্টো ওই আমাকে মাঝে মাঝে হাত খরচের টাকা দিত। প্রথম কিছু আবদার করলো তাই না করতে পারলাম না।  ওর সাথে রিলেশনটা বেশি দিনের না মাত্র তিন মাস। facebook এর মাধ্যমেই আমাদের পরিচয়টা হয়। রিলেশন হওয়ার দুই মাসের মাথাই চাকরিটা পাই। চাকরিটা ওই নিয়ে দেয়, ওর মামারই একটা কম্পানিতে। বেতনও মোটামুটি খুব ভালো ২০ হাজার টাকা। যা দিয়ে আমাদের মত একটা পরিবার খুব ভালো ভাবেই চলে যায়। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে পাগলের মত একটা চাকরির জন্য ঘুরছিলাম কিন্তু কোথাও চাকরি হচ্ছিলো না!
এই যুগে ঘুষ ছাড়া চাকরি পাওয়া অসম্ভব।

এর মধ্যেই ওর সাথে রিলেশনটা হয় এবং দুই মাসের মাথায় ও চাকরিটা নিয়ে দেয় আর আজই বেতনটা পেলাম।
নীলা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে যখন যেটা চায় সেটাই পায়। মাঝে মাঝে চিন্তা করি ওর মত বড়লোকের মেয়ে কি দেখে আমার মত গরীব, বেকার ছেলের প্রেমে পড়লো! ওকে জিঙ্গেস করছিলাম এমন কি দেখে তুমি আমার প্রেমে পড়লা! উত্তরে ও বলছিল “তোমার সরলতা দেখে” তবে আমি জানিনা সত্যিই কি আমি সরল কিনা। বড়লোকদের মধ্যে যে রকম অহংকার থাকে তার ছিটে ফোটাও ওর ভিতর নেই! খুব মিশুক টাইপের মেয়ে। আমার জীবনে ও অর্শিবাদ হয়েই এসেছে বলা যায়! কিন্তু আজ না জানি কি বাঁশটাই আমাকে দেয় আল্লাহই ভালো জানে। কারন গার্ল-ফ্রেন্ডেকে নিয়ে শপিংয়ে গেলে যে বড়সড়ো একটা বাঁশ খেতে হবে সেটা অন্ততো ভালো করেই জানি।

রাস্তার পাশে খুব বড় একটা শপিংমল । বাহিরে থেকে দেখতে খুব সুন্দরই লাগে!  কিন্তু আজ মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব চেয়ে জগন্য জিনিসই এটা। শপিং মলটার মালিকের উপর খুব রাগ উঠছে! কেন এটাকে বানাতে গেলো। মনে মনে শপিং মলের মলিককে গালি দিতে দিতে ভিতরে ডুকলামম। ভেতটা দেখতে খুব গোছানো মাঝেমাঝে মেয়ে পুতুল গুলোকে দেখে ক্রাশও খেতাম কিন্তু আজ মনে হচ্ছে আমার চার পাশে সুন্দর সুন্দর বাঁশ সাজানো। নীলা জামা দেখছে

—নীল দেখতো এই শাড়ীটাতে আমাকে কেমন লাগবে?
— শাড়ী!!তুমি শাড়ী পড়বে!??
— কেন তুমি না সেদিন বললে শড়ীতে আমাকে খুব সুন্দর লাগবে! ভুলে গেলে নাকি!?

শুনছিলাম মেয়েরা প্রশংসা করলে খুশি হয় কিন্তু সেদিন একটু বেশিই প্রশংসা করে ফেলছিলাম। সাথে শড়ীর কথাটাও বলছিলাম! কিন্তু কে জানতো সেদিনের একটু বেশি প্রশংসার জন্য আজ এমন বাঁশ খেতে হবে। আর কয়েকটা শাড়ী দেখার পর একটা শড়ী পছন্দ করলো। শাড়ীর দাম দেখে অাঁৎকে উঠলাম। একদাম ৮৫০০/= যা প্রায় আমার তিন মাসের হাত খরচার টাকা। তাছাড়া এক টাকাও কম হবে না। ও পেকিং করতে বলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। আগে ওর হাসি দেখে মনে হতো যেনো মুক্ত ঝড়ে। ভাবতাম যে এতো সুন্দর করে কেউ হাসে কিভাবে!

যখন মন খারাপ থাকতো তখন ওর হাসিটা কল্পনা করলে মনটা কেমন জেনো ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু আজ ওর হাসিটা মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব চেয়ে জগন্য হাসি। দাঁতে দাঁত কামড়িয়ে আমি হাসি দিলাম। টাকা গুলো দেয়ার সময় মনে হচ্ছিল যেনো বুকের এক একটা হাড় খুলে খুলে দিচ্ছি। মা একদিন বলছিল “যখন টাকা উপার্জন করবি তখন বুঝবি টাকার কি মর্ম! তখন দুই টাকা খরচ করার সময়ও টাকার উপর ওই দোয়েল পাখিটার দিকে বারবার তাকাবি” টাকা গুলো দিয়ে ভদ্রতা দেখিয়ে বললাম আর কিছু কিনবে! ও বললো থাক আজ আর না অন্যদিন। মনে মনে বললাম প্রথম দিনেই এত্তো বড় একটা বাঁশ দিলো পরেরবার না জানি কি হয়। ওখান থেকে বের হয় রেস্টুরেন্টে ডুললাম। খাওয়া শেষে বিল দিতে যাবো তখন ও বললো!

–তোমার দেয়া লাগবে না আমিই দিচ্ছি।
— তুমি দিবা কেন!!?
— তুমি শাড়ী কিনতে এত গুলা টাকা দিলা! তাই বিলটা তোমার দেয়া লাগবে না আমিই দিবো।

রেস্টুরেন্টের বিলটা ওই দিলো! যাক ওর ভিতর এতটুকু আন্তরিকতা দেখে মন কিছুটা ভালো লাগলো। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে ওকে রিকসায় তুলে দিলাম। ওর গন্তব্য আর আমার গন্তব্য আলাদা। ওকে রিকসায় তুলে দিয়ে বাসার উদেশ্য হাটা শুরু করলাম। আফিস থেকে ফিরে এখনো ফ্রেস হইনি। বেতন পেয়ে তারাতাড়ি ছুটি নিয়ে চলে আসছি ওর সাথে দেখা করার জন্য। ইচ্ছা ছিল ওকে নিয়ে কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খাবো সাথে কিছু গিফট্ কিনে দিবো। রিলেশনের তিনমাস হয়ে গেছে এখনো কিছু ওকে দিতে পারিনি। সব বয়ফ্রেন্ডের মত আমারতো ইচ্ছা করে ওকে কিছু দিতে কিন্তু এতদিন সেটা দিতে পারিনি উল্টো ওই আমাকে দিতো কিন্তু কে জানতো আজ সব সুদে আসলে উসুল করবে। জানলে হয়তো আজ দেখাই করতে আসতাম না! কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাটছিলাম! হঠাৎ!

—নীল…কন্ঠটা নীলার…. ঘুরে তাকাতেই দেখি ওর রিকসাটা আমার পাশে এসে থামলো।
— sorry শাড়ীটা দিতে ভুলে গেছিলাম!
— এটা দিয়ে আমি কি করবো?
—তুমি মনে করছো শাড়ীটা আমার জন্য কিনছি!? এটা আন্টির জন্য কিনছি! তোমার প্রথম উপার্যনের টাকা কিছু পেলে অান্টি অনেক খুশি হবে।

ব্যাগটা হতে নিয়ে ‘থ’ হয়ে দাড়িয়ে আছি! কি বলবো বুঝতে পারছিনা। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ওর রিকসাটা চলে যাচ্ছে। এতদিন নিজেকে অনেক দুর্রভাগা মনে হতো কিন্তু আজ ওরমত একজনকে জীবনে পেয়ে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। মেয়েটা মহামানবী হয়তো বছরে এই ধরনের মেয়ে একটা করে জন্ম নেয়।
বাসায় যাওয়ার পরের মুহুর্তটা হয়তো এমন হবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত