মিমকে পড়াচ্ছিলাম কিন্তু মেয়েটার মন তার ফোনে। ক্লাস টেনে পড়ুয়া মেয়ের কথা শুনলে চোখ কপালে উঠে যাবে। অনেক কষ্টে টিউশনি পেয়েছি তাই যা কিছুই হোক না কেন চোখ বুঝে মেনে নেই। এর আগে নয়টা টিউশনি ছেড়ে দিয়েছি। আমি ছাড়িনি ওরা ছেড়ে দিয়েছে। এই কারণেই। এটা ছেড়ে দিলে দশটা হবে। এইভাবে টিউশনি ছাড়তে ছাড়তে মনে হচ্ছে একদিন সেঞ্চুরি হয়ে যাবে। মানুষ ক্রিকেট খেলে সেঞ্চুরি মারে আর আমি টিউশনিছাড়তে ছাড়তে সেঞ্চুরি মারবো।কপালে এই টাইপের মেয়েদের টিউশনিকেন যে জুটে জানি না। এই মেয়েটাকে পড়াতে আসলেই ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে আর অন্যান্য কথা তো আছেই। হঠাৎ মিম আমার দিকে মুখ তুলে বললোঃ-
_স্যার আপনার ফেইসবুক আইডির নাম কি.? আমি কোনো উত্তর দিলাম না। উত্তর না পেয়ে মিম আবার বললোঃ-
_স্যার আমি আপনার সব পোস্টে লাইক কমেন্ট করবো আর আপনার ফটোতে লাভরিয়েক্ট দিবো শুধু শেয়ার করতে পারবো না। আমি বললামঃ-
_এসব লাইক, কমেন্ট ছাড়ো সামনে তোমার পরিক্ষা পড়ালেখায় মন দেও। মিম আমার হাত থেকে বইটা নিয়ে বন্ধ করে বললোঃ-
_স্যার আমাকে একটা হেল্প করবেন.?
_অবশ্যই।
_স্যার আম্মু বলছে ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে বিয়ে দিয়ে দিবে এখন এই বিয়ে থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কি.?
_মন দিয়ে পড়ালেখা করো।
_না স্যার অন্য উপায় বের করেন।
_দেখো মিম আমি এসবের মধ্যে একদম নাই।
_আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দিন। মনেমনে ভাবছি মিমের মা গেলো কই।
আজকে উনি গেলো কই.? নিশ্চয় বাইরে কোথাও গিয়েছে। তাইতো বলি মিম আজ পড়ালেখা বাদ দিয়ে ফেইসবুক নিয়ে পরে আছে কেন। কিছুক্ষণ পর মিম বললোঃ-
_স্যার ও স্যার।
_হ্যাঁ, বলো।
_স্যার আমার খুব ইচ্ছা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।
_মিমমম আজ আমি উঠি।
_না স্যার আরেকটু থাকেন।
_আচ্ছা কি বলবা বলো।
_না স্যার আজ না অন্যদিন বলবো।
_আচ্ছা ঠিক আছে। বলেই চলে আসলাম।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিলাম। রাতে ওয়াইফাই কানেক্ট করে ফেইসবুকে ঢুকতেই দেখতে পেলাম মিম নামের আইডি থেকে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসছে। সাথে একটা মেসেজ রিকুয়েস্টও আসছে। চেক করে দেখলাম মিমের মেসেজ। মেসেজে লিখা ছিলো। হাই স্যার আমি মিম। আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেন। রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেই মিমের লাইক কমেন্টের নোটিফিকেশন এ বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আর আমার ফটোতে লাভ রিয়েক্ট মারতেছে। বিরক্ত হয়ে মিমকে ব্লক মেরে দিলাম। পরেরদিন টিউশনিতে গিয়ে দেখি মিম গোমড়া মুখ করে বসে আছে। আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম মিম সবার পোস্টে এংগরি রিয়েক্ট মারতেছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে মিম আমার উপর রাগ করেছে। বসতেই মিমের মা তাড়াহুড়ো করে আসলো আর বললোঃ-
_মিমের মা দেখতো আমার আইডিটার কি হয়েছে। কাউকেই লাইক কমেন্ট করতে পারছি না। মিমেরর মায়ের মুখে এসব কথা শুনে কে অবাক না হবে বলুন। উনার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে আইডিটার সাথে উনার শ্বাসপ্রশ্বাস মিশে আছে। যাইহোক তারপর মিম বললোঃ-
_আইডির নাম চেঞ্জ করতে হবে
_আচ্ছা ঠিক আছে।
_কি নাম দিবা.?
_এঞ্জেল মোহনা নাম দিবি আর সামনে যারা আসে সবাইকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টদিবি।
মিমের মায়ের এই কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা আমার। বুড়ি মহিলাও তার আইডির নাম দেয় এঞ্জেল মোহনা। তারচেয়ে বড় কথা হলো ইনি ফেইসবুকও চালাতে পারে। তিনদিন ধরে মা মেয়ের এসব অদ্ভুত কাজকর্ম দেখে যাচ্ছি আর আশ্চর্য হচ্ছি। রাতে ফেইসবুকে ঢুকতেই এঞ্জেল মোহনা থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো। ঝুলিয়ে রেখে দিলাম। রাত এগারোটার দিকে একটা মেসেজ রিকুয়েস্ট আসলো।
_এই আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ঝুলিয়ে রাখছেন কেন.?? আমি কাউকে ফলো করি না সো প্লিজ এক্সেপ্ট করেন। উনি আমাকে চিনতে পারছে কি না জানি না। মেসেজের উত্তর না দিয়ে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করলাম। ঝড়ের মত আমার সব পোস্টে লাইক কমেন্ট করে ফেললো। মিমের মত। মিমের মাকেও ব্লক করে দিলাম। মা ও মেয়ে দুজনেই ব্লক লিষ্টে। পরেরদিন টিউশনিতে যেতেই মিমেরর মা বললোঃ-
_আজ থেকে আমার মেয়েকে আর পড়াতে আসবে না। বলেই দরজা লাগিয়ে দিলো।
বাড়ি এসে অনেক্ষণ ভেবে বুঝলাম মা ও মেয়েকে ব্লক দেওয়ার কারণে আমার দশ নাম্বার টিউশনিটাও চলে গেলো। এটাই দেখার বাকি ছিলো। ব্লক দেওয়াতে টিউশনি চলে যায়। কি আর করা কাল থেকে আরেকটা টিউশনি খুঁজতে হবে আর সেটা হবে এগারো নাম্বার।