বিয়ের পর আজ আমার শ্বশুড় থুরি শ্বাশুড়ি বাড়িতে পঞ্চম দিন, আসলে শ্বাশুড়ি বাড়ি বলার কারণ হলো এই বিশাল বাড়িটা আমার শ্বশুড় করেছেন তার প্রিয়তমা ইস্ত্রির নামে, এবং আমার শ্বাশুড়িই যে এই বাড়ির একমাত্র রাজা তা বিয়ের পরের দিন তার আদরের ছোট খোকাকে অফিসে পাঠিয়েই প্রমাণ করে দিয়েছেন,সমস্ত খাবার আমাকে দিয়ে রান্না করালেও পরিবেশনের দায়িত্ব টা তিনি নিয়ে এটা আমায় খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে আমার মতো অবলা শাবনূর এর কপালে বাংলা সিনেমার রিনা খান দাজ্জাল শ্বাশুড়ি জুটেছে,,, সে যাই হোক এই ৫ নম্বর দিনের সকাল বেলায় আমি সকলের জন্য খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করছি, সবাই খেতে বসলে,আমার শ্বাশুড়ি আম্মা এসে চিল শকুন নজর দিয়ে খাবারের খুত বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে খাবার পরিবেশন করতে করতে বলিলেন
—এত খাবার রান্না করেছো কেন বউমা বেচে যাওয়া খাবার কি তোমার বাপের বাড়ি পাঠাবা?
এইত্ত শ্বাশুড়ির লাইনে আসছেন বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলতেছেন, আমার জা এর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে যথেষ্ট ভয়ে আছে আমার রাগ ঘুড়ে তার বাপের বাড়ি যাবে এই আশংকায়, আমি একটু ভেবে চিন্তে বুঝলাম মায়াগিরি দেখানো ছাড়া উপায় নাই, শাড়ির আচল কোমড়ে গুজে টেবিলের থেকে মেলামাইনের তরকারি পরিবেশনের চামচটা নিয়ে একটা বাড়ি মারলাম টেবিলে, বা হাত মাজায় দিয়ে চেচিয়ে বললাম
—এই যে আমার শাশুড়ির ছোট খোকা তুই কিন্তু বলেছিলি আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কেউ কোনো কথা কখনো বলবে না, আমি কিন্তু এবার রেগে যাচ্ছি
আমার বরটা ফেরদৌস টাইপ নিরীহ চোখে আমার দিকে চাইলো সাথে আমার শ্বাশুড়ি বাড়ির বাকি সবাইও আমার এই আচমকা প্রতিবাদী ছোট বউয়ের চরিত্র দেখে কিছুটা টাস্কিতো ভাবে তাকালেন।
—ছোট বউ, তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার ছোট খোকার সাথে তুই তোকারি করতেছ!
আমি একটু ভয়ে আমার শ্বশুর আর ভাশুরের দিকে তাকালাম তাদের চোখে সম্মতি দেখে আবার প্রতিবাদী শাবনূর চরিত্রে ফেরত গিয়ে বললাম,
—শোনেন শাশুড়ি আম্মা, ৪ বছর প্রেমের সম্পর্কে আপনার ছোট খোকারে আমি অলিম্পিক দৌড় দেওয়াইছি আমার পিছনে, সেখানে এইগুলা তো কিছুই না, ৪ বছরে তার ধৈর্য দেইখে নিশ্চিন্ত হইছি সে হইলো গৃহপালিত স্বামী এবং ছেলে আপনি আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বললে সে যেমন মায়ের বাধ্যগত সন্তানের মতো প্রতিবাদ করিবে না তেমনি আমিও হইলাম তার প্রাণ ভোমরা আমাকেও সে ছাড়িবার পারবে না…. এখন চুপচাপ এইখানে বসে পড়ুন খাবার আজকে থেকে আমি পরিবেশন করব নয়তো ছোট খোকার মায়ের সাথেও তুই তোকারি শুরু করব কিন্তু।
আমার শ্বশুর একটু শব্দ করে হেসে উঠলেন আমার শাশুড়ি খাইয়ালামু লুকে তাকাতেই শ্বশুর আব্বা চুপ,
—এই শাশুড়ির ছোট্ট খোকা কি হলো হা করে তাকিয়ে না থেকে খেয়ে নাও, আর খবরদার কেউ যেন আমার শ্বশুর আব্বার অযত্ন না করে আজ থেকে, অনেক সহ্য করেছেন তিনি,
আমার শাশুড়ি আহত বাঘিনীর মতো ফুসছেন এক্ষুনি তার থাবায় কাউকে জখম না করলে তার শান্তি নেই তিনি তার ছোট খোকার দিকে তাকাচ্ছেন,নিশ্চয়ই অপদার্থ বলে ছেলে কে মনে মনে গালি দিচ্ছেন, আমার শাশুড়ি না খেয়েই শহর কাপানো শব্দে গিয়ে তার ঘরের দরজা লাগালেন,ওমনি আমার শ্বশুর আব্বা সশব্দে হো হো করে হেসে উঠলেন,
—বুঝলি বড় খোকা এতদিনে তোর মায়ের শিক্ষা হলো
—তাই তো দেখছি বাবা
যদিও আমি একটু কানকাটা টাইপ তাও লজ্জা পেয়ে গেলাম, আসলে এ সব আমার শ্বশুরের প্লান ছিল তার ইস্ত্রি কে একটু গরম করার জন্য মাঝে মাঝেই নাকি তিনি এমন করেন,নতুন বউ হিসেবে আজ দায়িত্ব টা আমার ছিল রাগ আবার তিনিই ভাঙাবেন, তাতে অসুবিধা নেই।
আমার শাশুড়ি রিনা খানের ডুপ্লিকেট অরিজিনাল না একটু পরেই তার রাগ ভেঙে যাবে মাথায় তেল নিতে পারি না আমি তেলের বাটি নিয়ে তার সামনে বসলে ঠিকই যত্ন করে তেল দিয়ে চুলে বেনী করে দেবেন আমি জানি,রাগের বশে চুলের মুঠি ধরে টান দিলেও অসুবিধা নেই, ইন্ডিয়ান সেসা তেল নিয়ে আমার চুল আপাতত ঘন কালো এবং মজবুত আছে।আবার হয়তো কোনোদিন একটু অভিমান করে আমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলে উঠবে, তাতেও অসুবিধা নেই, বৌমার বাপের বাড়ি নিয়ে কথা বলা প্রতিটা শাশুড়ির শাশুড়িগত অধিকার।