আজ ছেড়ে দিলাম ভালোবাসার পাখিটাকে। ধরে রাখার সামর্থ্য যে আমার নেই। অনেক ভালো থেকো জিহাদ,যতটা ভালো থাকলে আমাকে আর মনে থাকবে না।
ডায়েরীকথা💔💔
প্রিয় ডায়েরীটা আকড়ে ধরে কান্না করছে শিমু।সেই প্রথম থেকে ভালোবাসার প্রতিটা শব্দ লিখে রেখেছে শিমু।কিন্তু আজ সে ডায়েরীকথার প্রতিটা লেখা যার উদ্দেশ্যে লেখা সেই মানুষটাকেই হারিয়ে পেললো।
প্রায় ৩ মাস আগে একটা পার্কে দেখা হয় শিমু-জিহাদের।শিমু পার্কের একটা পাশে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো।সামনেই উচ্চস্বরে কথা বলছিলো কয়েকজন বন্ধু।রেগে ঝালমুড়ি সহ মুড়ানো কাগজ টা ছুড়ে ছেলেগুলোর মুখে মারলো শিমু।যার গায়ে গিয়ে পড়ছিলো কাগজটা,সেই ছিলো জিহাদ।
জিহাদ-এই মেয়ে তোমার এত্ত সাহস কী ভাবে হলো?
শিমু-ওই আপনি এখানে এত উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন কেনো?
জিহাদ-আমার যা ইচ্ছা হয় আমিও তাই করবো।
শিমু-আমারও যা ইচ্ছা হয় করবো।
জিহাদ-তোরে তো আমি…..
শিমু-কী করতে পারবি তুই।তোরে গরম পানিতে চুবাবো ফাজিল ছেলে একটা।
জিহাদ-তুই কী শয়তানের নানি একটা।
শিমু-তোরে আমি আজকে…….
বাকি বন্ধুরা এসে জিহাদকে জোর করে নিয়ে গেলো।শিমুও বাসায় ফিরে আসলো।
শিমুর আম্মু-এত রেগে আছিস কেনো?
শিমু-ওই ছেলে…….এই ছেলে এখানে কী করে?
শিমুর আব্বু-ও আমার বন্ধুর ছেলে।আজ থেকে কয়েকটা দিন এখানেই থাকবে।
শিমু-তোরে আমি দেখে নিবো।(জিহাদের কাছে এসে)
শিমুর আম্মু-কিছু বললি মা?
জিহাদ-না আন্টি,বলছে আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে আনবে কিনা?
শিমুর আম্মু-তুই চা?
শিমু-হুম আনবো?
জিহাদ-যাও আমার রুমে দিয়ে যেয়ো।
শিমু-ওকে।
শিমুর আম্মু-তুই যা ফ্রেশ হ আমি দিয়ে দিচ্ছি।
শিমু-আমি যাচ্ছি তুমি রুমে যাও।
বলেই রান্না ঘরে চলে গেলো শিমু।গিয়ে চা বানাতে লাগলো।চা নিয়ে গেলো জিহাদের রুমে।
শিমু-আপনার চা।
জিহাদ-ওইখানে রাখো।
শিমু-জ্বি গরম আছে খেয়ে নিবেন।
জিহাদ-ওকে।
শিমু-(খা ভালো মত খা।সারা জনমে চা খাওয়ার কথা ভুলে যাবি)-মনে মনে।
জিহাদ-(না ঝড়গুটে হলেও কিউট আছে)–ভাবতে ভাবতে চা মুখে দিতেই জিহাদ যে চিল্লানি দিলো শিমুও ভয়ে লাফিয়ে উঠলো৷
শিমু-কী হলো.
জিহাদ-পানি।
শিমু পানি নিয়ে এসে জিহাদের সামনে এসে পানিটা ফ্লোরে ডেলে দিলো। জিহাদ আর না পেরে শিমুর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।অনেকক্ষন পর ছাড়তেই শিমু রেগে লাল হয়ে গেলো।
জিহাদ-এই মিষ্টির জন্য প্রতিদিন ওই রকম চা খেতে পারি।
শিমু পানির গ্লাশ টা ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। গ্লাশটা ভেঙ্গে গেলো।
জিহাদ-শিমুর রাগটা জাস্ট দেখার মত।
শিমু রেগে কটমট করতে করতে চলে গেলো।জিহাদ হেসে উঠলো।
১মাস পর……
ঝড়গা দিয়ে শুরু হলেও শিমু যেদিন সেন্সলেন্স হয়ে হাসপাতালে ছিলো জিহাদের রাতের ঘুম হারিয়ে গেছিলো শিমুর ফোন বন্ধ পেয়ে।১ মাসে সম্পর্কটা অনেক ভালো জায়গায় চলে আসছিলো।প্রতিদিনেই জিহাদ শিমুর সাথে কথা বলতো।
পরেরদিন বকাও খেয়েছিলো শিমু।জিহাদকে বলেছিলো ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলো সে।কিন্তু সে হাসপাতালে ছিলো এটা জিহাদ কোনো ভাবেই জানতে পারলো না।এমনি কী শিমু নিজেও জানে না কেনো সে হাসপাতালে ছিলো।তাই বাবা কে জিজ্ঞেস করতে গেলো।
শিমু-বাবা আমার কী হয়েছে?
শিমুর মা-কিছু না রে মা।
শিমু-তোমরা কিছু লুকাচ্ছো?
শিমুর বাবা-না রে মা কিছু লুকাইনি।কলেজে যাবি না।
শিমু-বাবা আমি জিহাদের সাথে দেখা করতে যাবো।
জিহাদেরর মা-আচ্ছা যা।ছেলেটাকে বাড়িতে আসতে বলিস।
সেদিনেই জিহাদ প্রোপোজ করে শিমুকে। শিমুও ভালোবাসতো তাই জিহাদকে ভালোবাসি বলতে একটুও ভাবে নি শিমু।
এভাবেই ১মাস কেটে গেলো। ১মাস পরেই জানতে পারলো শিমুর ব্রেনে সমস্যা। হঠাৎ একদিন ভুলে যাবে সে অতীতের সব কথা।ভুলে যাবে ভালোবাসার পাখিটাকে।
তাই আজ সে জিহাদকে সরিয়ে দিলো নিজের জীবন থেকে। ডায়েরীটা বন্ধ করলো সে। চোখের দু”ফোটা পানি পরলো।
আরো ৪৮ঘন্টা কেটে গেলো।হঠাৎ করেই পুষ্পের কথা মনে পরলো।পুষ্পের বার্থডে গেছিলো,কিন্তু শিমু ভুলে গেছে দিনটা।কল দিতেই পুষ্প বকা দিলো।চুপচাপ শুনে সরি বললো।পুষ্প মেয়েটাই অন্য রকম।সারাটা দিন শিমুর বকবক শুনলেও ক্লান্তি নেই।কিন্তু আজ শিমুই ভুলে গেলো পুষ্পের বার্থডের দিনটা।আবারও ডায়েরীটা উল্টালো।স্পষ্ট দিনটা লেখা আছে,কিন্তু উইশ করা হলো না।
বাসা থেকে বের হতেই হৃদয়কে দেখতে পেলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।মাঝে মধ্যে হৃদয় ওয়েট করে একজনের জন্য।
শিমু-কলেজে যাবি না?
হৃদয়-হুম এখন যাবো।
শিমু-ওকে চল।
হৃদয়-অনেক দিন পরে কলেজে যাচ্ছিস।
শিমু-হুম আর যাবো না।
হৃদয়-কেনো?
শিমু-এমনিই ভালো লাগছে না।
হৃদয়-তোর কী কিছু হইছে?
শিমু-না।কালকে পুষ্পের বার্থডে গেছিলো।
হৃদয়-এখন জানলাম।
শিমু-আমাকে দুইটা চকলেট এনে দে।
হৃদয়-এখানেই দাঁড়া আমি আনতেছি।
হৃদয় ফিরে এসে চকলেট দিলো হাতে।তারপর দুইজনেই কলেজে চলে গেলো।ওর রাগ ভাঙ্গিয়ে বিকেলেই ফিরে আসলাম বাসাc।শেষবারের মত দেখে এসেছি হৃদয়,সাকিব,রাফি,সুমা,প্রীতি,মিম,সালমা আর পুষ্পকে।হয়তো তাদেরও মনে থাকবে না আমার।
প্রিয় ডায়েরী কথাকেও ভুলে যাবো যেখানে প্রতিটা দিনের কথা লিখি।
জিহাদকে মনে পরছে খুব।আমি নেই তার জন্য হয়তো কান্না করছে।খুব অভিমানী ছেলেটা।তবে কষ্ট পেলেও কাউকে বলে না।
আজ আমার অপারেশন।ডাক্তার বলে দিয়েছে বাঁচার সম্ভাবনা নেই।শেষ চেষ্টা করতেছে সবাই।ডায়েরিতে তারিখটা লিখে রাখলাম।হয়তো আর পড়া হবে না আমার প্রিয় ডায়েরিকথার কথাগুলো।আমি মরে গেলে হয়তো সবাই কান্না করবে।তবে আমিই দেখবো না।
নীল নাকি বিষাক্ততার রং।তাই শেষের পাতায় নীল কালিতে লিখে রাখলাম——-
মৃত্যু যেখানে হাতছানি দিয়ে ডাকে,
ভালোবাসা সেখানে অসহায়।