রিজেক্ট

রিজেক্ট

“শুভ সকাল মি. আবির সাহেব” সকাল ক’টা বাজে আমি জানিনা। তবে সকালের যে আমেজটা পরিবেশে পরিলক্ষিত হয় তা বেশ উপলব্ধি করতে পারছি। আমার সকালে ঘুম ভাঙতেই চারিদিকটা অন্ধাকার দেখলাম। কিন্তু আমার রুমটা তো এরাকম ছিল না। হয়ত ঘুমের ঘোরে অন্ধকার দেখছি। কিন্তু ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম কোনো মেয়েলি গলায় সকালের উইশ শুনে। কন্ঠটা খুব একটা পরিচিত না তবে মনে হল এর আগেও শুনেছি কয়েকবার। আমি চোখের পাতা খানিকক্ষণ নাড়িয়ে সামনে তাকাতেই আমি হা হয়ে গেলাম। দেখি আরনিয়া বসে আছে একটি চেয়ারে। আর আমি অন্য একটা চেয়ারে বসে আছি দড়ি দিয়ে আমার হাত পা বাঁধা আছে। বাধন খোলার জন্য হাত পা নাড়াচ্ছি তখনি আবার আরনিয়া বললো..

– আপনি যতই খোলার চেষ্টা করেন না কেনো। খোলা যাবে না যতক্ষন না আমি নিজ হাতে খুলে দিবো।
– কেনো? আপনি আমাকে এভাবে বেধে রেখেছেন কেনো? আর এভাবে তুলে আনার মানে কি?

আরনিয়া তার চেয়ার টেনে আমার সামনে আরো সরে আসলো। আমি ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছি। একদম আমার মুখ সোজা ওর মুখ এনে বললো..

– ঢং করেন? দেখি কত ঢং করতে পারেন। আমার সাথে বেশ ঢং করতে পারেন এ কদিনে সেটা খুব ভালো করে দেখেছি। এখন আরেকটু দেখান তো। আমি আরনিয়ার কথা শুনে কিযে বলবো সেটা ভাবতে লাগলাম। ওর কথার কোনো আগা মাথা আমি বুঝতে পারছি না। রাগও হচ্ছে। এত শক্ত করে কেউ কাউকে বাধে? উফফ হাতের বাধনের স্থানে দড়ির দাগ পড়ে যাচ্ছে।

– আরনিয়া, আমি কি চোর নাকি হা? এত শক্ত করে বাধছেন কেনো?
– চুপপ। আমাকে ইনসাল্ট করা? আমাকে অপমান করা তাই না?
– কবে কখন করলাম?
– এই তো ঢং তো আবার শুরু করে দিয়েছেন। ইচ্ছে করছে আপনাকে থাঁপড়িয়ে দাঁতগুলো ফেলে দিই। কিন্তু আপনার আম্মু মানে আমার শ্বাশুড়ি আম্মু বারন করে দিয়েছে যেন না মারি।
– এ্যাঁ……?????
– এ্যাঁ..নয়, হ্যাঁ, বুঝেছেন?

আমি যে ঠিক কোথায় আছি তা আমি জানিনা। তবে এটা বেশ বুঝতে পারছি আমি কিডন্যাপ হয়েছি। আর আমার কিডন্যাপের পিছনে বড় রকমের হাত আছে আমার ভিলেনি আম্মু আর গুন্ডি আরনিয়ার। ওর দিকে তাকালাম। আরনিয়া আমার দিকে তাকিয়েই আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না আমাকে ও কেনো এভাবে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম..

– আমাকে কেনো তুলে এনেছেন সেটা তো বলেন? বেশ তো রাতে বাড়িতেই ঘুমাচ্ছিলাম।
– এই আপনি কি জানেন না কেনো তুলে এনেছি?
– জানলে কি জিঙ্গাসা করতাম নাকি?
– তা ঠিক, তবে আমি তো জানি আপনি সব জানেন।
– নাহ জানিনা, আর আমার আম্মু আপনার সাথে হাত মিলাইছে কেনো? কি করেছি?

আরনিয়া চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভাবতে লাগলাম কি এমন করলাম যার কারনে আমাকে তুলে এনেছে? তাও আবার আমার আম্মুর কথাতে? ধ্যাত কিছুই মাথায় আসছে না। কি যে করি? এতটাই শক্ত করে বেধেছে যে কিছুই করতে পারছি না। পুরুষ মানুষ ততক্ষন সিংহ থাকে যতক্ষন সে বাধা না পড়ে।

– আর ভাবতে হবে না। সকালের খাবারটা খেয়ে নিন আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

কথাটি বলেই আরনিয়ে চলে গেল। আর আমি চোখ বড় বড় করে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ইচ্ছে করছে গালে কষে একটা থাপ্পড় দিয়ে আসি। কিন্তু বাধা থাকায় আর সেটা পারছি না। আরনিয়া চলে গেল।
কি মেয়েরে বাবা, মাত্র ৮ দিন আগে পরিচয় আর সেই মেয়ের কিনা এত সাহস যে একটা ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে আসে? অবশ্য গুন্ডি মেয়ে হলে যা হয়। দেখতে সুন্দর কিন্তু এমন করবে ভাবিনি। আমার আম্মুও তো দেখতে সুন্দর কিন্তু সেও যে ভারতীয় সিরিয়ালের মত ভিলেন মহিলা তা জানতাম না।

আমি বসে বসে চারিদিক দেখছি। কেনো কাজ না থাকায় ভাবতে লাগলাম আরনিয়ার সাথে আমার কিভাবে পরিচয়। এখান থেকে ৮ দিন আগে অফিসে বসে আছি। এটা অফিস না কি আমি জানতাম না। আব্বুর নিজের অফিস তাই রোজ যেভাবে ইচ্ছে আসতাম। বেতন দেয়ার সময় আব্বু কিপটেমি করত তবে ছিনতাই করে বেতন নিতাম। এসব নিয়ে ভাবছি তখনি আম্মু কল দেয়..

– কোথায় তুই?
– এই তো আম্মু চিড়িয়া খানায়।
– কিহহ? ওখানে কি করছিস অফিস বাদ দিয়ে?
– কেনো? তুমি তো বলো আমার পিছনে বান্দরের হাড় অনেক বেশি, বান্দর আমি। তাই তো চলে আসলাম।
– ঐ আবিররা ফাজলামো রাখ। অফিস শেষ করে সোজা নিজাম ভাইদের বাসায় চলে আসবি।
– কেনো আম্মু?
– ওনার বড় মেয়েকে তোর জন্য দেখতে যাবো।

কথাটা শুনে খুশিতে চেয়ার ছেড়ে ভাবলাম একটু ব্রেক ড্যান্স দিই। কিন্তু অফিসের সবাই বান্দর+পাগল ভাববে তাই দিলাম না। মনে মনে নিজেই দুই হাড়ি মিষ্টি সেবন করিলাম খুশিতে। কারন আরনিয়া হল নিজাম আংকেলের বড় মেয়ে এটাই কেবল জানি। এলাকাতে সবচাইতে সুন্দর বেশি শুনেছিলাম আর কি। দেখতে যেমন সুন্দর, চুলগুলো আরো সুন্দর, চোখদুটো তো আরো আরো সুন্দর। তবে অহংকার বেশি এ কারনে। এ যাবৎ অনেকগুলো ছেলে তাকে বিয়ে করতে এসেছে। তার মধ্যে আমার কাছের বন্ধু দুজন ছিল। কিন্তু আরনিয়া সুন্দরের ঠেলায় সবাইকে না করে দিয়েছে। তবে কি আমার পালা হবে এবার? বন্ধুদের থেকে আরনিয়ার ব্যাপারে খোজ নিতে হবে এখন।

– ঐ কথা বলছিস না কেনো? (আম্মু)
– নাহ মানে আম্মু আমি বিয়ে করবো না।
– মানে? সবাইকে কথা দিয়েছি।
– ওহ, তাহলে আরকি। তোমার ছেলের অপমান নিয়ে বাড়িতে আসতে দেইখো।
– চুপপ। সেটা আমি দেখবো। তাড়াতাড়ি আই।

কথাগুলো শেষ করে আম্মু লাইন কেটে দিল। আমিও ভাবতে লাগলাম আরনিয়ার কথা। কিভাবে সে আমাকে বের করে দিবে কি কি বলতে পারে আমিও তার জন্য রেডি হতে লাগলাম। সন্ধ্যা ৭ বাজে। তাড়াতাড়ি অফিস থেকে আব্বুকে নিয়ে বের হয়ে আসলাম। সোজা গাড়ি চালিয়ে নিজাম আংকেলের বাসায়। আমরা সোফাতে বসে আছি। খানিক পর আরনিয়া মাথায় কাপড় টেনে আমাদের সামনে আসলো। আতিয়েতার পর কাপড় যখন সরালো তখন দেখি আরনিয়া চোখে কাজল দিয়েছে। আর ঠােটে হালকা লিপিষ্টিক। এমনিতেই ঠোটের কোনে ছোট্ট একটি তিল যা সৌন্দর্যকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। আমি প্রথম দেখায় ক্রাশের বস্তায় ঢুকে গিয়েছি। বের হতে ইচ্ছে করছে না। তখনি আরনিয়া বললো আমার আম্মুকে..

– আনটি আমি আবিরের সাথে একটু কথা বলবো আলাদা।
– ওকে যাও।

এই রে কাজ হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি ক্রাশের বস্তা থেকে বের হলাম। ইসস কি হতো আরেকটু এভাবে থাকতে। আমি হেটে ওর রুমে গেলাম। রুমের সাথে ব্যালকনি রয়েছে। সেখানে দুটো চেয়ার রাখা। আমি যেয়ে গ্রীল ধরে দাঁড়ালাম। আরনিয়া এসে বললো..

– হাই আবির সাহেব।
– হ্যালো।
– কেমন আছেন?
– হুমম ভালো, আপনি?
– আমিও ভালো। আপনাকে একটা কথা বলি?
– হা বলুন।
– আপনি আমাকে বিয়ে কেনো করছেন?
– আমি…
– আমি জানি কেনো করছেন?

আমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। আমাকে দেখে সবাই ক্রাশ খায়। সবাই চাই আমাকে। স্বাভাবিকভাবে আমাকে সব ছেলেই বিয়ে করতে চাইবে। কিন্তু হলো কি আমি না বিয়ে করবো না আপনাদের মত ছেলেদের। সুতরাং আপনারাও আসতে পারেন। আমি আরনিয়ার দিকে তাকালাম। এটা কোনো কথা হলো? কোনো নোটিশ ছাড়াই রুলস শুনিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মাথাটা গরম হয়ে গেল। আমি বললাম…

– এই যে শুনুন মিস সুন্দরী,,আমার বয়েই গিয়েছে আপনার মত এমন পেত্নী মার্কা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে। কেবল রংটাই সুন্দর, কিন্তু আয়নাতে দেখেছেন কখনও মুখটা আপনার ব্যাকা? আমি তো ভেবে অবাক হচ্ছি সব ছেলে কেনো আপনার জন্য পাগল হয়। যত্তসব  আর শুনুন, আপনাকে বিয়ে করতে আসিনি। দেখতে এসেছি তাও আম্মুর কথাতে। আমি আসার আগে না করে দিয়েছিলাম আপনাকে যাতে না দেখতে আসি। আমার আপনার মত এমন রুপের মেয়ের কোনো দরকার নেই। কেবল রুপের সৌন্দর্য নিয়েই থাকবেন গুনের বেলায় অস্টরম্ভা। আমি তো বিয়ে করবো না সেটাই তো বলতে আসলাম। আপনার মত পেত্নীকে কেনো বিয়ে করবো শুনি? যান তো ভাগেন। আমিই যেয়ে বিয়ের কথা অফ করতে বলছি দাঁড়ান।

আমার কথা শেষ করেই দেখলাম আরনিয়া হা হয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। বিষয়টা অনেক ভালো লাগলো। আর অফিসে বসে আমি এসবই ভাবছিলাম যে আরনিয়া এমন কিছু বললে আমিও সেটার উত্তর দিবে। আর আমার থিওরী বলে কোন সুন্দরী মেয়েকে পেতে হলে তার রুপের প্রশংসা করার কোনো দরকার বা মানে নেই। কারন আমার আগেও অনেক অনেক ছেলে তার রুপের প্রশংসা করেছে। তাই এটা সুন্দরী মেয়ের কাছে ডালভাত। তাই কোনো সুন্দরী মেয়েে পটাতে তার রুপের বিপরীত পথ দিয়ে ট্রাই করতে হবে। কারন রাগের মাধ্যমেও অনেক কিছু হয়।
সে ক্ষেত্রে মেয়েটি আপনার কথা ভাববে। কারন, কোনো ছেলে তাকে অসুন্দর বলেনি। আপনি বলেছেন তাই আপনার কথা সে ভাববে এটা ভেবে যে কি এমন ছেলে যে আমাকে অসুন্দর বলে। আর মেয়েরা কোনো ছেলের কথা ভাবা মানেই তার প্রেমে পড়া নিশ্চিৎ। তাই আরনিয়াকে একটু পামই দিলাম। যাতে সে ভাবুক আমি সবার থেকে ডিফ্রেন্ট।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওর রুম থেকে বের হলাম। মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দিলাম এটা ভেবে যে, এতদিন আরনিয়া অনেক ছেলেদের নিয়ে মজা করেছে আজ ওর পালা। আমাকে দেখে আম্মু বললো..

– কি হল চুপ করে দাঁড়িয়ে কেনো? কথা হয়েছে?
– আম্মু আমি এ বিয়ে করবো না। (জোরে বললাম)
– কিহহহ? (সবাই বসা থেকে উঠে গিয়েছে)
– হুমমম করবো না বললাম।
– কেনো? (আরনিয়ার মা)
– সরি আনটি, আপনাদের মেয়েকে আমার পছন্দ হয়নি।

আমার কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল। এমন কথাও আরনিয়ার ফ্যামিলিকে শুনতে হবে এটা তারা ভাবিনি। কারন এর আগে যতছেলে আসছে সবাই প্রথমেই বলেছে মেয়ে দেখতে সুন্দর পছন্দ হয়েছে। আর আমিই প্রথম এটা বললাম।

– মানে কি? পছন্দ হয়নি মানে? (নিজাম আংকেল)
– মানে আপনার মেয়ে দেখতে কেমন যেন। নাকটা ভোতা টাইপ, ঠিক ভাবে দেখলে আপনার মেয়ে ট্যারা টাইপ।

দাঁতগুলো কেমন যেন মনে হয় গত একমাস ধরে দাঁত ব্রাশ করেনি। ইসস আমি এ বিয়ে করতে পারবো না আম্মু। এর থেকে অনেক ভালো মেয়ে পাবো। তোমাকে তো বলেছিলাম আমি আরনিয়াকে বিয়ে করবো না। এমন বেঢপ চেহারার মেয়েকে কে বিয়ে করবে শুনি? আমি গেলাম।তোমরা আসো।

কথাগুলো বলে আরনিয়ার রুমের দিকে তাকালাম।।দেখি রুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হা হয়ে আমার কথাগুলো শুনছে। আমি চোখ মেরে চলে আসলাম বাইরে।নিজেই গাড়ি চালিয়ে সোজা বাসায়। নিজেই রাতের খাবার খেয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। মনে মনে নিজেই বললাম”এবার কেমন লাগে, বিয়ে করতে আসা সব ছেলেকে তুমি নিজে অপমান করে বের করে দিতে। বলতে তোমার মত ছেলে আমার মত মেয়ের কাছে কিছুইনা। এখন ঠেলা সামলাও।” এভাবেই দিনগুলো যাচ্ছিল। বাসায় আম্মু আব্বু খুব একটা কথা বলতো না আমার সাথে। আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু আম্মু খালি রাগি দৃষ্টিতে চেয়েছে বলে ভয়ে আর বলিনি। সেদিন রাতে আমি বন্ধুদের বাসা থেকে আড্ডা দিয়ে বাড়িতে আসছি। তখন রাত ১২ টা পার হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে এসেই টান টান হয়ে শুয়ে পড়েছি। আর সকাল হতেই আমি আজ এখানে।

– এই যে আবির সাহেব? কি ভাবছেন কি হা? আরনিয়ার ডাকে চমকে উঠি। সামনে তাকিয়ে দেখি আরনিয়া তার চেয়ারে বসে আছে কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে। আহ দেখেই যেন জিভে বৃষ্টি শুরু হল। আমাকে অবাক করে দিয়ে ও আরো কাছে এসে আমাকে খাইয়ে দিল। আমি খাচ্ছি আর ও বললো..

– আপনার আম্মুকে পুরো ঘটনা সব বলতেই তিনি এই প্ল্যান করে। আপনাকে কাল রাতে আমি তুলে আনি। আপনার আম্মুর কথাতে। কারন তিনি বলেছিল আপনাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে তবেই ফিরি।কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ হয়ে গেল। আমার দিকে তাকাল কিছুক্ষণ। তারপর আমার কাছে এসে আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে আমার বাধন খুলে দিল। আমি যেন প্রান ফিরে পেলাম। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি হাতে দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছে। আরনিয়া বললো…

– আমি সুন্দর তা জানতাম। আমি ভাবিনি আমাকে এভাবে কেউ রিজেক্ট করতে পারে। আমি ভাবতাম আমিই সবচাইতে বেশি সুন্দরী। তাই সব ছেলেদের অন্যরকমভাবে কথা শুনিয়ে ফিরিয়ে দিতাম। আপনাকেও এটা করতাম কিন্তু তার আগে আপনি এভাবে আমাকে রিজেক্ট করবেন ভাবিনি। আমি কি দেখতে আসলেই ট্যারা? দেখতে কি আসলেই বোচা নাকের কেউ? দেখুন তো আমার দাঁত কি কালো?? আমি কি কেবল সৌন্দর্য নিয়েই থাকি?? আমি কি পেত্নীর মত দেখতে?

আমি আরনিয়ার কথাগুলো শুনে বোবার মত বসে রইলাম। না না,,সে এমন মোটেও নয়। আমি তো কেবল তাকে রাগানো আর একটা ছেলের বিয়ে করার আশাটা সে নিমিষেই নষ্ট করে দিত বলে তার পরিস্থিতি কেমন হতো সেটা বোঝানোর জন্য এমন করেছি। সত্যি বলতে আমারো ঐদিন খারাপ লাগছিল।

– কথা কেনো বলছেন না? আর আপনি চলে যেতে পারেন। আপনাকে মুক্ত করে দিলাম। আসলে আমি আপনার কাছে অসুন্দর যা সবার কাছে সুন্দরি। সেদিন ওমনভাবে কথাগুলো বলেছিলেন সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল কারন আমিও এভাবে ছেলেদের রিজেক্ট করে দিতাম। পরে আপনার কথা আমার খুব মনে পড়ত। কখন যে আপানার প্রতি ভালোলাগা চলে আসছে বুঝিনি। যান আপনি আমাকে না পছন্দ করলে আপনাকে জোর করে বিয়ে করবো না।
আমি আরনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। সুন্দর মুখটা যেন কালো মেঘে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। আমি বসে আছি। আরনিয়া তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। কিছু না বলেই আমি ওর হাতটা ধরলাম। আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। আমি বললাম..

– যদি বলি, আমি আপনাকে পছন্দ করি? যদি বলি আপনাকে আমার বেশ ভালো লাগে? যদি বলি আমার মনের চার দেয়ালে আপনিও ঘুরে বেড়াচ্ছেন? যদি বলি আপনাকে আমার অনেক অনেক বেশি পছন্দ, আপনি মোটেও পেত্নীদের মত দেখতে না, চোখদুটো অনেক সুন্দর, মুখটা বেশ উজ্জ্বল মায়াবী প্রান্তর, দাঁতগুলো সৌন্দর্যের প্রতিক। যদি বলি আপনাকে আমি বিয়ে করবো, আপনি আমার বউ হবেন? কথাগুলো বলার পর আরনিয়া আমার দিকে কেমন দৃষ্টিতে তাকাল। যেন ছলছল আখি পানে উদাসি হয়ে চেয়েছে সে। আমি মুচকি হাসলাম। তখনি বড় রকমের অবাক হলাম আরনিয়া ঝটকা মেরে আমার হাত ছাড়িয়ে বললো..

– এই তো আমি এখন তাহলে অনেক সুন্দরী। যান আপনার মত ক্যাবলা কান্তকে আমার মত মেয়ে কখনই বিয়ে করবে না। যান ভাগেন তো। বয়েই গেছে আপনাকে বিয়ে করতে। এমন কত ছেলে পাগল আমার জন্য।
আমি কিছু বললাম না। রাগ, লজ্জা, অপমানে যেন সব গোলমেলে মনে হচ্ছে। আমি মাথাটা নিচু করে চলে আসতে যাবো তখনি আরনিয়া আমার হাত ধরে বললো..

– আহারে…রাগ করেছেন? তাহলে আরো শুনুন..

যদি আমি বলি, আপনার আমি বউ হবো তবে কি আপনি আমার সাথে নিবেন? যদি বলি আপনাকে আমার সব ভালোবাসা দেবো আমাকে বিয়ে করবেন? আমি কিছু বললাম না। আরনিয়ার হাত শক্ত করে ধরে কাছে টেনে নিলাম। বাইরে বের হতেই আমি আরো বোকা হয়ে চেয়ে রইলাম। কারন আমি যেখানে বন্দি ছিলাম সেটা আর কোথাও না আমাদের বাড়ির গুদাম ঘরে। কোনোদিন আসিনি বলে ভিতরটা অচেনা। হাইরে কি করলাম আমি। তবে সে যাইহোক আরনিয়া এখন আমার। আরনিয়ার থেকে মোবাইল নিয়ে আম্মুকে কল দিয়ে বললাম..

– মানোনীয় সিরিয়ালি ভিলেনি, আপনার একান্ত ভাবে জানানো হচ্ছে যে, আপনার ছেলে এখন আপনার বৌমার সাথে আছে। তাকে এখন তার বাড়িতে রেখে আসতে যাচ্ছি আপনি দয়া করে বিয়ের ব্যবস্থা করুন।

– বান্দর ছেলে। বিয়ের ব্যবস্থা তো করায় আছে। কেবল তোরা সম্মতি দিলেই হবে।
টুট টুট..লাইনটা কেটে দিলাম। আরনিয়াকে নিয়ে হাটছি। তবে চুপ করেই আছি। রিকশা পেয়ে তাতে উঠে বসলাম। সোজা আরনিয়াদের বাড়ির সামনে চলে এসেছি। আরনিয়া নামলো..

– কি ব্যাপার চুপ হয়ে গেলেন কেনো?(আরনিয়া)
– আগে ভাড়াটা দিন।
– কিহহ আমি দেবো? আপনি দিবেন।
– নাহ আপনি দেন। বিয়ের পর তো আমাকেই সব দিতে হবে। ইসস কত টাকা খরচ হবে। ভাবছি শ্বশুরের থেকে অনেক টাকা যৌতুক নিতে হবে।
– চুপ বান্দর।
– আপনিও বান্দর বললেন? এ দুঃখ আমি কোন পকেটে যে রাখি। তবে কষ্ট সেটা না কষ্ট হলো আমার কোলবালিশটা  আজ থেকে তার বর ছাড়া হয়ে যাবে। মানে আমাকে ছেড়ে সে থাকবে ইসস।
– হিহিহিহ..ফাজিল বদমাইশ ছেলে বান্দর একটা যান বাসায় যেয়ে গোসল করে নিবেন।

আরনিয়া গেটের কাছে যেয়ে দাঁড়াল। আমি রিকাশাতে ঘুরে চলে আসতে লাগলাম। দুর থেকে দেখি তখনও সে দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হাসলো, আমি ইশারাতে চলে যেতে বললাম। কিন্তু সে ইশারাতে বুঝিয়ে দিল আমি যতক্ষন চোখের আড়াল না হবো সে থাকবে। অগত্যা আরকি। আস্তে আস্তে সব চোখের বাইরে চলে গেল। আমিওচলে আসলাম বাড়িতে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত