কোন একটা বিকট শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। প্রথমত আন্দাজ করতে না পারলেও গভীর গলায় কেউ বলছে “আমার বিছানাটা ছেড়ে দাও “। অদ্ভুদ লাগলেও আওয়াজটা দুইবার হলো। আমি বিছানা থেকে টেবিলের দিকে পা বাড়ালাম জল খাওয়ার জন্য। আর এইদিকে আমি অনেকটা ঘেমে গিয়েছি। রুমে রিজু আর প্রনব ঘুমাচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত তিনটা পনের বাজে। গত ৪ দিন হলো আমরা তিনজন এই রুমে উঠেছি। এমনিতে ব্যাচেলার আর তারপর কেউ বিবাহিত ছাড়া বাসা ভাড়া দেয় না। কিন্তু কপালের জোরে কম টাকায় এই মেসটা পেয়েছি। মেস বাসাটা ৪ তলা। আমরা তিন তলার ডান পাশের একটা রুমে উঠেছি। কিন্তু একটু ভয়ের বিষয় হলো বাড়ির ডান পাশেই একটা কবরস্থান। তবে বাসা খুঁজে না পাওয়ায় এখানে এসেছি। কারন, নাই মামার চেয়ে কানা মামা তো ভাল। তবে গত পাঁচ দিন ধরেই ঠিক তিনটা পনের মিনিটে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যায়।
ভাল করে তাকিয়ে দেখি রুমের জানালাটা খোলা আর কবরস্থানটা ভালই দেখা যাচ্ছে। আমি যখন জানালাটা লাগাতে গেলাম তখন লক্ষ্য করলাম একটা লোক হাতে লাঠি আর টিমটিম আলোর হারিকেন নিয়ে আমাদের জানালার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি পাত্তা না দিয়ে জানালাটা লাগিয়ে দিলাম। তারপর আর যে ঘুম আসছে না। কখন যে চোখ দুইটা লেগে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
সকালে তনুশ্রীর ফোনে ঘুমটা ভাঙ্গলো। ফোনটা দেখে একটু রাগ হলো না বরং মুখের কোনে একটু হাসি ফোটে উঠলো। তনুশ্রী হলো আমার ভালবাসার প্রেসক্রিপশন। আমাদের রিলেশনটা অদ্ভুদ হলেও খুব মিষ্টি। আজ পর্যন্ত কেউ কাউকে ভালবাসি বলি নি তবে একে অপরকে বড্ড বেশি ভালবাসি।আর আমি ওকে ভালবেসে তনু বলেই ডাকি।
— হুমম তনু বলো।
— আচ্ছা সকাল কয়টা বাজে একটু বলবে?
— তোমার ঘড়ি কি নষ্ট যে আমার ঘুম ভাঙ্গালে ঘড়ির সময় জানতে?
— রাজ আজ না তোমার এ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার শেষ তারিখ, তাও দুপুর ১২টার মাঝে। আর এখন সারে ১০টা বাজে।
আমি ঘড়িতে লক্ষ্য করে নিজেকেই নিজে ধিক্কার জানালাম। আমার পড়াশোনার খবর আমি না রাখলেও এই তনু আমার ২ বছরের জুনিয়র হয়েও সব খবর রাখে।
— ও সরি তনু। আসলে রাতে ঠিক মত ঘুম হয় নি তো তাই ভোর রাতে চোখটা লেগে গিয়ে ছিল।
— হুমম নতুন প্রেমে পড়লে একটু আধটু রাত জাগতে হয় বৈকি। এটা ব্যাপার না, তারাতারি ক্লাসে গিয়ে এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়ে এসো।
আমার কথা না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো। মেয়েটার হঠাৎ হলোটা কি? নতুন প্রেম করলাম কবে? ধ্যাত আর ভাবতে পারছি না। ফ্রেশ হতে বাথরুমে চলে গেলাম। ভার্সিটি এসে আগে এ্যাসাইনমেন্ট টা জমা দিলাম। তারপর তনুদের ডিপার্টমেন্টের কাছে গেলাম কিন্তু মেডামের দেখা নেই। আজ হলো কি তার, অন্যদিন তো কয়েকবার ফোন দেয়। আমিই ফোন দিলাম। ফোন ধরে বলল ও বকুলতলায় বসে আছে। তাই আর লেট না করে চলে গেলাম বকুল তলায়। ওর পাশে গিয়ে বসলাম কিন্তু মেডামের তো আজ কোন রিয়েকশনই নেই। আমি ওর হাতটা ধরলাম তবুও চুপ।
— তনু কিছু হয়েছে? মন মরা হয়ে আছো কেন?
— কিছু না।
— আমি জানি তোমার মনে কোন ঝড় বইছে। আমাকে বুঝিয়ে বলো।
— আজকে একটা স্পেশাল দিন কিন্তু কেউ একজন সেটা ভুলে গেছে।
— কি আজকে?
আমি জানতে চাইতে চোখ গুলো বড় বড় করে তাকালো। আরে মেয়ে তুমি কোন গিরগিটির প্রতিবেশী। কথায় কথায় রূপ বদলাও। আমি ভাবনায় ডুব দিলাম আজকে কি এমন স্পেশাল দিন।
— তনু আমার না মনে পরছে না। একটা বার বলো না।
— জানি মনে পরবেও না। আজকে আমার জন্মদিন।
— ইশশ একদমই মনে ছিল না। ওকে কথা দিচ্ছি আগামী বার ঠিক মনে করে ওইশ করবো।
— লাগবে না। দুই বছর একটা মানুষের সাথে রিলেশন রাখার পরও যদি সে একটা বারও প্রথমে জন্মদিনের ওইশ না করতে পারে তাহলে তাকে পরের বারের চান্স দিতে নেই।
— খুব রাগ করেছো তাই না।
— জানি না।
— ওকে চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি। অন্তত তোমার ঘোমরা মুখটা আমার সহ্য হচ্ছে না।
তনু কোন কথার উত্তর না দিয়ে আমার সাথে চুপচাপ হাটতে লাগলো। দুইজনে একটা রিকশা নিয়ে ঘুরতে লাগলাম। কিন্তু মেডাম এখনো মুখটা চুপসে রেখেছে।
— তনু একটু তো হাসো। এমন মুখ করে রেখেছো যেন আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
— ওই বেশি কথা বললে রিকশা থেকে ফেলে দিবো কিন্তু!
— ওকে চুপ। ভয়ংকর মেয়ে একটা।
রিকশা করে নদীর পাড়ে এসে এক সাথে অনেকটা সময় বসে রইলাম। মেয়েটাকে দেওয়ার মত কিছুই তো কিনা হয় নি তবে আমি দিলেও সেটা ও নিবেও না। কারন আমাদের রিলেশনের প্রথম শর্ত ওকে কোন গিফট দেওয়া যাবে না। তবে অবশ্যই গিফট কিনতে হবে এবং নিজের কাছে জমিয়ে রাখতে হবে আর বিয়ের পর সব বুঝিয়ে দিতে হবে।
অনেকক্ষন ওর পাশে বসে থাকার পর মনে হলো পাগলীটা আমার কাঁধে মাথা রেখেছে। তখন আমি যেন শান্তি পেলাম। আর আমাকে তনু একটা প্রশ্ন করলো…
— আচ্ছা এভাবে আমার প্রতিটা সময়ের সাথী হবে তো। কোন স্পেশাল দিন আমার চাই না। শুধু তোমাকেই চাই। (ওর চোখে জল)
— আরে হচ্ছে টা কি? এমন শুভ দিনে কি কেউ কাঁদে।
— হুমম আমি কাঁদি। কারন আমার জন্ম তারিখ আর আমার মায়ের মৃত্যু তারিখ একই দিনে।
আমি কোন কথা না বলে তনুর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে লাগলাম। এরপর ওরে নিয়ে ফুসকা খেয়ে ওরে বাসায় দিয়ে আসলাম। কিন্তু তনু ওদের বাড়ির গেটে প্রবেশ করার পূর্বে আমায় একটা প্রশ্ন করলো।
— আচ্ছা রাজ তোমার কাছে ভালবাসা মানে কি?
— তোমার মুখের হাসি।
পাগলীটা সারাদিনে এখন একটু হাসলো। হায়রে আগে যদি বুঝতাম তাহলে আগেই বলতাম। ও বাসায় চলে যায় আর আমি মেসের দিকে পা বাড়াই। একটা মেয়ে একটা ছেলের জীবন বদলাতে পারে সেটা তনুকে দেখলে বোঝা যায়। মেসে এসে প্রনবের সাথে মজা করছিলাম তখন প্রনব বলবো..
— রাজ তুই ভূত বলতে কিছু বিশ্বাস করিস?
— ঠিক বলতে পারবো না তবে ভয় তো সবার মাঝেই আছে কিন্তু এই মেসে উঠার পর থেকে প্রতিদিন রাতে সাড়ে তিনটার দিকে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে যাচ্ছে।বুঝতে পারছি না এটা আমার অভ্যাস নাকি কোন কারন বশত হচ্ছে।
— মনে হয় স্বপ্ন দেখছিস।
— স্বপ্ন হলে কি সেটা প্রতিদিন দেখবো নাকি।
— ওকে আজ রাতে এমন হলে আমাদের ডাকিস। আর ভয় পাস না। আমরা আছি তো।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। প্রতিদিন রাতের বিকট শব্দটার কথা বলতে পারছি না। কারন ওরা হয়ত আমায় ভুল ভেবে কথাটা উড়িয়ে দিবে। এমন একজনকে পাচ্ছি না যে আমার কথা গুলো বিশ্বাস করবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি যেই সিটে ঘুমাই শুধু মাত্র আমারই ঘুম ভাঙ্গে কেন? বাকিরা তো কত শান্তিতে ঘুমায়। তাহলে কি এই সিটের সাথে কোন কাহিনী আছে। আমাকে জানতে হবে এই সিটের রহস্য।
এই বাসার নিচ তলায় কিছু পুরাতন বড় ভাই থাকে। তারা নাকি সেই ৩ বছর যাবতই আছে। তাই রাতে ওনাদের কাছে গেলাম। প্রথমে বই নিয়ে গেলাম পড়া বুঝার জন্য। কারন যদি সরাসরি প্রশ্ন করি তাহলে কিছু মনে করতে পারে। এখানে তুহিন ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়টা ভাল তাই ওনার কাছে গেলাম। ওনি আমাকে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছিল। তখনই আমি প্রশ্নটা করলাম।
— ভাইয়া এই মেসে কি কেউ কখনো আত্মহত্যা করেছে বা অন্য কিছু?
ওনি কৌতূহলি চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি খানিকটা চমকে গেলাম। ওনি বললেন…
— এই প্রশ্ন কেন?
— আসলে ভাই আমি যে সিটে ঘুমাই।
প্রতিদিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর অদ্ভুদ রকমের আওয়াজও শুনতে পাই। ঘুমানোর আগে জানালা বন্ধ করে ঘুমালেও ঘুম ভাঙ্গলে দেখি জানালা খোলা। আর অদ্ভুদ একটা লোক দেখি কবরস্থান থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। যদি দুই একদিন এমন হতো তাহলে হয়ত প্রশ্নটা করতাম না কিন্তু আমি আসার দিন থেকেই হচ্ছে তাই না বলে পারলাম না। প্রথমে তুহিন ভাইয়ের মুখটা কৌতুহলের মত থাকলেও এখন ওনি চুপ হয়ে গেছে। একটু সময় নিয়ে বললেন…
— রাজ তুই আমার ছোট ভাইয়ের মত। তোকে যা বলছি শোন। তুই এই মেস ছেড়ে দে। বিশেষ করে এই সিট টা।
— কিন্তু কেন?
— এই সিটে সেতু নামে একটা ছেলে থাকতো। খুব মিশুক ছিল।
দেখতে মিষ্টি একটা চেহারা। আর সব সময়ই হাসতো। কিন্তু একদিন ওর মুখে সেই হাসিটা দেখি নি। দেখে ছিলাম বিষন্নতার ছাপ। যখন ওর কাছে কারন জানতে চাই তখন সেতু বলে ওর বাবা নাকি ওরে ছেলের স্বীকৃতি থেকে ত্যাগ করেছে আর নতুন একটা বিয়ে করেছে। এদিকে ছোট থাকতে সেতুর মা মারা গিয়েছিল। আসলে সেতুর বাবা এক মহিলার সাথে অনেক আগে থেকেই রিলেশন করতো। তবু আমাদের সাপোর্টে সেতু নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ছিল। আমরা ওরে কয়েকটা টিউশনির ব্যবস্থা করে দেই।
এতে সেতুর মোটামোটি চলে যেত। এর মাঝে সেতুর সাথে একটা মেয়ের রিলেশন তৈরি হয়। কিন্তু মেয়ের বাসায় মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় তাই সেতু আমাকে নিয়ে ওই মেয়ের বাসায় যায় মেয়ের বাবার সাথে কথা বলতে। কিন্তু মেয়ের বাবা যা না তাই বলে সেতুকে অপমান করে। আমি চেষ্টা করে ছিলাম আটকাতে। কিন্তু পারি নি। সেই দিন রাতে সেতু ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু আর ঘুম ভাঙ্গে নি। যখন হাসপাতালে ওরে নিয়ে যাই তখন শুনি মধ্য রাতে অধিক ঘুমের বড়ি খেয়ে ওর মৃত্যু হয়েছে। আসলে এই বিছানায় ওর মৃত্যু হয়েছিল তো তাই সে এই বিছানায় কাউকে দেখতে চায় না। এই রুমে অনেক ছেলে আসে কিন্তু টিকে নি। আর আজ তুই আসলি সত্য জানতে।
তুহিন ভাইয়ের কথার জবাব দেওয়ার আগে আমার চোখে জল চলে আসলো। একটা ছেলের সাথে এমন কিছু হচ্ছে। তুহিন ভাই আমার কাঁধে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। আমি আর নিচে না থেকে আমার সিটে চলে আসলাম। তারপর ভাবলাম একটা দিন অন্য কাউকে এই সিটে ঘুমাতে দিয়ে দেখি কেমন হয়? তাহলে হয়ত তুহিন ভাইয়ের কথার সত্য বুঝা যাবে।
— প্রনব ভাই একটা হেল্প করবি?
–কি হয়েছে?
— আসলে আমার জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছে। তুই একটু আমার সিটে আজ ঘুমাবি। আমার সিটের পাশে তো জানালা। যদি বাতাসে আমার জ্বরটা বেড়ে যায়। প্লিজ দোস্ত।
— ওকে তাহলে তুই আমার সিটে ঘুমিয়ে পর।
রাতে প্রনব আমার সিটে ঘুমিয়ে পরে আর আমি প্রনবের সিটে শুয়ে থাকি কিন্তু ঘুমাই নি। আর ভাল করে জানালাটাও লাগিয়ে রাখি। সকালে কারো ধাক্কায় আমার ঘুম ভাঙ্গলো। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো জেগে ছিলাম। কিন্তু কখন যে চোখ লেগে গেল বুঝতে পারি নি। আমার পাশে প্রনব বসে আছে। ওর চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে রাতে প্রনব ঘুমায় নি। রাতে কি হয়েছে জানার জন্য প্রনবকে বললাম…
— কিরে দোস্ত কেমন ঘুম হলো?
— রাজ তুই গত পাঁচ দিন যাবত বেঁচে আছিস কেমন করে? আমি তো এক রাতেই আধমরা হয়ে গিয়েছি।
— কি হয়েছে বলবি তো?
— ঠিক সাড়ে তিনটায় আমার ঘুম ভেঙ্গে ছিল।
আমি রিজু আর তোকে অনেক ডেকেছি কিন্তু কেউ ঘুম থেকে উঠিস নি আর দরজাও খোলতে পারছিলাম না। আর এই দিকে জানালা থেকে একটা শব্দই আসছে ” আমার বিছানাটা ছেড়ে দাও, আমি ঘুমাবো”। এরপর আর ঘুম হয় নি। তাহলে তুহিন ভাইয়ের কথা গুলো সত্যি ছিল। আমি প্রনবের কাঁধে হাত রেখে বললাম…
— দোস্ত চাপ নিস না। তুই মনে হয় স্বপ্ন দেখেছিস।
আমি আর এখানে না বসে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ভার্সিটিতে আসতেই তনুশ্রীর সাথে দেখা। মেয়েটার চোখের নিচটা কালো হয়ে আছে। এমনিতে তো চোখে ও কাজল দেয় আর মনে হচ্ছে কোন সমস্যা হয়েছে যে ও কান্না করেছে। তাই চোখের নিচটা খুব কালো লাগছে। ওরে নিয়ে পুকুর পাড়ে বসলাম…
— তনু কি হয়েছে? রাতে কান্না করেছিলে কেন?
— বাবা আমার জন্য ছেলে দেখছে।
— ও এই ব্যাপার। চলো তোমার বাবার সাথে কথা বলে আসি।
— গিয়ে কি বলবে তুমি বেকার। এখনো লেখাপড়া শেষ হয় নি।
— তনু তুমি কি ইন ডাইরেক্টলি তোমাকে ভুলে যাওয়ার কথা বলছো?
— না রাজ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে হারালে আমি বাঁচতে পারবো না।আমি যেমন বাবাকে ভালবাসি তেমনি তোমাকেও ভালবাসি। (কেঁদে দিয়ে)
— আচ্ছা বোকা মেয়ে তো তুমি। এভাবে কেউ কাঁদপ। ( ওর চোখ মুছে দিতে দিতে বললাম)
— হুমম ভাল হয়েছে আমি বোকা। তুমি তো চালাক। এবার সব ঠিক করো।
— মেডাম আমি কয়েকদিন আগে আমাদের রিলেশনের কথা আমার বাসায় জানিয়েছি।
আশা করি বাবা মা খুব তারাতারি তোমাদের বাসায় যাবে। আমার বাবা আমায় অনেক বিশ্বাস করেন। ছোট থেকে ওনার অবাধ্য হই নি আর ওনার থেকে কোন কথাও লুকাই নি। আমাদের রিলেশনের কথা বলতে বাবা একটু ভেবে আমায় বলে দিলো “তুই যাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পার করতে পারবি তাতেই আমি রাজি ”
— তাহলে আগে বলো নি কেন এইসব?( আমায় কিল মেরে)
— তোমার কাজল ভেজা চোখ দেখবো বলে।
— পচা ছেলে একটা।
তনু আমার কাঁধে মাথা রেখে চোখটা বন্ধ করে রাখলো। আমিও তনুর ভালবাসা অনুভব করতে লাগলাম। রাতে রুমে বসে বসে পড়ছি আর প্রনব আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো তখনই প্রনব বলল…
— রাজ যা ইচ্ছা বল তবু তোর সিটে ঘুমাতে বলবি না।
— তাহলে থাক।
আমি বুঝতে পারছি প্রনব অনেক ভয় পেয়েছে আর প্রনবের জ্বরও চলে আসছে। তাই আমি আর কিছু বললাম না।ও পরে আমাকে মারতেও পারে। কালকেই নতুন মেসের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি বাঁচতে হয় তাহলে এখানে থাকা যাবে না। রাতের সাথে মনের ভয়টাও বাড়তে লাগলো। আর তনুর চেহারাটা মনে পরছে। ঠিক সময় সাড়ে তিনটায় আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আমি বিছানা ছেড়ে প্রনব আর রিজুকে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু দুইজন ঘুমে কাতর। জানালা খোলা রয়েছে আর একটা কথা জোরে জোরে শোনা যাচ্ছে ” আমার বিছানা ছেড়ে দে,আমি অনেক দিন ঘুমাই না। ” আমার গলা শুকিয়ে আসছে। আমার হাতটা কাঁপছে। আমি জলের বোতল হাতে নিতেই হাত থেকে বোতলটা পড়ে গেল। আমি দেয়ালের এক পাশে সড়ে গেলাম।
আমি ভাল মত তাকাতে পারছি না হঠাৎ করে এমন বাতাস শুরু হয়। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো? আওয়াজটা আরো গভীর হতে লাগলো আর খুব কাছে চলে আসছে। জানালাটা বন্ধ করার মত শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতে আমি চিৎকার দিয়ে উঠি কিন্তু আমার চিৎকার শোনার মত কেউ ছিল না। আমি কাঁপতে কাঁপতে পিছনে ফিরতে একটা সাদা শার্ট পরা একটা ছেলে আমার দিকে অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে রয়েছে। মনে হচ্ছে আমি এই ছেলেটাকে অনেক বিরক্ত করেছি। আমার হার্টবিট মনে হয় মিনিটে ১৫০ বার লাফাচ্ছে। ছেলেটার চুল গুলো এলোমেলো ছিল আর দাঁত গুলো একদম কালো। সম্পূর্ণ মুখটাই সাদা ফর্সা হয়ে আছে। ছেলেটার মুখ থেকে শুধু একটা লাইন বের হলো ” খুব ঘুম পেয়েছে, একটু ঘুমাবো “। এরপর আমার আর কিছু মনে ছিল না।
আমার জ্ঞান ফিরতে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম। আমার হাতটা ধরে তনু কান্না করছে আর প্রনব আর রিজু পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন তনু বলল…
— তুমি আর এই মেসে থাকবে না।
— তাহলে কোথায় থাকবো?
— তুই আপাতত আমাদের সাথে বাসায় যাবি। ( বাবার প্রবেশ রুমে)
— বাবা তুমি?
— হুমম প্রনব আমায় ফোন করেছে। তুই এতো সমস্যায় আছিস আর একবারও বললি না।
— আসলে…
— চুপ একদম চুপ। তুই ঠিক মত সুস্থ হয়ে নতুন একটা বাসায় উঠবি।
— হুমম।
আমি সেদিনই সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে যাই কিন্তু আমি প্রতিরাতে ঘুমানোর মাঝে একটা লাইন শুনতে পাই ” একটু শান্তিতে ঘুমাবো “। প্রনব আর রিজুও বাসা বদলেছে কিন্তু এখনো বুঝে উঠতে পারলাম না। সেই লাইন আমার পিছু ছাড়ছে না কেন ” আমি একটু শান্তিতে ঘুমাবো “