ঠাস!কে যেন চড় মারল। আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না, ঘুমের ঘোরে শ্বশুরের গায়ের উপর পা তুলে দিয়েছি। শ্বশুর বলে উঠলো “ঐ হারামজাদা গায়ের উপর থেকে পা নামা কইতাছি। তোর মতন বেআক্কেল জামাই আমি জীবনে দেখিনি।” চোরের মতন আস্তে আস্তে শ্বশুরের শরীরের উপর থেকে পা নামিয়ে নিলাম।
গ্রামে শ্বশুর বাড়ি এসেছি শালার বিয়ে খেতে। ঘর ভর্তি মানুষজন। গভীর রাতে যখন প্রচণ্ড ঘুম পেলো। তখন বউ বলল শ্বশুরের কাছে ঘুমাতে।মানুষজন বেশি, ঘুমানোর যায়গা নেই। ওকে এতো করে মানুষের সামনে ইশারায় বুঝলাম ঘুমের সময় আমার হাত পায়ের হিসাব থেকে না। কিন্তু না বউ বুঝল না। কয়েকবার মানুষের আড়ালে পায়েও চিমটি দিয়েছে। তাও বুঝল না। উপায় না দেখে শ্বশুরের পাশে এসে শুয়ে গেলাম। কিন্তু কখন যে ঘুমের ঘোরে পা চলে গেছে!
বিছানায় উঠে বসে চোখ ডলতেছি। মনে মনে বউয়ের উপর রেগে গেলাম।কেন যে মেয়েটা এইভাবে রেখে গেলো। এমন সময় পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। বাইরে গিয়ে দেখি আশেপাশে মানুষজন কেউ নেই। অন্ধকার রাত। একা একা কিভাবে বাথরুমে যাই! এদিকে ছোটবেলা থেকেই আমি ভূতের ভয় পাই। ছোটবেলায় মা ছাড়া কখনো রাতে বাথরুমে যাইনি। এখনো বাড়ি এলে মা কে ডেকে বাথরুমে যাই। কিন্তু এখানে মা, বউ কেউ নেই। উপায় না পেয়ে শ্বশুরের কাছে ফিরে গেলাম।
শ্বশুর আব্বা? একটা কথা বলি?
শ্বশুর আব্বা বললেন “কইয়া ফেলা” আমি বললাম
আব্বা “ছোটবেলা থেকে আমার অনেক ভূতে ভয় হয়।যদি কিছু মনে না করতেন তাহলে আমার সাথে একটু বাথরুমে যাবেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে।” শ্বশুর আব্বা আমার কথা শুনে হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। আমি বললাম “আব্বা একটু তাড়াতাড়ি করেন। নাহলে কিন্তু অঘটন ঘটে যাবে এইখানেই। ” শ্বশুর আব্বা আমার কথা শুনে বললেন ” চল! চল! চল! তাড়াতাড়ি দৌড় দে”।
আমি কাজ সারছি আর শ্বশুর আব্বা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আহা! কি চমৎকার জীবন। এমন শ্বশুর কয়জনার কপালে জুটে। মনে মনে নিজেকে খুব সুখী মনে হলো। এমন সময় পাশে কি যেন নড়াচড়া করতে লাগলো। ভয়ে এক দৌড়ে আমি শ্বশুরের কোলে গিয়ে উঠে উনাকে জরিয়ে ধরে বললাম “শ্বশুর আব্বাগো ভূত ভূত।” শ্বশুর আব্বা চিৎকার করে বলে উঠলো “ওরে বাবা রে! নিচে নাম, মরে গেলাম, মরে গেলাম।” আমি ভয়ে আরো শক্ত করে শ্বশুর আব্বাকে জরিয়ে ধরলাম। পরে উনি যখন ধমক দিয়ে উঠলেন তখন নিচে নেমে এলাম। শ্বশুর তখন বলে উঠলো “তুই ছোটাতে ভাদাইম্মা ছিল সারাজীবন সেই ভাদাইম্মাই থাকবি।” আমার মেয়ে কোন চোখ দিয়ে তোরে পছন্দ করছিল আল্লাহ জানে।
আমার শ্বশুর আমাকে দুইচোখে দেখতে পারে না।
আমার দোষ একটাই,আমি তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।
মাধ্যমিকে থাকতে আমার শ্বশুর আমার উপর যে নির্যাতন করছে। সেসব দিনের কথা স্বপ্নে দেখে এখনো ঘুমের মধ্যে আমি চিৎকার করে উঠি। উনি ছিল আমাদের অংকের মাস্টার। কিসব আজগুবি অংক ছিল মাধ্যমিক বইয়ে। যে আমি ব্ল্যাকবোর্ডে দেখে দেখে অংক তুলতে ভুল করতাম। সেই আমি পরীক্ষায় অংকে পাশ করি কিভাবে! স্কুলে যেসব পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম। সেসব ছিল আমার পাশে বসা ছাত্রছাত্রীদের কৃতিত্ব। ওদের দেখেই তো পাশ করেছি।
আমার শ্বশুরের ক্লাসে সবথেকে কাঁচা ছাত্র ছিলাম আমি। উনি আমাকে উঠতেও পেটাতেন। বসতেও পেটাতেন। আমাকে পেটানো যেন তার রীতিমত ব্যায়াম হয়ে গিয়েছিল। একেতো অংক পারিনি তার উপর উনার অপমানজনক কথা শুনে প্রতিশোধ নিবো বলেই উনার মেয়ের সাথে প্রেম করি।তারপর পালিয়ে বিয়ে।
কিন্তু মানুষ মরলেও নাকি অভ্যাস বদলায় না।ঠিক তেমনি আমার শ্বশুরের অভ্যাস যায়নি। প্রথম যেদিন আমরা স্বামী স্ত্রী উনার সামনে হাজির হয়ে মাফ চাইলাম। উনি হঠাৎ করে ক্লাস সেভেনের একটা পাটি গণিত দিয়ে বললেন এটা করে দেখা তাহলে মাফ করে দিবো। পাশের বাড়ির ছোট ছেলেটা সেদিন সাহায্য করেছিল বলে অংকটা পেরেছিলাম।
তারপর থেকে শ্বশুর আব্বা আমার কোনো দোষ পেলেই একটা না একটা অংক নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হয়। আমিও কম যাইনা। সব ক্লাসের অংকের গাইড কিনে রেখেছি। শ্বশুর বাড়ি এলেই সাথে করে সেসব নিয়ে আসি।
কালকে রাতের ভুলের জন্য আজকেও অংক করতে দিয়েছে। কিন্তু দুঃখের কথা শালার বিয়ের নানান রকম খাবারের কথা মনে করে অংকের গাইড আনতে ভুলে গেছি। কিভাবে যে করি অংকটা। কেউ কি সাহায্য করবেন?