পালানো

পালানো

পুষ্পদের বাসায় ঢুকতেই দেখি সবাই খুব শোরগোল করছে।আজ পুষ্পর বিয়ে,শোরগোল হওয়ারই কথা। যদিও বেষ্ট ফ্রেন্ড হিসেবে আমার আরো দুইদিন আগে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু একটা কাজের জন্য আসতে পারি নাই।কাজটার কথা না হয় পরেই বলি। আমাকে দেখেই পুষ্পর মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করল।আমি বললাম..

_কি ব্যাপার আন্টি কি হয়েছে? আপনি কাঁদছেন কেনো? কান্নার কি আছে, মেয়েকে পরের বাড়ি যেতেই হবে, এতে কান্না করার কি আছে!!! আন্টি এইবার আমাকে ছেড়ে শাড়ীর আচল দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল…

_আর বলিস না মা! পুষ্পতো সকালে বাসা থেকে পালাইছে। বলেই আবার কান্না শুরু করে দিলো। আমি আন্টিকে সোফায় বসিয়ে শান্তনা দেওয়ার জন্য বললাম…
_ আরে আন্টি সকালে বের হইছে মানে? হয়ত আশেপাশেই কোথাও আছে। বা কারো সাথে পার্লারে গেছে। কাল রাতে ওর সাথে আমার কথা হয়েছে ও নাকি পার্লারে যাবে।
_ হ্যারে মা। পার্লারের কথা বলেই বের হইছে। কিন্তু চিঠিটা!!!

বলেই আবার কান্না শুরু করে দিলো।আমি এইবার আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম যে, পুষ্প এই বিয়েতে রাজি নয় বলে বাসা থেকে পালাইছে।ও আমাকে বলেছিল ছেলেটা নাকি ভালোনা। আন্টি পুষ্পর বড় ভাইয়ের থেকে চিঠিটা নিয়ে আমাকে পড়তে দিলো। আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে জোরে জোরে পড়তে শুরু করলাম… প্রিয় মা-বাবা, আমি এই ছেলেটাকে বিয়ে করতে পারব না। তোমাদের অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি,তোমরা আমার কথার গুরুত্বই দাওনি। তাই আমি পালিয়ে যাচ্ছি। যে ছেলে এখন ইসলাম মানেনা, নামাজ-কালাম পড়েনা, সে যে বিয়ের পর আমার কথায় নামাজ-কালাম পড়বে এর গ্যারান্টি কে দিতে পারে!! আর সব থেকে বড় কথা ছেলে আমাকে নিজে বলেছে যে, কোনো মেয়ের জন্য সে একটুও চেঞ্জ হতে পারবে না। তাই আমি কোনো রিস্ক নিতে চাইনা।

চিন্তা করোনা, আমি কোনো ছেলের সাথে পালাইনি। আজকের দিনটা গেলেই আমি বাসায় ফিরে আসব, কিন্তু ওই ছেলেকে বিয়ে করতে পারব না। তোমাদের মানসম্মান বাঁচাতে এখন বিয়ে করলে যদি কয়দিন পর ডিভোর্স হয়ে যায় সেটা কি ভালো দেখাবে!!! তাই আমি এক্ষুণি চলে যাচ্ছি। পারলে ক্ষমা করে দিও। ইতি তোমাদের আদরের পুষ্প। চিঠিটা পড়তে গিয়ে আমার তেষ্টা পেয়ে গেছে। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে ফেললাম।আমি একা আসিনি, আমার সাথে বোরকা পরা আরো একজন এসেছেন।এতক্ষণ কেউ খেয়ালই করেনি যে আমার সাথে বোরকা পরা একজন এসেছে। তার হাত- পা, মুখ সব ঢাকা। এইবার পুষ্পর ছোটবোন আমাকে জিজ্ঞেস করল ওনার কথা। আমি বললাম যে, উনি আমার বড় আপু।অনেক ভালো।

পুষ্প বলেছিল বলে অনেক রিকুয়েস্ট করে নিয়ে এসেছি। আমি বললাম যে,ওনাকে একটা ঘরে বসতে দিতে। এতটা পথ এসেছেন, অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। পরে পুষ্পর ঘরে ওনাকে রেখে আসলাম। আন্টিরা সবাই আমাকে বারবার করে বলছেন যে, আমি থাকলে হয়ত এমনটা হতনা।সারাক্ষণ ওর সাথে সাথে থাকতাম।পুষ্প আগে এতো ইসলাম মানত না, কি থেকে কি হলো তাদের মেয়ের, ইসলামী পথে চলে ভালো কথা, তাই বলে এতো ভালো একটা বিয়ে ভেঙে দিবে!!! আসলেই আমি থাকলে এসব হতনা!!! খবরটা ছেলের বাড়িতে পৌঁছাতে সময় লাগল না। মুহুর্তেই মানুষের নানা কথায় মুখরিত হয়ে উঠল পুষ্পদের বাসা। ছেলেপক্ষ অনেক কথা শুনিয়ে দিলো ফোন করে। বিয়েটা ভেঙে গেলো।সারাদিন কারো খাওয়া-দাওয়া নেই।

রাতে আমি আন্টিকে ডেকে বললাম যেন পুষ্পকে ক্ষমা করে দেয়। ওর অপছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়াটা মোটেও ঠিক নয়।সংসারটাতো ওকেই করতে হবে!!!ওনাদের আদরের মেয়ে পুষ্প। বিয়ে ভাঙায় যত না কষ্ট পাইছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাইছে পুষ্প বাসা থেকে চলে যাওয়ায়।বারবার বলছে যে, পুষ্প কোথায় আছে! কেমন আছে! কখন আসবে! আমি তখন ফট করে বলে দিলাম,” আরে আন্টি এতো চিন্তা করছেন কেনো? পুষ্পতো ওর ঘরেই আছে” আমার কথা শেষ হতে না হতেই আন্টি এক দৌড়ে পুষ্পর ঘরে গিয়ে দেখে ও শুয়ে আছে। আন্টি কান্না করতে করতে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরল।

আন্টিকে দেখে অন্য সবাইও ওই রুমে জড়ো হয়ে গেলো।পুরো ব্যাপারটা আর কারো বুঝতে বাকি রইল না যে, সকালে আমার সাথে আসা মেয়েটাই পুষ্প!!! অথচ কেউ বুঝতেই পারেনি!! আইডিয়াটা আমার ছিল।কারন ছেলেটা নাকি নেশাও করত।যা পুষ্পর একদম পছন্দ ছিলনা। তাই আমি ওকে এসব করতে বলেছিলাম।ও পার্লারে যাওয়ার কথা বলে বের হইছে,আর আমি ছদ্মবেশী হিসেবে বোন বানিয়ে নিয়ে আসছি। সকালেতো আমি সেই ভয়ে ছিলাম যে, কখন যেন ধরা পড়ে যাই। কিন্তু নাহ! কেউ বুঝতেই পারল না। কিন্তু এখনতো ব্যাপারটা সবার কাছে পানির মতো ক্লিয়ার যে, আমি আরো আগে কেনো আসিনি।

কাজটা অবশ্য আমাদের আরো আগেই করা উচিৎ ছিল।কিন্তু ভীড় না হলেতো কাজটা করা যেত না। আর ব্যাপারটা কেউ এতো সিরিয়াসলিও নিতো না। তাই আজকেই এসব করতে হলো।জানিনা কাজটা ঠিক হয়েছে কিনা। তবে সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি ভিন্ন কোনো গ্রহ থেকে আসছি। আমি বুঝতে পারছি, আজকে আমার খবর আছে!!! কিন্তু পালানোর কোনো পথ নাই!!! আল্লাহ আমাকে রক্ষা করুন!!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত