এই নিয়ে আমাকে কম করে হলেও ১৫বারের উপর দেখতে এসেছে।কিন্তু কেউই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেনা। আপনারা কি ভাবছেন আমি কালো বেটে অশিক্ষিতা?? না মোটেওনা আমি শিক্ষিতা,হাইট ভালো এবং যথেষ্ট রুপবতী।কিন্তু তাও আমার বিয়ে হচ্ছেনা। এই নিয়ে আমাকে প্রচুর খোটা শুনতে হয় রোজ রোজ। বাবা হাঁপিয়ে গেছে আমার জন্য পাত্র খুজতে খুজতে। আমার জন্য যে কোনোধরনের পাত্র হলেই চলবে।এতে কারো আপত্তি নেই আমাকে বিদেয় করতে পারলেই তাদের শান্তি বাবার শান্তি।
আজ আমাকে আবার দেখতে এসেছে।আমি প্রতিবারের মতই লাল শাড়িটাই পড়েছি।একবার কলেজ ক্যাম্পাসে এই শাড়িটা পরে অনেক প্রশংসাও পেয়েছিলাম। আমি সাজলাম লিপস্টিক দিলাম কাজল দিলাম,মাথায় ভালো করে বেনুনী করলাম যাতে আমার চুল দেখতে তাদের সুবিধা হয়। আজ আমাকে দেখতে অনেকেই এসেছে।ছেলে ভুড়িওয়ালা তাতে কারো ভ্রক্ষেপ নেই। ছেলের মা আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো। আমাকে নানান প্রশ্ন ও করলো আমি ঠিকঠাক উত্তর দিলাম।তাদের দেখে মনে হচ্ছিল যে তাদের আমাকে ভাল লেগেছে আর বাবাও কেমন যেন খুশি। এবার হয়ত বিয়েটা হয়ে যাবে।
আমার পছন্দ হলো কি হলনা সেটা কারো জানার প্রয়জন নেই। ২দিন গেল ৩দিন গেল তারা আর কোনো কিছু জানালোনা।হয়ত প্রতিবারের মত এবার এরাও এই বিয়েতে রাজী নেই। থাকবে কেন??? এক পাগল মায়ের মেয়েকে কে করবে বিয়ে? আমিও যদি পাগল হয়ে যাই? হ্যা আমার মা মানসিকভাবে অসুস্থ।কিন্তু কেউ অসুস্থ বলেনা, বলে যে পাগল। আমার মা আদৌ পাগল ছিলনা। একটা এক্সিডেন্ট এর পর থেকে মা তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।আর যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তার অবস্থার অবনতি হয়। বাবা তার চিকিৎসার খরচা চালাতে রাজি ছিলনা। আমাকে খাওয়াচ্ছে এটাই বেশ।
আমার মাকে বাবা তালাক দিয়ে মেন্টাল হসপিটালে রেখে এসেছে।শুনেছি আমাকে কোনোরকমে বিয়ে দিয়ে দিলে আমার কোনো দ্বায় দায়িত্ব তিনি পালন করবেন না।আর তিনি যথেষ্ট জোয়ান এখোনো তাই শরিয়ত অনুযায়ী তিনি এখোনো বিয়ে করতে পারবেন। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।থাকলে কবেই তার হাত ধরে চলে যেতাম। আপনারা হয়ত ভাবছেন আমি নিজেই নিজের এত প্রশংসা করলাম,আমি শিক্ষিতা লম্বা সুন্দর, তাহলে আমার বয়ফ্রেন্ড নেই কেন? বিয়ে হচ্ছেনা ভালো কথা কারণ বিয়েতে সবার মতামক্ত লাগে যোগ্যতা লাগে।
কিন্তু ভালোবাসায় কোনো কারণ লাগেনা।তাহলে আমার বয়ফ্রেন্ড নেই কেন। ক্যাম্পাসে আমাকে অনেকেই প্রস্তাব দিত।আমি তাদের আমার এই করুণ জীবন্দশা কথা বলতাম।যাতে রিলেশনের পরে কোনো ঝুট ঝামেলা না হয়।কিন্তু আমার কাহিনী শুনে তারা নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেত হয়ত তাদের পরিবার ও কোনো পাগলা মা ও ডিভোর্সী মায়ের মেয়েকে মেনে নিবেনা। এতে আমি শিক্ষা পাই যে সবার কাছে রুপ্টাই দামী। বাবা আমাকে অনেক বকাঝকা করলো।এবংকি এটাও বলল যে আমি গলায় দড়ি দিয়ে কেন মরিনা। কিন্তু আমি মরতে গিয়েছি পারিনি হেরে গেলে চলবেনা।আমাকে কিছু করতে হবে। রাতে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি ১টা বেজে গেছে।তাড়াতাড়ি গোছানো ব্যাগ হাতে নিয়ে অজানা উদ্দেশ্য চললাম।
প্রতিজ্ঞা ছিল ভালো কিছু করে দেখাবার। রাতটা হাটতে হাটতেই কাটিয়ে দিলাম।সারারাতের ক্লান্তি আর খালী পেটে হাটা খুব কষ্টকর হয়ে গেছিল।রাস্তা অয়ার হব এমন সময় দেখি একটা গাড়ি খুব জোরে আসছে।আমি পিছু হাটবার চেষ্টা করছি কিন্তু ততক্ষণে,,চোখ খুলে দেখি আমি হস্পিটালের বেডে।আমার পাশে এক সুদর্শন পুরুষ।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন আমি কে কোথা থেকে এসেছি আমার বাডির লোকের নাম্বার ইত্যাদি জানতে চেয়েছেন।আমি তাকে কিছুই বললাম না। আমি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি আমার সেবা করলেন।পরে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। তার৷ বাসাটি বিরাট। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার বাসায় আর কেও নেই??? তিনি হাসলেন বললেন না।তিনি আপনজন্দের হারিয়েছেন অনেক আগেই একটা এক্সিডেন্টে।সে থেকে তিনি একাই থাকেন।তারা বিশাল বড়লোক।
তিনি আমার সম্পর্কে জানতে চাইলেন।কেন না জানিনা লোকটার উপর বড্ড মায়া হল। আমি তাকে সব খুলে বললাম।সে শুনে খুবই অবাক হলো।আর আমাকে যা বলল তা শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। সে আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিল আমি কিছু বললাম না।সে বলল ঠিক আছে আমি আপনাকে জোর করবোনা,আপনি আমাকে পরে ভেবে সিধান্ত জানাবেন আমি অনেক ভাব্লাম হয়ত আসলেই আমার জীবনে ভালো কিছু ঘটতে চলেছে। নয়ত এভাবে রাত্রিতে বেরিয়ে যাওয়া মেয়ে কোনো না কোনো না ভাবে সমস্যায় পড়ত।হয়তবা ধর্ষন ও হতাম। কিন্তু তার কিছুই হয়নাই।মানুষ্টা বেশ ভালো। আমি তার প্রস্তাবে রাজী হলাম।
খুব ধুমধাম করে বিয়ে হল বিয়েতে আমার সব আত্নিয়স্বজনরাও এসেছে যারা আমায় গালমন্দ করত তারাও হাসিমুখে আমার বিয়ে উপভোগ করলো। আজ আমি অনেক বড়লোকের বউ। আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালোই আছি।আমার একটি পুত্রসন্তান ও আছে আর আজ তার ষষ্ঠ তম জন্মদিন।আজ আমি খুব খুশি। আয়ান এই আয়ান বাবা নিচে আয়। কথাটি শুনা মাত্রই আয়ান তার মায়ের ডায়েরী বন্ধ করে আগের যায়গায় রেখে দিয়ে চোখ মুছে দৌড়ে নিছে গেল।
সমাপ্ত