— ভাই রিভো ০.৫ ঔষুধ টা দেন তো!!!
— প্রেসক্রিপশন আছে তো??(ঔষধ দোকানে ছেলেটি
— সরি ভাই আনতে ভুলে গেছি!!
— না ভাই তাহলে আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না!!!
— আরে ভাই আমার প্রেসক্রিপশন আছে তো!! যাস্ট আনতে ভুলে গেছি!!
— প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ঔষুধ দেওয়া যাবে না!! সরি ভাই!!
— ওওও..
ইদানিং ঔষুধ দোকানদার গুলাও ডাক্তারি শিখে গেছে!! নাম বললেই কিসের ওষুধ বুঝে যায়!! তাও যদি পরিচিত দোকান হতো তবে দিতো!! অপরিচিতো দোকান এ ঔষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া দিবেনা জেনেও দোকানটায় গেলাম!! তাই হলো!! দিলো না ঔষুধ টা!!
কাল তার বিয়ে!! মেয়েটার সাথে গত চার বছর ধরে রিলেশন!! মেয়েটা অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিলো!! অন্যদের ক্ষেত্রে মেয়েরা শাষন করে, রাগি হয়!! ও সম্পূর্ন আলাদা!! চুপচাপ থাকতো!! আমি যা বলতাম তাই শুনতো!! কোনো দিনও আমার কথার অমত করেনি!! যা বলেছি তাই শুনেছে লক্ষি মেয়ের মতো!! কিন্তু কিছুদিন আগে বিকেলে আমাকে হঠাৎ দেখা করতে বললো!! কোনো কাজ ছিলো না!! তাই গেলাম নির্দিষ্ট সময়ে!! যদিও গত চার বছরে কোনো দিনও কারেক্ট টাইমে ওর সামনে যেতে পারিনি!! প্রতিদিন ই লেইট করতাম!!
গিয়ে দেখি চুপচাপ বসে আছে মেয়েটা!!হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি আজও দেরি করবো!!
— কি ব্যাপার মন খারাপ কেনো!!??
— ওহহহ এসেছো(ভাবনার ছেদ ঘটলো)
— হুম!! কিন্তু মন খারাপ কেনো??(একটা কিটকেট দিতে দিতে বললাম!! মেয়েটার চকলেট খুব প্রিয়!!! ওর সাথে দেখা করতে আসলে চকলেট নিয়ে আসতেই হয়!! না আনলে মুখে কিছু বলেনা!! মন খারাপ করে শুধু )
— তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো!!
— জানি!! তাইতো ডেকেছো!!
— হুম
— বলো কি বলবে??
— আসিফ আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে!! বাবা আজই আমাকে বললো!! (একটা কার্ড দিয়ে)
— মানে?? ( বিষ্মিত হওয়াটাই স্বাবাভাবিক)
— মনে হয় আর আমাদের দেখা হবেনা!!!
— কেনো?? তুমি কি বিয়েটা করবে??
— হুম!!! কোনো দিন ও মাবাবার অবাধ্য হবো না!! হতে পারবো না!! কোনো কষ্টদিয়ে থাকলে সরি!! আমাকে ক্ষমা করেদিও!!(কাদঁতে কাদঁতে বললো)
— ইরা প্লিজ এভাবে বইলোনা!! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি!! তোমাকে ছাড়া থাকবো কিভাবে?? বাচঁতে পারবোনা তোমায় ছাড়া!!
— সরি আসিফ!!! আমি পারবোনা!!মা বাবার অবাধ্য হতে!! আমাকে ক্ষমা করে দিও!! তোমার শেষ বিকেলের সঙ্গি হতে পারলাম না!! ক্ষমা কইরো প্লিজ!! আমার চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে তোমার জীবনে আসবে দেখে নিও!!
— তুমিই আমার জীবনের আলো!! তোমাকে ছাড়া ভালো আমি জীবনেও থাকতে পারবো না!!
— ভালো থেকো!! নিজের খেয়াল রেখো!! আমায় যেতে হবে!!
–আর একটু থেকে যাও প্লিজ??
(কাদঁতে কাদঁতে চলে গেলো)
মেয়েটা কাদঁছে!! অথচ আমার চোখে পানি নেই!! আশ্চর্য!!
বাসায় এসে বিয়ের ডেটটা দেখলাম!! খুব পরিচিতো তারিখ টা!! যে তারিখটা গত চার বছরে অনেক আনন্দ দিয়েছে ওই তারিখটাই!! ২৭ আগস্ট!! আমার বার্থডে!!
বিয়ের দাওয়াত খাওয়া জীবনে কোনোদিন মিস করিনি!! তবে এটা খেতে পারবোনা! তাই ঘুমের ঔষুধ কিনতে গেলাম! ছেলেটা দিলো না! আমাকে ঘুমাতে হবে! তাই বাধ্য হয়ে বাবার প্রেসক্রিপশন টা নিলাম!! বাবা অসুস্থ!ঘুমাতে পারেনা!! তাই তার ঔষুধের মধ্যে ঘুমের ও ছিলো! সুজোগটা কাজে লাগালাম! মেয়েটা হয়তো কাদবে! কাদঁতে কাদঁতে এক সময় মানিয়ে নিবে!
এর ই নাম সামাজিকীকরণ!
খুব ভালো লাগতো ইরাকে! মাঝে মাঝে একটু অবহেলা ও করতাম!! হয়তো তারই পরিনতি এটা!
যাই হোক চার পাতা রিভু ০.৫ কিনলাম!
দোকানদার অবাক ই হয়েছিলো!
কিন্তু প্রেসক্রিপশন দেখে কিছু বলেনি!!
রাতটা একটু গভীর হোক!! তারপর খাবো!
মরেও যেতে পারি!!
কষ্ট লাগছে পরিবারের জন্য!” তার চেয়ে বেশি কষ্ট লাগছে ইরার জন্য!!
হয়তো আশা করেছিলো দৌরে গিয়ে তার হাত ধরে বলবো :-
“”যেও না প্লিজ?? আমার সাথে থেকে যাও!! চলো কোথাও পালিয়ে যাই!! “”
কিন্তু বলতে পারিনি!! কারন আমার উপস্থিতটা বুদ্ধি কম!! মেয়েটার মন বুঝতে পারিনি কোনো দিন!!!
আস্তে আস্তে রাত বাড়তে লাগলো!!
হয়তো এতক্ষনে তার গায়ে হলুদ শেষ!! কাল বিয়ে!!
উৎসবের কমতি নেই!!
ভালোই কাটবে ওর শেষ বিকেল টা!!
আমিতো কোনোদিনও ইরার যোগ্য ছিলাম না!!
পারিনি ওর মন টা বুঝতে!! ও কি চাইতো!!
আর বেশি কিছু দিতে পারবোনা!!
কারন সবাই সামর্থবান না!! মেয়েটা আমার মন বুঝতে পারতো!!
তাই হয়তো কিছু চায়নি কোনো দিন আমার কাছে!! হুম তাই হয়তো আমি ওকে চাইতে পারিনি!!
রাতটা গভীর হতে লাগলো!!
চার পাতা!! মানে চল্লিশটা ওষুধ!!
একটা গ্লাসে পানি নিয়ে সবগুলা গ্লাসে গুলে নিলাম!!
খুব ইচ্ছা করছে তাকে দেখতে!!
গত চারটা বছর ধরে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে আসছে!!
আজ আমি তাকে দিবো! তাই শুভকে একটা মেসেজ দিলাম!!ইরার কাজিন!!! আমার ফ্রেন্ড!!
ছেলেটা ঘুম পাগল!! এই বিয়ের আগের দিন রাতেও ঘুমুচ্ছে হয়তো!!
ছোট্ট একটা মেসেজ দিলাম !
“” শুভ আজ আমার জন্মদিন! ইরার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!! ওকে বলিস!! “”
আর কিছু লিখলাম না! ইরা হয়তো কাল সকালে নিজেই চলে আসবে!!
না আসতে পারলে শুভকে পাঠাবে!!
— গ্লাসটা হাতে নিলাম!! চোখ বন্ধ করে খেয়েফেললাম পুরোটা!
হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ এলো!
তাহলে শুভ কি ঘুমিয়ে যায়নি? মেসেজটা চেক করতে ইচ্ছে করছেনা!
তারপরও চেক করলাম! মেসেজটা ছিলো:
” ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছে!! ইরা আর নেই!! আজ রাতে সুইসাইড করেছে”
মেসেজটা পরার পর টুপ করে একটা ফোটা জল পড়লো!
আশ্চর্য! আমিও তাহলে কাদঁতে জানি!
কিন্তু ইরা! মেয়েটা আজ ও আমার আগে চলে গেলো!
আজও আমি লেইট!
আস্তে আস্তে সব কিছু ঝাপসা লাগলো!
শুধু একটা কথা মনে পরছে! আজো লেইট!
আস্তে আস্তে এক সময় ছেলেটাও চলে গেলো নিদ্রায় !
এবং সেটা পরিনত হলো চির নিদ্রায়!