দেখচস আমার আব্বায় আমার লাইজ্ঞা নতুন ঈদের জামা কিইন্না আনছে।
মিরাজ:-আল্লারে কত্ত সুন্দর জামা কিইন্না দিছে তোর বাপে।
ছোটন:-হ,
আইচ্চা তোর বাপে তোরে ঈদের জামা কিইন্না দিবো কবে? ছোটনের মুখে এই কথাটা শোনার পরে মিরাজের মুখটা কালো হয়ে গেলো। কি উত্তর দিবে ছোট্ট মিরাজ ওর বন্ধু ছোটনের করা এই প্রশ্নের?
মিরাজ:-আরে এহনো ঈদের মেলাদিন বাকি আছে।
আর আমিতো আব্বারে এহনো কইনাই জামা কিইন্না দেওনের কথা। আইজকা বাড়িত গিয়া কমু, দেখবি আব্বায় আমার লাইজ্ঞা কালকাই জামা লইয়া আইবো হাট থাইকা।
ছোটন:- কি কস তুই?
ঈদের জামা আবার কিইন্না দেওনের কথা কওন লাগে নাকি? কই আমিতো আব্বারে কইনাই,হের পরেও আব্বা কিইন্না আনলো।
মিরাজ:-যাইগারে রাইত হইয়া গেলে মা পিটাইবো।
মিরাজ আর ছোটন দুইজনের ই বয়স মাত্র ৭ বছর। এক গ্রামেই দুইজনের বাড়ি আর দুইজন খুব ভালো বন্ধু। মিরাজের বাবা একজন কৃষক খুব করুন অবস্তা এদের সংসারের। আর ছোটন এর বাবা গ্রামের নাম করা ব্যাক্তি। ছোটন ধনি পরিবারের সন্তান হলেও তারমনে নেই কোন অহংকার। আর মিরাজ হলো ছোটনের খুব ভালো বন্ধু যেটাকে আমরা বেষ্ট ফ্রেন্ড বলে থাকি। মিরাজের এভাবে হুট করে চলে যাওয়ার মানেটা ছোট্ট ছোটন ঠিকই বুঝতে পারে। মিরাজের জন্য ছোটনের খুব মন খারাপ হয়। মনে মনে বলে আল্লাহ কেন যে মিরাজ কে আমার ভাই করে দুনিয়ায় পাঠাইলানা…..?
মিরাজের মা:-কিরে বাজান তুই আইচস?
মিরাজ:-হ মা,আইলাম।
মিরাজের মা:-আইচ্চা হাত মুখ ধুইয়া পড়তে বয়।
মিরাজ হাত মুখ ধুয়ে এসে মায়ের আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে বললো মা আব্বায় কি এইবারেও আমারে ঈদের নতুন জামা কিইন্না দিবোনা? ছেলের মুখে এই কথা শোনার পর মায়ের বুকটা যেন ফেঁটে যাচ্ছে। আল্লাহ কেন যে মানুষকে দুনিয়াতে গরিব করে পাঠায়?
মিরাজের মা:-ঈদ তো বাজান ধনি মানুষকো লাইজ্ঞা।
হেগো আল্লায় মেলা টাকা দিছে, হেরা নতুন নতুন জামা কাপর পইরা ঈদের নামাজ পরতে যাইবো। আমরা বাজান গরিব মানুষ,আমগোরে আল্লায় টাকা পয়সা দেয়নাই,আমগো কি আর ঈদ আছেরে বাপ? মায়ের চোখ দিয়ে পানি পরতে দেখে কেঁদে দিলো ছোট্ট মিরাজ। কান্না করতে করতে মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলতেছে কাইন্দোনা মা,তুমি কাইন্দোনা। আমার ঈদে নতুন জামা লাগবোনা।গতবার ঈদের দিন যে ছোটন আমারে নতুন জামাটা দিছিলো ঐডা তো এহনো নতুন ই আছে। ঐডাই ঈদের দিন পরমুনে। ছেলের মুখের কথা গুলো শুনে ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে দুইগালে মন ভরে চুমু খেলো মিরাজের মা। আজ চাঁনরাত। গ্রামের সব ছোট বড় ছেলে মেয়েরা নদীর পারে এসে চাঁদ উঠেছে চাঁদ উঠেছে বলে চিৎকার করে আকাশ, বাতাস ভারি করে দিচ্ছে। সেখানে দাড়িয়ে ছোটন ওর বন্ধু মিরাজকে খুঁজতেছে। সবাই আছে কিন্তু মিরাজ নাই। ছোটন মিরাজদের বাড়িতে গেলো মিরাজ কে ডেকে আনতে।
ছোটন:-কিরে পাড়ার সব পোলা মাইয়া নদীর পারে চাঁদ দেখতাছে ফটকা ফুটাইতাছে তুই যাস নাই ক্যান?
মিরাজ:- ঈদ তো গরিব গো লাইজ্ঞা আল্লায় দেয়নাই দস্ত।
যাগো লাইজ্ঞা ঈদ দিছে ওরাই চাঁদ দেইখা আনন্দ করবো,আমরা না। বন্ধুর মুখে এমন কষ্টেরকথা শুনে ছোটন কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে আসে। ছেলের কান্না করা দেখে ছোটনের মা দৌড়ে আসে ছেলের কাছে।
ছোটনের মা:- কি হইছে বাজান,তুমি কানতাছো ক্যান?
ছোটন:-মা তুমি না কও ঈদ সব মুসলমান মানুষের লাইজ্ঞা আল্লাহর পুরস্কার।
তাইলে মিরাজগো লাইজ্ঞা ঈদ দিলোনা ক্যান?ছেলের মুখে এই কথা শুনে সব বুঝে ফেলেন ছোটনের মা।ঈদের দিন সকাল মিরাজের মা,ও মিরাজের মা?
মিরাজের মা:-ভাইসাব আপনে এত সকালে আমগো বাড়িতে আইলেন?
ছোটনের বাবা:-হ আইলাম,মিরাজের বাপ কই?
মিরাজের মা:-হেয় তো গফুর চাচার জমিনে গেল।
ছোটনের বাবা:-ঈদের দিনেও কি কামে যাওন লাগে,একদিন কাম না করলে কি হয়?
মিরাজের মা:-কাম না করলে খামু কি ভাইজান?
ছোটনের বাবা:-হুম হেইডাও ঠিক।
এই লও ব্যাঙটা ধরো,এইডার ভিতরে মিরাজের বাপের লাইগা একটা লুঙ্গি,তোমার লাইগা একটা শারি,আর মিরাজের লাইগা পাঞ্জাবি,পায়জামা আছে। আর এইটার ভিতরে সেমাই চিনি আছে। নামাজের পরে পোলারে নিয়া আমগো বাড়িতে যাইবা ঠিকআছে?
মিরাজের মা:-এগুলার কি দরকার আছিলো ভাইসাব?
ছোটনের বাবা:-আহা কথা কইওনাতো।
আমি গেলাম নামাজের সময় হইয়া যাইতাছে। মিরাজের মা একটা দীর্ঘস্বাস ফেলে উপরের দিকে তাকিয়ে বললো আল্লাহ তুমি মহান,এখনো তোমার দুনিয়াতে ভালো মনের মানুষ আছে। আজ ঈদের দিন নামাজের পরে মিরাজ আর ছোটন দুই বন্ধু কোলাকুলি করে হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে হাটতেছে। মিরাজের ঘারে ছোটনের হাত,ছোটনের ঘারে মিরাজের হাত।
সমাপ্ত।