কফিতে মুখটা ঠেকালো পারমিতা, চোখ টেবিলের উল্টো দিকে বসে থাকা নির্লিপ্ত সপ্তর্ষির দিকে। দুজন মুখোমুখি মৃদু আলোতে শহরের এক নামী রেস্তোরাঁয়। বিবিধ রঙের আলোয় সেই চেনা দুজন কেমন নতুন করে ফুটে উঠেছে একে অপরের কাছে। একজনের চেনা শহর, অন্যজনের অচেনা। কথা বলায় অনভ্যস্ত হয়ে পড়েছে দুজন, তাই কেমন ইতস্তত ভাব দুজনের মধ্যেই।
পারমিতা এই প্রথম এসেছে দিল্লীতে, বোনের কাছে থাকতে। একদিন সন্ধ্যায় কিভাবে যে দেখা হয়ে গেল, ভাবতেই পারেনি তা, প্রথম দেখে প্রায় চিনতেই পারছিল না সপ্তর্ষি, হবেই না বা কেন, আগের থেকে তো বেশ ওজন বেড়ে গেছে পারমিতার, একটু হলেও বয়সের ছাপ। তবে এক দেখাতেই অতীতের সপ্তর্ষিকে মিলিয়ে নিয়েছিল পারমিতা। সেদিন খুব ব্যস্ত ছিল সপ্তর্ষি তাই বিশেষ কথা বলতে পারেনি, শুধু নম্বরটা নিয়েছিল মনে করে। তারপর কেটে গেছে তিনটে দিন। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। পারমিতা শুয়ে আছে জানালার দিকে মুখ করে কিছু প্রত্যাশাকে বুকে আঁকড়ে ধরে। হঠাৎ পাশে পরে থাকা ফোনটা ভাইব্রেট করছে, একটা নম্বর 84226… হ্যালো বললো পারমিতা, ‘ঘুমিয়ে পড়েছো’ কথাটা সাড়া মস্তিষ্কের মধ্যে ধ্বনিত হলো। শুধু একটা কথা বললো কাল বিকাল পাঁচটায় রিজেন্টে(রেস্তোরার নাম) এসো।
প্রথম থেকেই সপ্তর্ষি মিতবাক, খুব শান্ত, তার থেকে বেশি বিনয়ী। তবে এত কম কথা, এত বছর পর দেখা হবার পরও। কিন্তু তার তো সারা রাত কথা বলতে ইচ্ছা করছিল। একবার ভাবলো ঘুরিয়ে ফোন করি, কিন্তু না। এই ভাবে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে পারমিতা।
সকাল কেটে বিকাল হয়েছে কোনক্রমে। কি একটা উদগ্র বাসনা পৌঁছে দিলো কফিশপে। সত্যি কথা বলার অভ্যাসটা হারিয়ে ফেলেছে দুজনেই। কি বা বলবে! দুজনের দুই অক্ষাংশে পাতা সংসার, দায়িত্ব কর্তব্যের বোঝা দুটি বাড়িতেই স্তূপ হয়ে আছে, একজন মা হয়েছে, আরেকজন বাবা সাথে দাম্পত্যের থাবা। দুজনের মনেই ঘুরপাক, কেন আবার এসব! দুজনেই একসাথে বলে উঠলো চলো এবার ওঠা যাক।
দুজনে দুইদিকে ফিরে পথ ধরলো, বিপরীতমুখী অন্তহীন সে পথ।