মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদের কেনাকাটা

মধ্যবিত্ত পরিবারের ঈদের কেনাকাটা

পরিবারের বড় ছেলে জাকারিয়া আহমেদ।ছোট দুইবোন এবং মা-বাবাকে নিয়ে তাদের সংসার। পরিবারের আয় রোজগারের এক মাত্র ভরসা হচ্ছে জাকারিয়া।দারিদ্র্যতার কারণে মাধ্যমিক পাশ করার পর তার আর পড়া-লেখা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ হয় নি।পরিবারের খরচ চালানোর জন্য শহরের একটা কাপড়ের দোকানে চাকরি নেয় সে।বেতন মাত্র ৫০০০ হাজার টাকা। যা দিয়ে তার নিজের হাত খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। থাকা খাওয়া ৩০০০ হাজার এবং নিজের এক মাস চলার জন্য ৫০০ টাকা রেখে সে বাকি ১৫০০ টাকা বাবার কাছে পাঠিয়ে দেয়।মাত্র ১৫০০ টাকা দিয়ে একটা পরিবার চালানো এটা কল্পনা ও করা যায় না।

অনেক কষ্টে জাকারিয়ার পরিবার চলত।আর মাত্র ৩৫০০ টাকা দিয়ে শহরের থাকাখাওয়া সহ এক মাস চলা এটা যারা শহরে থাকে একমাত্র তারাই বুঝবে কতটুকু কষ্টের।যাই হোক এভাবে তিন বছর চলার পর জাকারিয়ার বেতন আজ ৯০০০ হাজার টাকা।দোকানের মালিক মুরুব্বি চাচা অত্যন্ত ভালো মানুষ।জাকারিয়ার সততা দেখে তিনি মুগ্ধ। তাই তিনি জাকারিয়াকে নিজের ছেলের মত দেখেন। শুধু মাসিক বেতন ছাড়া ও তিনি জাকারিয়াকে হাত খরচের জন্য আলাদা টাকা দেন। দু দিন পর পবিত্র ঈদ তাই জাকারিয়া চাচার কাছ থেকে দুদিন আগে ছুটি চেয়ে নেয়।কারণ পরিবারের সবার জন্য তাকে কেনাকাটা করতে হবে। মুরুব্বি চাচা ও ভাল মানুষ তাই বেতন ও বোনাস সহ ১২ হাজার টাকা জাকারিয়াকে দেন। জাকারিয়া হাতে টাকা পেয়ে অত্যন্ত খুশি মনে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করে যে মহান আল্লাহ তায়ালা যেন চাচাকে অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখেন।

টাকা হাতে পেয়েই জাকারিয়া ছুটে চলেছে শপিংমলে। কারণ মা-বাবা- বোনদের জন্য ভালো কাপড় কেনাকাটা করতে হবে তাকে। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ঘুরতে ঘুরতে আলহামদুলিল্লাহ জাকারিয়া পরিবারের সবার জন্য ৯০০০ হাজার টাকার কেনাকাটা করে। সবার জন্য কেনাকাটা করলে ও নিজের জন্য কিছু কেনা হয় নি।আর হবেই বা কি করে সবার জন্য কেনাকাটা করতে গিয়ে ৯০০০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে হাতে আর মাত্র রইল ৩০০০ হাজার টাকা। এর থেকে নিজের জন্য কিছু কিনলে বাড়ি যাবে কি করে।আর বাড়ি গেলে অনেক খরচ সেটা সে কিভাবে সম্পন্ন করবে।তাই আর সে নিজের জন্য কিছুই কিনেনি। নিজের জন্য কিছু কিনতে না পারলে ও মা-বাবা-বোনদের জন্য কিনতে পেড়েছে এটাই তার কাছে অত্যন্ত খুশির বিষয়।

পরেরদিন খুশি মনে গ্রামের উদ্দেশ্য পা বাড়ায় জাকারিয়া। শহর থেকে গ্রাম ১ঘণ্টা রাস্তার। সময়মত গ্রামে গিয়ে পৌছায় জাকারিয়া। একমাত্র ছেলেকে দেখে অনেক খুশি জাকারিয়ার মা-বাবা। জাকারিয়া ও অনেক খুশি। মাবাবা ও বোনদের জন্য যা যা কেনাকাটা করেছে সে তা সব কিছু বের করে দেয়।বোনরা ঈদের কাপড় দেখে অনেক খুশি।কিন্তু যখন জানতে পারলো তাদের একমাত্র ভাই ঈদে নতুন কাপড় পড়তে পারবে না তখন এক নিমিষে তাদের চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু জাকারিয়ার মা-বাবা নিশ্চুপ। তাদের মুখে কথা নেই।কিছুক্ষণ পর আম্মু তাকে একটা কাপড়ের ব্যাগ হাতে দিয়ে বললেন দেখতো খোকা এগুলো তোর পছন্দ হয় কি না?

জাকারিয়া তখন পুরাই অবাক।কারণ ব্যাগের ভিতর ছিল একটা পাঞ্জাবি, প্যান্ট, আর একটা শার্ট।জাকারিয়ার এগুলো দেখে মা কে জিজ্ঞাসা করল আম্মু তোমাদের আমি মাসে মাত্র পাচ হাজার টাকা দেই।পরিবারের সদস্য চারজন। আর এটাকা দিয়ে এক মাস চলা অনেক কষ্টের। তার মানে তোমরা না খেয়ে আমার জন্য টাকা জমা করে এই কাপড় কিনেছো?কি দরকার ছিল মা এত কষ্ট করার?আমি তোমাদের হাসিমুখ দেখার জন্য এত কষ্ট করি। আর তোমরা….না এটা ঠিক কর নি? জাকারিয়ার মার তখন দুচোখে জল মিটমিট করতেছে।তাদের প্রতি ছেলের এত ভালোবাসা দেখে।আর জাকারিয়া কাঁদতেছে মাবাবার ভালোবাসা দেখে। হ্যা এভাবেই হয় মধ্যবিত্তদের ঈদের কেনাকাটা। বাস্তবে জাকারিয়ার মত হাজারো ছেলেরা পরিবারের মুখে হাসি-ফুটানোর জন্য নিজের শরীলের রক্তকে পানি করে ফেলে। আমি শুধু সেই সব মানুষ বিশেষ করে আপুদের বলতে চাই,,,,, ছেলেরা বখাটে, ধান্ধাবাজ,ধোঁকাবাজ ধর্ষণকারী হয় না।

–বখাটে,ধান্দাবাজ, ধোঁকাবাজ, ধর্ষণকারী হয় ছেলেরুপি পশুরা। আর একজন পুরুষ /ছেলে হয় মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষাকারী, নিজে দিন রাত পরিশ্রম করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোকারী।এসব ছেলেরা মেয়েদের রাস্তায় দেখলে বাজে কথা, হাসিঠাট্টা করে না।এরা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে। প্রিয় আপুদের বলবো প্লিজ আপনারা ছেলেদের খারাপ ভাববেন না।যেনে রাখবেন এক গাছের ফল সবকটি মিষ্টি হয় না।আর সব মানুষ মানুষ হয় না কিছু মানুষ মানুষরুপি পশু হয়।এই কথাটা মনে রাখবেন।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত