“আরে ভাই আসছি। আর এক ঘন্টা লাগবে।“ ফোনে রিতমকে বলে দীপাঞ্জন ওরফে দীপু। রিতম দীপুর জীবনের সবথেকে দুঃখের সময়ের বন্ধু। মানে ঐ উচ্চমাধ্যমিকের পর যখন ড্রপ দিয়ে মেডিক্যালের জন্য পড়ছিল তখনকার রুমমেট।
তো ওরা ঠিক করেছিল পনেরো বছর পর ওরা সবাই এক সাথে দেখা করবে। আইডিয়াটা ছিল সৌরভের।
তখন এই প্লানটা নিয়ে সবথেকে বেশী আগ্রহ ছিল উজ্জ্বল আর সম্বিতের। আজ ওরা দুজনাই আসবেনা, ভাবতে ভাবতে ট্রেনের জানালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দীপু।ফিরে যায় সেই সব পুরানো দিনে।
চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে মফস্বলের ছেলে দীপাঞ্জন এসেছিল কলকাতায়। ও যেখানে থাকত সেখানে ওর রুমমেট রিতম আর সৌরভ।
পাশের রুমে থাকত সম্বিত আর উজ্জ্বল। সম্বিত আর দিপু পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল। রিতম আর উজ্জ্বল চেষ্টা খুব করতো কিন্তু কোথাও যেন খামতি থেকে যেত। সৌরভ বাড়ি বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে একটু বেশীই উড়ে গেছিল। সারাদিন গাঁজা মদ, পড়াশোনাটা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল।
সম্বিত আর দীপুর মেডিক্যালে চ্যান্স হয়ে গেছিল যদিও দীপুর আরও একবছর বেশী সময় লেগেছিল। রিতম তারপর একটা প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়েছে। রিতমকে দিপু খুব ভালোবাসতো,ওর সরল মনটা বেশ ভালো লাগতো। এখন অবশ্য ওর নামে খারাপ কথাই শোনে বেশী।
আচমকা রিমির মেসেজের শব্দে হুঁশ ফেরে ওর। “লাভ ইউ বেবী,সাবধানে যেও।“ এর উত্তরে “লাভ ইউ মাই লাভ” লিখে পাঠায় দিপু। রিমিকে খুব ভালোবাসে দিপু। মেয়েটা সবকিছুই খুবই নিপুণভাবে করতে পারে,ভালোবাসাটা তার মধ্যে অন্যতম।
বাইরে কালবৈশাখীর মেঘ দেখতে দেখতে আবার হারিয়ে যায় দিপু। হঠাত্ করে মনে হয় সেদিন একটা সামান্য চশমা নিয়ে অত ঝামেলা না করলেই হত।
উজ্জ্বল একদমই প্রান্তীয় এক গ্রাম থেকে এসেছিল। বড্ড হাবাগোবা ছিল আর অন্ধকারে খুব ভয় পেত। দীপুর ওকে খুব অসহ্য লাগতো ওর বোকা বোকা কথার জন্য। একদিন দীপুকে না বলে ওর সানগ্লাস নিয়েছিল উজ্জ্বল।
দিপু রাতে খাওয়ার পর যখন লক্ষ্য করল তখন হন্যে হয়ে খুঁজে যখন জানতে পারলো উজ্জ্বল নিয়েছে,তখন রেগে বোম হয়ে ওকে গালাগাল দিতে লাগল। তখন সম্বিত বলল, “চোর তাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে বুঝলি।আমার রুমেই থাকে কোন দিন দেখব আমার জিনিস ঝেপে দিয়েছে। এমনিতেই ওর খুব বার বেড়েছে।“ উজ্জ্বল বলল, “শোন তুই তো কথা একদমই বলিসনা। আমি চুরি করিনি,আমি শুধু ছবি তোলার জন্য নিয়েছিলাম তারপর ফেরত দিয়ে দিতাম।“
“চুপ একদম চুপ” বলে ওঠে সম্বিত।“যা রিতম ওকে আমাদের রুমে রেখে লাইট পাখা সব বন্ধ করে বাইরে থেকে আটকে দে।আর আমি এই ঘরের মেন সোইচটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিচ্ছি।“ দিপু বলল” এটা কী ঠিক হবে?” “আরে হ্যাঁ, একদিন এমন শিক্ষা দিলে পরদিন থেকে এমন আর করবেনা।“ বলে সম্বিত। “কিন্তু যদি চিত্কার করে?” বলে রিতম। দিপু বলে ওঠে “মুখ বেঁধে দিয়ে আসি মালটার, ওর ফোনটাও নিয়ে আয়, আর দরজা ধাক্কালেও কেও শুনতে পাবেনা কারণ এই বাড়িতে তো শুধু আমরাই আছি। দুটো বাড়ি ছাড়িয়ে শব্দ অবশ্যই পিজির আঙ্কেলের কানে যাবেনা।
সৌরভ বলল,” ভাই এসব কিন্তু ঠিক না।“ “কিছু জানিসনা চুপ থাক।আমায় ছোটলোক বলা, আজ তোকে মজা দেখাবো।“ দাঁত খেঁকিয়ে ওঠে সম্বিত। পরদিন যে এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে তা বোধ হয় সৌরভও আন্দাজ করতে পারেনি।
রাতে সম্বিত দীপুদের ঘরেই শুয়েছিল। মাঝরাতে হঠাত্ ওর কী মনে হল উঠে নিজের ঘরে গেল। ঢুকে দেখে উজ্জ্বল মরার মতো খাটের এক কোণায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে পড়ে আছে। সম্বিত দীপু আর রিতমকে ডাকল। দীপু দেখে বলল, “মরে গেছে মনে হয়। এবার আমরা শেষ। রিতম জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু মরলো কীভাবে?” দীপু গুগল সার্চ করে বলল, “Nyctophobia.” সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। রিতম বলল, “আমাদের পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত।“ সম্বিত বলল, “না না পাগল নাকি? ছাদে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেব তাহলেই কেও বুঝতে পারবেনা।“ অনিচ্ছা থাকলেও দুজন সম্বিতের কথা মতোই কাজ করল।
যখন বডিটা নিয়ে ছাদে সবে উঠল পেছন থেকে এসে সৌরভ বলল,কী করছিস তোরা? আমি এখনই গিয়ে পিজি আঙ্কেলকে সব বলব।“ সম্বিত রাগ দেখিয়ে বলে “তাহলে আমরাও বলব তুই সব করেছিস। এখন নিজে বাঁচতে মিথ্যা গল্প সাজাছিস। তুই কিন্তু এক আমরা কিন্তু তিন।“ সবাই ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল সম্বিত উজ্জ্বলকে ধাক্কা দিতেই সবাই দৌড়ে নিচে চলে এল।
ভারী কিছু পড়ার শব্দে যখন পাড়ার লোকজন বেরিয়ে এল ওরা তখন বেরলো। পুলিশ এল। সবাইকে জেরা করল। সৌরভ ভয়ে সত্যিটা বলতে পারলোনা। পিজির কাকুও অনেকক্ষণ পুলিশের সাথে কথা বলল, যাতে এটা নিয়ে বেশী জলঘোলা না হয়। ‘উপঢৌকন পেয়ে পুলিশও ওটাকে সুইসাইড বলে দিল। “মেডিক্যাল পড়তে এসে পড়ার চাপে ছাত্রের মৃত্যু” শিরোনামে হল পড়ের দিন কাগজে। দীপুর মেন পরে সম্বিত সারাক্ষণ হা করে উজ্জ্বলের বাড়ির লোকেদের দিকেই তাকিয়ে ছিল। দীপুর মনে পড়ে ওর মা বলেছিল “বাবু তুই এমন কখনও করিসনা। ওর মায়ের তো তাও আর একটা আছে। আমার তো শুধু তুই আছিস বাবু।“ দীপু বলেছিল, “না, মা। আমি কখনো এমন করব না।“ এসব ভাবতে ভাবতেই স্টেশন চলে এল।
শিয়ালদা স্টেশনে নেমেই চলে যায় এক নং প্লাটফর্মের বাইরে যেখানে আজ ওদের দেখা করার কথা। গিয়ে দেখে সৌরভ দাঁড়িয়ে, এক হাতে ফোন আর আর এক হাতে সিগারেট। রিতম চা খাচ্ছিলো। দৌড়ে এসে দীপুকে জড়িয়ে ধরলো।
দুজন কুশল বিনিময় করছে তখনই সৌরভ বলে উঠল “ আজ উজ্জ্বল আসলেও কত ভালো হত বল।“
রিতম রেগে গিয়ে বলল “তুই চুপ করবি” “যতসব আজেবাজে কথা।“
সৌরভ:- “সেই, আমি বললেই আজেবাজে তোরা করলে কিছুনা। “
রিতম বলল, “ছাড় এসব, চল আমাদের কোচিং যাওয়ার রাস্তায় যাই। আজ খুব নস্ট্যালজিক হতে ইচ্ছা করছে।“ ওরা অটো ধরে ওখান থেকে গুরুদাস ব্যানার্জি হল্টের দিকে গেল। সৌরভ ফোনে চ্যাট করেই যাচ্ছিল। ফোনটার পাসওয়ার্ড খোলার সময় ওর পাসওয়ার্ডটা দিপুর চোখে পড়ে গেল। রিতম বলল, “ভাই আমাদের সাথেও একটু কথা বল। কার সাথে এত কথা বলছিস? আমাদেরকেও দেখা তাহলে।“ সৌরভ বলল “কোনো দরকার নেই,তোদেরকে দেখানোর কোনো প্রশ্নই আসেনা। শুধু আর কিছুদিন তারপর আমার কত দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে।“
রিতম বলল, “ঠিক আছে তারপর বৌদির সাথে দেখা করাস।“ রিতম আবার বলল, “ দীপু সম্বিতের ব্যাপারটা কী করে কী হল জানিস কিছু?” দীপু মুখে শুধু বলল, “না”। চোখের সামনে অনেক গুলো ছবি একসাথে খেলে গেল। খাদ, ধাক্কা, একবছর পরে দিপু চান্স পেয়েছিল বলে সম্বিতের খিল্লি, সম্বিতের সার্জারিতে পোস্ট গ্রাজুয়েসন করা,সেখানে দীপু সামান্য মেডিক্যাল অফিসার, আর….
“কিরে দীপু নামবিনা, চলে এসেছি।” বলল রিতম। নেমে গেল ওরা। তারপর সিড়ি দিয়ে উঠল গুরুদাস ব্যানার্জি হল্টে। এই সদাব্যস্ত শহরে একটা শান্ত জায়গা, কোচিং এর সময় কোনো দিন মন খারাপ হলে এখানে আসতো ওরা।
সৌরভ দীপুর হাতে একটা কোটো দিয়ে বলল, “মা ডাক্তার বাবুর জন্য পাঠিয়েছে, বলল, দিপু খুব ভালো ছেলে, তালের বড়া খুব ভালোবাসতো, ওকে দিস। মাকে কীকরে বোঝাবো শুধু পড়াশোনায় ভালো হলেই ভালো হওয়া যায়না। কাছে রাখ রাতে খাস।“
রিতম সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, “সৌরভ পুরনো কথা থেকে বেরিয়ে এখন ভদ্রভাবে লাইফটা বাঁচলেই হল।“
দীপু বলল, “রিতম তুই নিজেকে এত আদর্শবাদী দেখাচ্ছিস তুই নিজেও তো আজকাল খুব একটা ভদ্র কাজ করছিসনা।“ রিতম বলে ওঠে, “মানে, কী বলতে চাইছিস?” দীপু বলল, “কিছুনা, মজা করলাম। চল হিসু করে আসি ডকইয়ার্ডের ওখান থেকে। মনে আছে, কোচিং থেকে যে যে দিন হেঁটে ফিরতাম ওখানে হিসু করে ফিরতাম।“ “সৌরভ তুইও চ।“ বলল রিতম।
সৌরভ বলল, “ তোরা যা, আর তাড়াতাড়ি আসিস বৃষ্টি নামবে এখনই। মেঘ ডাকছে।“ রাস্তা পাড় করতে করতে রিতম বলল, “দীপু তুই একটুও পাল্টাসনি এখনও হিসু বলিস।“ ডকইয়ার্ডে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই আকাশ অন্ধকার করে জোরে বৃষ্টি নেমে এল। বৃষ্টিতে ভিজেই প্রসাব করে ফিরছে তখন দীপু বলল, “ভাই ফোনটা দে তো আমার ফোনটা কাজ করছেনা। বাড়িতে ফোন করব।“ ফোনটা নিয়ে হঠাত্ করে অন্ধকারে দীপু কোথায় উধাও হয়ে গেল।
রিতম দীপু দীপু বলে ডাকতে লাগলো। হঠাত্ পেছন থেকে ভারি কিছুর একটা মাথায় লাগল। রিতম অজ্ঞান হয়ে গেল। দীপু ব্যাগ থেকে একটা চাকু বের করে নৃশংসভাবে পেটে কোপাতে থাকে। আর চিল্লাতে থাকে, “তুই আমার রিমির পেছনে লাইন মারবি। ওকে অশ্লীল প্রস্তাব দিবি। তুই আমার বন্ধু হতে পারিস কিন্তু আমার আর রিমির মাঝে যে আসবে তাকে আমি ছাড়বোনা।“
এবার দীপু রিতমের ফোন থেকে ফোন করে সৌরভকে বলল, “ভাই রিতম পা পিছলে পড়ে গেছে,খুব লেগেছে তুই তাড়াতাড়ি আয়। সৌরভকে মারার কোনো ইচ্ছা ছিলনা দীপুর। ভেবেছিল এত কিছুর পর ও আর আসবেনা। কেন যে এল। এই প্ল্যানটাও অবশ্য রেডি ছিল ওর। প্রমাণ লোপাট তো করতেই হবে। দীপু অন্ধকারে লুকিয়ে ছিল, সৌরভ আসতেই পেছন থেকে এক কোপ বসালো পিঠে। তারপর দুজনকেই অজস্র বার কোপাতে থাকে যতক্ষণ মাথা ঠান্ডা না হয়। দুজনকে পুরো মরে গেছে নিশ্চিত হয়েই দুজনকে ঝোপে লুকিয়ে দিয়ে ওদের সব জামা কাপড় ফোন নিজের সাথে নিয়ে এল যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে।
স্টেশনে এসে শুকনো জামা প্যান্ট পরে ট্রেনে উঠে বসে মুচকি হাসে আর মনে মনে ভাবে মিশন কমপ্লিট আর তালের বড়া গুলো খেতে থাকে। দিপু রিতম আর সৌরভের ফোন বের করে ফেলে দেওয়ার জন্যে। সৌরভের ফোনটা নিয়ে ওটার পাসওয়ার্ড খোলে দীপু।
ফোনের দিকে তাকিয়ে দীপুর হাত কাঁপতে থাকে, সৌরভ ঊজি বলে যে মেয়েটার সাথে চ্যাট করছিল তার ডিপিতে রিমির ছবি দেওয়া। শেষ চ্যাটটা এরকম,
“ বড়া গুলো কিন্তু এখন খেতে দেবে না। নজর রাখবে যেন পড়ে খায়।“
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, তোমার জন্যে আমি সব করতে পারি। শোনো না চুমু খা…”
মাথা ঘুরতে থাকে দিপুর চোখের সামনে মুহুর্তের মধ্যে ভাসতে থাকে সম্বিতের চোখ এড়িয়ে রিমির সাথে পরকীয়া, প্ল্যান করে সম্বিতকে খাদ থেকে ধাক্কা দেওয়া, রিমি বলেছিল রিতম ওকে খুব বিরক্ত করে তার বদলা নিতে আজ চরম অনিচ্ছা থাকলেও প্ল্যান করে রিতমকে মারতে আসা।
মাথা ঘুরে পড়ে যায় দিপু। সহযাত্রীরা ধরাধরি করে যতক্ষণে পরের স্টেশনে নামিয়েছে ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।
হাওড়া স্টেশনে খবরে দেখাচ্ছিল, অজ্ঞাত কারণে ট্রেনে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু এক যাত্রীর। আপাতত পাওয়া খবরে ওনার নাম দিপাঞ্জন বসাক।
মুচকি হেসে ট্রেনের লিস্ট থেকে নাম মিলিয়ে দেখে উজ্জ্বয়িনী সাহা। পেছন থেকে মা বলে, “রিমি তোর যে হঠাত্ করে একা দিল্লি যাওয়ার কী বাই উঠল কে জানে। যাই হোক সাবধানে যাস মা।“
ট্রেনে উঠে রিমি ভাবতে থাকে পুলিশের ওকে খুঁজে পেতে বেশী দিন লাগবেনা। তার আগে ও অন্তত মানালি পর্যন্ত যেতে চায়। বাড়ির সাথে একবারই গেছিল, দাদার খুব প্রিয় জায়গা ছিল।
মনে পড়ে দাদা একদিন বলেছিল সম্বিত নাকি বলেছিল, “তোর বোনটাকে সেই দেখতে,লাইন লাগিয়ে দে।“
উজ্জ্বল বলেছিল, “তুই অনেক মেয়ের সাথে ঘুরিস, সবার সাথে ফ্লার্ট করিস, তোর মতো ছোলোককে আমি কিছুতেই আমার বোনের আশেপাশে ঘেঁষতে দেবনা।“
সম্বিত রেগে বলেছিল, “তোর খুব বার বেড়েছে। আমি তোর বোনের বিয়ে করব, দেখে নিস।“
উজ্জ্বয়িনী এখন বোঝে সেদিন সম্বিত বিয়ের কথা বলেনি আরো বাজে কিছু বলেছিল। দাদা আশ্বস্ত করেছিল সব ঠিক হয়ে যাবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই…
কান্না চলে আসে উজ্জ্বয়িনীর চোখে। এমন কী যেদিন ওরা গেছিল ছোটলোকটা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল।ও বুঝেছিল বাকিরাও সব জানে কিন্তু কিছু বলছেনা। নাইন এ পড়া বাচ্চা মেয়েটা সেদিন কিছু বলতে বলতে পারেনি কিন্তু ঠিক করে রেখেছিল এর শেষ দেখে ছাড়বে।
ছোটলোকটা আবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল, সরল মাও বাপ দাদা মরা মেয়েটাকে ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে চাইল।
তখনই উজ্জ্বয়িনী সব প্ল্যান করে। দিপাঞ্জনকে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিতে থাকে। দিপাঞ্জনও ওকে পেতে পাগল হয়ে যায়। দুজন প্ল্যান করে সম্বিতকে খাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে মেরে দেয়। উজ্জ্বয়িনী ততদিনে বুঝে গেছে একটা মেয়ের একটু রূপ আর অনেকটা মেকি সরলতা দিয়ে সব করানো যায়।
তারপর অশ্লীল প্রস্তাবের মিথ্যা কথা বলে দিপাঞ্জনের মনে ওর একদা বেস্টফ্রেন্ডের নামে হিংসার বীজ বপন করতে থাকে। ওদিকে সৌরভকে ভালোবাসার আর পাপের প্রায়শ্চিত্ত আশা দিয়ে ওকে দিয়ে বিষ দেওয়া তালের বড়া পাঠায়।
উজ্জ্বয়িনী আগে থেকেই জানতো দীপুর হাতে দুজনেরই মৃত্যু হবে। আর শেষে প্রিয় তালের বড়া খেয়ে দীপাঞ্জনের…
একই সাথে মুখে হাসি আর চোখে জল আসে উজ্জ্বয়িনীর। জানালা দিয়ে ঝড়ের রাতের পর নতুন দিনের সূর্য ওঠা দেখতে থাকে উজ্জ্বয়িনী …