বাসর রাতে স্বামী জিজ্ঞেস করলো
-তুমি আমার কাছে কি চাও বলো।
-একটা কেঁচি।
-কেঁচি!
-হ্যাঁ কেঁচি। যাও নিয়ে আসো।
ও আমার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে তারপর টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা কেঁচি এনে এগিয়ে দিয়ে চুপ করে আমার পাশে বসলো। আমিও ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হেসে বললাম- পেছনে ফিরে বসো।
– মানে কি নেহা! পেছনে ফিরবো কেন?
– আমি বলছি যখন তখন কোনো কথা না বলে চুপচাপ পিছনে ফিরে বসো। মেয়েদের মতো চুলে ঝুঁটি করেছো কেন? ছেলেদের বড়ো চুল আমার পছন্দ না। তাই তোমার ঝুটিটা আমি এখন কাটবো।
-প্লিজ এরকম করো না, এক বছর ধরে কত্তো যত্ন করে চুলগুলো বড় করেছি।
আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম – তুমি কি পিছনে ফিরবে?
– ইয়ে মানে ই ইয়ে………
-তুমি যদি না ফিরো তাহলে..
ও ভয়ে ভয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো – তাহলে কি হবে?
– তাহলে আমি আমার নিজের চুল কেটে ফলবো।
-মানে!
-হ্যাঁ, যদি তোমার চুল বড় থাকে তাহলে আমি আমার চুল কেটে ফেলবো। আর যদি আমার চুল বড় দেখতে চাও তাহলে তোমার ঝুঁটি কাটতে হবে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও জামাই আমার মুখ কালো করে পিছনে ফিরে বসলো। আমি চুলগুলো কুচকুচ করে কেঁচি দিয়ে কেটে ফেললাম। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– ওলে আমার জামাইটা, রাগ করলা বুঝি। থাক শুনো, আমি তো আর নাপিত না যে অতো সুন্দর করে চুল কাটতে পারবো। কালকে সকালে সেলুনে গিয়ে সুন্দর করে চুলে একটা কাট দিয়ে আসবা।
সকালে ও রুম থকে বের হওয়ার পরে সবাই তো দেখে অবাক। আমার ছোট ননদটা ওর দিকে তাকিয়েই খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
– কিরে ভাইয়া, তোর ঝুঁটি কই?
শাশুড়ী মা তো একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে আর একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বললো – কিরে রাশেদ, তোর মোরগঝুঁটি উধাও হলো কি করে।
ও আমার দিকে তাকিয়ে তারপর হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শাশুড়ী মা তো হাসতে হাসতে শেষ। আমাকে জিজ্ঞেস করলো – কি করে করলে এই মহৎ কাজ? যেটা আমরা কেউ পারিনি সেটা করে দেখিয়েছো দেখি বৌমা।
আমি কি আর বলবো, লজ্জায় লাল হয়ে গেছি। ইতিহাসে আমিই একমাত্র বউ যে কিনা বাসর ঘরে জামাইয়ের ঝুঁটি কেটে দিয়েছি।
শাশুড়ী মা খুশি হয়ে বললেন – যাক, অবশেষে মাথার মোরগঝুঁটি টা কাটতে পারলে। আজকালকার ছেলেমেয়ের কখন যে কি ভূত মাথায় চাপে কে যানে! তবে কখনো যদি তোমাকে ও এই ব্যাপারে কিছু বলে তাহলে আমাকে বলবে।
শাশুড়ী মায়ের সাপোর্ট পেয়ে আমার সাহসটা যেনো আরো বেড়ে গেলো। ছোট ননদ মাইশা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো – ভাবি এই খুশিতে বলো তুমি আমার কাছে কি চাও?
আমি হেসে উত্তর দিলাম – একটা নেইল কাটার চাই।
– ভাবি তুমি নেইলকাটার দিয়ে কি করবে?
-নখ কাটবো। যাও নিয়ে আসো।
ননদিনী আমার, রুমে গিয়ে সুন্দর একটা নেইল কাটার নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বললো – নাও, এটা আমি তোমাকে গিফট হিসেবে দিলাম।
– আচ্ছা ঠিক আছে, এবার আমার সামনে চুপটি করে বসো।
– কেনো!
– নখ কাটবো।
– ইয়ে ভাবি, কার নখ কাটবে?
– তোমার নখ। এতো বড় নখ রাখা ভালো না, নখ বড় রাখলে পেটে জীবাণু যাবে। তারপর অসুখ হবে।
মাইশা কি করবে বুঝতে না পেরে যেই রুমের দিকে দৌড় দিবে ওমনি রাশেদ এসে ওকে খপ করে ধরে আমার সমনে বসিয়ে দিলো। আমি ওর নখ কাটছি আর রাশেদ ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। আমার শাশুড়ী মাও দেখছেন আর হাসছেন। আর আমি বলে যাচ্ছি – মাইশা, এতো নড়াচড়া করো না, হাত কেটে যাবে।
এমন সময় আমার দেবর আসলো। এই অবস্থা দেখে ও তো হেসেই গড়িয়ে পড়লো। ওর সাথে আমিও দাঁত কেলিয়ে বললাম – রাহাত, একটা সুই আর সুতা এনে দিতে পারবে?
-কেন ভাবি?
– তোমার ছেঁড়া প্যান্টগুলো সেলাই করবো।
– আরে ভাবি, এটা ছেঁড়া না। এটা হলো স্টাইল।
– হ্যাঁ স্টাইল। দেখছো না তোমার ভাইয়া আর মাইশার স্টাইল কেমন ফুসস হয়ে গেছে। এসব ফালতু স্টাইল বাদ দাও। আর যা বললাম নিয়ে এসো।
– আচ্ছা ঠিক আছে আনছি।
বলেই আমার দেবর প্রায় এক সপ্তাহ নিরুদ্দেশ। আর আমার স্বামী তো চুল এক ইঞ্চি লম্বা হলেই ভয়ে সেলুনে গিয়ে ছোট করে আসে। মাইশা যে নেইলকাটার টা আমাকে দিয়েছিলো ঐটা গোপনে আমার রুম থেকে লুকিয়ে ফেলেছে, যদিও আমি তা জানি।
বিয়ের প্রায় এক মাস পরে আমার বার্থডে তে ও আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়। সারাদিন ঘুরাফেরা করলাম তারপর শপিং করতে গেলাম। আমি তো খুশিতে গদগদ হয়ে ওকে বললাম
– ওলে আমার জামাইটা,,কত্তো ভালো। আচ্ছা বলো তুমি আমার কাছে কি চাও।
– একটা টিস্যু।
টিস্যু, এ আর এমন কি! আমি ব্যাগ থেকে একটা টিস্যু বের করে ওকে দিলাম। আর ওমনেই ও আমার সাজগোজ, লিপস্টিক, আইলাইনার, মাসকারা, আইশেডো সব টিস্যু দিয়ে পুরো মুখ লেপ্টে পেত্নীর মতো করে দিলো। আর বললো – এতো সেজেছো কেন? এতো স্টাইল করা মোটেও ভালো না।
আমি শপিংমলে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ও তাহলে আমার কাছ থেকে চুল কাটার প্রতিশোধটা নিয়েই নিলো!