গল্পটা বাকি ছিলো

গল্পটা বাকি ছিলো

লন্ডন থেকে ২য় বারের মতো দেশে ফিরলো জেবিন।জেবিন লন্ডনে পড়াশোনা করে। সেখানে চাচা-চাচির বাসায় থাকে।অার জেবিনের মা-বাবা দেশে থাকে। এবার জেবিন দেশে ফেরায় তার বাবা-মা তাকে বিয়ের জন্য জোর করতে থাকে।তারা অাগে থেকেই একটা ছেলেকে দেখে রেখেছে। ছেলেটার নাম রাহিল।ছেলেটার বাবা একজন বড় ব্যবসায়ী।তবে ছেলেটা নিজেও গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।কিন্তু তার বাবার চাপে সে এখন ব্যবসা দেখাশুনা করছে। জেবিন অনেক জোরাজোরি করবার পর ছেলেটার সাথে দেখা করতে রাজি হয়।জেবিন রাহিলকে পরনির্ভরশীল ছেলে ভাবে।সে নিজে কিছু না করে বাবার প্রতিপত্তির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে অাছে।

অন্যদিকে রাহিল ছোট থেকেই নিজে কিছু করার ইচ্ছা।সে সবসময়-ই ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছে মানুষের জন্য।
তার মা মারা যাবার পর রাহিলের বাবা রাহিলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দিনরাত পরিশ্রম করে ব্যবসাটা দাঁড় করিয়েছেন।রাহিল গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে নিজে থেকে কিছু করতে চাইলেও সে তার বাবার কথা ফেলতে পারে নি।ব্যবসাতেই মন দিয়েছে।অার তার বাবার কথা ফেলবেই বা কি করে,যে বাবা তার জন্য এতো কিছু করেছেন তার কথা না রাখাটা হবে অন্যায়।অার দেশ বা মানুষের জন্য কিছু করার সময় তো এখনো চলে যায় নি।

জেবিন অার রাহিল প্রথম দেখা করতে অাসলো একটা কফি শপে।প্রথমদিন তারা ভালোভাবে কথা-বার্তা বললো পরিচিত হলো। তারপর তারা অাবার দেখা করলো কয়েকদিন পর।এভাবেই চলছিলো। মূলত জেবিন রাহিলের সাথে দেখা করতো যাতে তার বাবা-মা অন্য কোন ছেলে না দেখে তার জন্য।সে ঐ দিক দিয়ে লন্ডন ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। অন্যদিকে রাহিল বিয়ের প্লানিং করতে থাকে।জেবিনকে তার খুব ভালো লাগতে শুরু করে।অার জেবিন মুখে কিছু না বললেও বিয়েতে রাজি এমন ভাব দেখায়।

কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন জেবিন রাহিলকে দেখা করতে বলে।তারপর জেবিন রাহিলকে অপমান করে দেয় অনেক কিছু বলে।সে নিজে কিছু করে না বলে তাকে অপদস্হ করে।অারও নানাভাবে কথা শোনায় অার বলে দেয় তার পক্ষে কখনো রাহিলকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। অাসলে জেবিন মূলত চেয়েছিলো রাহিল যাতে নিজে থেকেই বিয়েটা ভেঙে দেয়।সে লন্ডনে গিয়ে অারও পড়াশোনা করতে চায়।তাই এখনই বিয়ে করতে চায় না। সে তার পরিকল্পনায় সফল হয় এবং লন্ডন চলে যায়। তারপর অারও কয়েকটি বছর কেটে যায়।জেবিন তার পড়াশোনা একেবারে শেষ করে দেশে চলে অাসে। এবারে অার জেবিনের বাবা-মা তাকে জোর করে না বিয়ের জন্য।জেবিন একটা চাকরি করে।

একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হয় জেবিন।তার দুটো চোখ ই নষ্ট হয়ে যায়। তবে তার বাবা-মা দ্রুতই দুটো ভালো চোখ জোগাড় করে ফেলে।তার কয়েকমাস পর জেবিন দৃষ্টিশক্তি পুনরায় ফিরে পায়। জেবিন একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছুদিন হলো।তাদের প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে তারা মাসে একবার বৃদ্ধাশ্রমে যায়।সেখানে বয়স্কদের সাথে অাড্ডা দেয়,গল্প করে,তাদের সাথে সময় কাটায়।

এবারই প্রথম এই কর্মসূচির অাওতায় ঢাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে অাসে জেবিন।বৃদ্ধাশ্রমের নাম ‘অপরাজিত’।
সারাদিন খুব ভালো সময় কাটে তাদের সাথে জেবিনের। অাসলেই তারা অপরাজিত।কতো কষ্ট করে তারা ছেলে মেয়েদের মানুষ করেছেন।তাদের ভবিষ্যতের জন্য নিজেরা কখনো হাল ছাড়েন নি।এখনও তারা শুধু সন্তানের সুখ ই কামনা করেন।সত্যি তারা কখনো হারে না।তারাই চিরজীবন অপরাজিত থাকে।

একটা ব্যাপার খুব নজরে এলো জেবিনের।প্রত্যেকটা বুড়ো-বুড়ি একজনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তিনি নাকি এই বৃদ্ধাশ্রমের মালিক।সবাই তাকে ‘ছেলে’ বলে সম্বোধন করে।সে নাকি সপ্তাহে ৪ দিন ই তাদের সাথে সময় কাটায়। এতো প্রশংসা শুনে লোকটাকে একটু দেখতে ইচ্ছে করে জেবিনের।কিন্তু অাজকে নাকি সে অাসে না বৃদ্ধাশ্রমে।তবে তারা বলে দেয় কোথায় গেলে তাকে পাওয়া যাবে।

জেবিন বট গাছটার নিচে দেখতে পাচ্ছে একজন লোক বসে অাছে।লোকটাকে চেনা চেনা লাগছে জেবিনের।
জেবিনের স্পষ্ট মনে পড়ে যায় কয়েক বছর অাগের কথা। হুম এটা সেই বিজনেসম্যান বাবার পরনির্ভর ছেলে রাহিল। জেবিন অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে অাছে কিন্তু তার দিকে তাকাচ্ছে না রাহিল। কিছুক্ষণ পর রাহিল অন্যদিকে তাকিয়ে বললো..

>>জ্বি অামি ভুল না করলে অামার অাশেপাশে কেউ অাছে।(রাহিল)
>>হুম।(জেবিন)
>>কিছু বলার থাকতে বলুন।(রাহিল)
>>বৃদ্ধাশ্রম টা কী অাপনার??(জেবিন)
>>অামি ভুল না করলে অাপনি জেবিন।তাইতো??
>>তো চিনেও না চেনার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে অাছেন কেনো?
>>অাপনাকে অবজ্ঞা করছি।হা হা
>>কয়েক বছর অাগের ঘটনার জন্য অাসলে অামি দুঃখিত।
>>অামি জানি অাপনি পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
>>অাসলেই তাই।অামি অাপনাকে অাসলে একরকম ব্যবহার ই করেছিলাম অামার স্বার্থ হাসিলের জন্য।
>>তবে অাপনার তো কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো না।

অাজ উঠি তবে অাবার পরে কথা হবে। এটা বলতে বলতে রাহিল একটা লাঠি হাতে উঠে দাঁড়ালো।কিন্তু অন্ধের লাঠি রাহিলের কাছে কেনো?? অবশেষে জেবিন বুঝতে পারে রাহিল চোখে দেখতে পায় না। পরেরদিন জেবিনের কাছে একটে চিঠি অাসে, জেবিন, চিঠিটা পড়ছো।অার লেখাগুলো ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছো তো।তুমি দেখতে পেলেই অামি পাবো দেখতে।

অামার চক্ষুদানের বিষয়টি তুমি জানতে পেরেছো সেটা অামি জেনেছি।শুধু মনে রেখো এটা কোন দান নয়,এটা হলো ভালোবাসা।তাই কখনো নিজেকে করুণার পাত্র ভাববে না।অার হ্যাঁ বৃদ্ধাশ্রমটা দেখে রেখো ইতি ব্যবসায়ী বাবার পরনির্ভর ছেলে রাহিল জেবিন চিঠিটা পড়ে কাঁদছে।অাচ্ছা তার এই চোখ দিয়ে কাঁদলে কী রাহিলও কাঁদবে?? তবে তো অার কান্না করা যাবে না।কিন্তু রাহিল কোথায় যাচ্ছে?? কিছুক্ষণ পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো রাহিল দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে একেবারে। জেবিন বিমানবন্দরের দিকে ছুটছে এই অাশায় হয়তো রাহিল ফ্লাইটটা মিস করবে।কারণ তার গল্পটা যে তখনো বাকি ছিলো…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত