আনিসের মনটা আজ বেশ ভালো।তাই ওর একটু ভয়ও লাগছে।যেদিন যেদিন ওর মন বেশ ভালো থাকে সেদিন সেদিনই ওর সাথে কোনো না কোনো অঘটন ঘটেই থাকে।তবে আজকে তেমন কিছুই ঘটছে না।উল্টো আজকের দিনটা শুরু হয়েছে ২ টা ভালো খবর দিয়ে।প্রথমত আজকে সকালেই ডাকে করে একটা চিঠি এসেছে।তার চাকরির জয়েনিং লেটার।দ্বিতীয়ত আজকে রুনুদের বাসায় তাকে ইফতারের দাওয়াত দেয়া হয়েছে।রুনুরা এই বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকে।রুনুর বাবা আসাদ সাহেবের সাথে আনিসের বেশ ভালো একটা সম্পর্ক আছে।সেই সুবাদেই আনিসকে আজ তাদের বাসায় দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
অনেকদিন পর সে রুনুকে দেখবে।তাই মনটা আরো ভালো হয়ে গেলো।কতদিন রুনুর সাথে দেখা হয় না।আগে প্রায়ই রুনু ছাদে আসতো আর গাছগুলোতে পানি দিত।তখন আনিস তার চিলেকোঠার ঘরের জানালা দিয়ে রুনুকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো।সে কখনো রুনুর সাথে কথা বলেনি।রুনুর সামনে যেতে ওর ভীষণ ভয় করে।রুনু যদি ওর মনের কথা বুঝে ফেলে।সুন্দরী মেয়েরা নাকি কোনো এক বিশেষ ক্ষমতায় কারো মনের কথা পড়তে পারে।রুনু আসলেই সুন্দরী।ওর ঠোঁটের নিচে তিলটা ওর সৌন্দর্য যেনো আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।আনিস রুনুকে মনে মনে পছন্দ করে।আনিস চায় না ব্যাপারটা রুনু জানুক।রুনু হয়তো কোনোদিন জানতেও পারবে না।আনিস একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো।
আনিসের বেশ অস্বস্তি লাগছে।সে কখনো রুনুর এত কাছাকাছি আসে নি।রুনু গামছা নিয়ে ঠিক তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।বরাবরের মতোই তার মুখ গম্ভীর।আনিসের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে মনে হয় সে আনিসের কার্যকলাপে বেশ বিরক্ত।আনিসের হাত ধোয়া শেষে রুনু গামছাটা এগিয়ে দিলো। “আপনি আর আমাদের বাসায় আসবেন না।” আনিস কোনো কথা বললো না।চুপ করে রইল। শুধু আমাদের বাসায় না।আমার চোখের সামনেও আর আসবেন না।” আর কিছু না বলে রুনু চলে গেলো। রুনুর এমন ব্যবহারের কারণ আনিস ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। ইফতার করার সময় হুট করেই কথা নেই বার্তা নেই আনিস আসাদ সাহেবকে বলে উঠল “আমি রুনুকে বিয়ে করতে চাই।”
আনিসের কথা শুনে রাবেয়া বেগমের মুখের খাবার মুখেই আটকে গেলো।তিনি কোনো কথা বলতে পারলেন না।কেমন কঠিন দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।আসাদ সাহেব একদম স্বাভাবিক থাকলেন।চেহারায় কোনো ধরনের অবাক হওয়ার ভাবভঙ্গী দেখালেন না।যেনো তিনি জানতেন এমন কোনো কথা তাকে শুনতে হবে।
এদিকে রুনু খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে একমনে আনিসের দিকে তাকিয়ে আছে।বোঝার চেষ্টা করছে আসলেই কি সে মজা করছে নাকি।রুনু রীতিমতো অবাকই হলো।আনিস ওর বাবা মার সামনে এত বড় একটা কথা এত অনায়াসে বলতে পারবে এটা যেনো রুনুর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না।সে তৎক্ষণাৎ খাওয়া ছেড়ে উঠে তার রুমে চলে গেলো।
এদিকে আসাদ সাহেব খুব স্বাভাবিকভাবেই আনিসের সাথে কথা বলে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে আসাদ সাহেবও যেনো চাচ্ছেন আনিসের সাথে রুনুর বিয়েটা হয়ে যাক।রাবেয়া বেগমের আর এসব কথাবার্তা সহ্য হলো না।তিনি যেই উঠে আসতে লাগলেন তখনই শুনলেন আজকে আনিসের চাকরির জয়েনিং লেটার এসেছে।সে সরকারি চাকরি পেয়েছে।
এই খবর শোনার সাথে সাথেই রাবেয়া বেগম আবার চেয়ারে বসে পড়লেন।হাসি হাসি মুখে আনিসের দিকে তাকালেন।সাথে সাথেই তার আদর যত্ন শুরু হয়ে গেলো। “আরেহ বাবা,তুমি তো দেখি কিছুই খেলে না।তা তোমার মা কেমন আছে।কালকেই নিয়ে আসো না একবার।বিয়ের ব্যাপারস্যাপার তো বড়রাই ভালো বুঝবে।” এভাবে আরো কতক্ষণ তিনি বকবক করে গেলেন।তার কথা যেনো থামছেই না।আনিস তার এই হঠাৎ পরিবর্তনে বেশ অবাকই হলো।কিন্তু কিছু বললো না। খাওয়া শেষে যখন হাত ধুতে গেলো তখন রাবেয়া বেগমই রুনুকে জোর করে গামছা হাতে তার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
রুনু চলে যাওয়ার পরও আনিস কিছুক্ষণ একা সেখানে দাঁড়িয়ে রইল।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আসাদ সাহেব আর রাবেয়া বেগমের সাথে দেখা করে বাসায় চলে আসলো।আনিসের এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে সে এমন একটা কথা বলতে পারলো।আর আসাদ সাহেবের কথা শুনে মনে হলো তিনি অনেক আগে থেকেই চাচ্ছিলেন যে রুনুর সাথে ওর বিয়েটা হোক।তাই তিনি কিছু বললেন না।আর রাবেয়া বেগম হয়তো তার সরকারি চাকরির কথা শোনে গলে গেলো।কালকে ওর বাবা মাকে দেখা করতে বলা হয়েছে।আনিস ভাবছে অন্য কিছু।রুনুকে কিভাবে রাজি করানো যায়।মেয়েটা কি আসলেই রাজি হবে নাকি আনিসকে সে পছন্দই করে না। এসব ভাবতে ভাবতেই এশার আযান দিলো।নামাজ পড়ার জন্য সে উঠে দাঁড়ালো।
পরিশিষ্টঃ আকাশ মেঘে ঢাকা।সন্ধ্যার কিছু আগে তুমুল বৃষ্টি হয়েছে।এই মেঘের আড়ালেই আনিস চাঁদ খোজার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে আজ ঈদ পালিত হচ্ছে।সেই হিসাবে বাংলাদেশে আগামীকালই ঈদ হবে একথা ধরে নেয়াই যায়।আসলে চাঁদ খোজার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে এই মুহূর্তে আনিসের নেই।তার সামনে রুনু দাঁড়িয়ে আছে।রুনু সামনে থাকায় এমনিতেও সে স্বস্তি পাচ্ছিলো না।তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ খোঁজার ভান করছে।রুনুদের বাসায় আনিসের বাবা মা এসেছে।আসাদ সাহেব আর রাবেয়া বেগমের সাথে আনিস আর রুনুর বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে।
আনিস রুনুর দিকে তাকিয়ে দেখলো আগের মতোই মুখ গম্ভীর।হঠাৎ আনিসের দিকে তাকিয়ে রুনু বললো,”আনিস ভাই,আপনি কি কাজটা ঠিক করলেন।” “তোমার কি মনে হয়।” “আপনি বেশ চালাক লোক।” আনিস কিছু বললো না।এক দৃষ্টিতে রুনুর দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনে হলো গম্ভীর মুখটা যেনো একটু একটু করে কেমন হাসিমুখে পরিনত হচ্ছে।একসময় রুনু হেসেই দিলো।শুরুতে মুচকি হাসি।এরপর খিলখিল করে হাসতে লাগলো।একসময় আনিসও হাসিতে যোগ দিলো। হঠাৎ হাসি থামিয়ে রুনু আবার গম্ভীর হয়ে গেলো। “এভাবে হাসছেন কেনো।আমি কি বলেছি যে আমি এ বিয়েতে রাজি।”এই বলে রুনু কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে আনিসের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
আনিস কেমন যেনো একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। যা দেখে রুনু আবার হেসে দিলো।এইবার এই হাসির অর্থ আনিস বুঝে গেলো।এই হাসির মানে হচ্ছে সম্মতি। রুনু একাধারে হেসেই যাচ্ছে।আর আনিস তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।গম্ভীরমুখো এই মেয়েটির হাসি যে এত চমৎকার হতে পারে তা আনিস কল্পনাই করতে পারে নি। একটু পর মসজিদের মাইকে করে ঘোষণা দেয়া হল, আগামীকাল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর।সবাইকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা।”